অভিমান পর্বঃ১৫

0
1752

#অভিমান
#পর্বঃ১৫
#তানিশা সুলতানা

আজকেই ২০২১ সালের শেষ রাত। রাত বারোটার পরেই ২০২২ সাল চলে আসবে। মেঘের বিজনেস পার্টনার রা পার্টি রেখেছে। আর মেঘকে ইনভাইট করেছে। প্রতিবছরই কোনো বড় হোটেলে হ্যাপি নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করে।
কিন্তু আজকে মেঘের যাওয়া হবে না এটা মেঘ খুব ভালো করেই জানে। কেনোনা কিছুতেই তোহা ওই পার্টিতে যাবে না। আর তোহাকে ছাড়া মেঘ যায় কি করে?
মেঘের বাড়িটাই সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। দুপুরের খাবার খেয়েই মেঘ বেরিয়ে গেছে। বিকেলে সবাই চলে এসেছে। তোহা শুভর সাথে মিলে সব কিছুর এরেন্জমেন্ট করছে। মেঘ চমকে যাবে।
অনেক দিন পর পরিবারকে দেখে তোহা ভীষণ খুশি। তোমাকে এরকম খুশি দেখে সবাই খুব খুশি হয়। ভেবে নেয় তোহা মেঘকে মেনে নিয়েছে। মেঘও পাল্টে গেছে।

তোহা নিজের রুমটা বেলুন দিয়ে সাজাচ্ছে। আপাতত এখনে তোহা একাই। যারা তোমাকে সাহায্য করছিলো তোহা তাদের পাঠিয়ে দিয়েছে বাইরে টা সাজানোর জন্য। এখানে তোহা একাই পারবে।
“কেমন আছো তোহা?
হঠাৎ কারো কথায় থমকে যায় তোহা। ফু দিয়ে বেলুন ফুলাচ্ছিলো। থেমে যায়। তার দিকে না তাকিয়েও তোহা বুঝতে পারে এই মানুষটা তোহার প্রাক্তন। যাকে তোহা খুব ভালো বাসে। আর সেও তোমাকে ভালোবাসে।
জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় তোহা। মুখে হাসি টেনে পেছনে তাকায়।
” এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
আকাশ তোহার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি দেখে নিজেও একটু।
“এতোটা সরল কেনো তুমি? তোমার এই সরলতাই আমাকে মুগ্ধ করে।
তোহার দিকে অপলক তাকিয়ে বলে আকাশ।
কিছুটা থমথমে খেয়ে যায় তোহা। তবুও মুখের হাসিটা বজায় রাখে।
” ও মা এখানে সরলতার কি আছে। ভালো আছি। তো বলবো না?
তারাহুরো করে বলে তোহা।
“হুমম তা তো দেখতেই পাচ্ছি। চোখের নিচে কালি। রোগা হয়ে গেছো। কালো হয়ে গেছে। কতোটা ভালো আছে তা আমি জানি।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে আকাশ।
তোহা ভেবাচেকা খেয়ো যায়। সেটা আকাশকে বুঝতে দেয় না।
” ভাইয়া আমি চাই না আমাদের পোস্ট নিয়ে কথা বলতে। যা কপালে ছিলে তাই হয়েছে। এবার সব ভুলে নতুন করে শুরু করো।
তোহার মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়।
আকাশ এবার একটু হাসে।
“তুমি জানতে তোহা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। তোমার জন্য জীবটাও দিয়ে পারি। তাহলে সেদিন যখন মায়া জঘন্য পিক গুলো বাড়ির সবাইকে দেখালো সেদিন তুমি কেনো আমার হয়ে কথা বললে না? কেনো বললে না সব মিথ্যে ছিলো? তাহলে তো সব ঠিক থাকতো।
আহত গলায় বলে আকাশ।
তোহা চোখ বন্ধ করে নেয়। কয়েক সেকেন্ড পরে চোখ খুলে।
” তুমি তো নিজেকে ইনোসেন্ট প্রুফ করার অনেক চেষ্টা করলে পারলে না। কারণ মায়া এডিট করে হলেও পিক গুলোতে তোমার মুখটা স্পষ্ট ছিলো।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। মেনে নাও মায়াকে। ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটা তোমাকে
তোমাকে পাওয়ার জন্য এতোটা মিথ্যে বলে বিয়ে করলো তোমায়। শুধু মাএ তোমার সাথে থাকবে বলে। তার ভালোবাসার প্রাপ্য মূল্য দিও।
তোহা বলে।
“তুমি মেনে নিয়েছো মেঘ কে? পেরেছো ওর সাথে স্বাভাবিক হতে?
আকাশ পাল্টা প্রশ্ন করে।
” আজকে থেকে সবটা ঠিক করে নেবো। নতুন ভাবে শুরু করবো সব।
নজর কারা হাসি দিয়ে বলে তোহা। আকাশ হতাশ হয়। ভালো ভাবেই বুঝে যায়। মনের ওপর জোর খাটিয়ে হলেও আজকে তোহা মেঘকে স্বীকার করে নেবে। সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
“নতুন জীবনে সুখী হও। অনেক দোয়া রইলো তোমার জন্য।
বলে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে চলে যায় আকাশ।
তোহা একটু হাসে।
” জীবনের সব ভুল গুলো মুছে ফেলবো আমি। সবটা নতুন করে শুরু করবো। মেঘ কে নিজের মতো করো গুছিয়ে নেবো। আমি জানি মেঘ আমাকে ভালোবাসে। আমি ওর মেহ না। মেঘের সব খারাপ স্বভাব গুলো পাল্টে দেবো আমি। আই প্রমিজ। আর ভুলে যাবো তোমাকে আকাশ।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোহা। আবার মনোয়ন দিয়ে রুম সাজাতে থাকে।

আটটার দিকে আকাশ বাড়িতে ফেরে। প্রতিদিন সন্ধার আগেই বাড়িতে আসে। আজ ইচ্ছে করেই দেরি করেছে। এতো লোকজনের মধ্যে ভালো লাগবে না ওর। বাড়িতে গেলেই সবাই শুরু করবে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কোথাও যেতে দেবে না তোহা মেঘকে। কোথাও যেতে দেবে না। কোনো দেবে? তোহা তো ওর বিয়ে করা বউ। অধিকার আছে মেঘের।

বাড়িটা সাজানো দেখে বেশ অবাক হয় মেঘ। কপালে তিনটে ভাজ ফেলে। কে সাজানো বাড়িটা? কার এতো সাহস মেঘ রাজের পারমিশন ছাড়া তার বাড়িটা সাজিয়ে ফেললো?
“আমি সাজিয়েছি মিস্টার
পেছন থেকে তোহা বলে।
মেঘ পেছনে তাকায়। তোহার মুখে লাগে আছে মিষ্টি হাসি।
” কিন্তু কেনো? আবার বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে না কি?
মেঘ দুষ্টুমি করে বলে।
“বিয়ে করার ইচ্ছে না বাট থাক না বললাম
একটু ভাব নিয়ে বলে তোহা।মেঘ তোহার কথায় খানিকটা অবাক হয়। আজ তোহা মেঘের সাথে রসিকতা করছে। ভাবা যায়?
” শুনুন আজকে এখনই রুমে যাবেন না। পাশের রুমটাতে আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিস দেওয়া আছে। বারোটার পরে রুমে ঢুকবেন। ক্লিয়ার?
তোহা আঙুল নাচিয়ে বলে
“কিন্তু কেনো?
” সিক্রেট
“কি সিক্রেট
” বলে দিলো তো সিক্রেট থাকলো না তাই না?
“তাও ঠিক
” সো যান জামাকাপড় চেঞ্জ করে আসুন। সবাই এক সাথে খাবো।
মেঘের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
“আমি পরে খাবো।
তোহা মেঘের দুই গালে হাত দেয়।
” প্লিজ আমার জন্য
করুন সুরে বলে
তোহার করুন সুরে বলা কথা অমান্য করার সাধ্য মেঘের নেই।
“ঠিক আছে
বলেই তোহার হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়প চলে যায়। তোহা চোখে মুখে হাসে। মেঘকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবে তোহা। মেঘের টাকার অহংকারটাও থামিয়ে দেবে। মেঘকে বুঝিয়ে দেবে টাকা না থাকলেও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা যায়। টাকাই সব না। টাকা দিয়ে সব কিছু হয় না। টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না।

সব ছেলেরা এক সাথে খেতে বসেছে। মেঘ বাবা আর দাদার মাঝখানে বসেছে৷ সবাই খুব খুশি। আরমান চৌধুরী তোমার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে। মেঘ বাইরে গমরভাবটা ধরে রাখলেও মনে মনে বেশ ভালো লাগছে মেঘের।
রাতের খাবারে গরুর মাংস আর রুটি। মেঘের প্রিয় খাবার। অনেক দিন খাওয়া হয়না। কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছে মেঘ।
তোহার বাবা দাদা তোমাকে এরকম খুশি দেখে মুগ্ধ হয়।
মেঘের সাথে মেয়েটা এতোটা খুশি থাকবে ওনারা ভাবতেও পারে নি।

রাত সাড়ে এগারো টায় সবাই মিলে ছাদে চলে আসে। ২০২১ সাল টাকে বিদায় জানাতে। অনেক গুলো ফানুস বাজি সব এনেছে। তোহা তো ভিডিও করতে ব্যস্ত। তোহার সাথে সঙ্গ দিচ্ছে শুভ। বেশ ফ্রী হয়ে গেছে শুভ তোহার সাথে। বাড়ির সবাই মজা করছে। আকাশ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

তোহা ছবি তোহা রেখে মেঘের পাশে দাঁড়ায়। মেঘ একটা ফানুস ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
” ধরে রাখলে হবে ওড়াতে তো হবে৷ চলুন
তোহা মেঘ আর মেঘের বাবাকে একটা ফানুস ধরিয়ে দেয়। তারপর বিভিন্ন ধাবে পেচ দিতে বলে। অনেক অনেক ছবি তোলে।
অতঃপর ১২ টা বাজলে সবাই ফানুস উড়িয়ে দেয়।
সবাই এক সাথে বলে ওঠে Happy New Year

সবাই যে যার মতো মজা করছে। তোহা মেঘের হাত টা ধরে চলে আসে।
“কি ম্যাডাম চলে এলেন যে? মজা করা শেষ
মেঘ হাঁটতে হাঁটতে বলে।
” আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে তাই তো চলে আসলাম। নাহলে আরওখন থাকতাম।
মেঘ দাঁড়িয়ে যায়। তোহার দুই বাহু ধরে।
“আমার জীবনের সব থেকে বড় সারপ্রাইজ হবে সেটা যেদিন তুমি আমকে মেনে নেবে।
মেঘের কথা শুনে তোহা মিষ্টি করে হাসে।
আবার হাঁটা শুরু করে।
তোহা রুমের দরজাটা খুলে দেয়।
চোখের ইশারায় মেঘকে ঢুকতে বলে৷ মেঘ তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুমে ঢুকে।
রুমে ঢুকে মেঘের মুখে হাসি ফুটে।

পুরো রুমটা ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো। চারপাশে রঙিন কাগজে লেখা
” আজকে থেকে আপনার সাথে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে চাই”
তোহা তো আর মুখে বলতে পারবে না। তাই লিখে দিয়েছে।
মেঘ বুকে হাত গুঁজে নেয়। দরজার দিকে তাকায়। তোহা এখনো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে।
“তোমাকে কি কোলে করে আনতে হবে?
মেঘ বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here