#বউ (০৫)
মেঘ অতীত থেকে ফিরে আসে মেঘতার ডাকে।মেঘতা মাম্মাম মাম্মাম করে ডাকছে।সকাল হয়ে গেছে কখন মেঘ টের পায়না।ঘুম না যাওয়ার কারণে চোখ ও জ্বলছে।মেঘ উঠে দাঁড়ায়।আর মেঘতাকে দেখে,আর ভাবে–“এই মেয়েটা তো মেহুর মেয়ে।”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।মেঘতা মেঘকে দেখে দাঁড়ায়–“বাবাই কোলে নাও?”
মেঘতা বাচ্চামানুষ মেঘ এমনিতেই বাচ্চাদের প্রতি দূর্বল।মেঘ কোলে নেয়।
–“মাম্মামের কাছে চলো?”
মেহুর কথা ভাবতেই রাজ্যের মন খারাপ নেমে আসে।কিন্তু মেহু কোথায়?
রাতে কাদতে কাদতে মেহুর চোখ লেগে এসেছিলো।ভোরের দিকে ই ঘুম ভাঙ্গতে নামাজ পড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
মেহু রান্নাঘরে মেঘের মায়ের সাথে টুকটাক সাহায্য করছে।আজকে মেহুর বাবা মা ও আসবে গ্রাম থেকে।তাই বিশেষ আয়োজন ও চলছে এ নিয়ে।মেহুর হাসিমুখ দেখে বুঝার উপায় নেই যে কাল কি ঘটেছে।
মেহু নাস্তাগুলো টেবিলে সাজিয়ে দিতেই দেখে মেঘ মেঘতাকে কোলে নিয়ে আসছে।মেঘতা হাসিমুখে বলে–“মাম্মাম!কত ডেকেছি তোমাকে?”
মেহু তখন শান্তভঙ্গিতে বলে–“এখানে ছিলাম তো তোমার দাদুর সাথে,তাই শুনিনি।চলো ফ্রেশ হবে?”
মেঘ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।মেঘের মায়ের এটা চোখ এড়ায় না।তারপর ও তিনি কিছু বলেন নি।
মেহু মেঘের কোল থেকে মেঘতাকে নামিয়ে তারপর তাকে ফ্রেশ হতে নিয়ে যায়।
.
মেঘ ও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে।আর চুপচাপ খাবার খেয়ে নেয়।মেঘের মা মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
–“এত চুপচাপ মনে হচ্ছে?”
–“কই না তো আম্মু,একটু অসুস্থ লাগছে মে বি ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”
মেঘের মা তখন বলে–“যা রেস্ট নিয়ে নে?”
মেঘের বাবা এসে মেঘতাকে খুঁজে।মেঘতা সহ সবাই টেবিলে বসে।মেহু পাশে দাঁড়িয়ে পরিবেশন করে।তারপর সে ও বসে মেঘতার পাশে।মেঘের বাবা বলে–“কি দাদুভাই কেমন লাগছে এখানে?
মেঘতা তখন বলে–“খুব ভালো লাগছে।”
অল্প খেয়ে মেঘতা মাথা নাড়ে আর কিছুই খাবে না সে।তারপর মেঘতা উঠে যায়।মেহু ডেকে বলে–“কই যাও?”
–“বাবাইয়ের কাছে!”
মেঘের বাবা হাসে।
–“যাও যাও।অনেকদিন ব্যাটা শান্তিতে ছিলো।এবার বাচ্চাকাচ্চা সামলাক।কখনো ভাবিনি আমার ছেলে বিয়ে করবে সংসার পরিপূর্ণ হবে।মেহু এসে সব ভরে গেছে।আলহামদুলিল্লাহ।”
মেঘের মা ও শুকরিয়া বলে উঠে।কিন্তু মেহুর উপরের অভিনয় কৃত হাসি কেউ ধরতে পারে না।তাদের ছেলে যাকে ভালবাসত সে তো সে নয়।
তবে মেঘের মা কিছু একটা ভাবেন।খাওয়াদাওয়া শেষে মেহুকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে–“আচ্ছা মেহু একটা প্রশ্ন করি?”
–“বলুন না আম্মু?”
–“তোমার আগের নাম তাহু ছিল যে না?”
তার মানে মেঘের মা ও আপুর ব্যপারে জানতো।আপু কখনো ই এ ব্যাপারে তো বলেনি যে তাকে কেউ এমন ভালবাসতো।নাকি আপু ও জানতো না।
–“কি হলো চুপ করে আছো যে?”
মেহু তখন বলে–“আম্মু আমি আপনাকে সময় করে সব খুলে বলবো।শুধু এটুকু এখন বলছি আমি তাহু নই।আমি তাহুর জমজ বোন।”
মেঘের মা অবাক হয়ে বলে–“কিহ?একই চেহারা!আমি তো নিজেই বুঝতে পারিনি।তোমার আব্বু আম্মু কিভাবে চিনত তোমাদের?
তখন মেহু কি যেন ভেবে রাখে।তারপর বলে–“আমি জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।সময় করে একদিন আপনাকে সব বলবো।”
মেঘের মা তখন ভাবে।মেঘ কি মেহুকে মেনে নিবে।কিন্তু মেহুর তো দোষ নেই যা আছে ভাগ্যের লিখন।তবে যাইহোক মেহুর মত মেয়েকে বউ করতে পেরেছে এতেই তিনি খুশি।হোক না আলাদা মেয়ে।একদিন ঠিকই মেঘকে সব ব্যাথা ভুলিয়ে দিবে।তাহু হয়ে নয় মেহুকে মেহু হয়ে ভালবাসবে।নিজের বউকে ভালবাসবে।আর এতেই ভালো।
________________
বিছানায় চোখ বন্ধ করে মেঘ শুয়ে আছে।মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে।মেঘ এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলানোর চেষ্ঠা করছে।যাতে ভাল লাগে।মেঘতা রুমে এসে দেখলো মেঘ শুয়ে আছে।কিন্তু চুলগুলো এভাবে ধরছে কেন তার বুঝা আসলো না।
সে বিছানায় উঠে মেঘের পাশে বসলো।তারপর মেঘতা হাসলো।ছোট বাচ্চাদের চুল খুব প্রিয়,চুল একবার ধরার সুযোগ পেলে আর ছাড়ে না।ছাড়াতে অনেক বেগ পেতে হয়।মেঘতা ও মেঘের চুল ধরছে আর খিলখিল করে হেসে উঠলো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় মেঘ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো।এক অপরূপ হাসি।
–“বাবাই?”
মেঘ ছোট করে হুউউ বলে জবাব দিলো।
–“তুমি চুল ধরছো কেন?”
–“বাবাইয়ের মাথায় ব্যাথা করছে তো!এভাবে টানলে ভাল লাগে।”
–“তাই?”
মেঘ যেভাবে দেখাচ্ছে মেঘতা ও সেইভাবে টানছে চুলগুলো।সে মনে মনে খুব খুশি এমন চুল টানতে পেরে।এদিকে মেঘের ঘুম চলে আসছে!
–আচ্ছা বাবাই?”
মেঘ ঘুমের ঘোরে বলল–“হুউ!”
–“আমার মাম্মাম তোমার ও কি মাম্মাম?”
এই একটা প্রশ্ন মেঘের ঘুম উড়াল দিতে যতেষ্ট।মাথার ব্যথা আরো বেড়ে গেলো কি প্রশ্ন এটা?
মেঘতা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো।
_________
মেহু শাশুড়ির সাথে কাজে সাহায্য করছে।মেঘের মা বলে–“তোমার আব্বু আম্মু কি কি খেতে পছন্দ করেন আমাকে বলো তো?উনাদের সব পছন্দের খাবার রান্না করা হবে।”
মেহু অবাক হয়।মেহুর অবাক হওয়া দেখে মেঘের মা আবারো বলে–“অবাক হওয়ার কি আছে?উনাদের সবচেয়ে বেস্ট পছন্দের জিনিস টা আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন।এইটুকু সম্মান কি উনাদের প্রাপ্য নয়।এ আর কি বা করছি?”
মেহু তখন হেসে বলে তার আব্বু আম্মু বিভিন্ন শাক খেতে বেশি পছন্দ করে।মেঘের মা হেসে বলে–“শাক!”
–“হ্যা!”
–“ঠিক আছে।শাক তো থাকবেই সাথে আরো অনেক কিছুই থাকবে।”
মেহু খুব খুশি হয়।তারপর সে কাজে মন দেয়।বাড়িতে আরো মহিলা এসেছে কাজ করার জন্য।এদেরকে মেঘের বাবা ই নিয়ে এসেছেন।
কিছুক্ষণ পর মেঘের মা মেহুকে ডেকে বলে,
–“মেহু!তোমার আব্বু আম্মু কতদূর এসেছে ফোন করে দেখোতো?”
মেহু শাশুড়ির রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে তার আব্বুর নাম্বারে কল দেয়।কল রিসিভ করলে মেহুর বাবা ধরে।মেহু সালাম দেয়।
–“আব্বু এখন কোথায় তোমরা?”
–“এইতো কাছেই চলে আসছি।আমার নানুভাই কই?”
তারপর মেহুর মনে পড়ল মেঘতা তো অনেক্ষন হয়েছে মেঘের কাছে গেছে কি করছে কে জানে?
–“আছে আব্বু।তোমরা সাবধানে এসো,আল্লাহ হাফেজ।”
মেহুর বাবা একটা বড় দোকানের সামনে দাঁড়ায়।তারপর সেখান থেকে অনেক চিপস চকলেট কিনে।
মেহুর মা অবাক হয়ে বলে–“এত কিছু কিনলে আবার চিপস আর চকলেটের কি প্রয়োজন?”
মেহুর বাবা বলে–“এসব আমার নাত্নির জন্য।নানাভাই বলে যখন জড়িয়ে ধরবে তখন কি দিবো?আর এতসব কই নিলাম প্রথম মেয়ের শশুড় বাড়ি যাচ্ছি ভাল কিছু না নিলে হয়?”
–“হুম দেখো মেঘের বাবা মা এসব দেখে খুব রাগ করবে।আমাকে ফোনে বারবার বলেছে হাবিজাবি এত কিছু যেন না নিয়ে যায়।মেয়েটাকে পেয়েছে এতেই নাকি তারা খুশি।”
মেহুর বাবা হাসে ভাগ্যে করে এরকম বেহায় বেহাইন পেয়েছে।
.
.
মেহু কল কেটে দিয়ে শাশুড়িকে বলে–“আম্মু আমার আব্বু আম্মু কাছেই নাকি চলে এসেছে।”
–“ভাল হয়েছে।”
–“আম্মু আমি একটু মেঘতাকে দেখে আসি?”
মেঘের মা হাসে।
–“দেখো গিয়ে বাপ বেটি কি করে?”
মেহু একপ্রকার তাড়াতাড়ি যায়।রুমে এসে দরজার কাছাকাছি আসতেই মেঘতার প্রশ্নটা শুনে ফেলে।
মেঘতা আবারো ঠোট উল্টিয়ে বলে–“বলো না বাবাই আমার মাম্মাম তোমার ও মাম্মাম?”
মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে–“নাহ।তোমার মাম্মাম আমার মাম্মাম নয়।”
মেঘতা আবারো বলে–“তাহলে তুমি কি বলে ডাকবে?নাম ধরে ই ডাকবে।তুমি তো ভারি পচা!নাম ধরে কেউ ডাকে?নাম ধরে ডাকা ভালো না।মাম্মাম বলেছে সবাইকে কিছু না কিছু বলে ডাকতে হয়।তাহলে?”
বাবাগো এত প্রশ্নে মেঘের মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।
মেঘতার নিষ্পাপ চাহনি দেখে মেঘ বলে–“তোমার মাম্মাম আমার বউ।বউ বলেই ডাকবো।এবার আমাকে ঘুমাতে দাও ঠিক আছে?
মেঘতা মাথা নাড়ে।তারপর মেহুকে দেখে মেঘের কানে ফিসফিসিয়ে বলে–“বাবাই বউ আসছে?”
মেহু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মেঘতার সামনে আসে।
–“তুমি এখানে কি করো হ্যা?বাবাই ঘুমাচ্ছে না?বিরক্ত করছো যে?”
মেঘতা তখন উঠে চলে আসে।
–“না আমি বাবাইয়ের চুল টানতেছিলাম।মাথা ব্যথা করছে তাই।”
–“মিথ্যা বলা হচ্ছে,আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি বাবাইকে ঘুমাতেই দিচ্ছো না।পেটে এত কথা কেন?”
মেঘতার হাসি পাচ্ছে।তাই মুখ চেপে ধরতেই মেহু আবারো বলে–“কাল থেকেই পড়ালেখা শুরু হবে তো আবার,তারপর পাকা পাকা কথা কই যায় দেখা যাবে।”
মেঘতা মন খারাপের ভান ধরে।পড়ালেখা তার ভাল লাগেনা।
মেহু তখন মেঘের মুখের দিকে তাকায়।মেঘ চোখ বন্ধ করে আছে।তবে মা মেয়ের কথা স্পষ্ট সে শুনতে পাচ্ছে।তাও নড়েচড়ে না।
মেহু তখন মেঘতার দিকে তাকিয়ে বলে–“জানো নানাভাই নানুমনি আসতেছে তো?
মেঘতা খুশি হয়ে বলে–“সত্যি?”
–“হ্যা।তবে তুমি একদম ই দুষ্টুমি করবে না।তারা অনেক দূর থেকে আসতেছে তো তাই।”
–“আচ্ছা।”
মেঘতা তখন বলে–“ঠিক আছে আমি তাহলে নানাভাই নানুমনির জন্য অপেক্ষা করতে যায়।দাদু আর দাদাইয়ের সাথে অনেক কথা আমার।”
মেহু হেসে বলে–“সাবধানে হেটে যেও।”
মেঘতা দৌড়ে গিয়ে কি যেন মনে করে আবারো ফিরে আসে।
মেহু তখন মেঘের দিকে তাকায়।মানুষটা কি ঘুমিয়ে গেছে?নাকি ঘুমের ভান ধরে আছে?
মেঘতা তখন মেহুকে বলে–“বাবাইয়ের মাথায় এইভাবে হাত বুলিয়ে দাও।এরকম ভাল লাগে যে।দাও?আমি দাদুর কাছে যাই।”
মেহুকে টেনে পাশে বসায়।মেঘতা দৌড়ে চলে যায়।
মেহু কাপা হাতে মেঘের চুল স্পর্শ করে।মেঘ তবুও চোখ বন্ধ করে আছে।আস্তে আস্তে মেহু হাত বুলাতে থাকে।
মেঘ ভাবে–“এগুলো স্বপ্ন হলেও কি পারতো না?চোখ খুললে তাহুকে দেখতে পেতো।ভালবাসা চোখে সেই হাসি চেয়ে থাকতো।আর বোকা বোকা চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকেই তাহু পালিয়ে যেতো।আচ্ছা কোথায় তাহু?মেহুর কাছে কি জানতে চাইবে?আর জানতে চাইলে মেহু কি বলবে?নাকি রাগ করবে?তাহু বোধহয় খুব সুখী হয়েছে।হবে না ই বা কেন যে মেয়ে অন্যের ভাল কামনা করে সে কেন সুখী হবে না?নিশ্চয় হবে।আর কখনো কি তাহুর সাথে দেখা হবে?আচ্ছা মেহুর বিয়েতে ও যে তাহুকে দেখলাম না?”
ইসস এত প্রশ্ন ভাবতে গেলে মাথায় ব্যথা আরো বাড়বে।মেঘ খুব করে চাইছে চোখ খুলে একবার সেই মুখখানা দেখবে।সেই মুখ দেখার লোভ তাকে শেষ করে দিচ্ছে যে।
মেহু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে–“আপনি চোখ পিটপিট না করে ভাল করে চোখ বুজে ঘুমান।আমি হাত বুলিয়ে দিই।”
মেঘ ভাল করে চোখ খুলে।আর মেহুকে একনজর দেখে।মেহু হাসে।এত সুন্দর কেন হাসিটা?কত প্রশান্তি এই দেখাতে।অতঃপর প্রশান্ত মনেই আস্তে আস্তে কখন যে ঘুমের রাজ্যে চলে যায় মেঘ নিজেও জানেনা।
চলবে………..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)
#তাহরীমা