হুংকার পর্ব-৬

0
1835

#হুংকার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৬

মোবাইলের শব্দ শুনে উর্মির ঘুম ভাঙলো। উঠে মোবাইল নিয়ে দেখে মোস্তফা কল করছে৷ ঘড়ির দিকে তাকাল। সকাল ১০ টা বাজে। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে রিসিভ করে কানে ধরলো,
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, কোথায় তুমি?”
“বাসায়”
“তৈরী হয়ে নাও আমি আসছি তোমাকে নিতে।”
“কিন্তু কেন? কোথায় যাবে?”
“পরে বলবো।”
মোস্তফা কল কেটে দিলো। উর্মি মোবাইল রেখে চুল হাত খোপা করে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে চলে গেল।

রশিদের ডাকে ইয়ামিনের ঘুম ভাঙলো। রশিদের কেবিনে ঘুমিয়ে ছিল ইয়ামিন। চেয়ারে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল বলে এখন কোমড় আর ঘাড় ব্যাথা করছে তার। ইয়ামিন সোজা হয়ে বসতেই কোমড়ে ব্যাথা অনুভব হলো তার। রাগী কন্ঠে রশিদকে বলল,
“তোর চেম্বারে একটা বেড পর্যন্ত নেই। এই কেমন হসপিটালে কাজ করিস?”
“আরে ভাই আমি নাইট ডিউটি খুব করি। তো বেড দিয়ে কি করবো? আর ডিউটি থাকলেও আমার ঘুমানোর সময় কোথায়?”
“হয়েছে হয়েছে, যখন তখন সবাই শুধু জ্ঞান দেয়।”
“আচ্ছা রাগিস না। ইলিয়াস তোকে ডাকছে গিয়ে দেখ কি বলে।”
ইয়ামিন উঠে বাহিরে গেল। ইলিয়াস আর আসফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সে এগিয়ে গেল তাদের দিকে। আসফিয়া বেগম ইয়ামিনকে দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন। ইলিয়াস বলল,
“ভাইয়া আপনি বাসায় চলে যান। আপনার আর আসতে হবে না হসপিটাল।”
ইয়ামিন আড়চোখে আসফিয়া বেগমকে দেখে বলল,
“আমার হসপিটালে আসার একদমই ইচ্ছে নেই। আব্বু বলেছিল বলে এসেছিলাম।”
আসফিয়া বেগম রেগে বললেন,
“ইচ্ছে নেই তো এখানে কি করছো? তোমার ছায়া পর্যন্ত আমি সহ্য করবো না। যাও এখান থেকে।”
“আস্তে কথা বলুন। এটা আপনার বাড়ি না। আমার বন্ধুর হসপিটাল। চিৎকার করতে হলে নিজের বাড়িতে গিয়ে করুন।”
ইলিয়াস সাথে সাথে বলল,
“ভাইয়া প্লিজ বেয়াদবি করবেন না আন্টির সাথে।”
“তোর আন্টিকে বল আমার সাথে অকারণে তর্ক না করতে। যখন তখন শুধু চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়।”
“ভাইয়া প্লিজ আপনি বাসায় চলে যান।”
“যাচ্ছি, আমার কোনো শখ নেই এনাদের গোলামী করার। তুই করছিস, করতে থাক।”
বলেই ইয়ামিন ঘুরে হনহন করে হাঁটা ধরলো। আসফিয়া বেগম হাতমুঠো শক্ত করে রেখেছেন। রাগে শরীর জ্বলছে উনার। রাগী দৃষ্টিতে ইয়ামিনের যাওয়ার পথে তাকালেন। ইয়ামিন সুলতান সাহেবের ছেলে বলে চুপচাপ সব অপমান হজম করে নিলেন উনি।
.
.
উর্মি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াচ্ছে। মোস্তফা হঠাৎ কোথায় যাওয়ার কথা বলছে বুঝতে পারছে না। চুল ঠিক করে হাতে ঘড়ি পড়ে নিলো। তখনই হর্ণ বাজানোর শব্দ আসলো। উর্মির মন বলছে মোস্তফা এসেছে। দৌড়ে বারান্দায় গেল। মোস্তফা হোন্ডার উপর বসে আছে। উর্মিকে দেখে হাসিমুখে হাই দেখালো। উর্মি মুচকি হাসলো। আজ মোস্তফা নায়ক সেজে কেন এসেছে বুঝলো না। মোস্তফা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ইশারায় বলল তারাতাড়ি আসতে। উর্মি তাকে হাতের পাঁচ আঙুল দেখিয়ে ইশারা করে বলল পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে সে আসছে। দ্রুত ঘরে গিয়ে কানের দুল পড়ে চুল আবারো ঠিক করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বাবার সাথে দেখা করে পারমিশন নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। মোস্তফা উর্মিকে আসতে দেখে তাকিয়ে রইল। উর্মি কাছে আসতেই বলল,
“আজ প্রকৃতির সৌন্দর্য লজ্জা পেয়ে বলবে মানুষ যতটা ভাবে তারা ততটাও সুন্দর না। দুনিয়াতে এমনও কিছু মানুষ আছে যাদের সৌন্দর্য প্রকৃতিকেও হার মানায়।”
উর্মি হেসে বলল,
“আপনার নাটকীয় বক্তব্য শেষ হলে আমি বাইকে বসতে পারি?”
“জি মহারানী বসুন।”
উর্মি বাইকে বসে মোস্তফাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাত ৩ টা পর্যন্ত জেগে ছিল সে। মোস্তফার ব্যবহারের কথা ভাবছিল। কেমন অচেনা হয়ে গিয়েছিল তখন মানুষটা। কিন্তু এখন খুশিতে মন নেচে উঠছে তার। আগের রূপে ফিরেছে তার প্রিয় মানুষটা। মোস্তফা বাইক স্টার্ট দিলো। উর্মি একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করা যাক কোথায় যাচ্ছে তারা। আবার ভাবলো, মানুষটা তো অচেনা না। তাই বিশ্বাস করে যাওয়া যাক। উর্মি জানে, মোস্তফা কখনো তার বিশ্বাস ভাঙবে না।
.
.
ইয়ামিন দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। গাড়ি পার্ক করে হনহন করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। সুলতান সাহেব আর রমজান সাহেব ড্রইংরুমে বসে ছিলেন। সালাম পর্যন্ত দিলো না সোজা ঘরে চলে গেল। সুলতান সাহেব অবাক হলেন না। ইয়ামিনের অতিরিক্ত রাগ হলে কারো সাথে কথা বলে না উনি জানে। কিন্তু ইয়ামিন তো হসপিটাল ছিল। তো হঠাৎ কি হলো যে এত রাগ করছে সে। উনি রমজান সাহেবকে বসতে বলে ইয়ামিনের ঘরে আসলেন। ইয়ামিন ঘরে নেই। তার জুতা, শাল আর ঘড়ি বিছানায় পড়ে আছে। সে নিশ্চয়ই বাথরুমে। সুলতান সাহেব বসে ইয়ামিনের অপেক্ষা করতে লাগলেন।

ইয়ামিন বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে বাবা বসে আছেন খাটে। ধীরপায়ে হেটে এসে উনার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালেন। বাবা তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললেন,
“কি হলো হঠাৎ?”
ইয়ামিন শান্ত গলায় বলল,
“তেমন কিছু না। আমি আর হসপিটাল যাব না।”
“তোমার যা ইচ্ছা। তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ার পর্যন্ত আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না। আমার ছেলে এতটা নিচে নামবে না আমি জানি।”
ইয়ামিন কিছুটা অপ্রস্তুত হলো বাবার কথা শুনে। বাবা আশে পাশে চোখ বুলিয়ে বললেন,
“ঘর পরিষ্কার করে ফেলো। আর হ্যাঁ, ভদ্র ছেলেদের মতো বাহিরে এসে তোমার রমজান আংকেলকে সালাম করো।”
ইয়ামিন কিছু বলল না। তার মোটেও ইচ্ছে করছে না এখন ঘর থেকে বের হতে। বাবা এগিয়ে এসে ইয়ামিনের গালে হাত রেখে বললেন,
“তুমি আমার প্রথম সন্তান। তোমার প্রতি টান বেশি আমার। কিন্তু বাবাই, তোমার ব্যবহার আমার পছন্দ না। একবার নিজের মন থেকে রাগ ঘৃণা মুছে ফেলো। দেখবে পুরো দুনিয়া সুন্দর লাগতে শুরু করবে।”
ইয়ামিন গাল থেকে বাবার হাত সরিয়ে বলল,
“আমি পারবো না নিজেকে পরিবর্তন করতে। আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো। কেও আমাকে পছন্দ করুক বা না করুক। আমার এতে আসে যায় না।”
“এত রাগ ভালো না ইয়ামিন। রাগ শুধু মানুষকে ধ্বংস করতে জানে।”
ইয়ামিন বিরক্ত হয়ে বলল,
“আব্বু প্লিজ। আমি যেমন আছি আমাকে থাকতে দিন।”
সুলতান সাহেব নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। ছেলেকে বুঝানো উনার পক্ষে সম্ভব না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ইয়ামিন খাটে বসে নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে বসে রইল।

পাশাপাশি বসে আছে উর্মি ও মোস্তফা। দুজনের হাতে আইসক্রিম। মোস্তফা কিছুটা রেগে আছে। কারণ উর্মি ভুলে গিয়েছে আজ তাদের ভালোবাসার ১ বছর পুরো হয়েছে। উর্মি মোস্তফা হাত ধরে বলল,
“মাফ করে দাও। আমি খুব লজ্জিত।”
“কথা বলো না আমার সাথে।”
“আচ্ছা সরি, আমি ওয়াদা করছি আর কখনো এমন হবে না। কিছুদিন যাবত এত টেনশনে আছি যে কিছুই মনে রাখতে পারি না।”
মোস্তফা উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, সব কিছুর সাথে সাথে আমাকেও ভুলে যাও।”
“এটা কখনো সম্ভব না। যতদিন বেঁচে আছি তুমি মনে আছো।”
মোস্তফা মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকাল। উর্মি হাসলো। মোস্তফার গাল ধরে টেনে বলল,
“রাগ করলে এত কিউট দেখায় কেন তোমাকে আমার মিষ্টি আলু।”
মোস্তফা বড়ো বড়ো চোখ করে উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আবারো আমাকে আলু ডাকলে? তোমার কারণে আমি ৬ কেজি কমেছি।”
উর্মি হেসে মোস্তফার এক গাল চেপে ধরে বলল,
“তবুও তো গাল গুলো বেলুনের মতো ফোলা ফোলা।”
“এই ছাড়ো আমায়।”
উর্মি মোস্তফার গাল ছেড়ে জাপ্টে ধরলো তার হাত। কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“যতোই রাগ করো আমি বেহায়ার মতো তোমার সাথে চিপকেই থাকবো। আমার একমাত্র আমানত তুমি। এত সহজে ছাড়বো না-কি?”
“গতকাল কি যেন বলছিলে?”
“ইমোশনাল হয়ে মানুষ কত কিছুই বলে। সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। আমি তোমাকে ছাড়ছি না।”
মোস্তফা শব্দ করে হেসে উঠল উর্মির কথা শুনে। উর্মি মুচকি হাসি দিয়ে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে রইল। মোস্তফার সাথে দেখা না হলে সে কখনো হয়তো জানতে পারতো না ছেলেদের চেহারায়ও ভীষণ মায়া থাকে।
.
.
ইয়ামিন লাইটারে আগুন একবার জ্বালাচ্ছে আবার নিভিয়ে দিচ্ছে আবার জ্বালাচ্ছে আবার নিভাচ্ছে। তার দৃষ্টি লাইটারের আগুনের দিকে। তার ভেতরে এর থেকেও বেশি আগুন জ্বলছে। রাগ ক্ষোভ অভিমান, সব জোয়ারভাটার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু এখন তার ধৈর্য ধরতে হবে। আকাশ গর্জে ওঠার শব্দ আসছে। ইয়ামিন আকাশের দিকে তাকাল। কালো মেঘ ছেয়ে আছে চারপাশে। ইদানীং বৃষ্টি বেড়েছে। বজ্রপাতের শব্দ আসলো। ইয়ামিন তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে গেল ভাবনায়…..

———-

তুফান আসার আশংকা। সকাল থেকে বাতাস চারপাশে। ইয়ামিন অফিস যায় নি। ঘরের সব জানালা বন্ধ করে চাদর উড়ে ঘুমিয়ে আছে। ড্রইংরুম থেকে কথা বলাবলির শব্দ আসছে। ইয়ামিন বিরক্ত হলো। তার বাড়িতে থেকেও সে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ আসলো। ইয়ামিন তবুও শুয়ে রইল। ইলিয়াস এসে ইয়ামিনের উপর থেকে চাদর সরিয়ে ফেলল। ইয়ামিন বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকাল ইলিয়াসের দিকে। ইলিয়াস কোমড়ে হাত রেখে বলল,
“আমি জানি আপনি ঘুমান নি। এখন বাহিরে আসুন সবাই আড্ডা দেবো আজ।”
“অনেকদিন পর অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। অবসর সময় গুলো বিশ্রাম করে কাটাতে চাই। যাও তুমি এখান থেকে। আর চাদর দাও আমার।”
“ভাই প্লিজ, রমজান আংকেল বার বার তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে। আন্টি, উর্মি রাবেয়া মিলে পাকোড়া বানাচ্ছে। আপনি পাকোড়া খুব ভালোবাসেন তাই না? উঠুন এখন দ্রুত।”
পাকোড়ার কথা শুনতেই ইয়ামিনের পেট থেকে গড়গড় শব্দ আসা শুরু করলো। এখন ভাব নিয়ে শুয়ে থাকলে চরম লস হবে। ধীরে ধীরে উঠে বসলো। ইলিয়াস মুখ ভরা হাসি দিলো। ইয়ামিন দাঁড়িয়ে বলল,
“এত জোর করছিস তো না কিভাবে করি? চল তাহলে।”
ইলিয়াস নিঃশব্দে হাসলো। ইয়ামিন জ্যাকেট পড়ে নিলো। ঠান্ডায় তার হাত পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। বের হলো দুজন ঘর থেকে। রমজান সাহেবকে সালাম দিয়ে ইয়ামিন সোফায় বসলো। বসে থাকার সময় ইয়ামিন বার বার রান্নাঘরের দিকে তাকাচ্ছে। চেষ্টা করছে না তাকানোর। কিন্তু না, চোখ বার বার সেখানে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল। সুলতান সাহেব বললেন,
“কি হলো?”
“খুব..খুব পিপাসা পেয়েছে। আমি পানি পান করে আসি।”
বলেই ইয়ামিন রান্নাঘরের দিকে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখলো কে কে আছে। আসফিয়া বেগম পাকোড়া ভাজছেন। উর্মি ওভেনে কাজ করছে। আর রাবেয়া একপাশে দাঁড়িয়ে আপেল খাচ্ছে। ইয়ামিন এক ভ্রু উঁচু করলো। এই মেয়েটা কি কোনো কাজ পারে না? রাবেয়া হঠাৎ বলল,
“আপু, তোমার ভাই সুস্থ হয়েছে না-কি এখনো পাগলামো করে?”
ইয়ামিন ভ্রু কুঁচকালো তার কথা শুনে। উর্মি হেসে বলল,
“আমার ভাই আবার কবে অসুস্থ হলো শুনি?”
“উনি কথায় কথায় রাগী ষাঁড়ের মতো রাগ করেন। জানো, আমার মন বলছে উনার মাথায় সমস্যা আছে।”
আসফিয়া বেগম ধমকের স্বরে বললেন,
“চুপ থাকো রাবেয়া। ইয়ামিনের স্বভাবটাই এমন।”
“এটা আবার কেমন স্বভাব আম্মু? বড়ো ছোটো মানে না সবাইকে অপমান করে বেড়ায়। এমনটা হতে থাকলে উনার কখনো বিয়েই হবে না।”
উর্মি বলল,
“বেশি কথা বললে তোমার সাথেই ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে দেবো।”
“এহহহ এমনটা হওয়ার আগে আমি মৃ*ত্যু বরণ করা পছন্দ করবো। তোমার ভাই আমার জীবন তছনছ করে ফেলবে।”
“তুমি যতটা ভাবো ততটাও খারাপ না আমার ভাই। একবার কাওকে ভালোবেসে ফেললে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারবে তার জন্য।”
“তোমার ভাই কখনো আমার জন্য প্রাণ দেবে না। উল্টো আমার প্রাণ নিয়ে নেবে।”
উর্মি হাসলো রাবেয়ার কথা শুনে। ইয়ামিন বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইল রাবেয়ার দিকে। হঠাৎ রাবেয়ার দৃষ্টি দরজার দিকে গেল। ইয়ামিনকে দেখা যাচ্ছে। তার দেখে মনে হচ্ছে এখনই রাবেয়াকে কাঁচা গিলে খাবে। রাবেয়া ভয়ে এদিক সেদিক তাকাল। কি করবে এখন? ইয়ামিন চলে গেল সেখান থেকে। ইয়ামিন যেতেই রাবেয়া নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। কিন্তু মন থেকে ভয় কাটে নি। এখন ইয়ামিনের মুখোমুখি কিভাবে হবে সে?

সবার জন্য নাশতা বানানো শেষ হওয়ায় তারা রান্নাঘর থেকে বের হলো। রাবেয়া চারপাশে চোখ বুলালো। ইয়ামিন কোথাও নেই। রাবেয়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। ইয়ামিন তো আসছে না। সবাই নাশতা করতে এবং কথা বলতে ব্যস্ত। রাবেয়া ইয়ামিনের ঘরের দিকে গেল। দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখে ইয়ামিন ইজি চেয়ারে বসে আছে। হাতে সিগারেট। রাবেয়া লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সিগারেটে এমন কি আছে সে মাঝেমাঝে ভেবে পায় না। ইয়ামিন রাবেয়ার উপস্থি অনুভব করলো। চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠল,
“তোমার সাহস কি করে হলো আমার ঘরে আসার?”
রাবেয়া চমকে উঠল।
“আপনি কি করে জানলেন আমি এসেছি?”
“সবসময় পারফিউমে ডুব মেরে আসো। তো জানা কি স্বাভাবিক না?”
রাবেয়া তার গায়ের গন্ধ শুকে নাক কুঁচকালো। আসলেও বেশ ঘ্রাণ আসছে শরীর থেকে। ইয়ামিন মাথা ঘুরিয়ে রাবেয়ার দিকে তাকাল। রাবেয়া তার চাহনি দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। ইয়ামিন সিগারেট নিভিয়ে বলল,
“মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে তোমাকে নিজের হাতে খু ন করে ফেলি।”
“আপনি আমাকে এত ঘৃণা করেন কেন?”
“তুমি আমাকে ঘৃণা করো না?”
রাবেয়া জবাব দিলো না। ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল। ধীরপায়ে হেটে গেল রাবেয়ার দিকে। রাবেয়া ঢোক গিলল। ইয়ামিন রাবেয়ার চোখের চোখ রেখে বলল,
“এত ভয় পাও কেন আমাকে?”
এই প্রশ্নেরও জবাব দিলো না রাবেয়া। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দ আসলো। রাবেয়া চাপা গলায় চিৎকার করে দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরলো। হঠাৎ শব্দ আসায় সে ভয় পেয়ে গিয়েছে। ইয়ামিন বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
“ভয়ে পেলে। বজ্রপাতের শব্দ তাহলে আমার থেকেও ভয়ংকর।”
রাবেয়া ইয়ামিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি আমার জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। আপনার থেকে ভয়ংকর আর কিছু হতেই পারে না। এখন এটাকে ঘৃণা বলে না-কি অন্যকিছু আমি জানি না।”
ইয়ামিন তাকিয়ে রইল রাবেয়ার দিকে। জবাব দিতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। উর্মির ডাক আসতেই রাবেয়া চলে গেল। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল ইয়ামিন।

——–

সুলতান সাহেব আর রমজান সাহেব হসপিটাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইয়ামিনকে ডাক দেয়ায় সে ঘর থেকে বের হলো। সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করায় ইয়ামিন বলল সে যাবে না হসপিটাল। তার কিছু কাজ আছে। সুলতান সাহেব জোর করলেন না দরকারি সব জিনিস নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন। উনারা যেতেই ইয়ামিন সোফায় বসলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে বন্ধুদের গ্রুপে মেসেজ পাঠাল,
“তোরা বাসায় আয়। খুব জরুরি কথা আছে। সবাই এখন হসপিটাল গিয়েছে। এখনই সঠিক সময় প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করা।”
মেসেজটা সেন্ড করে ইয়ামিন অপেক্ষা করতে লাগলো সবার। চারপাশে মাগরিবের আযান ভেসে উঠল। দরজা খোলা রেখে ইয়ামিন নিজের ঘরে গেল নামাজ আদায় করার জন্য।

নামাজ পড়ার সময় বাহিরে থেকে হর্ণ বাজানোর শব্দ শুনতে পেল সে। হয়তো তারা সবাই এসে পড়েছে। ইয়ামিন নামাজ আদায় করে খাটে বসলো। মোবাইল নিয়ে একটা নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরলো। রিসিভ হতেই বলল,
“ইন্সপেক্টর আলী?..জি আমি ইয়ামিন বলছি। আপনাকে বাসায় আসতে হবে এখনই। খুব জরুরি কাজ আছে।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here