তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ৪০

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন আরহামের কাঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের উজ্জ্বল আলো এসে মেহেভীনের মায়াবী মুখশ্রীকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছে। মেহেভীনের প্রতি আরহাম যেন দ্বিগুনভাবে মোহিত হয়ে উঠে।পূর্নিমার রাতের মুগ্ধতা যেন দ্বিগুন বাড়িতে তুলছে মেহেভীনের এরুপ মোহীত রুপ।আরহাম হাল্কা ফু দিয়ে মেহেভীমের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোকে উঁড়িয়ে দেয়। এতে মেহেভীন খানিক্টা নড়ে আরহামের শার্ট আলতো করে আকড়ে ধরে। আরহাম খানিক্টা স্মিত হেঁসে যত্নের সাথে তার ঘুমন্তি প্রেয়সীর ছবি একেঁ ফেললো। এতো সুন্দর একটা দৃশ্য না একেঁ কি থাকা যায়? আরহামও মেহেভীমনকে ডেকে,মেহেভীনকে আর বিরক্ত করেনি। আরহাম ও দোলনায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

…………….
অভ্রকে মাতাল অবস্হায় ইশরা বেগম কোনরকম
অভ্রকে নিজের রুমে শুয়িয়ে দিয়ে দেন। অভ্র ঘুমের মাঝেই ‘মেহেভীন ‘বলে চিৎকার করতে থাকে। ইশরা
বেগম ছেলের এইরকম অবস্হা দেখতে পারছেন না,তিনি বেড়িয় যান ঘর থেকে। অভ্র তার পাশে থাকা
মেহেভীনের ছবির ফ্রেম টা কোনরকম হাতড়ে নিয়ে নেয়। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে, অভ্র তেমন কিছু দেখতে পারছে না। শুধু তার চোখে মেহেভীনের ছবিটা ভাঁসছে। অভ্র কাঁচের ফ্রেম থেকে ছবিটা বের করতে নিলে, কাঁচ তার হাতেও ঢুকে যায়। রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অভ্র সেদিকে খেয়াল করেনা। অভ্র কাঁচের ফ্রেম টা ফেলে দিয়ে, মেহেভীনের ছবিখানা শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে খানিক্টা ধীর গলায় বলে,

‘মেহু রে! আমি কখনো তোর সাথে অন্যায় করতে চাইনি বিশ্বাস কর। আমি চাইনি। সত্যি বলছি যদি জানতাম তোকে এতোটা ভালোবাসবো,তোর শুন্যতা আমাকে এতোটা পুড়াবে, তাহলে কখনো তোর সাথে অন্যায় করতাম না। ভালোবাসার অনুভুতি যে বড্ড অদ্ভুদ! যখন -তখন হুটহাট যে কারো প্রতি চলে আসে। এই অনুভুতি যে আমাদের অতি কষ্টের দহনে
পুড়নোর জন্যে যথেষ্ট। যেই দহনটা আমার মনের ভিতরে হচ্ছে। ‘

অভ্রের চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অভ্র রক্তমাখা হাত দিয়ে,মেহেভীনের ছবিখানা বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখে। অভ্রের রক্ত দিয়ে পরিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের ছবিখানা।

________

সকাল সকাল আরহাম মেহেভীনের জন্যে খাবার নিয়ে আসে। মেহেভীন ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই,
আরহাম মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ এইযে সব খাবার যেন ফিনিশ হওয়া চাই। স্টুপিডের মতো যেন আবার ফেলে না দেওয়া হয়। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে। সব শেষ করে ফেলবে। ‘

মেহেভীন দ্রুততার সাথে মাথা ঝাকায়। যার মানে না সে কোন স্টুপিডের মতো কাজ করবে না। লক্ষী মেয়ের মতো নাস্তা সেরে ফেলবে। আরহাম মুচকি হেসে ‘গুড ‘ বলে চলে যেতে নিলে,কি ভেবে যেন থেমে যায়। পুনরায় মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ রেডি হয়ে নিও। আজকে তোমার ভার্সিটি যাওয়ার পথে, হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আগে চেকাপ করিয়ে নিবো। ‘

‘ কিন্তু হঠাৎ হসপিটালে কেন? ‘

আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে,মেহেভীনের নাক টেনে বললো,

‘ স্টুপিডের মতো ভূলে যাও কেন সব? ডক্টর যে বলেছে প্রেগ্ন্যাসির সময় এক মাস পর পর চেকাপ করাতে হবে। ভূলে গেলে সব? ‘

মেহেভীন জিব কাটে। সত্যিই আজ তার চেকাপের ডেট ছিলো,অথচ সে স্টুপিডের মতো সব ভূলে গেলো। মেহেভীন কানে হাত রেখে আরহাম ‘সরি’ বললো।

‘ হয়েছে ম্যাম আপনার আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে, রেডি হয়ে নীচে চলে আসুন। আমি নীচে অপেক্ষা করছি। ‘

আরহাম কথাটি বলেই, আলতো হেঁসে চলে যায়। মেহেভীন আরহামের হাঁসি দেখে কি মনে করে যেন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। লোকটা সত্যিই তার কতটা খেয়াল করে। কতটা চিন্তা তার বেবীর জন্যে।
চেকাপের ডেট মেহেভীন ভূলে গেলেও,আরহাম ভূলে না। মেহেভীন আয়নার তোয়ালা দিয়ে, নিজের চুল মুছতে মুছতে আনমনে বলে উঠে,

‘ আরহাম সাহেবকে দেখলে আবারো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবারোও প্রেমে পড়তে,কিন্তু অভ্রের দেওয়া সেই ক্ষতটা আমার মনে এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে, আমি পারছি না ভালোবাসতে। ‘

‘ ভয়কে জয় করতে হবে রে মেহু। একটিবার ভালোবেসে দেখ, দেখবি ঠকবি না। আমার ভাই অন্তত তোকে কখনো ঠকাবে না। ‘

মেহেভীন আয়নায় তাকিয়ে আরিয়ান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন আরিয়ানের দিকে ঘুড়ে, শুকনো হেসে বলে,

‘একমুঠো সুখের আশায়, যাকে আমরা সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা উজার করে দেই,সেই আমাদের শেষবেলায় এসে কাঁদিয়ে দিয়ে যায়। অভ্র আমাকে সুখ দিতে না পারলেও,আমাকে কান্না দিয়েছে। এক সমুদ্র সমান কষ্ট দিয়েছে। সমুদ্র কিন্তু বেশ বিশাল। তাহলে বুঝে দেখ অভ্রের দেওয়া কষ্টের পরিমানটা ঠিক কতটা বিশাল হতে পারে। সেই বিশাল কষ্টের ভয়টাকে জয় করা কি এতোটা সহজ আরিয়ান? ‘

আরিয়ানের মন ক্ষুন্ন হয়ে গেলো। সত্যি অভ্রের করা প্রতারণার স্বীকার হয়ে,মেহেভীনের মনটা ভালোবাসা নামক অধ্যায় থেকে নিজেকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় আছে,যদিও আরিয়ান জানে আরহামের ভালোবাসায়, মেহেভীনের মন গলে যাবেই। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই, আরহামের মা রুমে ঢুকেন। আরহামকে মাকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেলে মেহেভীন। আরহামের মা তা দেখে মুচকি হেসে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘ আমার উপরে রাগ করেছো বুঝি? ‘

আরহামের মায়ের কথায়, মেহেভীম আরহামের মায়ের দিকে অবাক পানে তাকাতেই, আরহামের মা আরেকদফা হেসে বললেন,

‘ কালকে যা যা বলেছি তার জন্যে আমার উপর রেগে থেকো না। আমি কালকে অভ্রের কথা শুনে কিছু না বুঝেই তোমাকে বকা দিয়ে বসেছি। ‘

মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে বললো,

‘এমা! আমি কিচ্ছু মনে করিনি। আপনার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো মা মানে আন্টি। ‘

আরহামের ম মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,

‘ আমাকে এতোদিন মা বলতে না? এখনো বলবে। আরহাম আমার এবং আরহামের বাবার সাথে আলাদাভাবে কথা বলেছে। আরহামের কথা শুনে আমরা বুঝলাম। তোমার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্যে। আমিও তো একজন মা আমিও বুঝি তোমার অবস্হাটা। তাছাড়া অভ্র এবং ইশরা যা করেছে, তাতে তোমার কখনোই ওই বাড়িতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। ‘

মেহেভীন আরহামের মায়ের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি দেয়। মানুষটা কতটা ভালো। বলতে গেলে আরহামের পুরো পরিবারটাই ভালো। আরহামের মা আবারোও বললেন,

‘ । তাছাড়া তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে,সে তো আমাদের বংশের সন্তান। অভ্রকে যতই আমরা দূরে ঠেলে দেইনা না কেন তার সন্তানকে তো আমরা সবসময় আগলে রাখবো। তুমি এই বাড়ি ছেড়ে আরহামকে ছেড়ে কোথাও যেও না মা।আরহাম ও বাচ্ছাটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। তুমি তো জানো আমার ছেলে তোমাকেও কতটা ভালোবাসে।’

মেহেভীন এইবার খানিক্টা অস্বস্হিতে পড়ে যায়। তার অস্বস্হি দূর করে আরহাম প্রবেশ করে এবং বলে,

‘ মেহেভীন তুমি এখানে? এখনো নাস্তাটা ফিনিশ করো নি? কি করছো এখনো? তাড়াতাড়ি করে নাও।’

মেহেভীন নাস্তা করে নিয়ে, আরহামের সাথেই বেড়িয়ে যায়। দুজনকে একসাথে যেতে দেখে, আরহামের মা মুচকি হেসে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ দুজনকে বড্ড মানায় তাইনা রে? ‘

‘ তা বলতে? একদম রাব নে বানাদি জোড়ি। ‘

‘ আমি ভাবছি বাচ্ছাটা পৃথিবীতে চলে আসলেই, মেহেভীন এবং আরহামের বিয়েটা দিয়ে দিবো। মেহেভীনকে একেবারে সত্যিকারের বউ করে নিয়ে আসবো আমার বাড়িতে। ‘

আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে, খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ সত্যি মা?তাহলে তো অনেকগুলো ভালো হবে। ইউ আর বেস্ট মা। ‘

আরহামের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ মেহেভীন মেয়েটা ভারী ভালো। মেয়েটা নিজের জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি। আমি জানি মেয়েটার কষ্টটাকে দূর করে সুখের পথ একমাত্র আমার আরহামই দেখাতে পারবে। ‘

আমাদের দেশে এমন অনেক মেহেভীন আছে,যারা দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশে আরহামের মতো মানুষের বড্ড অভাব,যারা মেহেভীনের মতো মেয়েদের আগলে রাখবে। জীবনে নতুনভাবে পথ চলতে শিখাবে। নিয়ে যাবে সুখের রাজ্যে।

……..

ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আরহাম। কিছুক্ষন আগেই ডক্টর মেহেভীনকে চেকাপ করেছে। মেহেভীন এখনো চেকাপ রুমে। ডক্টর খানিক্টা মুখ কালো করে বসে আছে। ডক্টরকে এইভাবে দেখে আরহামের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বললেন,

‘ মেহেভীনকে আমি দেখলাম,কিন্তু একটা খারাপ খবর আছে? ‘

ডক্টরের কথা শুনে আরহাম কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ার্থ গলায় বলে,

‘ কি খারাপ খবর ডক্টর? ‘

…….চলবে কি?

[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। কেউ ছোট কইবেন না 😑পড়ার মাঝে লিখছি হুহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here