#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ২৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
আদ্রিতার জ্ঞান ফিরেছে।
কথাটি শুনে সাজ্জাদ আর বাকিরা দ্রুত আদ্রিতার রুমে গেলো। গিয়ে দেখতে পারলো,
আদ্রিতা বসে আছে মুখটা মলিন৷ দেখে বোঝা যাচ্ছে এখন ও সেই বিষয়ের জন্য ভয় পাচ্ছে।
স্বাধীন আদ্রিতার বাবার কাছে এসে বললো,
আংকেল আর আন্টি আপনারা বাইরে যান। আমরা কথা বলে দেখি। ( স্বাধীন)
আদ্রিতার বাবা ও আদ্রিতার মা রুম থেকে চলে গেলো। এখন রুমে সামিরা স্বাধীন আর সাজ্জাদ রয়েছে।
সাজ্জাদ এসে আদ্রিতার পাশে বসলো। আদ্রিতার কোনো হেলদোল নেই। নিষ্প্রাণের মতো সামনে তাকিয়ে আছে।
আদ্রিতা (সাজ্জাদ)
সাজ্জাদের ডাক শুনে ও আদ্রিতা কিছু বললো না। সাজ্জাদ একবার আদ্রিতার হাত ধরতেই। আদ্রিতা চমকে উঠলো আর দ্রুত দুরে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আদ্রিতার ছটফটানি দেখে সাজ্জাদ আদ্রিতার হাত ছেড়ে দিলো। সাজ্জাদ বুঝতে পারছে ওই ছেলেগুলো বাজে ভাবে ধরেছে। সাজ্জাদ কোনোমতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো।
আদ্রিতা, তখন কি হয়েছিলো বলো। ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা তাও কিছু বলছে না। সামিরার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
স্বাধীন আর সামিরা তোমরা একটু বাইরে যাও। আমাকে কথা বলতে দেও (সাজ্জাদ)
সাজ্জাদের কথা শুনে সামিরা আর স্বাধীন বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।
মিস সামিরা আপনি চিন্তা করবেন না। আদ্রিতার তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। ( স্বাধীন)
আমার বোনের কে এমন ক্ষতি করতে চাই? (সামিরা)
চিন্তা করবেন না পুলিশ বিষয়টি দেখছে। ( স্বাধীন)
******
আদ্রিতা এইভাবে চুপ করে থেকো না বলো কি হয়েছে। (সাজ্জাদ)
আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো।
আআমি কিছু করি নি ওরা আআমার সাথে আদ্রিতা কোনোমতে এই কথাটি বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
সাজ্জাদের হৃদয় যেনো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওই লাশগুলোকে তুলে এনে আবার খু*ন করতে।
তুমি ত আলো ওদের সাথে ছিলে। ওই রুমে গেলে কিভাবে? ( সাজ্জাদ)
আমি বসে ছিলাম চেয়ার। গিফট আনার জন্য ওই রুমে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কেউ দরজা বন্ধ করে দিলো আর একটি গ্যাসের মতো কিছু একটা ছেড়ে দিলো। আমার দমবন্ধ লাগা শুরু করেছিলো। অনেক দরজা খোলার চেষ্টা করেছি কাজ হয় নি। ( আদ্রিতা)
তারপর? ( সাজ্জাদ)
হঠাৎ দরজা খুলে ৩ জন ছেলে ভিতরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে একটি ছেলে বাইরে দিয়ে দরজা আটকে দেই। আর বাকি দু’জন আআমমারর সাসাথে আদ্রিতা আর কিছু বলতে পারলো না শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে যায়।
সাজ্জাদ আদ্রিতার কাছে গিয়ে ইনহেলার আদ্রিতার মুখে ধরে আদ্রিতার মাথা সাজ্জাদের বুকে চেপে ধরে। ইনহেলারের ফলে আদ্রিতা এখন কিছুটা সুস্থ অনুভব করছে। সাজ্জাদ বুঝতেই পারছে পরবর্তীতে কি ঘটেছে। আদ্রিতাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আদ্রিতা নিজেই আবার বলা শুরু করলো,
তারা আমার সাথে অনেক খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ কেউ দরজা খুলে প্রবেশ করৰো আর তাদের উপর গুলি চালিয়ে দিলো। আমি মনে করেছিলাম আমাকে ও মে*রে ফেলবে। কিন্তু তারা আমাকে কিছু করলো না। ( আদ্রিতা)
হুম বুঝলাম। ওদের খু*ন করতে দেখে তুমি ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো তাই ত? (সাজ্জাদ)
হুম। (আদ্রিতা)
আচ্ছা ওইরুমে গিফট আছে। সেটা তোমাকে কে বলেছে? ( সাজ্জাদ)
রিজভী বলেছিলো। আরিয়ান স্যার নাকি গিফটটি রিজভীকে আনতে বলেছিলো। কিন্তু রিজভী ব্যস্ত ছিলো তাই আমাকে বললো যেনো নিয়ে আসি। তাই গিফটটা আনতে ওইরুমে গিয়েছিলাম। (আদ্রিতা)
তোমার বন্ধুর নাম না আবির? ( সাজ্জাদ)
রিজভী নওশিন ওদের ফ্রেন্ড। ( আদ্রিতা)
নওশিন ওই মেয়েটি না একদিন আমার সাথে তোমাকে গাড়িতে দেখেছিলো পরে তোমাকে আমার সাথে দেখে দেখে অপমান করেছিলো? ( সাজ্জাদ)
হুম সেই মেয়েটি। ( আদ্রিতা)
তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে নওশিনই তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। ( সাজ্জাদ)
কি বলছেন? একটি মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের ক্ষতি কিভাবে করতে পারে? ( আদ্রিতা)
এইটা কালকে কলেজে গেলেই বোঝা যাবে। ( সাজ্জাদ)
আর খু*ন করেছে কে? ( আদ্রিতা)
সেটা বুঝতে পারছি না। আচ্ছা মনে করার চেষ্টা করো ওই লোকটির মধ্যে এমন কিছু দেখেছিলে কি যা দেখে চিনার উপায় আছে? ( সাজ্জাদ)
আদ্রিতা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, কালো ড্রেস পড়া ছিলো। মুখ ও ঢাকা ছিলো কিন্তু হাতে ট্যাটু ছিলো একটা সেখানে মনে হয় লেখা ছিলো Dark ( আদ্রিতা)
আদ্রিতার কথা শুনে সাজ্জাদ চমকে উঠলো।
আচ্ছা তুমি এখন রেস্ট নেও। আমি যাচ্ছি। ( সাজ্জাদ)
সাজ্জাদ যেতে নিলেই আদ্রিতা সাজ্জাদের হাত ধরে ফেললো,,
কিছু বলবে? (সাজ্জাদ)
ওই লোকটি না থাকলে এখন আমার কারোর সামনে মুখ দেখানোর উপায় থাকতো না। ( আদ্রিতার)
সাজ্জাদ আদ্রিতার কথাই কি বলবে জানা নেই। আদ্রিতার কাছে এসে একবার ওকে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিতা ও কোনো বাঁধা দিলো না। আদ্রিতার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান যেনো এইটি।
আচ্ছা যাচ্ছি আমি কালকে তোমাকে নিয়ে কলেজে যাবো। রেডি থেকো। ( সাজ্জাদ)
কথাটি বলে সাজ্জাদ রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। আদ্রিতা ফোনটা হাতে নিলো। নিউজফিড শুধু আদ্রিতার কলেজের খবর। আদ্রিতা ফোনটা রেখে দিলো। চোখ বন্ধ করে শুইয়ে পড়লো।
সাজ্জাদ নিচে নেমে সামিরা আর স্বাধীনকে সব বললো।
খারাপ কিছু হওয়া থেকে বেচে গেছে। ( স্বাধীন)
হুম। আল্লাহ রক্ষা করেছে। ( সামিরা)
আমার ও মনে হচ্ছে ওই রিজভী এই কাজ করেছে। নওশিনের কথায় করেছে ( স্বাধীন)
হুম আমার ও মনে হচ্ছে। ( সামিরা)
আচ্ছা আমরা যাচ্ছি এখন এমনি অসেক রাত হয়ে গেছে। ( সাজ্জাদ)
রাতের খাবার খেয়ে তারপর যান। ( সামিরা)
সামিরা কথাটি বলে মা – বাবাকে ও ডাক দিলো। আদ্রতার মা ওদের না খাইয়ে যেতে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাতের খাবার থেতে বসলো। খাবার খাওয়া শেষে সাজ্জাদ ও স্বাধীন বেরিয়ে পড়লো।
গাড়িতে ~
স্বাধীন গাড়ি চালাচ্ছে পাশে সাজ্জাদ বসে আছে। হঠাৎ সাজ্জাদ বলে উঠলো,
S.R আদ্রিতাকে সত্যিই ভালোবাসে। ( সাজ্জাদ)
সাজ্জাদের কথা শুনে স্বাধীন অবাকের চরম পর্যায় চলে গেলো।
কি বলছিছ তুই? ( স্বাধীন)
ওই লোকদের S.R এর লোক মেরেছে। ( সাজ্জাদ)
কিভাবে বুঝলি? ( স্বাধীন)
আদ্রিতা বলেছে ওই লোকটির হাতে Dark লেখা ছিলো। ( সাজ্জাদ)
তার মানে S.R এর লোক আদ্রিতার উপর নজর রেখেছে। ( স্বাধীন)
হুম। ( সাজ্জাদ)
স্বাধীন আর কিছু বললো না।
********
বস ওই লোকদের মে*রে ফেলেছি। ( S.R এর লোক)
ঠিক করেছিছ। সাহস কি করে হয় আমার আদ্রিতার উপর হাত তুলার। ( S.R)
বস সেখানে সাজ্জাদ ও ছিলো। কিন্তু সাজ্জাদ আদ্রিতাকে সাহায্য করতে আসলো না মনে হয় সাজ্জাদ আদ্রিতার বড় বোনকে ভালোবাসে আদ্রিতাকে না। (S.R এর লোক)
আমার ও এইটাই মনে হচ্ছে। (S.R)
বস আমি চেয়েছিলাম আদ্রিতা মেডামকে রুম৷ থেকে বের করে আনতে। কিন্তু গুলির শব্দে অনেক মানুষ এসে ভিড় জমাতো তাই এসে পড়েছি। পড়ে শুনেছি পুলিশ ও এসেছিলো। (S.R এর লোক)
হ্যাঁ ঠিক করেছিছ। কে আদ্রিতার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো তাদের খুঁজে বের কর (S.R)
ওকে বস ( S.R এর লোক)
S.R ফোনটি কেটে দিলো।
****** সাজ্জাদের বাসায় *****
সাজ্জাদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সাজ্জাদ সামিরাকে ফোন দিলো।
আসসালামু আলাইকুম ( সামিরা)
সাজ্জাদ সালামের জবাব দিলো। আদ্রিতা কেমন আছে? ( সাজ্জাদ)
ঘুমাচ্ছে। কিন্তু অনেক জ্বর।(সামিরা)
আচ্ছা। কথাটি বলে সাজ্জাদ ফোন কেটে দিলো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সাজ্জাদ। অজানা একটি ভয় কাজ করছে। S.R সাজ্জাদের থেকে আদ্রিতাকে ছিনিয়ে নিবে না ত?
[ একটি কথা অনেক জানাতে ইচ্ছে করছে সবাইকে, বাস্তবে আজ সাজ্জাদের সাথে বিচ্ছেদের ১ বছর পূর্ণ হয়েছে 🥀 হয়তো বাস্তবে আর কখনো সাজ্জাদ ফিরে আসবে না। কিন্তু মানুষটাকে অসম্ভব ভালোবাসি সাজ্জাদকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ]