রিস্টার্ট পার্ট-১৯

0
3510

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১৯

মিষ্টি বিয়ের আগেই এই বাড়িতে এসেছিল। তবে অতিথি হয়ে। তখন ও রাহু অরনীর মিষ্টি ভাবি ছিল না। মিষ্টি আপু ছিল। এই বাড়ি তখন অনেক হাসিখুশি ছিল। তিনটে একই বয়সের ছেলেমেয়ে সারাদিন দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো। রাহু, অরনী, প্রিয়ম। মাঝে মাঝে শুক্রবার গুলো তে মিষ্টি মিশান আর মিঠাই ও। মিশান আর মিঠাই মিষ্টির চাচাতো ভাইবোন তবে অংশুর ফুফাতো ভাইবোন। অর্থাৎ মিষ্টির চাচা আর অংশুর ফুফু স্বামী স্ত্রী। তবে ছোটবেলায় ওদের এত দেখা হতো না। মিষ্টির ভার্সিটিতে পড়তে এসেই দেখা হয়েছিল। মিষ্টির বাবা নেই। গ্রামে মানুষ। অংশুর ওকে পছন্দ হবে কে জানতো?

একদিন শুক্রবার, অরনীদের বাসায় সবাই ছিল। ওর কাজিন আর প্রিয়ম ও। সবাই ছাঁদে মাঁচায় আর নীচে বসে গল্প করছে। অরনী সেখানে বলছে, ” ছি ছি! কাজিনের সাথে প্রেম। জঘন্য অপরাধ! আমার এক ক্লাস মেট নাকি ওর খালাতো ভাইকে ভালোবাসে! ভাবতেই বমি আসে। ছিছি!”
এই কথা শুনে প্রিয়ম রাহু মিঠাই হেসে উঠে। হাসেনি শুধু মিশান আর মিষ্টি। মিষ্টি তাই বলে, ” কাজিন তো কী হয়েছে? এইটা বৈধ। অনেকেই করে। আপন ভাইবোন তো আর না।” ওরা সবাই মিষ্টির দিকে তাকায়। মিঠাই খিলখিলিয়ে হেসে বলে,

– আপনের মতোই। ব্লাড রিলেটেড। জেনেটিক ডিজিজ হয়।
– সবার হয় নাকি।
– হোয়াটেভার। ভাবতেই গা খিতখিত করে। কাজিন! আমার ভাগ্য ভালো সবাই আমার ছোট।
– অংশু ভাইয়া আছে তোমার বড়।
– অংশু! ছি!!! বমি আসছে আমার। অরনী আমাকে বাঁচা।

অরনী আর প্রিয়ম তো হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে। মিশান মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল। মিষ্টি তা খেয়াল করে এরপর ওর পেছনে গেল। মনমরা মিশান দোতলার বারান্দায় বসে রইলো। মিষ্টি ওর পিঠে হাত রেখে বলল,

– মন খারাপ করিস না। ও এখন বুঝছে না। একদিন বুঝবে।
– আপুও তো উষ্কাচ্ছে। এই কারণেই বলিনি কাউকে।
– আরে, মামাতো বোনকে ভালোবাসা পাপ নাকি?
– ওরা তো নাক ছিটকাচ্ছে।
– ওরকম সবাই একটু আধটু করে। আরে, এখনো তো কলেজে। প্রেম ভালোবাসা ওর মনে আস্তে আস্তে বাসা বাঁধবে।
– কবে! কবে আপু?
– তুই এক কাজ কর, ওকে বল তুই ওকে ভালোবাসিস।
– না না! ও যদি মানা করে দেয়?
– মানা করে দেবে তাই বলবি না? তার মানে তুই ওকে ভালোবাসিস না।

প্রিয়ম সেখানে আসতেই দেখে মিশান আর মিষ্টি হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মিশান বলছে, “ভালোবাসি, ভালোবাসি তো! বলতে ভয় পাই।” প্রিয়ম এই দৃশ্য দেখে পা টিপে টিপে সেখান থেকে চলে আসে।

বাইরে এসেই প্রিয়ম রাহুকে দেখতে পায়। রাহু একটা কথা বলতে গেলেই প্রিয়ম ওর মুখ চেপে ধরে ওকে ছাঁদে নিয়ে আসে। অরনী ওদের ওভাবে দেখে বলে,

– কীরে, কী হয়েছে?
– তুই বিশ্বাস করবি না আমি কী দেখেছি। মিষ্টি আপু আর মিশান ভাইয়া একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
– তো?
– ভাইয়া বলছে, ভালোবাসি তো, বলতে ভয় পাই। তাই ওরা বিরোধিতা করলো, আবার বেরিয়ে ও গেল।
– তাই!

মিঠাই মাঁচাতে শোয়া থেকে উঠে পড়ল।

– অসম্ভব! মিষ্টি বড় মিশানের।
– কয় দিনের?
– প্রিয়ম, কয় দিন বা মাস তা নয়। মেয়ে বড়। ওরা এক বছরের বড় ছোট।
– তো! মেয়ে বড় ছেলে ছোট আজকাল ব্যাপার না। বি প্রগ্রেসিভ আপু!

রাহু একদম সামনে এসে বলল,
– ঠিক! ঠিক! মেয়ে বড় হলে কোনো সমস্যা নেই।
– এই যে, রাহুর মতো লোকের মাথায় ও ঢুকলো।

অরনীর খুব হাসি পাচ্ছে। কারণ ও জানে রাহু এমন কেন করছে। মিঠাই প্রিয়মের কাছে গিয়ে বলল,
– এই প্রগ্রেসিভ হতে পারবো। কিন্তু কাজিন কাজিন বিয়ে? এটা তো রিগ্রেসিভ!
– তাও ঠিক। ওরা তো বুঝবে না।

অংশু ভেতরে আসতেই প্রিয়ম ওর কাছে গিয়ে বলল,

– অংশু ভাইয়া! অংশু ভাইয়া ! জানো, মিষ্টি আপু আর মিশান ভাইয়ার মধ্যে কিছু চলছে।
– কী!!!

অংশুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ও তো মিশান কে খু*ন করবে। সেখানে মিষ্টি আর মিশানের আগমন।

– দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। মিশান! তুই পারলি!
– কী?
– মিষ্টির সাথে প্রেম করতে?
– কই না তো!
– মিষ্টি!

মিষ্টি কাছে গিয়ে বলল,

– জ্বী অংশু ভাইয়া?
– তুমি ওকে পছন্দ করো?
– ও আমার ছোট ভাই।
– প্রিয়ম?

প্রিয়ম বিপদে,

– হাত ধরলে যে? “ভালোবাসি তো, বলতে ভয় পাই?”
– অন্য কারো কথা বলেছে। আমি না। আমি তো কাউকেই ভালোবাসি না।

অংশুর প্রাণে পানি আসলো। মিষ্টি তবে সিঙ্গেল। মিষ্টি ও মিশান আর অরনীকে মেলাতে বদ্ধপরিকর। তাই যাওয়ার আগে প্রিয়মকে একটি আলাদা জায়গায় নিয়ে সব বলল। প্রিয়ম যেহেতু বেস্টফ্রেন্ড ওর সাহায্য ও চাইলো। কিন্তু প্রিয়ম তো জাহিদ কেই ঠিক করেছে। আর মিশান কে অরনী কখনো পছন্দ করবে না। পরদিন স্কুলে,
– তুই বসে থাক! আর এদিকে ওকে অন্য কেউ নিয়ে যাক!
– কী হয়েছে?
– অরনী, ওকে ওর ফুফাতো ভাই মিশান পছন্দ করে।
– আর অরনী????
– ও কাজিনদের এই প্রেম বিয়ে পছন্দ করে না। আর এই মিশান ভাইয়া, পুরাই সাইকো। অরনী তো রাগী। ও আরো ভয়ানক। ওদের দুজনের এমনিতেই এক ঘরে না থাকাই ভালো। এইটা কেউই মানবে না। তবে খেয়াল কর, ও এখনো ইউনিভার্সিটি তে যায় নি। গার্লস কলেজ। তাও বাসার ভেতরের লোক ওর উপর সব ফিদা। যখন বের হবে তখন কত লোক পাগল হবে! তোর তো হিউজ কম্পিটিশন। তখন তোর চান্স থাকবে?
– এখনো কোথায় আছে?
– আছে। এখন গিয়ে ফ্রেন্ডশিপ কর। ইম্প্রেশন তৈরী কর একটা। পরে দেরী না হয়ে যায়।
– আচ্ছা, আমি কী ওনার যোগ্য ?

.
.
.
.

নাদিয়া আর জাহিদ নতুন টাস্ক নিতে পিপির কাছে।

– আপনার ট্রিপ কেমন গেল স্যার?
– ভালো। তবে আমি কোথায় গিয়েছি জানো?
– কোথায়?
– শ্বশুরবাড়িতে।
– জামাই আদর কেমন হলো?
– ভালোই। আসলে শ্বশুর বাড়ি হলো একটা প্রতিকূল অবস্থা। সেখানে সবাই অন্য পক্ষের থাকে, অচেনা। শুধু একজনই থাকে চেনা। তার উপর ভরসা করেই মানুষ এত সব অচেনা মানুষের সাথে থাকে। এটা একটা পরীক্ষার মতো। তাই আমি ভাবছি, পরের টাস্কে, তোমরা শ্বশুরবাড়ি যাবে।
– হাহাহ! আমার তো শ্বশুর বাড়ি নেই।

জাহিদ নাদিয়ার দিকে তাকায়। নাদিয়া হাসিটা বন্ধ করে দেয়। মন খারাপ করলো নাকি? নাদিয়া ওভাবে বলতে চায়নি।

– জাহিদ যাবে। জাহিদের শ্বশুরবাড়ি তো অনেক বড় বোধহয়, নাদিয়াদের বাড়ি।
– আমি আমার বাড়িতে যাব না।
– কেন? কী সমস্যা?
– আমার অসহ্য লাগে সেই বাড়ি । হ্যাঁ, হয়তো সেটা একসময় আমার বাড়ি ছিল, কিন্তু এখন সেটা বাবার বাড়ি।
– এভাবে বলছ কেন?
– আমি বলিনি। এটা আমাকে বলা হয়েছে। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়, যে বাড়ি থেকে আমাকে এতটা অপমান করে অসহায় অবস্থায় বের করে দিয়েছে। আমি আর সেখানে যাচ্ছি না। রাহেলা খালা ও যায় নি।
– রাহেলা খালা কে?
– আমাদের কাজ করেন। ওনাকেও আমার মতো বের করে দেওয়া হয়, কিন্তু উনি নিজের পায়ে দাঁড়ান। আর পেছনে ফিরে দেখেননি।
– তাই তুমি তোমার বাড়ি যাবে না?
– না। আত্মসম্মানবোধ, এটা আমার আছে।

নাদিয়ার মন খারাপ দেখে জাহিদ পিপিকে ইশারায় বলল আর জোর না করতে। পিপি ও জাহিদ কে ইশারায় বলল ও কী চায়? জাহিদ ইশারায় পিপি কে আশ্বস্ত করে বলল,

– আমরা ফুপুর বাসায় যাব। একদিন চলুন।
– আপনার ফ্রি আছে নাকি?
– শুক্রবার?
– এখন দেখি আপনার ছুটি আর ছুটি। আপনিও তো আমায় কম অপমান করেননি! কেন যে এসেছি!
– কাজ ছিল। ডিল ফাইনাল হয়েছে। এখন তো ফ্রী।
– ওটা কী শ্বশুরবাড়ি?
– হুম।
– ফুফু শাশুড়ির বাড়ি।

পিপি চুপ করে মুচকি মুচকি হাসছে। কনভারসেশন হচ্ছে তাহলে। এটাই তো চায়। ওরা ওরাই এখন নিজ থেকে সব ঠিক করবে। এটাই তো ওনার কাজ ছিল। দোষ গুণ দুই পক্ষেই থাকবে। আলোচনার মাধ্যমে সব সামলানো, আর নিজের পার্টনারকে মেনে নেওয়া টা ওরা আস্তে আস্তে শুরু করেছে। এভাবে জাহিদ ও একদিন ওর কথা বলবে আর ওরা ওদের সমস্যা গুলোর সমাধান করবে।

– তো পিপি স্যার, অন্য টাস্ক হবে না?
– এটাই করতে হবে। ফুফু শাশুড়ির কাছে যাও আর স্বামীর ছোটবেলার গল্প শুনে আসো। আমার যখন বিয়ে হয়েছিল আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই আমাকে আমার বিবির ছোটবেলার কাহিনী শোনাতো। আমার বাড়ির লোকেরা ও ওকে বলত। এর মাধ্যমে অনেক সিকরেট জানা যায়, আর পরবর্তীতে ব্ল্যাক মেইল ও করা যায়।

“সিক্রেট ” এই শব্দ টা একটা কোড ছিল। পিপির ইশারা। নাদিয়া পুরোপুরি ধরতে পেরেছে। জাহিদের সিকরেট।

– ওকে। তাহলে আমরা যাচ্ছি। ফুফু আমাকে অনেক পছন্দ করেন। অনেক খুশি হবেন।

জাহিদের ফুপুর বাসায় গিয়ে নাদিয়া একদম ফুপুর সাথে মিশে গেল। জাহিদের কাজিনেরা ওর থেকে নাদিয়া কে বেশি পছন্দ করে। দেখে মনে হচ্ছে জাহিদ অপরিচিত জায়গায় এসেছে। ওরা নাদিয়ার ই পরিচিত।

– জাহিদ কী সবসময় এমন? এমনি এমনি?
– জাদু ছোটবেলায় ও এমন ছিল। লক্ষ্মী বাচ্চা।
– জাদু, মানে জাহিদ? হাহাহাহ!
– জাহিদ থেকে জাদু। ওর ডাক নাম ডাকা মানা।

নাদিয়া মনে মনে ভাবছে জাদু যদি কারো ডাক নাম হয়, তো যে কেউ এই নাম ডাকতে মানা করবে। জাদু বললেই মনে পড়ে কোয়ি মিল গ্যায়ার জাদু।

– বাবা মারা যাওয়ার পর কেমন ছিল?
– ঐ চুপচাপ। তবে মায়ের অনেক সেবা করতো। আমার জাদু একা থাকতো মা নিয়ে। মায়ের সেবা, রান্না সব মোটামুটি ও নিজেই করতো। অনেক ছোট বয়সে অনেক বড় হয়ে গেছে। ভাবি চোখে ভালো দেখতে পেত না তো। সব ওকেই করতে হতো।
– বাকিরা কোথায় ছিল?
– মুগ্ধ রুদ্র তো বাইরে ছিল। মুগ্ধের পোস্টিং, আর রুদ্রের রাজশাহীতে পড়া। মায়ের কাছে শুধুই আমার জাদু।
– মুগ্ধ রুদ্র কে?
– সালাম আর সাহিদ। ওদেরও ডাক নাম ডাকা মানা। বড় হয়েছে, বড় মানুষ। ডাক নামে নাকি গাম্ভীর্য নেই। বাচ্চাদের মতো ওদের ডাক নাম। আমার নাম যে খুকি, এই বুড়ি বয়সে আমি খুকিই বলি। এদের যে কী ঢং। কিন্তু আমি জাহিদকে তো আগে থেকেই জাদু ডাকি।
– ওনার কী আরেকটা নাম আছে।

” নাদিয়া!!! আপনাকে ভাবি ডাকছে!” জাহিদ সেখানে হাজির। ফুফু আবার সব বলে দেয় নি তো? নাদিয়া ভাবির কাছে যেতেই,

– ফুফু আপনি কী কী বললেন?
– মুগ্ধ রুদ্রের কথা।
– সালাম সাহিদ। ওনাদের ডাক নাম ডাকা,
– জানি, ওরা এখন বড় অফিসার। ওদের ডাকনাম ওদের কাজের সাথে যায় না। কিন্তু জাদু, শুদ্ধতে কী সমস্যা? তুই তো এখনো ইয়ং।
– নামটা আমার পছন্দ না। জাদু বলেছেন, কিন্তু এর কথা ওনাকে বলবেন না।

বাড়ি ফেরার সময় নাদিয়া জাহিদের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। জাহিদের খুব অস্বস্তি লাগছে। গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

– সমস্যা কী?
– জাদু! হাহাহ! সোনা জাদু!

নাদিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো। জাহিদের খুব লজ্জা লাগছে। কিন্তু নাদিয়া গান গাইতে লাগলো।

– জাদু! জাদু! জাদু! জাঁদু! আইলা জাদু! হাহাহাহ!
– চুপ করুন! (বিব্রত হয়ে)
– জাদুউউউউ তেরি নাজার!
– থামুন না! (আহ্লাদে)
– কী জাদু করিলা, পিরিতি শিখাইলা!
– আর না। ব্যাস! (হাসতে হাসতে)
– তুনে ও রাঙ্গিলে ক্যায়সা জাদু কিয়া?
– পিয়া পিয়া বোলে মাতওয়ালা জিয়া!
– হাআআআ, তুনে!

নাদিয়া থেমে গেল। জাহিদ গান গাইলো! ও কী ভুল শুনছিল? কল্পনা?
– আপনি গান গাইতে পারেন?
– না।
– এই মাত্র গাইলেন!
– ভুল করে। বাবার প্রিয় গান, মায়ের জন্যে গাইতো।
– আমার বাবার ও!

নাদিয়া রেডিওটা চালিয়ে দিলো। 99.6 আরজে ঐশীর শো চলছে। তার মানে জাহিদ এটা শোনে। নাদিয়া ওর দিকে আড়চোখে তাকায়, জাহিদ সোজা তাকায়। এখন তো ওর আর প্রিয়মের প্রিয় গান হচ্ছে। নাদিয়া খুব উত্তেজিত হয়ে বলল,

– আমরা প্লিজ গানটা একসাথে গাইবো।
– আমি পারব না।
– লজ্জা পাবেন না। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!
– ওকে

“Tell me why” – জাহিদ
“Ain’t nothin’ but a heartache”- নাদিয়া
“Tell me why”- জাহিদ
“Ain’t nothin’ but a mistake”- নাদিয়া
“Tell me why”- জাহিদ
“I never wanna hear you say” – নাদিয়া
“I want it that way” – দুজনে একসাথে

গান শেষে ওরা হাসতে লাগলো। গাড়ি চালানোর সময় ও কখনো কথাও বলেনি, আজ গান গাইলো।

– ভালো লাগছে , তাই না?
– হুম।
– এই গানটা আমার আর প্রিয়মের প্রিয় গান। আমরা দুজন একসাথে রেডিও শুনতাম। লুকিয়ে এইটা প্লে করার রিকোয়েস্ট করতাম। এরপর একসাথে গাইতাম। পরে আমরা কম্পিউটারে এইটা প্লে করতাম। কত মজার দিন ছিলো।

নাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাহিদের দিকে তাকায়। ও আবার আগের মতো হয়ে গেছে। একটু আগের হাসিটা আর নেই। নাদিয়া ভাবছে ও কত কিছু সহ্য করেছে ছোটবেলায়। এত ছোট বয়সে একা মায়ের সেবা করেছে। তখনই কী কিছু হয়েছিল, যে কারণে কাউকে কিছু বলতে পারেনি। বাসায় ফেরার পর নাদিয়ার বাবার ফোন এলো।

– তুমি অবনীর জন্মদিনে আসছো।
– পারব না। ব্যস্ত।
– তোমার স্কুলে ছুটি চলছে। আমি জানি।
– রেস্ট নিচ্ছি।
– মিঠাই ও আসছে।
– আমি চাচ্চুর বাসায় যাবো না। চাচ্চু আমাকে পছন্দ করেন না।
– আমাদের বাসায় হচ্ছে। অবনী মন খারাপ করবে। তোমার চাচ্চু কোনোদিনও ওর জন্মদিন পালন করেনি।
– ওকে। উপহার কী দেব?
– ওকেই জিজ্ঞেস করো। আর হ্যাঁ, জামাইকে রেখে এসো না।
– ওটা আমার হাতে না। ওনার পার্সোনাল প্ল্যান থাকতে পারে।
– এসব কী হাবিজাবি বলো। তোমাদের মধ্যে সব ঠিক না এখন? তোমাদের ছবিও তো দেখলাম।

নাদিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। বাবাও দেখেছে! রাহুর কাজ।

– ঠিক। কিন্তু অফিসের কাজ থাকলে। উনি না আসলে আমিও কিন্তু আসব না। চাচ্চু আবার অন্য কিছু বলবে।
– তুমি জামাইকে ফোন দাও।

নাদিয়া জাহিদকে ফোন দিয়ে হাত দিয়ে ইশারায় বলল না করে দিতে।

– জ্বী বাবা।
– তুমি আগামী মঙ্গল বার আসতে পারবে? ফ্যামিলি প্রোগ্রাম আছে। তোমরা অনেকদিন আসো না।
– জ্বী! কিন্তু,
– আমি জানি নাদিয়া ওপাশ থেকে তোমাকে মানা করে দিতে বলছে। প্লিজ তুমি ওকে নিয়ে বাড়ি এসো। ও একটু রাগ করবে তবুও ওকে রাজি করিয়ে নাও।
– ওকে। আমরা আসবো।

নাদিয়া রাগ করে ভেতরে চলে গেল। জাহিদ ওর পেছনে পেছনে গেল।

– স্যরি, আসলে বাবা এত করে বলল।
– আপনি না বলতে পারেন না কেন! এভাবে কী চলবে?
– অবনীর জন্য কী গিফ্ট?
– আমি রাগ করেছি! বুঝতে পারছেন?
– স্যরি। আচ্ছা, আপনার ফোনে এটা কী করছেন?
– কী?
– লক স্ক্রিনে এটা কী ছবি দিলেন?
– জাদু।
– কীহ!
– কোয়ি মিল গ্যায়ার জাদু।
– এটা কেন?
– পিপি স্যার বলল না আপনার ছবি ওয়ালপেপার দিতে।
– এই এইটা আমি!
– হ্যাঁ এটা জাদু। আর আপনার নাম জাদু। একই কথা।
– ডিলিট করুন!
– আমার ফোন আমার ইচ্ছা।

নাদিয়া আর জাহিদ ওদের মতো ঝগড়া করছে আর অবনীর জন্য উপহার ঠিক করেছে। এদিকে মিশান ও তৈরী হচ্ছে, অরনীকে এতদিন পর দেখতে। একটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল ওর সাথে। কোনো কাজ অসম্পূর্ণ থাকলে ওর ভালো লাগে না।

(চলবে)

[ আমার টানা ক্লাস চলছে। আজকে বিকালে ক্লাস শেষে ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য গল্প দিতে দেরি হলো। স্যরি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here