রিস্টার্ট পার্ট_২৫

0
2938

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২৫

বেনজির বৃষ্টির অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার পর নাদিয়া দুইবার দেখাও করেছে। অনেক মজার মানুষ। যেন কোনো খালামণি বা ফুফুর সাথে কথা হচ্ছে। নাদিয়া একাই যায়, কিন্তু আসার সময় জাহিদের সাথে আসে। আজকে নাদিয়া বাসায় একা। ওর মেইল চেক করে দেখে ম্যাগনেফিসেন্ট ওকে অ্যাপয়েন্ট করছে। খুশি তে ও আত্মহারা। আফরাকে ফোন করে সব জানালো,

– এখন আমি জাহিদ কে কথা টা কী করে বলব?
– সমস্যা কী? বলে ফেল।
– ওনাকে তো বলিনি ইন্টারভিউ দিয়েছি। যদি না হতো লজ্জায় পড়তাম তো।
– আরে এক কাজ কর, কেক বানা। কেক বানিয়ে খেতে দে। খেতে খেতে বলবি , বেশি রাগ করবে না।
– রাগ করার কথা না। আর আমরা কেক খাই না।
– বছরে একটু আধটু স্পেশাল করাই যায়। চকলেট কেক বানা।
– আমি পারি না। আর ওনার পছন্দ না।
– কাপ কেক মিক্স বানা। চকলেট এতটাও খারাপ না। আর চকলেট স্ট্রেস কমায়।

নাদিয়া অনলাইনে সব সরঞ্জাম অর্ডার করে কেক বানাতে বসলো। রেডিওতে আরজে ঐশী চলছে। কাপ কেকের মোল্ডে কেকের ব্যাটার ঢালছে আস্তে আস্তে। কলিংবেল বাজতেই গিয়ে খুশি হয়ে দরজা খুলে। জাহিদ ঘরে ঢুকলো।

– আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
– জ্বী। আপনি কী কিছু করছেন?
– হুম। বেইক।
– ওকে।

জাহিদ ফ্রেশ হতে গেল। নাদিয়া কেক গুলো ওভেন এ ঢুকালো। কেক বেইক হচ্ছে। রেডিওতে আরজে ঐশী একটা পুরনো দিনের ইংরেজি গান ছেড়েছে। গানের সুরে সুরে নাদিয়ার শরীর ও দুলছে। গানের সুর দ্রুত হয়ে যাওয়ার পর নাদিয়ার তাল ও দ্রুত হয়ে গেল। নাদিয়া প্রচুর উপভোগ করছে,

” I love you, baby,
And if it’s quite alright,
I need you, baby,
To warm a lonely night.
I love you, baby.
Trust in me when I say:
Oh, pretty baby,
Don’t bring me down, I pray.
Oh, pretty baby, now that I found you, stay
And let me love you, baby.
Let me love you.”

নাদিয়ার ভাবনাবিহীন এই চঞ্চল নৃত্য দেখে জাহিদের খুব ইচ্ছে হলো ওর সাথে নাচতে। নিজের কল্পনায় জাহিদ দৌঁড়ে গিয়ে নাদিয়ার কোমড় জড়িয়ে ওর হাতে হাত রাখে, ওর পায়ে পা মেলায়। এক উৎফুল্লময় আনন্দে মেতে উঠে ওরা। বাস্তবে শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা যায়। হঠাৎ জাহিদের নাকে চকলেট কেকের ঘ্রাণ আসে। নাদিয়া কেক গুলো বেইক শেষে বের করে আনে। চকলেট কেক, আর অরনী দুটোই ওর খুব পছন্দ। কিন্তু বলা বারণ।

“You’re just too good to be true.
Can’t take my eyes off you.
You’d be like Heaven to touch.
I wanna hold you so much.
At long last love has arrived
And I thank God I’m alive.
You’re just too good to be true.
Can’t take my eyes off you.”

নাদিয়ার চোখ জাহিদের দিকে যায়,

– আপনি কখন এলেন?
– একটু আগে।
– ওহ স্যরি! চকলেট কেক। আমি আসলে কেক বানাতে পারি না। এগুলো কেক মিক্স। চকলেট ফ্লেভার এভেইলেবল। সমস্যা হবে না তো?
– কোনো সমস্যা নেই। আমি পছন্দ করি।

নাদিয়া ভাবছে, আবার মিথ্যে বলছে। জাহিদ এসে খাবার টেবিলে বসে। নাদিয়া কেক গুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। জাহিদ খুব উৎসুক।

– আপনার বেনজির ম্যাডাম কেমন?
– খুব ভালো। পিপি স্যারের বন্ধুরাও বোধহয় ওনার মতোই
– পিপি স্যারের বন্ধু!
– উনিই তো রেকমেন্ড করলেন। অনেক ভালো মানুষ। আচ্ছা, উনিই কী পিপি স্যারের বিবি? বেনজির বৃষ্টি ….
– কী বলছেন?

জাহিদ একটু অপ্রস্তুত। হতেও পারে, কিন্তু না! বেনজির কে ও খুঁজে বের করেছে। বেনজির পিপিকে চিনতে পারে না।

– ওহ হ্যাঁ। আমার চাকরি হয়ে গেছে।
– কী!
– জ্বী।
– কখন?
– আজকেই।
– ইন্টারভিউ কখন দিলেন?
– দিয়েছি একদিন।
– আমাকে বলেননি তো?
– আপনাকে সব বলতে হবে নাকি? আগে তো বলতাম না।
– আপনি অসুস্থ অবস্থায় ইন্টারভিউ দিতে গেলেন তাও আবার না জানিয়ে। আবার বলছেন বলতে হবে কেন?
– আশ্চর্য তো!
– আশ্চর্যের কী আছে! আপনি না জানিয়ে একটা অচেনা জায়গায় গিয়েছেন আর আমাকে বলেননি! আমার কী চিন্তা হয় না?
– আমার কিছু হয়নি তো। আর আমি কী বাচ্চা?
– না! তবে আপনি আমার দায়িত্বে আছেন। আপনার কিছু হলে সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করবে।
– আপনি কী কোনো ভাবে মেনে নিতে পারছেন না আমি জব করছি।
– এজ ইফ আগে মানিনি? জব করা মেইন বিষয় না। মেইন বিষয় ইউ আর সিক। আর একা একা একটা মেয়ে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া টা বিপদজনক হতে পারে আপনি কী জানেন না?
– আপনি আমাকে আন্ডারস্টিমিট করছেন।
– আপনি কোথাকার কথা কোথায় নিচ্ছেন ! সিম্পল ব্যাপার আপনার জিনিসটা আমাকে জানানো দরকার ছিল।
– ভালো হয়েছে বলিনি। আর বলবও না!

নাদিয়া উঠে চলে এলো। জাহিদের ও খুব রাগ হলো। ও রেগে অভদ্র ভাবে কেক খেতে লাগলো। সচরাচর এমন করে না। ওর হঠাৎ মনে হলো ও কী ওভাররিয়েক্ট করল? হাত থেকে কেকে রেখে মুখ মুছতে লাগলো। এখন কী ওকে স্যরি বলবে? কিন্তু নাদিয়ার বলা উচিত ছিল। কত আপদ বিপদ রাস্তায়। নাদিয়ার হঠাৎ মনে হচ্ছে জাহিদ একটু অন্যরকম আচরণ করছে ইদানিং। ওর মন খারাপ থাকায় মিঠাই আপু কাল বাসায় আসতে বলার সাথে সাথে নাদিয়া হ্যাঁ বলে দিল। দুপুর বেলা সেখানে খাওয়া দাওয়া করার বিকেলে চলে আসবে।

– এই, জাহিদ কে বল এখানে আসতে।
– ওনাকে বলিনি আমি এখানে এসেছি।
– কেন?
– উদ্ভট আচরণ করছে। সারাদিন কোথায় কোথায় এমন বলতে থাকে। সেদিন বললাম জব হয়েছে উনি বললেন কখন ইন্টারভিউ দিলেন? আমাকে বলা উচিত ছিল। অপরিচিত জায়গা ব্লাহ! ব্লাহ ! ব্লাহ! সারাদিন শুধু বলে আপনি অসুস্থ।
– তুই যা করলি ওর সামনে, ভয় পাওয়ার ই কথা। আর ইন্টারভিউ দিচ্ছিস ওকে বলিসনি কেন?
– বললে যেতে দিত না। তখন কিছুদিনই হয়েছিল হাসপাতাল থেকে এসেছি।
– এই তো সত্যি বের হলো। ইন্টারভিউ দিতে অপরিচিত জায়গায় একটা মেয়ে, এইটা সেইফ না ও হতে পারে। ওর ব্যবহার যৌক্তিক। এখন আবার বাড়ি গিয়ে যদি না দেখে তোকে তো কী ভাববে? তোর ইগোও দিন দিন।
– আগেও তো বাইরে যেতাম।
– তখন ও জানতো তোর স্কুল কোথায়। কিন্তু এই সময়ে তোর বাসায় থাকার কথা। তোকে নিয়ে আমাদের কত ভয় হয়। আর ও তো তোর স্বামী। স্বাভাবিকভাবেই ওর ভয় হবে। নিজেকে প্রশ্ন কর তুই ওর সাথে কেমন ব্যবহার করেছিস। কিছুদিন আগেই এমন একটা কান্ড।
– এখন বাসায় যাবো?
– ওকে ফোন করে ডাক।
– রাগ করবে?
– সুন্দর করে বল।

নাদিয়া জাহিদকে ফোন করে ডাকলো। অ্যাড্রেস পেয়ে জাহিদ ও আসছে। আজকে নাদিয়াকে স্যরি বলতে হবে। একটা ভালো গিফ্ট ও কিনতে হবে। নতুন চাকরি হয়েছে। অভিনন্দন না জানিয়েই ঝগড়া শুরু করলো। কলিংবেল বাজতেই নাদিয়া গিয়ে দরজা খুলল। ওর হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল।

দরজার বাইরে মিশান দাঁড়িয়ে। মিঠাইয়ের স্বামী গিয়ে কোলাকুলি করলো। নাদিয়ার মেজাজ আবার আকাশে। মিঠাই অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
– তুই এখানে কেন? তোকে তো ডাকিনি।
– আমি তো এমনি দুলাভাই কে কল করেছিলাম। উনি বললেন অরনী এখানে, জাহিদ ও আসবে। তাই দেখা করতে আসলাম।

মিঠাইয়ের স্বামী এসব ব্যাপারে কিছুই জানেনা। সে তো হেসেই যাচ্ছে। মিঠাই নাদিয়া কে ভেতরে ডেকে ক্ষমা চাইলো। এখন তো জাহিদ ও চলে আসবে। নাদিয়া ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মিশান হাজির,
– কীরে অরু বেবি।
– শাট আপ!

নাদিয়া চলে আসছিল। ওর আজ ঝামেলা করার ইচ্ছে নেই। মিশান নাদিয়ার আঁচল টেনে ধরল।

– এতটা নির্লজ্জ মানুষ আমি কখনো দেখিনি!

নাদিয়া ওর আঁচল ছাড়িয়ে চলে আসলো।

– দাঁড়াও। জাহিদ আসবে, তাই না?
– হ্যাঁ।
– শোনো, জাহিদ না এতটাও ভালো না যেমন টা তুমি ভাবো। তোমার ভালোর জন্য বলছি। অনেক পরিষ্কার মিথ্যা বলতে পারে। ও সেদিন যেভাবে আমাকে ফাঁসালো,
– একদম চুপ। ও এখন আসলে যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলো, আমি কিন্তু কোনো পরোয়া করবো না এটা তোমার বোনের শ্বশুর বাড়ি।
– আমি নিজেও করি না। আই অনলি কেয়ার আবাউট ইউ।
– ব্লাডি সাইকো !

নাদিয়া সেখান থেকে চলে আসে। মিশান ও ওর পেছনে পেছনে আসছে। মিঠাইয়ের স্বামী ততক্ষণে দরজা খুলে ফেলেছে। জাহিদ হাসি মুখে ঢুকল। নাদিয়ার দিকে চোখ যেতেই ওর চোখ যেন আরো জ্বলে উঠলো। মিঠাইয়ের শাশুড়ি ও সেখানে আছে। মিশান ও এসে নাদিয়ার পাশে দাঁড়ালো। মিশানকে দেখে জাহিদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। নাদিয়া এগিয়ে জাহিদের হাত ধরে বলল,

– খালাম্মা, উনি আমার স্বামী।
– বুঝতে পেরেছি।

নাদিয়া জাহিদের হাত ধরে টানল। জাহিদের মনেই ছিল না সালাম করার কথা। সালাম করার পর ড্রয়িং রুমে মিশান জাহিদ ও মিঠাইয়ের স্বামী বসে আছে। জাহিদের ইচ্ছে করছে মিশানকে মেরে ফেলতে। একটু ও লজ্জা হয় না। নাদিয়া কে এখনই এখান থেকে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু ওনারা এখন নাস্তা দিচ্ছে। এরপর আবার খেতে বলবে। তার আগেই চলে যেতে হবে। কিন্তু মিশান মিঠাইয়ের স্বামী কে বলল ওদের ছাঁদে নিয়ে যেতে। এমন ভাব করছে যেন জাহিদ আর মিশান কত ভালো বন্ধু। থানার ঘটনা জার্মানের ঘটনা ঘটেইনি। জাহিদের না পারতেই ছাঁদে যেতে হলো। মিঠাইয়ের স্বামী আবার নীচে চলে আসলো একটা কারণে। এই সুযোগে মিশান,

– তো, এখন তোমরা ভালো আছো?
– হুম।

জাহিদ চলে আসছিল,
– কাপুরুষের মতো চলে যাচ্ছ কেন? আসো, কথা বলি।
– তুমি এখানে কেন এসেছ?
– অরনী বলেনি আমিও আসবো? লুকাচ্ছে, দেখেছ?
– আমি তোমার সাথে এখানে আর কোনো ঝামেলা চাইনা।
– তোমার মতো পুরুষ থেকে আর কী আশা করা যায়? যে পুরুষ কি না নিজের বউয়ের সাথে শোয়ার জন্য ডাক্তার দেখাতে হয়।

মিশান জোরে জোরে হাসতে লাগলো। জাহিদ অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করছে।

– তুমি নাকি ওকে ছুঁয়েও দেখো না? তাই তো সেদিন হালকা ছুঁয়ে দিতেই ছটফট করে উঠলো। আর আজকে শাড়ি টানতেই কেমন জানি করলো। আহ! এমন একটা বউ থাকতে তোমার মনে কিচ্ছু জাগে না?
– আজকেও আবার হ্যারাস করেছিলে না! একেবারে হাতটা ভেঙে দেব! (চিৎকার করে)
– পারলে বউকে টাচ কর। তুই না করলেও অন্য কেউ করে দেবে। এতদিনে করেও ফেলেছে। আই ডোন্ট থিংক ও বিয়ে পর্যন্ত ওয়েট করেছিল। শি ওয়াজ নট ভার্জিন! বয়ফ্রেন্ড্ ও তো ছিল। ঐ যে ফিল্ম ডিরেক্টর। সাধারণ মেয়েরা তো ওর কাছে গিয়ে সব খুলে দেয়। আর অরনী তো গার্লফ্রেন্ড ছিল।
– ওনার নামে আর একটা বাজে কথা বলবি না!
– তুই তো ওকে টাচ করিস না ওর চেহারা দেখলে বোঝাই যায়। এক মিনিট, তুই ওর প্রথম না। তোর আগেই কাউকে দিয়েছে, তাই তোর মন খারাপ না?

জাহিদ দাঁত চেপে চলে আসছে। এই মিশান চাইছেই ও কিছু একটা করুক। ও যাই বলুক, আজকে ঝামেলা করা যাবে না। বোনের বাড়িতে নাদিয়ার মান সম্মান নষ্ট হবে। ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসবে।

– তুই না করলে ও বসে থাকবে না। পরকীয়া শুরু করবে। ও এমনই। আমার পাশে শোবে না। অন্য কারো পাশে শুয়ে পড়বে। ব্লাডি স্লা*ট!!!

জাহিদ দৌঁড়ে গিয়ে মিশান কে মাটিতে ফেলে ইচ্ছে মতো লাথি মারতে লাগলো। আর মিশান চিৎকার করতে লাগলো, “মার আমাকে! আরো জোরে! ব্যর্থ পুরুষ! বউকে কন্ট্রোলে রাখে না!” জাহিদ ওর মাথা ঠান্ডা করতে ইচ্ছে মতো মিশানের বুকে পিঠে লাথি মেরেই যাচ্ছে। “তোর মতো পুরুষের ভাগ্যে এমন স্লা*ট ই জুটবে!” কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই হাজির। নাদিয়া জাহিদকে কোনো মতে ছাড়ালো। ক্ষিপ্ত জাহিদ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ওর এ কী হিংস্র রূপ দেখছে নাদিয়া।
– আপু দেখ, আমাকে অনেক মেরেছে। বিনা কারণে। পাগল একটা।
– কোনো একটা কারণ অবশ্যই থাকবে।

নাদিয়া জাহিদকে ঠান্ডা করে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো ,

– কী হয়েছে?
– এখান থেকে চলুন।
– কেন ?
– এখনই চলুন!!!!

জাহিদের এই গর্জন ও প্রথম শুনলো। ভয়ে নাদিয়া ওর সাথে চলে আসলো। মিঠাই মিশানের কাছে গিয়ে বলল,

– এবার কী বলেছিস?
– আমি কিছু বলিনি।
– এমনি এমনি ক্ষেপে গেল?
– হ্যাঁ।
– আমি শুনেছি তুই মার মার করছিলি! অরনীর নামে কী কথা বলেছিস?

মিঠাইয়ের স্বামী মিশানকে তুলে বলল,

– আগে ওকে বাড়ি নিয়ে যাই?
– না! তুমি ওকে কেন ডেকেছ আজকে? এই বেয়াদব লম্পট টা কেন এসেছে!
– ও কী করেছে?
– আমার লজ্জা হচ্ছে। আমার আগে বলা উচিত ছিল ও একটা লম্পট! ওকে আমার ভাই বলতে লজ্জা হয় আর তাই ওকে আমি আমার বাসায় ডাকি না। বের হয়ে যা! এখন এই মুহূর্তে!

মিঠাই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। এদিকে জাহিদ অনেক গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। নাদিয়ার ভয় হচ্ছে কোনো দুর্ঘটনা না হয়, ” জাহিদ আস্তে, সিগনাল ব্রেক করবেন নাকি!” লালবাতিতে অনেক জোরে ব্রেক করলো জাহিদ। নাদিয়া খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো, ” আপনি মারামারি করলেন কেন? আপনাকে কী বলেছে যে একদম এরকম মারামারি করতে হবে?” জাহিদে রাগ ওর কপালের শিরায় দেখা যাচ্ছে। জাহিদের মতো শান্ত মানুষের এমন রুদ্র রূপ এর আগে কখনো দেখেনি। নাদিয়া আস্তে করে ওর হাত বাড়িয়ে জাহিদের হাতে রেখে বলে,

– ও আপনাকে যা বলেছে তার জন্য আ’ম স্যরি।
– ও আমাকে কিছু বলেনি আর আপনি কেন স্যরি?
– তো?

নাদিয়া জাহিদের চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারে।

– আমাকে বলেছে তো এত রাগার কী আছে? স্বাভাবিক ব্যাপার।
– এটা স্বাভাবিক না! আপনি জানেন না কী বলেছে!
– কী?
– জানার দরকার নেই।
– স্লা*ট বলেছে? বলেছে ভার্জিন না। যার তার সাথে শুয়ে যাই?

সিগনাল ভাঙতেই জাহিদ জোরে গাড়ি টান দেয়। নাদিয়া আর ওর কথা শেষ করতে পারে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে আসে। ঘরে ঢুকতেই জাহিদ ওর পকেট থেকে ওয়ালেট আর হাত থেকে ঘড়ি সোফার উপর ছুঁড়ে ফেলে। নাদিয়া বুঝতে পারল এখনো রাগ কমেনি।

– এত রাগ করার কী আছে? আমাকে বলেছে, আমি তো রাগ করছি না।
– কেন রাগ করছেন না?
– কারণ এটা আগেও শুনেছি। অনেকেই বলে। বিশেষ করে যারা সুযোগ পায় না, তারাই বলে। তারা নিজের মতো গল্প বানায়, আমাকে সুযোগ দেয়নি। নিশ্চয়ই অন্য কাউকে দিয়েছে। ও তো একটা স্লা*ট, ওর স্বভাব ই এমন। ঐ যে পিপি স্যারের ধারণা।

জাহিদ এসব কথা শেষ করার আগেই নাদিয়ার কাছে তেড়ে যায়। নাদিয়া ভয় পেয়ে যায়। এভাবে কেন এলো ওর কাছে।

– জানার পর ও কিছু বলেন না কেন?
– বললে কী হবে? ওদের মুখ বন্ধ হবে না। ওদের মুখের কথা ওদের মুখে থেকে যাবে। আর আপনি রাগলেন কেন? আপনার কী মনে হয়? আমিও কী স্লা..
– চুপ! একদম চুপ!

নাদিয়ার ঠোঁটের উপর নিজের আঙুল চেপে আছে জাহিদ। ওর চোখে যেন রক্ত জমে আছে। এত ভয়ংকর চোখ ও এর আগে কখনো দেখেনি। মিশান ভাইয়া কী আরো কিছু বলেছে?
– এমন করছেন কেন? ও আর কী বলেছে?
– চুপ বললাম না! আর কিচ্ছু বলেনি।
– আমাকে বলুন। শান্ত হন।
– ও কী আজকে আবার হ্যারাস করেছে?

নাদিয়া ওর চোখ নামিয়ে ফেলল। জাহিদ ওর চিবুক ধরে বলল,

– করেছে তাই না?
– হুম।
– কেন গিয়েছেন ওখানে?
– জাহিদ আমি জানতাম না ও থাকবে।
– আপনি জানতেন না ওটা ওর বোনের বাড়ি!
– চিৎকার করছেন কেন?
– আমি চিৎকার করবো! আমি ওকে মা*রবো! খু*ন করে ফেলবো!

নাদিয়া ভয়ে কানে হাত দিয়ে ফেলল। হঠাৎ এমন হয়ে গেল কেন? নাদিয়া আস্তে করে সেখান থেকে চলে আসতে চাইছিল কিন্তু জাহিদ ওকে শক্ত করে ধরল। নাদিয়া ওর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করার সময় বলল, “ডোন্ট টাচ মি! লিভ মি অ্যালোন!” এরপর জাহিদকে ধাক্কা দিয়ে চলে এলো। নাদিয়া ওদের ঘরে আসতেই জাহিদ আবার ওকে শক্ত করে ধরল,

– আজকে আপনাকে ছুঁয়ে দেখবো!
– মানে কী এসবের!

জাহিদ নাদিয়ার চেহারা নিজের হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখছে। কী ভয়ানক দৃষ্টি! এই ছোঁয়ায় ভালোবাসা নেই। নাদিয়ার বিষয়টা খুবই জঘন্য লাগছে। অত্যন্ত ঘৃণার সুরে নাদিয়া বলল, “অসভ্যের মতো এসব কী করছেন?” এই কথা শোনার পর জাহিদ যেন আরো রেগে গেল। এক ধাক্কায় নাদিয়া কে খাটের উপর ফেলে দিলে। নাদিয়া কোনো ভাবে নিজেকে সামলে নিল। এমন কেন করছে? এরপর জাহিদ নিজের শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগলো। এটা তো জাহিদ না। এ যেন অন্য কেউ। অন্য মানুষ। খুবই বাজে মানুষ! তার চোখে কোনো ভালোবাসা নেই। খুবই জঘন্য এই দৃষ্টি! জাহিদ এখন ওর প্যান্টের বেল্ট খুলছে। নাদিয়ার হৃদস্পন্দন যেন থেমে যাচ্ছে। ও এখন কী করবে? ভয়ে নাদিয়ার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। নাদিয়া নিজের হাত জোড় করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ” প্লিজ এসব করবেন না। আমার মনে হয় আপনি আজ ঠিক নেই।” জাহিদ সজোরে ওর হাত দিয়ে নাদিয়ার বাহু জাপটে ধরল। অনেক শক্ত করে ধরে আছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। নাদিয়া ওর হাতে ব্যথা পাচ্ছে। ও যখন বাঁচার জন্য লড়াই করছিল কিন্তু জাহিদ ওকে আরো শক্ত করে ধরেছে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নাদিয়ার ব্লাউজের হাতা ছিড়ে যায়। সেখানে জাহিদের হাতের নখের আঁচড় স্পষ্ট হয়। সেই আঘাতে নাদিয়া চিৎকার করে উঠে। এই চার দেওয়ালে এখন শুধু ওরা দুজন। ওকে চাইলেও কেউ বাঁচাতে পারবে না। তবু নাদিয়া চিৎকার করে, ” আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও!” এই জাহিদের হাত থেকে ওকে বাঁচাতে কে আসবে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here