#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (২০)
বাকী রাত নিতুর কেটেছে চটপট করে। কে এই নবনী?কেনো তাহেরা বেগম নবনীর কথা বললেন?কি সম্পর্ক নবনীর সাথে এদের?
নিতু হিসেব মিলাতে পারলো না। তামিম এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। নিতু তামিমকে কিছু জিজ্ঞেস করার ও সুযোগ পেলো না।
বুকে ব্যথা আর চোখে জল নিয়ে নিতু ফ্লোরে বসে রইলো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা কোনো ভুল মানুষের সাথে হয়েছে কি-না এটা ভেবেই নিতুর যতটা অস্থিরতা তার চাইতে বেশি জ্বালা পোড়া তার জন্য কারো স্বপ্ন ভেঙ্গেছে কি-না এটা ভেবে!
সারারাত নিতু এভাবেই বসে রইলো।
সকালে নিতু উঠে কিচেনে গেলো,মাথার ভেতর তার ফাঁকা ফাঁকা লাগছে,পুরো শরীর কাঁপছে । ভাত,ডাল,আলু ভর্তা করে রেখে এলো। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার রুমে এসেছে, বারবার এসে দেখে তামিম ঘুমাচ্ছে।উত্তেজনায় চটপট করতে করতে নিতু রান্না শেষ করলো।তারপর রুমে এসে দেখে তামিম ব্রাশ নিয়ে বের হচ্ছে। নিতু তামিমের হাত চেপে ধরে বললো, “আমি মরে যাবো তামিম,আমাকে সত্যি কথা বলো তুমি।নবনী কে? কি সম্পর্ক তার সাথে তোমার? দোহাই তোমার আমাকে মিথ্যে বলো না।”
তামিম এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।নিতুর এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বলে তামিম রাতে ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিল। ভেবেছিলো নিতু ভুলে যাবে এটা।নিতুকে সত্যি কথা বলার সাহস তামিমের নেই।নবনীকে হারিয়েছে সে,কিন্তু নিতুকে আর হারাতে চায় না।
তামিম এটুকু বেশ ভালো করে বুঝে যে নিতু যতোই মুখ চালাক নিতুর মনটা ভীষণ ভালো। তাহেরা বেগম নিতুকে আপন করে নিলে নিতু তাকে মাথায় তুলে রাখবে।
নবনী আর নিতু দুজন দুই রকম দুই মানসিকতার মানুষ। একজন চুপ করে সব শুনে যেতো মাথা পেতে অন্য জন অন্যায়ের কঠোর প্রতিবাদ করে। দুজনের মধ্যে একটাই মিল,দুজনেরই মন ভীষণ স্বচ্ছ। এই স্বচ্ছ মন একজনের ভেঙেছে, দ্বিতীয় বার তামিম আর সেই ভুল করতে চায় না।
নিতু আবারও জিজ্ঞেস করলো নবনীর কথা।
তামিম হেসে বললো, “আরে বলো না।বাবার এক রিলেটিভের মেয়ে ছিলো। বাবা চেয়েছিলো ওকে বউ করতে কিন্তু মা তোমাকে পছন্দ করেছে।আর আমি তো বলেছি আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।তাই মা এই কথা বলেছে।”
নিতু সন্দিহান হয়ে বললো,”সত্যি বলছ তো তামিম?এটুকুই শুধু?তাহলে তোমার মনে কিসের এতো কষ্ট তামিম?কেনো তুমি মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে আমাকে দেখলে চমকে যাও?
কেনো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি অন্যের প্রতিচ্ছবি খোঁজ?
কেনো তুমি আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে গেলে ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠো?
তোমার মর্নিং টি দিতে এলে কেনো আমাকে দেখলে অবাক হয়ে যাও?
তামিম আমি সব কিছুই লক্ষ্য করি,কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।বারবার নিজেকে এই বলে বুঝাই যে আমি এসব ভুল ভাবছি।সব আমার ভুল।
আমি নিজের সাথে আর নিজে এই অভিনয় করতে পারছি না।আমার গলায় ফাঁসের মতো লাগছে।আমি ঝগড়াঝাটি করি,সব কিছুকে এড়িয়ে চলি বলে এই না যে আমার মনে কোনো কষ্ট লাগে না।তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ঠিক কিন্তু বিশ্বাস করো,একটা দিন আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা খুঁজে পাই নি।আবেগ নিয়ে আমার দিকে তাকাতে দেখি নি।”
তামিম নিতুকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,”আমি সত্যি বলছি নিতু।আমাকে বিশ্বাস করো।আসলেই এসব তোমার মনের ভুল।তুমি সব ভুল ভাবছো,এরকম কিছুই না।”
নিতু কিছুক্ষণ তামিমের বুকে থেকে বললো,”তাই যেনো হয়।তা না হলে আমার যে কি হবে তামিম আমি জানি না।বাহিরে থেকে আমাকে যতোই শক্তিশালী দেখো সবাই ভেতরে আমি ততটাই ভঙ্গুর।এরকম কিছু হলে নিজেকে সামলাতে আমার ভীষণ কষ্ট হবে।”
নিতু চলে যেতে তামিমের যেনো ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেলো। নিতুকে ঠকাচ্ছে বলে ভীষণ অনুশোচনা হলো তার।কিন্তু উপায় নেই।একবার এক বউকে ছেড়েছে,এবার নিতুকে ছাড়লে তার লজ্জার আর সীমা থাকবে না।মনে যাই হোক,নিতুকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না কোনো কিছু।হুট করে আবারও তামিমের নবনীকে মনে পড়ে গেলো। নিতুর মতো স্ট্রং মেয়েটা যদি এরকম করে বলে নিজেকে সে সামলাতে পারবে না সেখানে নবনী কিভাবে নিজেকে সামলে নিলো?
নবনী তো আরো দুর্বল ছিলো।তবে কেনো নবনী চলে গেলো। কেনো থেকে গেল না?কি ক্ষতি হতো থেকে গেলে?
দ্বিধার দোলাচলে দুলতে লাগলো তামিম।
নিতুর মন কিছুটা হালকা হলেও একটা অস্পষ্ট খোঁচা অনুভব করতে লাগলো বুকে।ভেতর থেকে কেউ যেনো বলছে এসব কথার মধ্যে ও অন্য কথা বাকি রয়ে গেছে, নিতুর জানার বাকি।একটা গভীর শ্বাস নিয়ে নিতু ঠিক করলো সত্য উদঘাটন করবেই সে।
তামিম ব্রাশ করে এসে বললো, “আজকে কি খেয়ে অফিসে যাবো?নাশতা বানাও নি?”
নিতু বললো,”না আজকে তো নাশতা বানাই নি।শরীর কাহিল লাগছে খুব আমার। সারা রাত অস্থিরতা নিয়ে ছিলাম।”
তামিম কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো মা’কে আসতে দেখে।তাহেরা বেগম উঠে এসে গম্ভীরমুখে বললেন,”লুবনার জন্য পরোটা বানাও,ঘিয়ে ভাজবে।সাথে ডিম ভেজে দাও ওকে।আর দিশার খাবার রেডি করো একটু পরে এসে নয়তো তুলকালাম বাঁধাবে।আমার জন্য একটু স্যুপ করো চিকেন দিয়ে।”
নিতু সোজাসাপটা জবাব দিলো,”আমি এই বাসার কাজের মেয়ে নই মা যে জনে জনে গিয়ে সবার খাবারের মেন্যু জেনে নিয়ে সবার মন মতো খাবার বানিয়ে রাখবো।আপনার বউ মা দিশা ছোট বাচ্চা না যে আমাকে ওর জন্য নাশতা বানিয়ে ওর হুকুমের আগে নিয়ে হাজির হতে হবে।ওর বাবা ধনী হতে পারে কিন্তু তাতে আমার কোনো লাভ নেই।আমি ওর বাবার খাই না,পরি ও না যে ওর মর্জিমাফিক কাজ করে যাবো।আপনার মেয়ে লুবনা কচি খুকি না যে তার আহ্লাদিপনা দেখে খুশি হয়ে আমি তার পছন্দের খাবার বানাতে যাবো।
এক দিন তো দেখি নি এদের কাউকে কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখতে।আপনি তো মহারানী আপনার কথা আমি বাদ দিলাম।”
তাহেরা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,”তোর সামনে এসব কথা বলছে আর তুই ভেড়ার মতো তাকিয়ে শুনছিস তামিম?”
তামিম কিছু বলার আগে নিতু জবাব দিলো,”কি বলবে আপনার ছেলে,ছোট ভাইয়ের বউয়ের জন্য ওকালতি করবে আমার কাছে? আমি সেটা সহ্য করবো?তাছাড়া
ছেলেকে তো বানিয়ে রেখেছেন ভেড়া,কি জানি আপনার স্বামীকে ও হয়তো এরকম ভেড়া বানিয়ে রেখেছেন বলেই,অথবা বানাতে চেয়েছেন বলে বেচারা অকালে চলে গিয়েছে। আপনার মতো টক্সিক মহিলার সাথে ভদ্রলোক কিভাবে এতো বছর সংসার করেছেন আমি সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।আপনার ছেলে যদি মানুষ হতো তবে বিয়ের পর দিন সাত সকালে যখন আপনি গিয়ে আমাদের বেডরুমের দরজা নক করতে শুরু করে দিয়েছিলেন সেদিনই এসে আপনাকে বলতো এটা অভদ্রতা এই কাজ আর করবেন না।
আপনার ছেলে মানুষ হলে আপনি এসব নাটক করতে পারতেন না।এখন তো আমার মনে হয় আপনাদের এসব ড্রামার জন্যই আপনার ছোট ছেলে আমাদের বিয়েতেও আসে নি,এতোদিন হয়ে গেলো বাসায় ও আসছে না।সে-ই একমাত্র পুরুষ। ”
তাহেরা বেগমের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।তিনি ভেবেছিলেন বেতনের টাকা তার হাতে না দেওয়ার জন্য নিতুকে তিনি এভাবে মানসিক অশান্তি দিবেন যাতে নিতু শান্তির জন্য হলেও তাকে টাকা দেয়।কিন্তু তার দাবার চাল ভুল ছিলো তা বুঝতে পারলেন নিতুর কথা শুনে।এ যে বড় ত্যাঁদড় মেয়ে!
তার একটা কথায় সে হিস্ট্রি নিয়ে এসেছে।রাগে,ক্ষোভে,অপমানে তাহেরা বেগম দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন,”ফকিরের ঘরের মেয়েকে বউ এজন্যেই করতে নেই।”
কথাটা সরাসরি নিতুর কলিজায় গিয়ে আঘাত করলো। ক্ষুব্ধ হয়ে নিতু বললো,”কাকে ফকিরের মেয়ে বলছেন আপনি?”
তাহেরা বেগম বুঝলেন এবার নিতুর গায়ে লেগেছে।তাই আবারও বললেন,”তোকে বলছি,তুই ফকিরের মেয়ে।ফকির বলেই তোর বাবা মেয়েদের বেতনের টাকার জন্য উৎ পেতে থাকে। ”
নিতু নিজেকে শান্ত করে বললো,” আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন,আমার মা নিজেও স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন।আমাদের দুই বোনের পরপর জন্ম হওয়ায় মা নিজে আর চাকরি কন্টিনিউ করেন নি বাবা অনেক বলার পরেও।আমার বাবা মা দুজনেই এডুকেটেড।আপনার যোগ্যতা কি আছে?
আপনার ব্যবহার দেখে তো মনে হয় স্কুলের পিছনে দিয়ে হাটেন নি জীবনে।
আর যদি লেখাপড়া করেও থাকেন,তা কিছুতেই সুশিক্ষা নয়।আর যতোই এডুকেটেড হয়ে থাকেন আপনি, আপনার মধ্যে আমি মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটা ও দেখি নি।আসলে শিক্ষিত হলেও সবাই মানুষ হয় না।আপনার মতো ও হয় কেউ।
নয়তো আপনি জানতেন ছেলে মেয়েতে কোনো ভেদাভেদ নেই। একজন ছেলের মতো একজন মেয়ের ও অধিকার আছে তার বাবা মায়ের খেদমত করার।আমার টাকা আমি কোথায় ব্যয় করবো তা আমার ব্যাপার। আপনার বাপের টাকা না ওটা যে আপনাকে কৈফিয়ত দিবো।
আর ফকির বললেন আমার বাবা মা’কে?
আসল ফকির তো আপনি। ফকির না হলে কয়েকটা টাকার জন্য মনে এরকম ক্ষোভ পুষে রাখতেন না।ছোট লোকের মতো টাকার জন্য এরকম হ্যাংলাপনা করতেন না।আর কখনো যদি আমার বাবা মা’কে নিয়ে একটা টুঁ শব্দ ও শুনি তবে বুঝবেন আমি নিতু কতো ভয়াবহ কান্ড ঘটাতে পারি।”
তামিমের আজ মনে আনন্দ হচ্ছে যদিও চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ বিরক্ত নিতুর উপর।নবনীকে হারানোর পর থেকে তামিমের কাছে মনে হচ্ছে তাহেরা বেগমের সব ভুল স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শুধু সাহসের অভাবে মা’কে কিছু বলতে পারছে না।যতো দিন যাচ্ছে নবনীকে হারানোর ব্যথা ততোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে আর ততোই তামিমের মায়ের উপর রাগ হচ্ছে।
এজন্য নিতুকে কিছুতেই বাঁধা দিলো না সে।
তাহেরা বেগম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।ছেলেকে নিরুত্তর দেখে তাহেরা বেগম সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলেন।বুঝতে পারলেন এই মেয়ে ছেলেকে বশ করে ফেলেছে।আক্রোশে তাহেরা বেগম নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
তাহেরা বেগম যাওয়ার পর তামিম নিতুকে বললো, “মায়ের সাথে এরকম ব্যবহার করতে আমি তোমাকে নিষেধ করেছি নিতু,আমার এসব পছন্দ না।”
নিতু হাসতে হাসতে বললো,”গ্রামাঞ্চলে একটা কথা বলে মানুষ, জিংলা আনে চুলার মুখ,শাশুড়ি আনে বউয়ের মুখ।এটা আমার দাদী বলতেন।জিংলা মানে বাঁশের যেই চিকন চিকন সরু ডাল আছে,ওগুলোকে বুঝায়।
আমি তো নিজে থেকে কিছু বলি না তামিম।আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি মিলেমিশে থাকতে কিন্তু তোমার মা সেটা চান না।ঝগড়ার শুরু উনি করেন।তাই সমাপ্তি হয় আমাকে দিয়ে।আমার তো কারো জন্য কোনো খাবার বানাতে কোনো আপত্তি নেই,কিন্তু বাসায় এতোগুলো মানুষ থাকতে কেউ এগিয়ে আসে না আমাকে একটু সাহায্য করতে।
তার উপর একটা নাশতা সবার হয় না।একেক জনের পছন্দ একেক রকম। সেটা তখনই হয় যখন আমি রান্না করতে আসি।
বিশ্বাস করো ওদের সবার আলাদা পছন্দ অথবা কেউ আমাকে হেল্প করতে আসে না এটা নিয়েও আমার কোনো আপত্তি থাকতো না।আমার আপত্তি কেনো তুমি জানো?
তুমি খেয়াল করেছ,যখন হোটেল থেকে খাবার আনা হতো তখন দিশা,লুবনা সোনামুখ করে খেতো।দিশার তখন স্বাস্থ্য সচেতনতা আর থাকে না।তোমার বোনের এসব নখরা ও থাকে না।বরং ওরা বেশ আগ্রহ নিয়ে বাহিরের সব রকম খাবার খেতো।
আসলে ওদের মেইন উদ্দেশ্য হলো আমাকে দিয়ে কাজ করানোর।আমি একা কাজ করছি এতেই ওরা পৈশাচিক আনন্দ পায়।আমার আপত্তি ঠিক এখানেই তামিম।কেনো ওরা আমাকে আপন ভাবতে পারে না।কেনো এতো রেষারেষি আমার সাথে?
এই কারনেই আমি ওদের জন্য কোনো কিছু করতে চাই না।আমি যে ব্যাটারি চালিত পুতুল নই তা সবাইকে বুঝিয়ে দিতে চাই।
আমার সাথে যে অন্যায় করে আমি তাকে ছাড় দেই না তামিম। সে যেই হোক।অন্যায়ের কোনো ছাড় নেই।জানো না,অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী। ”
তামিমের গলা শুকিয়ে গেলো। যদি নিতু সত্যি নবনীর কথা জেনে যায় তবে সেদিন কি করবে এই ভেবে তামিম চিন্তায় পড়ে গেলো।
তামিম খেয়ে নিলো,নিতু কিছুই খেলো না।অফিসে যাওয়ার জন্য দুজনে রেডি হয়ে বের হতে যেতেই শুনতে পেলো তাহেরা বেগম রুমে কোঁকাচ্ছেন ব্যথায়।নিতু আর তামিম দরজা ধাক্কাতে লাগলো। তাহেরা বেগম দরজা খুললেন না।
নিতু তামিমকে বললো,”তুমি অফিসে চলে যাও,আমি থাকছি।আমি দেখবো মা’কে। দুজনে একসাথে অফিস মিস দেয়ার কোনো মানে হয় না।”
তামিমের ইচ্ছে করলো নিতুকে বলতে তুমি ও চলো,কিছু হবে না মায়ের।এটা মায়ের পুরনো অভ্যাস।
যতো কিছু হোক,জন্মদাত্রী মা।চাইলেও তামিম কিছু বলতে পারলো না। তামিম চলে গেলো। নিতু দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে অনবরত ডাকতে লাগলো তাহেরা বেগমকে।
দিশা,লুবনা কেউ উঁকি দিয়েও দেখলো না।
নিতির অফিস ১০ টা থেকে।ঘড়িতে যখন ১০.৩০ বাজলো,তাহেরা বেগম রুমের দরজা খুলে বের হয়ে এলেন।সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ। একটু আগে ব্যথায় আর্তনাদ করার কোনো ছাপ তার মধ্যে নিতু দেখতে পেলো না।
তাহেরা বেগম নিতুকে যেনো দেখতেই পান নি এরকম করে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলেন দিশার রুমে।
কিছুক্ষণ পর বাহিরে থেকে খাবার এলো। নিতু সোফায় বসে দেখতে লাগলো কি অবলীলায় ৩ জন মিলে হেসে হেসে খাবার খাচ্ছে। নিতু যেনো এই বাসায় নেই-ই।
নিতু বুঝতে পারলো এসব নিতুকে শাস্তি দেয়ার একটা আয়োজন,নিতুকে অফিসে না যেতে দেওয়ার একটা চক্রান্ত। নিতু মনে মনে বললো,”এই দিন,দিন নয় আরো দিন আছে,এই দিনরে নিয়ে যাবে সেই দিনের কাছে।”
চলবে……
রাজিয়া রহমান