রিস্টার্ট পার্ট-১৩

0
3717

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১৩

নাদিয়া আজকে লিভিংরুমেই অপেক্ষা করছে জাহিদের। লিভিংরুমে জাহিদের একটি বুকশেল্ফ আছে। নাদিয়া সেই বুকশেল্ফের বইগুলো দেখছে। দরজার শব্দ হতেই তাকিয়ে দেখে জাহিদ এসেছে। জাহিদ আচমকা নাদিয়া কে দেখে থমকে গেল। ও আশা করেনি নাদিয়া কে দেখবে। জাহিদ চোখ নীচের দিকে নামিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছিল।
– দাঁড়ান।
– জ্বী!

জাহিদ দাঁড়ালো। নাদিয়া ওর কাছে এগিয়ে গেল।
– কেমন আছেন?
– জ্বী ভালো।
– কথা বলছেন না কেন?
– বলছি তো?
– এই কয়দিন খোঁজ খবর নেননি যে?
– এমনি।
– সে রাতের জন্য?
– না মানে,
– আমি জানি। যদি সে রাতের জন্য লজ্জিত হয়ে থাকেন, আমি নিজেও লজ্জিত। স্যরি।

জাহিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নাদিয়া ওকে সোফায় বসতে বলে। ওরা পাশাপাশি বসে আছে।

– আ’ম স্যরি। আমার হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করা উচিত হয়নি।
– না, আমি নিজেও; স্যরি! ভেরি স্যরি। আমারই দোষ। আমিই গিয়েছিলাম।
– আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না। আমি কখনো এমন কিছু আপনার উপর চাপিয়ে দেব না।
– আপনি নিজেকে দোষ দিবেন না। আপনার দোষ নেই, সব আমার দোষ।
– আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। আমি এটাকে নরমালি নিচ্ছি। আমরা দুজনেই এডাল্ট। হতেই পারে এমন কিছু। অবাক করা বিষয় তো এটা যে, এমনটা হতে এত মাস লেগে গেল। প্রায় এক বছর!
– হুম?
– মানে, নারী পুরুষের মধ্যে আকর্ষণ হতেই পারে। এরকম একসাথে থাকলে হয় উইক মোমেন্ট। আপনার হতে পারে, আমার হতে পারে। অন্য কারো হতে পারে।

জাহিদ বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ‘নাদিয়া কী পাগল হয়ে গেছে? জাস্ট একটা উইক মোমেন্ট! কিন্তু তারপর আমি যে আচরণ করলাম তা? তার কথা তো বলছেই না।’ নাদিয়া আবার বলতে শুরু করলো।

– তাই আমি ঠিক করেছি, আমরা এখন থেকে বন্ধু হিসেবে থাকব। যেহেতু আমরা একসাথে থাকছি, তাই রুমমেট?
– রুমমেট!
– ছিলেন না আগে?
– হ্যাঁ। ছিলাম।
– হোস্টেল ওয়ালা না। আমি যখন অ্যাব্রড ছিলাম তখন আমরা পাঁচজন একটা বড় বাড়িতে থাকতাম। সবাই আলাদা ঘরে। খাবার দাবার একসাথেই। মোটামুটি সব জিনিসই শেয়ার করা হতো, কিন্তু রুমটা আলাদা।
– জ্বী?
– আমার মনে হয় আমাদের ওভাবেই থাকা উচিত। ডিসেন্ট দূরত্ব, ডিসেন্ট কাছাকাছি। স্পেস ও থাকলো, প্রাইভেসিও থাকলো। ঠিক?
– কিন্তু?
– আপনি চান না?
– তারমানে আপনি যাবেন না!
– আপনি বললে চলে যাব।
– না!!!

জাহিদ চিৎকার করে দাঁড়িয়ে পড়ল। নাদিয়া ভয় পেয়ে গেছে। জাহিদ তাই আবার বসে পড়লো।

– কী ব্যাপার?
– স্যরি! আসলে, আমি ভেবেছিলাম আপনি আবার চলে যাবেন। আমি অনেক বাজে আচরণ করেছি। আপনি হয়তো আমার আচরণে কষ্ট পেয়েছেন। আ’ম স্যরি।
– এইটা বাজে না। আপনার অধিকার আছে। আপনি বাঁধা দিতেই পারেন। ভালো না লাগতেই পারে। কনসেন্ট বলে একটা জিনিস আছে। যদি আপনি কিছু মনে না করেন, জানতে পারি কারণটা কী ছিল?
– এমনি। কোনো কারণ নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
– ওকে।

জাহিদ ব্যাপারটা কে এড়িয়ে যাচ্ছে। ঠিক সবার মতোই। এরকমই হয়। খুলে কিছুই বলতে পারে না। নাদিয়া তাই ওকে আর জোর করেনি। জাহিদ নাদিয়ার ল্যাপটপে দেখেছিল সেদিন, ও বাড়ি দেখছে। খুব ভয় পেয়েছিল। যাইহোক, এখন তো আর যাচ্ছে না। নাদিয়া ব্যাপারটা এত সহজে নেবে তা জাহিদ ভাবতেই পারে নি। কী হলো হঠাৎ?
– আচ্ছা জাহিদ, আপনি তো বই পড়েন খুব।
– জ্বী।
– আপনার একটা প্রিয় বই আমাকে সাজেস্ট করবেন?
– আমি কী করে বুঝব আপনার কোনটা ভালো লাগবে?
– যে কোনো।
– কোন ধরণের বই পছন্দ করেন? নভেল না ইনফরমেটিভ?
– নভেল।
– হুমায়ুন আহমেদ দেখতে পারেন। ওনার অনেক নভেল আছে আমার কাছে।
– তবে আমি এইটা দেখছি।

নাদিয়া ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস টা দেখছে। জাহিদ হকচকিয়ে তাকিয়ে আছে। এই উপন্যাস টা ও প্রায় পড়ে। তাই সামনেই রাখা।

– না। এইটা না। ‘মৃন্ময়ী’ টা পড়ুন।
– ওটা পড়েছি।
– ‘মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই’ , কিংবা ‘হিমু’! অনেক ‘হিমু’ আছে আমার কাছে। এই যে ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’।
– আগে এটা পড়ব। তারপর বাকিগুলি। আর হ্যাঁ, আপনি এখন থেকে প্রতিদিন বিকেলে বাড়ি আসার সময় রেডিও শুনবেন।
– কেন?
– আমার ভালো লাগে। মুড ফ্রেশ থাকে। আপনি ও ট্রাই করতে পারেন। সাজেশন আরকি।

অবাক কান্ড। অরনী এত মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন? ওর জন্য আজও হাজার হাজার ছেলে পাওয়া যাবে। জাহিদ কে ডিভোর্স দিলে ও একাও কাটাতে পারে বাকি জীবন। ও ঠিক এতটাই আত্মবিশ্বাসী। তবুও ও এতটা চেষ্টা করছে। ঠিক সেদিনের ঘটনার পর ও। সবই কী পরিবারে কোনো ডিভোর্স নেই তাই বলে? কিন্তু অরনী এসব কিছুরই কোনো পরোয়া করেনা। জাহিদের ভেতর দিন দিন অপরাধবোধ টা আরো বাড়ছে। অফিসেও বসে বসে নাদিয়া আর ওর বিয়ের ছবি দেখে। সেই দিন পর্যন্ত ওর মনে হচ্ছিল ও একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে, একটা নতুন মানুষের সাথে। ইশ! যদি ও না জানতো। তবে হয়তো অন্যরকম হতো ওদের জীবন। ইশ! যদি ও না জানতো ওর নাম অরনী।

স্কুলে নাদিয়া জাহিদের দেওয়া বইটা পড়ছে। বইটা শেষ করে নাদিয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। ও জাহিদের হাতে প্রায় বইটা দেখেছে। বইটা সামনেই থাকে। আফরা দেখে বলল,

– তুই এই বইটা পড়িসনি?
– না। আজ পড়লাম।
– বইটা একটা দীর্ঘশ্বাস। জানিনা কেন? রাবেয়া আর মন্টুর জন্য খুব খারাপ লাগে। আচ্ছা, মন্টু যদি বলতো যে সে কেন মাস্টার কে মেরেছে তাহলেও কী ওর ফাঁসি হতো?
– কী জানি?
– রাবেয়া একটা নির্দোষ মেয়ে। ও তো জানতো না ওর সাথে কী হয়েছিল। ওর কষ্ট টা আমি এখনো ভুলতে পারি না। “আমি কী মারা যাচ্ছি?” তবুও সে ভাগ্যবতী, মন্টু তার অ্যাবিউসারকে শাস্তি দিয়েছে। শান্তি লাগতো যদি মন্টু বেঁচে থাকতো। আমি তো মাঝে মাঝে মনে করি কাহিনী ওখানেই শেষ যেখানে মাস্টার কে মন্টু খুন করে। আমার জগতে মন্টুর কোনো শাস্তি হয়নি। বাংলা সিনেমার মতো ওকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কেন যে ওরা সমাজের ভয়ে রাবেয়ার সাথে অন্যায়ের কথা বলেনি।

নাদিয়ার আর বুঝতে বাকি থাকেনা জাহিদ কেন এই বইটা পড়ে। নাদিয়ার সন্দেহ দিন দিন গাঢ় হচ্ছে। ওর অ্যাবিউসার ছিল। কিন্তু ও তা বলতে চায় না। ওর ভেতর ভয় কাজ করে। সবচেয়ে বড় ভয় সবাই যদি ওকেই দোষারোপ করে। সমাজ তো নিপীড়িতকেই দোষারোপ করে। জাহিদ বাড়ি ফেরার সময় নাদিয়ার কথা মতো রেডিও চালায়। আরজে ঐশী কোথায়? এইতো। ফ্রিকোয়েন্সি এইটা। 99.6 এফ এম। হ্যাপি এফ এম। একটা গান চলছে।

” যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে
এ হৃদয়ে সে কিছু নয়
শত আঘাতেও নিঃস্ব যে আজ
তার আবার হারানোর ভয়

যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে
এ হৃদয়ে সে কিছু নয়
শত আঘাতেও নিঃস্ব যে আজ
তার আবার হারানোর ভয়

কি ভুলে আমি এতো সয়েছি যে ব্যথা
কি করে ভুলেছি অতীতের কথা
কি ভুলে আমি এতো সয়েছি যে ব্যথা
কি করে ভুলেছি অতীতের কথা
জানতেও পারবে না কেউ তা
জানতেও পারবে না কেউ তা।”

জাহিদ চ্যানেল টা বদলে দিল। সেই চ্যানেলে খুব জোরে রক মেটাল গান বাঁজছে। ওর মেটাল পছন্দ না তাও শুনছে। কারণ এই গানটা শুনে ওর অন্য কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে হবে। নাদিয়া এত এফোর্ট দিচ্ছে আর ও এতটুকু ও পারবে না। রাতে খাওয়ার সময় নাদিয়া জাহিদ কে বলল,
– আপনি, আর আমি, কাল পিপি স্যার এর কাছে যাই?
– কাল?
– হ্যাঁ। এই সপ্তাহ এমনিতেই লেইট।
– কী বলব?
– ব্যস্ত ছিলাম।
– আচ্ছা, আমরা যে বন্ধু হয়েছি, তা কী বলব?
– দরকার নেই। বাই দ্য ওয়ে, কাল যাওয়ার আগে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি?
– জ্বী?
– আপনার সমস্যা না হলে, হ্যাং আউট।
– না, সমস্যা নেই। কোথায় যাব?
– এমনি। ঘুরব, বাদাম খাবো। আর সামান্য কথাবার্তা বললাম। ফ্রেন্ডস না আমরা?

অস্বাভাবিক! প্রচন্ড অস্বাভাবিক! অরনীর তো এতক্ষণে ওকে খুন করে ফেলার কথা। ওরা কিনা বন্ধু বন্ধু করছে। জাহিদ আর নাদিয়া পুরো বিকাল টা গাড়িতে ঘোরাঘুরি করলো। নাদিয়া চায় জাহিদ ওকে বিশ্বাস করুক। খুলে বলুক সবকিছু। ও যাতে বুঝতে পারে, এতে ওর কোনো দোষ নেই। হাতিরঝিলে অনেক কাপলকেই দেখা যাচ্ছে। অদ্ভুত লাগছে। জাহিদের এমন ব্যবহার করার পর নাদিয়ার থেকে এত ভালো ব্যবহার আশা করা যাচ্ছে না।

– কী দেখছেন? (নাদিয়া)
– কিছু না! এমনি!
– এখানে বন্ধুরা আসে না, তাই তো?
– হুম।
– ওরা বন্ধু ও তো হতে পারে।
– পারে।
– যেমন আমরা স্বামী স্ত্রী। বন্ধু ও তো?

খুব অন্যায় করছে নাদিয়ার সাথে। নাদিয়া এসব ডিজার্ভ করে না। আর এত ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য জাহিদ না। ওরা এখন পিপির কেবিনে।

– ঘরের কাজ করতে করতে ভুলে গেলে আমাকে?
– না। ব্যস্ত ছিলাম।

পিপি সবই জানে। নাদিয়া কত সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে।

– এই টাস্কের কোনো মার্কিং নেই। দুজনেই বিজয়ী। তবে এই টাস্ক কন্টিনিউ করবে। বিবাহিত জীবনের জন্য ভালো। আর নতুন টাস্ক হচ্ছে, ট্রুথ অর ডেয়ার?
– এটা কেমন টাস্ক?
– এইটা খেলা। তোমরা দুজন দুজনকে ট্রুথ অর ডেয়ার আস্ক করবে। ট্রুথে একটি করে প্রশ্নের সত্যি উত্তর দেবে। আর ডেয়ারে যে কোনো কাজ করাবে। জানো তো? বিদেশে অনেক উদ্ভট কাজ করে, যেমন চুমু টুমু ও খায়।

নাদিয়া পিপির দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো। কারণ ও চায়না জাহিদ বিব্রত হোক এসব ব্যাপারে।

– এটা খেললে কী হবে স্যার?
– বাহ জাহিদ! তোমার মুখে বুলি ফুটেছে। ইউ আর ইন্টারেস্টেড?

পিপি হাসতে হাসতে বললেন এসব। কিন্তু নাদিয়া এবার পিপিকে মেরেই ফেলবে। পিপি জানে ওর সাথে কিছু একটা ঠিক নেই। তাও বাজে ইঙ্গিত করছে।

– ওরকম কিছু না। তোমরা ডেয়ার দিয়ে একে অন্যকে দিয়ে অনেক কাজ করাতে পারবে। আমার মিসেস কে দিয়ে আমি হেড মাসাজ করাই, উনি আমাকে দিয়ে পা টেপান।

নাদিয়া আর জাহিদ হালকা চমকে গেছে। এটাও বলার বিষয়।

– আর মাঝে মাঝে ডেয়ারে ফোনের পাসওয়ার্ড ও চেয়ে নেয়। আর ট্রুথে কিন্তু সব সত্যি বলতেই হবে জাহিদ। বলবে তো?
– হুম।
– আসলে ট্রুথ অর ডেয়ার খেললে তোমাদের মধ্যে দূরত্ব কমবে। অর্থাৎ জানতে পারবে আরো ভালো করে। কে কতটা চালাক। কে কাকে বেশি গেম খাওয়াতে পারো দেখি। আর তারমানে এই না যে কেউ ঘরের কাজ একসাথে বন্ধ করে দেবে।

ট্রুথ অর ডেয়ার!
প্রতিদিন ট্রুথ অর ডেয়ার আর ঘরের কাজ। আজকে ফ্রিজ থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস গুলো সরাচ্ছে নাদিয়া। হালকা ফ্রিজ পরিষ্কার। একটা সসের বোতল খালি। জাহিদ ফ্রিজের বক্স গুলো পরিষ্কার করছিল। নাদিয়া ওর দিকে তাকায়।

টেবিলে ওরা মুখোমুখি বসে আছে। নাদিয়া বোতলটা ঘোরালো। বোতলের মুখটা জাহিদের দিকে। জাহিদ হা করে আবার মুখ বন্ধ করে নিলো। নাদিয়া বলল, ” ট্রুথ অর ডেয়ার?” জাহিদ ভেবে বলল,

– ট্রুথ।
– উমমমমম, আপনি আপনার মা কে বেশি ভালোবাসেন না বাবাকে?
– এটা কেমন প্রশ্ন?
– অনলি ট্রুথ।
– এটা তো নার্সারিতে করা প্রশ্ন।
– প্রশ্ন তো প্রশ্ন! উত্তর চাই।
– ওকে! দুজনকেই। দুজনেই নেই। তো দুজনেই সমান।
– না, না। একজন একটু বেশি, একজন একটু কম হবেই।
– মা।
– বাবা কেন না?
– অনলি ওয়ান কোয়েশ্চন এট এ টাইম। এগেইন।

আবার ঘোরানো হলো। এবার মুখটা নাদিয়ার দিকে।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনি আপনার মা কে বেশি ভালোবাসেন না বাবা?
– সিরিয়াসলি! একই প্রশ্ন? ক্রিয়েটিভিটি নেই?
– ওকে। আপনি রাহুকে বেশি ভালোবাসেন না অংশু ভাইয়া?
– রাহু। ও আর আমি সেম এইজ। আর এটা আবার রাহুকে বলবেন না। মাথার উপর উঠে নাচবে।
– তো আপনি সেদিন রাহুকে অপমান করলেন কেন?
– একবারে একটা প্রশ্ন।
– ওকে।

আবার ঘোরানো হলো। এবার আবার নাদিয়া।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– রাহু কে কেন? অপমান করলেন?।
– আপনি ছোট তো, তাই জানেন না। ছোটদের অপমান করার অনেক মজা আছে। অপমান না, এটাকে লেগ পুলিং বলে।
– ওহ!

আবার ঘোরানো হলো। এবার জাহিদের পালা।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনার বাবাকে কেন কম পছন্দ করেন?
– কম না। বাবা কে কম পেয়েছি কাছে, তাই। তাও ছোট ছেলে বলে আদরের ছিলাম। আর মাকে খুব কাছ থেকে কষ্ট পেতে দেখেছি। বাবাকে হারানোর পর মায়ের সাথে বেশি ছিলাম। আর অসুস্থ মায়ের সেবা করেছি, তাই মা বেশি।

নাদিয়া ভাবছে ওর মা বাবার সাথে তিক্ত কোনো সম্পর্ক নেই। আবার ঘোরানো যাক। এবার নাদিয়া।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনার মিষ্টি ভাবি কে কেন পছন্দ না?
– অনেক কারণ। ছোটখাটো বেশি না। আসলে এত অপছন্দ ও না। বাড়তি কথা বলে, উল্টো পাল্টা কাজ করে। বাড়ির সবাই ” ও কতো ইনোসেন্ট!” এমন করতে থাকে। বিরক্তির! নেক্সট। ইনোসেন্ট না, ইচ্ছে করেই করে। এত বড় হয়েছে, আর তাও এসব বাচ্চামো করে।

আবার ঘোরানো হয়। এবার আবার জাহিদ।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনি কী ডেয়ার নিতে ভয় পাচ্ছেন?
– জ্বী!
– এটাই প্রশ্ন।
– না।

জাহিদ খুবই কনফিডেন্টলি বলল। আবার ঘোরানো হলো, এবার ও জাহিদ।
– ওকে। ডেয়ার কী?
– আজকের বাদ বাকি কাজ আর কালকের নাস্তা বানানো।
– কীহ!!!
– জ্বী।

জাহিদ অনুভূতিহীন হয়ে বসে রইল। আরেকটা স্পিন, আর এই কাজ গুলো ওকেই দিয়ে দেবে ডেয়ারে। নাদিয়া বোতলটা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। আশ্চর্য! কাল দেখা যাবে।

– আপনি জানেন, এ ভাবেই আমি আমার রুমমেটদের দিয়ে সব কাজ করাতাম।
– ওহ!
– আপনাকে দেখেই মনে হয়েছিল আপনি এসব খেলেন না। বেটার লাক নেক্সট টাইম!

পরদিন,
নেক্সট টাইম,

এবার বোতল ঘোরালো জাহিদ। মুখটাও জাহিদের দিকে।
– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনার কী সত্যিই কোনো ক্রাশ ছিল না?
– জ্বী!

এখন জাহিদ পড়েছে বিপদে। সত্যি কী বলতে হবেই?

– কী হলো? বলুন।
– ছিলো।
– মিথ্যা বললেন কেন?
– এক বারে একটা প্রশ্ন।
– ওকে।

আবার ঘোরানো হলো। এবার নাদিয়া ঘোরালো। আর এমন ভাবে ঘোরালো যে আবার ও জাহিদ। নাদিয়া পাকা খেলোয়াড়।
– এটা চিটিং।
– নো নো। বলতেই হবে। ট্রুথ অর ডেয়ার।
– ট্রুথ।
– মিথ্যা বলেছিলেন কেন?
– এমনি। ওটা কোনো সিরিয়াস কিছু ছিল না। আর আমি ওটা মনে করতে চাই না।

এবার জাহিদ ঘোরালো। আর নাদিয়ার পালা।

– ট্রুথ অর; ডেয়ার?

জাহিদ মুচকি হাসলো। যেন মনে হচ্ছে ও উপভোগ করছে এই খেলাটা। নাদিয়া ওকে দিয়ে সত্যি বের করে নিয়েছে, তো ও নিজেও একটা সত্যি বের করবে।

– ট্রুথ।
– শাখাওয়াত কী আমার থেকে লম্বা ছিল?
– আপনার হাইট কত?
– আগে শাখাওয়াত।
– ৬ ফুট ২ ইঞ্চি।

জাহিদের মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে গেল। নাদিয়া খেয়াল করলো ব্যাপার টা।

– আপনার কতো?
– ঘোরান।

আবার ঘোরানো হলো। এবার জাহিদের পালা।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ডেয়ার।

কারণ ট্রুথে তো ওর হাইটই জিজ্ঞেস করা হবে। ও নাদিয়া কে এতটা চিনে ফেলেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয় বদলাতে হবে।

– আপনার হাইট মাপবো। এখনই।
– কী!

এবার ওর হাইট মাপা হচ্ছে। জাহিদ লজ্জা পাচ্ছে। নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেছে। এইজন্য অতিরিক্ত কথা বলা উচিত না। নাদিয়া জাহিদ কে পা উঁচু করতে বারণ করছে। একদম পারফেক্ট হাইট মাপা হবে।এবার হাইট মেপে বোঝা গেল ও ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি।

– তো?
– কী?
– ঘোরান।

এবার নাদিয়া।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ডেয়ার।
– কফি।
– কী?
– কফি বানান।

নাদিয়া কফি বানাতে গেল। জাহিদ খুব স্ট্রেসে হলে কফি খায়। একটু আগে অপমানিত হলো নাদিয়ার সামনে। কফি খেতে খেতে ওর হঠাৎ মনে হলো ও তো ওকে ঐদিনের মতো সব কাজ করাতে পারতো। শুধু কফি বানাতে বলল। মিস! দিন দিন শুধু হেরেই যাচ্ছে। এবার জাহিদ ঘোরালো। এবার ও জাহিদ।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ট্রুথ।
– আপনার কী কোনো সিক্রেট আছে?
– মানে?
– এমন কিছু যা আপনি কাউকে কিছু বলেননি। ডিপেস্ট! ডার্কেস্ট সিক্রেট! কেউ জানে না! মা, বাবা, ভাই, বন্ধু, কেউ না। (ফিসফিসিয়ে।)

জাহিদ হালকা ভয় পেয়ে যায়। নাদিয়া এসব কী বলছে? নাদিয়া প্রতিদিন গেম জিতে যায়। আজকে আবার হয়তো নতুন কোনো চাল। আজকে আর কোনো জালে ফাঁসবে না।

– জ্বী। আছে।
– সেটা কী?
– একবারে একটা প্রশ্ন।
– ওকে।

নাদিয়া বোতলটা ঘোরালো। আর এইটাও ইচ্ছে করেই জাহিদের দিকে দিল। জাহিদ জানে এমনই হবে। নাদিয়া আজ শুধু সত্যিটাই জানতে চায়। কী সেই সিক্রেট? আজ জাহিদের ওকে সব বলে দেওয়া উচিত। কারণ ও জানলেই ওকে সাহায্য করতে পারবে।

– ট্রুথ অর ডেয়ার?
– ডেয়ার। ( ফিসফিসিয়ে)
– টেল মি , ইওর সিক্রেট! (আস্তে আস্তে)
– শুনতে চান?
– জ্বী।

জাহিদ একদম শান্ত হয়ে বসে। ওর হাত দুটো টেবিলের উপরে রাখে। নাদিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।

– আমার সিক্রেট?
– হুম।
– আমি,
– জ্বী।
– আমি।
– কী?
– স*মকামী ….

(চলবে)

(ভয় পাচ্ছেন? 🤫🤫🤫)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here