রিস্টার্ট পার্ট_৩৪

0
2663

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৩৪

জাহিদের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে নাদিয়া। এজন্যই নিজের লক্ষ্য পূরণের আগে বিয়ে করতে চায়নি সে। কারণ নিজের ব্যক্তিগত জীবন এসবের মাঝে চলে আসতে পারে। আর এখন সেটাই হচ্ছে। নাদিয়া ওর একটা স্পাই ক্যাম দ্বারা দুটো ছেলের একটি ছেলেকে শাসানোর ভিডিও করলো। ঠিক সেই সময় একটা ছেলে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নাদিয়া স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলে আসে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওর মনে পরে এটা তো সেই ছেলেটা, সেদিন যাকে চড় মারা হচ্ছিল,
– এই, তুমি কী এ লেভেল?
– ও লেভেল।
– আচ্ছা, সেদিন তোমাকে কেন চড় মারা হচ্ছিল?
– কোনো চড় মারা হচ্ছিল না। আপনি ভুল দেখেছেন।
– আমি ঠিক দেখেছি। আচ্ছা, বলো। আমি কাউকে বলব না।
– আসলে, এমনিই মারা হচ্ছিল। কোনো কারণ ছিল না। করতেই থাকে।
– ওকে। তোমার সাথে পরে কথা হবে। তোমার নাম?
– তারিফ হোসাইন।
– সেকশন?
– এ।
– তুমি স্কলারশিপ?
– জ্বী।
– আর কোনো স্কলারশিপ আছে?
– হ্যাঁ। আরো দুজন।
– ওরা কোন সেকশন?
– সবাই সেম।
– স্কলারশিপ সবাই কী একই সেকশনে?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা, আসি।

নাদিয়া আবার চিন্তা করতে লাগলো। তাহলে জাহিদ আর প্রিয়মের ও তো একই শাখায় থাকার কথা। কিন্তু এখন সেটা বড় বিষয় না। বড় বিষয় হলো ঐ আজফার। নাদিয়া জাহিদকে ওদের বাসার কাছের একটি ক্যাফে তে ডাকে। কারণ কিছু কথা এখন ওভাবে বাড়িতে বলা যাবে না।
– এখন কী অবস্থা?
– কীসের?
– তোমার কেসের।
– কোনো কেস নিচ্ছে না। প্রমাণ নেই।
– আশ্চর্য! ঐ সিসি টিভি ফুটেজ!
– ওখানে কোনো প্রমাণ নেই আমাকে হুমকি দেওয়ার। আমি হেরে গেছি। ওরা আমাকে আবার ব্যবহার করলো!
– মানে?
– মানে, আমাকে হুমকির খবর সবার মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। আর ঠিক সে কারণে সবাই সরে যাচ্ছে কাজটা থেকে। আজফার এটাই চেয়েছিল। আর সেটাই হলো। ও আমাকে ফোন করে সব বলেছে।
– আর ইউ শিওর?
– হ্যাঁ! পুলিশ ও কেস নিল না। দেখলে তো ও কত ক্ষমতাবান। আমি আর পারছি না। অফিসে আমাকে সবাই সহানুভূতির চোখে দেখে।
– তো?
– সিমপ্যাথি তো রাস্তার কুকুর বিড়ালের জন্য ও হয়।
– আহা! এটা সে বিষয় না।
– তুমিই তো বলেছিলে।
– এত বেশি বোঝ কেন? আমি অন্য কথা বলেছিলাম। এসব না করে, ভেঙে না পড়ে চিন্তা করো কী করে ওদের শিক্ষা দেবে।
– কী করে? আর সম্ভব না। তুমি ঠিক, আমি ভীতু। আমার পক্ষে এসব কিছুই সম্ভব না।
– চুপ করো! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নাও। রিল্যাক্স! এখন চিন্তা করো, তুমি কী চাও।
– মানে?
– আগে চিন্তা করো তুমি আসলে কী চাও। তুমি যা চাও তার নিশ্চিত হলে তার পথ ও ঠিকই বের হয়ে আসবে।

জাহিদ মাথা ঠান্ডা করে। আস্তে আস্তে চিন্তা করে ও ঠিক কী চায়। এর মধ্যে ওদের অর্ডার চলে আসে। কিছুক্ষণ পর জাহিদ বলে,
– আমি চাই ও শাস্তি পাক।
– জেলে যাক।
– আরো বড় শাস্তি। ও বরবাদ হয়ে যাক!
– তা করতে হলে কী দরকার?
– প্রমাণ, ওর কৃতকর্মের।
– ও কী করেছে?
– ও হুমকি দিয়েছে আমাকে।
– আর ?
– আর, গুলি বের করেছে।
– তা ছাড়া, আবার চিন্তা করো।
– কী?
– ও স্বীকার করেছে ,
– ও কারো কেয়ার করে না। মানুষ ওর কাছে কিছু না।
– হ্যাঁ! আর?
– আর ওরা দুর্নীতিবাজ! ওদের আর্থিক অবস্থা ও মন্দা। ওরা এখানে বড় হাত মারতে চাইছে।
– এর প্রমাণ আছে?
– ওদের রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়। শুধু মাত্র সেদিনের প্রমাণ টা থাকলেই,
– আছে।
– কী?
– ঐ ভিডিও টা আমার কাছে আছে।
– কীসের?
– আজফার যে তোমাকে ধমকাচ্ছিল।
– কী করে!!
– আস্তে। সবাই দেখছে।
– কীভাবে ভিডিও করলে?
– আমার কাছে কিছু স্পাই ক্যাম ছিল। চাবির রিংয়ের মতো। ঐদিন শরবত দেওয়ার সময় রেখে আসি।
– কোথায় পেয়েছ?
– সেটা বড় কথা না। বড় কথা হচ্ছে আরো একটা ক্যামেরা ছিল। ও যখন দরজার সামনে এসেছিল।
– তুমি কী করে!
– আমার কাছে দুটো ফুটেজ ই আছে।
– আমাকে দাওনি কেন?
– এভাবে আমরা সব ফুটেজ নিলে বলতো প্রি প্ল্যানড। আর তখন অন্য বাহানা করতো। পুলিশ কিছু করবে না আমি তা তখনই বুঝেছি যখন একটা পুলিশ আসার পর আজফারের কথা শুনে চুপসে গেল।
– এখন?
– এখন আমরা পুলিশের কাছে না অন্য কারো কাছে যাবো।
– ঐ নুসরাত? দেখো প্রতিবার মিডিয়া,
– এ ছাড়া উপায় কী? তবে এবার আমি ঠিক করেছি একটা এক্সপোজ চ্যানেল আছে ইউটিউবে। ওনারা কোনো সরকার বা প্রভাবশালী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। ওনাদের ফান্ডিং আসে বিদেশ থেকে। বিদেশে নির্বাসিত সমাজ সংস্কারকরা ওটা চালায়। তারা একটু পর আসবে। তোমার কাছে অন্য তথ্য থাকলে দিতে পারো। ওরা আমার চেয়েও ডেয়ারিং!
– থ্যাংক ইউ।
– এভাবে প্যানিক হয়ে যাও কেন? তোমার ডাক্তার তোমার চিকিৎসা করে না?

ওরা যাদের সাথে দেখা করতে এসেছিল তাদের সাথে কথা বলে তাদের সব তথ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর সেই একই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। এই রাস্তায় আগে ও এসেছিল, প্রিয়মের সাথে। এখানেই অরনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। সব পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। নাদিয়া জাহিদের হাত জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমরা কাল আমাদের বাসায় চলে যাব।
– কেন?
– তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। হাজার হোক, শ্বশুর বাড়ি একটা প্রতিকূল পরিবেশ।
– পিপি স্যারের কথা বলছ?
– হুম।
– আচ্ছা, ওরা কী আমার পিছু ছাড়বে?
– অবশ্যই। এটা দেখে আরো ভয় পাবে। জীবনে তোমার কী, জাহিদ নামের কারো সামনে হাঁটবে না।
– আচ্ছা, আমি কী এখনো ভীতু?
– না। এই তো কত সাহস করে ওদের সব বললে। কত স্মার্ট লাগছিল। আমি আগে চিন্তা করতাম এমন একটা ছেলে তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না, সে কী করে এত উন্নতি করলো তাও আবার এমন পজিশনে। আজকে আমি ইম্প্রেসড! তুমি সত্যিই অনেক গুছিয়ে কথা বলো। কিন্তু আমার সামনে কী হয়? সানি আর আজফার না হয় তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছিলে। আমি কী করেছি?

” তুমি না, আমি করেছি।” মনে মনে এটুকুই বলল সে। বাড়ি ফেরার পর ওর মনে হলো ও সত্যিই পাঙ্গা নিচ্ছে তাদের সাথে। সেই ক্ষমতাবানদের সাথে। প্রিয়ম সত্যিই বলতো, অরনী বাকি সবাইকে ওর মতোই সাহসী করে গড়ে তোলে। সেই সময় যদি অরনী থাকতো ওদের সাথে, হয়তো প্রিয়ম ও থাকতো আর ওর বাচ্চা ও। এরা সবাই জেলে থাকতো। সব কত সুন্দর হতো।

শুদ্ধ ফুলের বাগানে দৌঁড়াচ্ছে। ওর সামনে একটা দশ এগারো বছরের মেয়ে ও দৌড়াচ্ছে। শুদ্ধ আর মেয়েটি হাসছে। পেছন থেকে ওকে প্রিয়ম ডাকলো, ও হাঁপাতে হাঁপাতে তাকালো।
– তুই!!! হ্যাপি তো?
– অনেক। তবে ওরা আমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি তো পাচ্ছে না।
– একটা পেলেই হলো। ওরা কষ্ট পাচ্ছে তা ভেবেই আনন্দ হয়।
– হ্যাঁ রে, অরনীকে বললেই হতো। আমরা দুটো নকল বীর যা তা করে ফেলেছিলাম।
– এখন আর বলে কী হবে। দিন শেষে শাস্তি হবে।
– শুধু তো একজন। আরেকজন পেতে পারে। পাবে কি না নো গ্যারান্টি। হারাধনের ছয়টি ছেলে। না না, পাঁচটি ছেলে আর একটি মেয়ে করলো অনেক পাপ, একটি জেলে তাকে ছাড়িয়ে নেবে বাপ!
– ওর বাবাও জেলে।
– কতদিন? এক বছর? দু বছর? খুব বেশি পাঁচ বছর। ক্ষমতার চাকা ঘুরবে, আর সব আগের মতো।
– সানি কানাডার জেলে।
– ওকে কয় বছর জেলে রাখবে? ওর তো ফাঁসি হওয়ার কথা। একদিন না একদিন ছাড়া পাবে। তখন তুই কোথায় যাবি?
– পরের কথা পরে। এখন তো সাজা পাচ্ছে।
– সাজা কী পার্মানেন্ট? কী গ্যারান্টি ও আবার বদলা নিতে আসবে না? তুই বদলা নিবি, ওরা বদলা নেবে। দুটো চক্র একসাথে, পৌনঃপুনিক। ইনফিনিটি, চলতেই থাকবে।
– তো কী করবো?
– অন্ত চাই। ওদের গোড়া থেকে বিনাশ। একে একে ধ্বংস। আমার সাথে, আমার বাচ্চার সাথে করা পাপের না হলেও অন্য পাপের হোক!

অফিসে গিয়েই জাহিদ প্রজেক্টের কাজ শুরু করলো। কেউ রাজি হচ্ছে না। কিন্তু ও কাজটা শেষ করবেই। এই প্রজেক্ট কিছুতেই আজফার যাতে না পায় ও সেই ব্যবস্থা করবে। তাহলে ওদের আরেকটা ধাক্কা লাগবে। ওদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। আজফার ও বুঝবে জাহিদ কম নয়। কিন্তু কেউ ওর পক্ষে কাজ করতে চাইছে না। বিকেল বেলা নাদিয়াদের বাসা থেকে সব নিয়ে ওরা নিজেদের বাসায় যাচ্ছে। নাদিয়ার বাবা এতে সম্মতি জানাচ্ছেন না। অত্যন্ত বিপদজনক। তাই তারা রাহুকে ও সেখানে থাকার কথা বললেন। বেচারা শালারাও যেন কামলা। সারাদিন হাসপাতালে কাজ করে আবার বোন আর দুলাভাই কে পাহারা দিতে যাওয়া। জাহিদ বুঝতে পেরেছে এতে ওর একটুও সায় নেই। মানা করে দিয়ে ওরা ওদের গাড়িতে উঠলো। কিছুক্ষণ চালানোর পর ও নাদিয়া কে বলল,
– তুমি ক্যামেরা কোথায় পেলে?
– পেয়েছি।
– কোথায়? এসব ক্যামেরা আবার স্কুলে নিয়ে যাও না তো?
– নিলে কী হবে? তুমি কী কিছু জানো?
– আশ্চর্য! ওরা তোমাকে ধরে জেলে ভরে দেবে।
– তাই? কী এমন আছে ওখানে? কোহিনুর?
– যাই থাকুক। স্পাই ক্যাম নরমাল না। যে কেউ এইসব দেখলে বুঝবে সামথিং ইজ রিয়েলি রং।
– না আমি ওসব স্কুলে নেই না।
– তো? এগুলো কেন কিনেছ?
– তোমার উপর নজর রাখতে।
– হোয়াট!!!
– এমনি। মজা করতে। মানে তুমি যখন কাজ করো দেখতে কেমন লাগে। সারাক্ষণ কী এমনই থাকো? কখনো ক্যারেকটার থেকে বের হও না।
– কী বলতে চাও?
– মানে আমি দেখতে চাইছিলাম তুমি কী সবসময় এমন চুপচাপ সাধুবাবা সেজে থাকো নাকি আসলেই সাধুবাবা। কখনো কী গুণগুণ করো না। কখনো লাফিয়ে নাচানাচি করো না। এসব দেখতেই আমি ক্যামেরা কিনেছিলাম।
– হোয়াট ডু ইউ মিন! আমি এমনই। তোমার সামনে আমি যেমন থাকি তেমনই!
– একদম না। ঐ লোকগুলোর সামনে কেমন ছিলে। একদম কুল। আই থিংক তুমি রহস্যময়ী শান্ত বাচ্চাদের মতো।
– কে সে?
– সব ক্লাসেই থাকে। অনেক ইনোসেন্ট ভাব দেখায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে কতদূর কেউ জানে না। যেমন হ্যাকার হতে পারে, বা নিজের ঘরে বসে ব্রেক ডান্স করতে পারে। ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। তাদের নিজেদের জগৎ থাকে। আমার মনে হয় কেউ যখন দেখেনা তখন তুমি হাত পা ছুড়ে নাচানাচি করো।
– তোমার মতো?
– হ্যাঁ। তুমি কী করে জানলে!!!
– দেখি তো। রেডিও ছেড়ে গানের তালে তালে শুধু হাত পা না, পুরো শরীর ছুড়ে নাচানাচি করো।
– এই তো তোমার আসল রূপ! লুকিয়ে আমাকে নাচতে দেখো আর এমন ভাব করতে যে আমার ওপর তোমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
– আর তুমি যে ক্যামেরা ফিট করেছো।
– সেটা তো কিছু কাজে দিলো।

নাদিয়া মনে মনে ভাবছে অন্তত এটা বিশ্বাস করেছে। ওকে ম্যাগনেফিসেন্টের কথা বলা যাবে না। আবার দুশ্চিন্তা করবে। আর জাহিদের হলো আবার অন্য দুশ্চিন্তা। ও তাহলে ওর উপর নজর রাখছে। ওর কী সত্যি সন্দেহ হচ্ছে।

নাদিয়া ওর স্কুলে প্রতিদিনের মতো তদন্তে বের হয়েছে। আজকে গিয়েছে লাইব্রেরির কাছে। ওয়াসি ওর ক্লাসে। নাদিয়া বাচ্চাদের বইয়ের কাছে গেল। কিন্তু এখানে বাচ্চাদের আসা নিষেধ। তবুও বাচ্চাদের সেকশন আছে। বড়লোকদের বড়লোকি কাজ। হঠাৎ ই একটা শব্দ ওর কানে এলো। নাদিয়া সেই আওয়াজের দিকে গেলো। গিয়ে দেখলো দুজন ছাত্র ছাত্রী আপত্তির অবস্থায়। মেয়েটা নাদিয়াকে দেখা মাত্রই ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেল। ছেলেটা নিজের ঘাড়ে চুলকে যাওয়ার সময় নাদিয়া জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি মেয়েটার সাথে কী করছিলে?
– দেখলেন ই তো।
– তুমি হ্যারাস করছিলে? স্কুলের ভেতর!
– না ম্যাম। লাইব্রেরির ভেতর।

এই কথা বলে ছেলেটা হাসতে হাসতে চলে গেল। ছেলেটা ছিল ফারাজ। সেদিন ও নাদিয়ার সাথে ঝামেলা করেছিল। নাদিয়া বুঝতে পারছে না এটুকু বাচ্চা ছেলের এত সাহস কী করে আসে। এখন কথা শোনা ছাড়াও আর কিছুই করার নেই।

– ওয়াসি! আমি আর চুপ করে থাকতে পারবো না।
– কেন?
– ওরা আজকে একটা মেয়েকে হ্যারাস করছিল।
– কারা?
– ফারাজ। এসব দেখার পর ও চোখ বুজে রাখা! সম্ভব না।
– আরেকটু ম্যাডাম! তবে মেয়ে টা কে?
– মেয়েটা তো চলে গেল।
– মেয়েটা কে তা জানলে কিছু করা যেত।
– তবে সেদিনের ছেলেটির নাম তারিফ হোসাইন।
– কে?
– থাপ্পড় খেল যে। ও স্কলারশিপ।
– ওকে। নাদিয়া, আমাদের ওর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আমি ছেলেটার সাথে কথা বলব, তুমি মেয়েটাকে খুঁজে বের করো।
– ওকে।
– আর বাকি সব ঠিকঠাক?
– হুম।

এরই মাঝে জাহিদের প্রজেক্টের কাজ চলছে। ওর অফিস সেখানে আর কোনো ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে না। ওকে মেইল দিয়েছে অন্য প্রজেক্টে কাজ করতে। কবে যে আজফারের পতন আসবে। ঐ সাংবাদিক গুলো কী কাজ করছে না? হয়তো ওরা আজফারকে সব প্রমাণ দিয়ে ফেলেছে। জাহিদের আবার নিঃশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে।

– শুদ্ধ, তুমি চাইলেই তোমাকে আমি ইনহেলার সাজেস্ট করতে পারি না। ওটা আমার কাজ না।
– ম্যাডাম আমার স্ট্রেস দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে!
– তুমি এই এক্সারসাইজ করতে পার। ইউজ স্ট্রেস বল, রুবিকস্ কিউব। রিল্যাক্স করো। ঘুমের ঔষধের অ্যাডিকশন মারাত্মক! এর বদলে বিভিন্ন চা আছে। তা পান করে দেখতে পারো।
– কীভাবে চিন্তা মুক্ত হবো আমি বুঝতে পারছি না।
– তুমি তো বললে তোমরা প্রমাণ জোগাড় করেছ। তারা কী ভিডিও বানাবে।
– কিন্তু এখনো আসছে না। ওরা হয়তো বিক্রি হয়ে গেছে। সামনে আজফার আমাকে আরো ফাঁসাবে।
– শুদ্ধ তুমি এত অধৈর্য কেন? হয়তো সেটা অনেক বড় একটা ভিডিও। তৈরী করতে অনেক সময় দরকার। একটা ভিডিও বানাতে মাঝেমধ্যে কয়েককমাস লাগে।
– তাহলে তো ওরা প্রজেক্ট পেয়ে যাবে। আর এত গুলো মানুষের ভবিষ্যত ও শেষ।
– ভালো জিনিস আসতে সময় লাগে। মনে রাখবে, যেটা তোমার ইচ্ছায় হচ্ছে সেটা তোমার ইচ্ছা। আর যেটা তোমার ইচ্ছায় না, সেটা ওনার ইচ্ছা।

বেনজির তার আঙুল উপরের দিকে করলো। জাহিদ শেষ আশাটুকু পেল। কিন্তু অফিসিয়ালি সেঞ্চুরি তাদের নামটা কেটে দিয়ে শেষ আশাটুকু নিভিয়ে দিলো। জাহিদ এখন অন্য প্রজেক্টে কাজ করছে। তার মধ্যে খবর এলো আজফাররা সেই প্রজেক্ট পেয়ে গেছে। ওরাই জিতে গেল। সামনে ফিল্ডের কাজে ঢাকার বাইরে যাবে জাহিদ। নাদিয়া তখন একা থাকবে। ওর দুশ্চিন্তা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এভাবে কাজে মনোযোগ রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নাদিয়াকে ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিত দেখলো,

– তোমার ব্যাগ গোছাবে না?
– আমি? কেন? আমিও যাচ্ছি?
– না। তুমি বাবার বাসায় যাবে।
– আবার!!!
– হ্যাঁ। বেশি বাড়াবাড়ি করো না। একা একা এই পুরো বাসায় আমি তোমাকে রেখে যাবো না।
– আমার ভালো লাগে না।
– তোমার ভালো না লাগলে আমি এখন!!

জাহিদ উত্তেজিত হয়ে গেল। নাদিয়া ওর কাছে গিয়ে ওকে দেখে। ও চশমা ঠিক করে,
– কী?
– বকা দেব। তুমি তো মনে করো আমি শান্ত! হাবাগোবা! কিন্তু আমি যখন রেগে যাই!
– গাল লাল লাল হয়ে যায়। হাহাহাহাহাহাহ!!!!
– আমি ফাজলামি করছি না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ওখানে যাবো। আর কিছু নেওয়া বাকি? শোনো, ওখানে গিয়ে ভিডিও কল করবে।
– মাঝ দরিয়ায় নেটওয়ার্ক থাকবে?
– অডিও কল করবে।
– তোমার স্পাই ক্যামেরা দিয়ে দাও না।
– কোথায় ঢুকিয়ে দেব, বুঝতেও পারবে না। আচ্ছা, ফিমেল কেউ যাচ্ছে?
– না তো?
– ভয় পেও না। আমি এত সন্দেহবাজ না।

সেদিন রাতে জাহিদ কে ওর গাড়িতে তুলে দিয়ে একা গাড়ি চালিয়ে নাদিয়া ওদের বাসায় এলো। এই একটা কাজে ওর যা ভয়। এখন দেখা যাচ্ছে পারবে। তবে ম্যাগনেফিসেন্টে ইদানিং বেশি ছবি ভিডিও করতে হবে পারছে না। আজ যখন সুইমিং পুলের দিকে গেলো সেখানে দেখলো দুটো ছেলেকে ইচ্ছে মতো মারছে আরো কয়েকজন। সেখানে ফারাজ নেই। এটাই সুযোগ সেই স্ট্রেস বল ক্যামেরা ব্যবহার করার। এটাকে একবার চাপলেই অন হয় আর দুইবার চাপলে অফ। নাদিয়া একবার চেপেই সেটা ছুড়ে মারলো। এরপর চিন্তা করলো এখন কী ও অপেক্ষা করবে? ও বের হয়ে আসতেই ফারাজের সাথে দেখা।

– মিস , আপনি এখানে?
– এমনি।
– এমনি সুইমিং পুলে মানুষ কী করে।

ভেতর থেকে খুব জোরে জোরে কান্নার শব্দ আসছে। ফারাজ নাদিয়ার দিকে মুচকি হেসে তাকায়। নাদিয়া ও মাথা উঁচু করে ভ্রূ উঁচিয়ে বলল,
– বুঝতে পেরেছ? শব্দ শুনেই এসেছি।
– আচ্ছা মিস, আসতে পারেন।

নাদিয়া চলেই আসছিল তখন ফারাজ বলল, ” ম্যাডাম, দাঁড়ান! এটা কী?”

ফারাজের হাতে সেই স্ট্রেস বল। নাদিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ও কী বুঝে ফেলবে নাদিয়া এখানে ভিডিও করতে এসেছিল!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here