#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১২
.
আদ্রিয়ান এক্কেবারে খুব বেশি কাছে চলে এসেছেন আমার। হাত দুটো বেশ জোরেই চেপে ধরে রেখেছে। আমি ভীত চোখে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
— ” সমস্যা কী? বারবার মাঝখানে এটাকে আনছো কেনো?”
আমি একটু অবাক হলাম। এতোদিন তো নিজেই কোলবালিশকে আমার সতীন বানিয়ে মাঝে রেখে দিতো আজ আমি দিয়েছি তাতে আমার দোষ হয়ে গেলো? আজব। না উনি যতই রাগ দেখাক আমি আমার জায়গা থেকে নড়ব না। কী আর করবেন উনি। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” অ্ আপনিও তো মাঝখানে ব্ বালিশ দিয়ে রাখতেন রোজ।”
— ” হ্যাঁ তো? আজতো রাখিনি।”
ওনার নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছেন। উনি এতোটা কাছে আসায় আমার শরীর কাঁপছে। তারওপর ওনার রাগ দেখে দেখে ভয় ও লাগছে। কিন্তু এখন উইক হলে চলবে না, শক্ত থাকতে হবে। আমি ইতস্তত করে বললাম,
— ” না আমি ভাবলাম আপনি হয়তো ভুল করে আজ কোলবালিশটা রাখেন নি।”
উনি এবার আরও শক্ত করে হাতদুটো চেপে ধরে বলল,
— ” ভাবলে? কেনো ভাবলে? এতো ভাবতে কে বলে তোমাকে? একদম বেশি ভাবতে আসবেনা। ভেবেছোই যখন তখন এতো উল্টোপাল্টা ভাবতে কে বলেছিল হ্যাঁ? এটাও তো ভাবতে পারতে যে..”
— ” যে?”
উনি এবার দুষ্টু হেসে ডান হাত দিয়ে আমার বেড়িয়ে আসা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললেন,
— ” তোমার এতো কিছু জানতে হবেনা। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো। আর সেদিন বেচারা কোলবালিশটাকে খুব করে ঝাড়ছিলে যে আমাদের মাঝখানে কেনো আসে তাইতো সরিয়ে দিলাম। আর কী জেনো বলছিলে ও তোমার সতীন?”
বলে উনি আমাকে ছেড়ে পাশে শুয়ে শব্দ করে হাসতে লাগল। আমিও ওভাবে শুয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে ওনার হাসি দেখছি। উনিও হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” সিরিয়াসলি? মানে একটা কোলবালিশকে নিয়েও তুমি জেলাস?”
আমার বেশ লজ্জা লাগছে। তারমানে সেদিন উনি আমার ঐ সব উদ্ভট কথাবার্তা শুনেছেন? ইসস কী লজ্জা! আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। উনি হেসে বললেন,
— ” পরে ভেবে দেখলাম আমার এক বউয়ের জন্য আরেক কষ্ট পাবে এটাতো ঠিক না। আর তাছাড়া ঐ বউ কে নিয়েতো এতোগুলো বছর কাটালাম এবার একটু এই বউটাকে নিয়ে কাটাই?”
আমি এবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। বউ? মানে কী? ওই কোলবালিশ ওনার বউ? আমার নাহয় ওটাকে দেখলে সতীন সতীন ফিলিংস আসে তাই আমি বলি। কিন্তু তাই বলে উনিও বলবেন? আমি কিছক্ষণ বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থেকে মুখউঠে বসলাম। তারপর উঠে বসে বললাম,
— ” না থাক আপনি আপনার ফার্স্ট ওয়াইফ মানে প্রথম প্রেমিকিকে নিয়েই থাকুন।”
উনি মাথা একহাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বললেন,
— ” যাহ বাবা। সেদিন তো এতো কথা শোনালে মাঝে আসে বলে? আজ কী হলো?”
আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
— ” আসলে কী বলুনতো? এতদিন পাশে নিয়ে শুতে শুতে ওর ওপর মায়া পরে গেছে। এখন আমি ওকে ছাড়া শুতে পারিনা তাই এটা আমার পাশেই থাকবে।”
বলে আমি নামতে নিলেই ঊনি হাত ধরে টান দিয়ে আমায় বেডে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
— ” হাজবেন্ট ছাড়া কারও প্রতি এতো মায়া দেখাতে নেই। ভালো দেখায় না ইউ নো।”
— ” হাজবেন্ট? আপনি তো আমাকে বউ বলেই মানেন না তাইনা?”
— ” বড্ড বেশিই কথা বলো তুমি। কিপ ইউর মাউথ শাট আল ঘুমোও।”
আমি ওনার কথার পাত্তা না দিয়ে ছাড়িয়ে উঠে যেতে নিলে উনি আবারও আমাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
— ” একদম বেশি বাড়াবাড়ি করবেনা ঠিক আছে? আমি রেগে গেলে কী করতে পারি সেটা কিন্তু তুমি খুব ভালো করেই জানো। আর এখন তো তুমি আমার বউ। সো বুঝতেই পারছো?”
ওনার এই ঠান্ডা গলার ভয়াবহ হুমকিতে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। তাই আর কোনো কথা বলে চুপ করে শুয়ে রইলাম। উনি একটু হেসে শুয়ে পরলেন আমার দিকে ঘুরে আমার অনেকটা কাছে এসে আমার পেটের ওপর ওনার ডান হাত রাখলেন। আমি ফ্রিজড হয়ে আছি পুরো কিন্তু ওনার ওই হুমকির পর কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। আজব! নিজের যেটা ইচ্ছে হয় সেটাই করে আমার কোনো ভ্যালুই নেই। ওনার যখন ইচ্ছা হয় তাই করেন আমার সাথে। আর আমাকে? অবোধ অসহায় শিশুর মতো সব মেনে নিতে হয়। তবে কেনো জানিনা খুব খারাপ লাগছে না ওনার এই সামান্য ছোঁয়াতেও অদ্ভুত কিছু আছে। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমোনোর চেষ্টা করতে শুরু করলাম। তবে তুমি যতোই জোর খাটাও আমি এতো ইজিলি গলবোনা। কোনো দোষ না করেও অনেক কঠিন কঠিন কথা শুনেছি আপনার মুখে। এবার আমিও দেখি আপনি কী কী করতে পারেন।
__________________
বাড়ির সবাই ভীষণ রকমে খুশি কারণ বাড়ির প্রাণ বাড়িতে ফিরে এসছে। এই বাড়ির প্রাণ আদ্রিয়ান। আর ওনার আগের মতো হয়ে যাওয়াতে সবাই ভীষণ রকমের খুশি হয়েছে। আর সব ক্রেডিট দিচ্ছে আমাকে যেখানে আমি কিছুই করিনি। এমনিতেই বাবা মামনী আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু এখন পুরো চোখে হারায়। কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্যে গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট লাগাতে গেলেই উনি হাত ধরে আটকে দিয়ে নিজে সিটবেল্ট টা লাগাতে লাগাতে বললেন,
— ” এটা আমি করি, আর সমসময় আমিই করবো।”
— ” এটাও কী রেসপন্সিবিলিটি?”
উনি গাড়ি স্টার্ট করতে করতে বললেন,
— ” বাচ্চাদের এতো কথা জানতে হয়না।”
আমি একটা ভেংচি কেটে কোনো কথা না বলে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই বলিনা আমি ওনার সাথে। আর বলবও না। হুহ।
কোচিং সেন্টারের ভেতরে ঢুকতেই চমকে গেলাম আমি। কারণ ইশরাত। ইশরাত জাহান। আমার কলিজার বেস্টিদের মধ্যে একজন। আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ওর সাথে ফোনে কথা হয় ঠিকই কিন্তু ওকে এখানে দেখবো ভাবতেই পারিনি ও আমাকে দেখে হেসে দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমি শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ও আমাকে ছেড়ে আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
— ” কীরে বান্দরনী এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? কেমন দিলাম সারপ্রাইজ? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ” তুই না বলেছিলি যে তুই এডমিশনের জন্যে কোচিং করবি না?”
ইশরাত চোখ টিপ মেরে বলল,
— ” এটাই তো সারপ্রাইজ ছিলো বেইবি। কেমন দিলাম?”
আমি ওর কান টেনে ধরে বললাম,
— ” তোকে পিস পিস করে কেটে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার। শয়তান মেয়ে একটা। জানিস কত্তো মন খারাপ ছিলো? তুই নেই, অরু মেডিকো তে আর ঐশির ব্যাচ আলাদা। একা একা ভালো লাগে?”
— ” তাইতো চলে এসছি বেইবি। আচ্ছা ছাড়না জিজু কেমন আছে?”
— ” উনি ভালোই থাকেন।”
ইশরাত এবার মুখ ফুলিয়ে বলল,
— ” কাজটা তুই একদমি ঠিক করিসনি জানিস। তোর বিয়ের দিন জিজুকে দেখে কী হাই লেভেলের ক্রাশটা খেয়েছিলাম? কে জানতো একেই একদিন জিজু ডাকতে হবে? জিজু ডাঈতে গেলেই বুকের ভেতরে কেমন ব্যথা ব্যথা করে।”
আমি একটু রাগী চোখে তাকালাম ওর দিকে। ও একটু ভয় পাওয়ার ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। ওর হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম। তারপর দুজনেই গল্প করতে করতে কোচিং রুমে ঢুকলাম। বন্ধু মানেই আস্তো ভালোবাসা। দুষ্টুমি, খুনশুটি, শেয়ারিং, কেয়ারিং সব মিলিয়ে জীবনের এক অমূল্য পাওয়া হলো বন্ধু।
__________________
আরো তিনটা দিন কেটে গেছে। এই তিনদিন খুব ভালোকরেই ইগনোর করেছি ওনাকে। রাতে রোজই দূরে সরে যাই কিন্তু উনি টেনে কাছে এনে আমার ওপর হাত দিয়েই ঘুমোন।
বিকেলে আমি বসে বসে বায়োলজি পরছি আর উনি আমার পাশে বসে ল্যাপটপে কী জেনো কাজ করছে। হঠা উনি বলে উঠলেন,
— ” অনি আমার জন্যে এক কাপ কফি নিয়ে এসো।”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। অনি “এককাপ কফি নিয়ে এসোতো?”। কেনো? আমি কেনো আনবো? সেদিন তো কফির মগটাই ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র আমি নিয়ে এসছিলাম বলে এখন এতো পিরীত কোথা থেকে আসছে। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু নো।
আমি মুখ গোমড়া করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
— ” আমি মনিকে বলে দিচ্ছি নিয়ে আসতে।”
উনি এবার ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে আমার বাহু চেপে ধরে বললেন,
— ” কদিন ধরেই এমন করছো। আমি কিছু বলছিনা তাই বলে যা খুশি করবে নাকি? কফিটা তুমিই আনবে। যাও!”
আমি ওনার দিকে বিরক্তিমাখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কফি আনতে বেড়িয়ে এলাম। সাধে ওনাকে খবিশ রাম বলি? আমার জীবণটা ত্যানাত্যানা করে দিলো। মানুষটা এমন কেনো? গিরগিটি কেনো? আকাশও এতোবার রং বদলায় না যতোবার উনি বদলাম। উনি আর আকাশ দুটোই সমান। এক বিশাল বড় রহস্য। যেই রহস্যকে ভেদ করা এককথায় অসম্ভব।
#চলবে…
( জানি গল্প ছোট হচ্ছে বলে অনেকেই রেগে আছেন আমার ওপর। কিন্তু আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বড় পার্ট লেখার জন্যে সময়টুকুও ম্যানেজ করতে পারছিনা আমি। একবার লিখে দ্বিতীয়বার চেইক করতেও পারছিনা দুদিন যাবত। তবে যেদিন সময় পাবো অবশ্যই বড় পার্ট দেবো। ধন্যবাদ।)