#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২৩]
সকালের এক ফালি মিষ্টি রোদ এসে মুখে পরতেই চোখ পিটপিট করে বালিশে মুখ গুজে দেয় ভূমি। চাদরটা মাথার উপর পর্যন্ত টেনে নেয়। অনিমা বেগম জানালার পর্দাগুলো সাইট করে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে ভূমির মাথা থেকে চাদর সরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদরে সূরে ডাকলেন,
” ভূমি, অনেক বেলা হয়েছে এবার উঠ। কলেজে যাবি কখন?”
” আর একটু ঘুমাই না মামুনি।”
” এই না না। আজ কলেজে মেলা আছে সেকথা ভুলে গেলি।”
চাদর সড়িয়ে উঠে বসলো ভূমি। অনিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আজ কত তারিখ?”
অনিমা বেগম হাসলেন। ভূমির গালে হাত রেখে বললেন,
” ঘুম এখনো কাটেনি। আজকের দিন তো তুই কখনো ভুলিস না।”
ভূমি নির্বাক তাকিয়ে রইলো অনিমা বেগমের দিকে। অনিমা বেগমের চোখ ছলছল করছে। কম্পায়মান গলা। ভূমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল। ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল,
“এখুনি বের হবো। খাবার রেডি করো মামনি।”
অনিমা বেগমের চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পরলো জল। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভূমির বিছানা গুছাতে লাগলেন। বালিশের নিচে হাতরে একটা ফটোফ্রেম হাতে পড়লো। অনিমা বেগম ছবিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আরাভের হাসিমাখা এক ছবি। কোন এক পাহারে ট্টিপে গিয়ে তুলেছিলো ছবিটা। পিছনে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। প্রকৃতির মতোই সিগ্ধ আরাভের সেই হাসি। ছবিটা ঠিক জায়গায় রেখে বিছানা পরিষ্কার করলেন। ফটোফ্রেমের পাশে রাখা চিরকুটার দিকে হতাশার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেটা আবার বালিশের নিচে রেখে দিলেন।
ভূমি ফ্রেশ হয়ে একটা নীল শাড়ি পরে দুহাতে মুঠোভরতি নীল চুড়ি গড়িয়ে নিলো। কানে ঝুমকো চোখে গাঢ় কাজল ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পায়ে নূপুর পরে আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো। না খারাপ লাগছে না একদম আরাভের স্বপ্ন দেখা নীলাদ্রিতার মতো। দেয়ালে সাঁটানো আরাভের বড় ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
” সাজটা তোমার মনের মতো হয়েছে তো? আবশ্যই হয়েছে এমন রুপেই তো আমাকে দেখতে চেয়েছিলে তুমি। দেখো তোমার মনের মতো করে সেজেছি আজ। পুরো এক বছরপর তোমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তোমার মনের মতো সাজবোনা তা কখনো হয়।”
ছবির উপর হাত বুলিয়ে তাতে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে গেলো ভূমি। অনিমা বেগমকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। আজ আবার কলেজে বিজ্ঞান মেলা। গত পাঁচবছর যাবৎ ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকের এই দিনে বিজ্ঞান মেলা হয়ে আসছে। এই মেলার প্রধান গেটে আরাভের বিরাট বড় এক ছবি টানানো থাকে। মূলত এই মেলাটা আরাভকে ঘিরেই। আজ থেকে ছয়বছর আগে আজকের এই দিনে দেশ ও জনতার কল্যান স্বার্থে নিজের জিবন ত্যাগ করেছিলো এই কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের লেকচারার জুহায়িন আহমেদ আরাভ। তারই মৃত্যুর স্বরনার্থে এই মেলার আয়োজন। হ্যাঁ এর মাঝেই কেটেগেছে ছয় বছর। এই বছরগুলোর এক একটা দিন ভূমির জন্যে এক একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। সেদিনের দুর্ঘটনায় নিজের মানসিক ভারসাম্য হাড়িয়ে ফেলে ভূমি। ভূমির স্বাভাবিক জিবনে ফিরাটাও এতটা সহজ ছিলোনা। পুরো দুইবছর মানসিক হসপিটালে চিকিৎসায় আজকে সুস্থ জিবন যাপন করছে ভূমি। ভূমির সুস্থ জিবনে ফিরে আসার পর তাহমিদ ভূমির হাতে একটা চিরকুট তুলে দেয়। আরাভের লেখা চিরকুট। সেদিন চিরকুট পরে খুব কেদেছিল ভূমি তারপর থেকে আজ অব্ধি কাদে নি সে। ভূমি সুস্থ হয়ে পুরোপুরিভাবে আরাভের বাড়িতে চলে আসে। তখন অনিমা বেগমের পাশে দাঁড়ানোটা ঠিক মনে করেছে। আজ পর্যন্ত ভূমি অনিমা বেগমের সাথেই থাকেন। দিগন্তের পরিবার ভূমিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ভূমি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে দিগন্ত অন্যকাউকে বিয়ে করে। আজ ওদের ঘর আলোকরে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। তাহমিদ এখন এই কলেজের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের হেড। আগে যেখানে মনিরুল ইসলাম ছিলেন। রেদওয়ান পুলিশে জয়েন করেছে। তুহিন সোহান সবাই আজ স্যাটেল।ভূমিও আজ একজন লেকচারার। ভাসানী কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের লেকচারার। তন্ময় বাবা মাকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলেগেচে। ওখানে একটা কোম্পানিতে জব করে সে। ভূমি রিক্সা থেকে নেমে একটা ফুলের দোকানে গেলো। একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে হাটা শুরু করলো কলেজের উদ্দেশ্য। কলেজের পাশে একটা জাগায় এসে দাঁড়ালো সে। সামনের সোনালি অক্ষরের নামটার দিকে তাকাতে চোখ স্থির হয়ে গেলো। বুকের ভিতরটা চাপা ব্যথায় আর্তনাদ হয়ে উঠলো। বড় বড় করে সোনালি অক্ষরে লেখা জুহায়িন আহমেদ আরাভ। ভূমি তার পাশে দাঁড়ালো। নামের উপর হাত বুলিয়ে গোলাপগুচ্ছ রাখলো। তারপর বলতে লাগলো,
” আমাকে আজ কেমন লাগছে বলবে না। নাকি আজও চুপ করে থাকবে। গত চারবছর ধরে তো শুধু আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি। আরাভ তুমি কি শুনতে পাও আমার কথা। শুনতে পাও আমার বুকের ভিতরের আর্তনাদ। কেমন নিশ্চিতে ঘুমিয়ে আছো। তোমার নীলাদ্রিতার বুকের ক্ষতটা সারাবে না। তার চোখের জল মুছিয়ে দিবে না।”
প্রিন্সিপ্যাল স্যারসহ আরো কয়েকজন স্যার ম্যাম এসে দাঁড়ালো ভূমির পাশে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার ভূমির মাথায় হাত রেখে বললেন,
” কাঁদিস না মা। আরাভ তোর আর্তনাদ শুনতে পাবে না। মৃত মানুষ কারো চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারেনা।”
ভূমি শীতল চোখে স্যারের দিকে তাকালো। তারপর আরাভের কবরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসলো দিগন্ত তুহিন সোহান রেদওয়ান তাহমিদ। তাদের সকলের চোখেজল। সবাই আরাভের কবরের উপর ফুলের তোড়া রেখে আর আত্নার মাগফেরাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করলো।
সারাদিন মেলার কাজে ব্যাস্ত থাকায় বিকালে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় ভূমি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে তখন একটা গাড়ি এসে থামলো ভূমির সামনে। ভূমি একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে একটা সুদর্শন যুবক, বয়স আনুমানিক ত্রিশ বত্রিশ হবে। যুবকটা হাসি মুখে এগিয়ে আসলো ভূমির দিকে। ভূমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,
” ডক্টর আপনি?”
” এদিকে এসেছিলাম একটা কাজে। বাড়ি যাচ্ছেন? চলুন ড্রপ করে দিচ্ছি।”
” ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চলে যেতে পারবো।”
” আরে চলুন না। আপনার বাড়ি যাব। অনেকদিন মামির সাথে দেখা হয়না এই সুযোগে দেখাটা করে আসবো।”
যুবকটার জোরাজুরিতে ভূমি বাধ্য হয় তার সাথে যেতে। গাড়িতে ভুমি চুপচাপ বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ একটা নাম শুনে পাশে তাকায় ভূমি।
“নীলাদ্রিতা,,,,
ভূমি আশ্চর্য চোখে পাশে তাকায়। যুবকটা তার ভুল বুঝতে পেরে জিব কাটে। মৃদু হেসে বলে,
” আরাভ আপনার ঠিক নামই দিয়েছে। এই সাজে আপনাকে একদম নীলাদ্রিতা, নীলাচল নীলাঞ্জনার মতো লাগছে।”
” আপনি??
” আরে ম্যাডাম আমি সব জানি। ভুলে যাবেননা আপনার চিকিৎসাটা আমিই করেছি।”
বিরক্তিতে মুখে চ উচ্চারণ করে ভূমি। তারপর বলে,
” প্লিজ আমাকে এই নামে ডাকবেন না। আমি চাইনা আর কেউ আমাকে এই নামে স্বম্বোধন করুক।
“আচ্ছা সরি।” আমনে ড্রাইভ করে যুবকটা। পাশে ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বিড়বিড়াল,
” আমি তো শুধুমাত্র আরাভের ভালোবাসার পাখিটা আমার হৃদ আকাশে মুক্ত করে দিতে চেয়েছি।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে যুবকটা। মনেমনে বলল,
” আরাভ আমার কাজিন হলেও আজ ওকে আমার বড্ড হিংসে হয়। ও আজ না থেকে তোমার মনে জুরে বিরাজ করছে। আর আমি তৃষ্ণার্ত পাখির ন্যায় চেয়ে আছি কখন তোমার একটু ভালোবাসা পবো। দুবছর তোমার ট্রিটমেন্ট করেছি। তোমার গল্প শুনে তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি। অথচ আমি জানি কখনো আমার এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না।”
___________________
কলিংবেল বাজাতেই অনিমা বেগম দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে দেখে অনিমা বেগম বলে উঠলেন,
” আরে মাহির তুই। এতদিনে মনে পরলো মামির কথা।”
মাহির, ডক্টর মাহির খান একজন সাইক্রিটিয়াস। মাহির অনিমা বেগমের গলা জড়িয়ে বলল,
” ও মাই সুইচ মামি। রাগ করোনা। জানোই তো ব্যাস্ত থাকি।”
” ঠিক আছে আয় ভিতরে আয়।”
অনিমা বেগম মাহিরকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলেও ভূমি নিজের রুমে চলে যায়। মাহির ভূমির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
” ম্যাডাম এখনো নিজের সিদ্ধান্তে অটুট।”
” হ্যারে, ওর কিছুতেই বিয়ের জন্যে রাজি হবে না।”
” আরেকটু চেষ্টা করোনা মামি। আমার কিন্তু তোমার এই অবাধ্য মেয়েটাকেই চাই।”
” আমিও চাই ও কাউকে বিয়ে করে জিবনটা নতুন করে শুরু করুন। ওর যে পুরো জিবনটাই পরে রয়েছে।”
আজ রাতটা মাহির এই বাড়িতেই থেকে গেছে। রাতে ওর স্থান হয়ে আরাভের ঘরে। মাহির ঘরেময় পায়চারী করতে করতে বলল,
” তোর ঘরে জায়গা পেলাম ভাই। অথচ তোর প্রেমিকার মনের হোদিশ ও পেলাম না। তোর প্রেমিকা শুধু পুড়াতে জানে। তার ভালোবাসা অনলে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি সে খেয়াল কি রাখে। কি যে বিরহ তার প্রেমে। আমি তো পাগলা প্রেমিক হয়ে যাচ্ছি রে।”
বিছানায় হাতপা ছড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো মাহির। ঘুম নেই ভূমির চোখে। সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে পরে। বালিশের নিচ থেকে আরাভের রেখে যাওয়া চিরকুট নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোই পড়তে থাকে চিঠিটা। এই চারবছরে এতবার পড়েছে যে এটা না দেখেও গড়গড় করে বলতে পারে। তবুপ আরাভে হাতের স্পর্শ ছুলেই যেন মনের মধ্যে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায়। চিঠিতে হাত বুলিয়ে পড়তে থাকে।
নীলাদ্রিতা,
চিঠিটা তোমার হাতে, তাহলে হয়তো আমি আর এই পৃথীবিতে নেই। কেমন আছো নীলাদ্রিতা? নিশ্চয় আমার উপর খুব রেগে আছো? আমিও তোমাকে খুব মিছ করছি নীলাদ্রিতা। খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে।
আচ্ছা পরের জন্ম বলে হয়কি কিছু? যদি কখনো হয় তাহলে সেই জন্মে তোমাকে প্রেমিকা নয় নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসাবেই চাইবো। কেন জানো? তোমাকে খুব কাছ থেকে ভালোবাসার সুযোগ হয়ে উঠেনি আমার। লোকলজ্জার ভয়ে তোমার জন্যে মন উতলা হলেও তোমার কাছে যেতে পারিনি। পারিনি অফিস থেকে ফেরার পথে তোমার জন্যে তরতাজা বেলী ফুলের একটা মালা কিনতে। পারিনি রাত বিরাতে হঠাৎ তোমাকে নিয়ে পিচডালা রাস্তায় হাটতে। খুব করে চেয়েছি এককাপ চায়ে রাত বিরাতে আমাদের আলাপ হোক। আমার বুকের মাঝখানটা তোমার রাতের বালিশ হোক। পারিনি তোমার হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে বলতে, ” কখনো ছেড়ে যেওনা আমায়।” যদি কখনো সুযোগ হয় তোমাকে চাওয়ার তাহলে এই হতভাগা প্রেমিক তোমাকে কেবল নিজের স্ত্রী রুপেই চাইবে। আমি শুধু তোমার ভালোবাসার মনুষ হতে চাইনি। চেয়েছি তোমাকে ভালোবেসে তোমার সুখ দুঃখের ভাগীদার, তোমার হাসি কান্নার অংশীদার, খারাপ সময়ে তোমাকে মানুষিক সাপোর্ট দেওয়ার একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ হতে। তোমাকে খুব কাছ থেকে ভালোবেসে যাওয়ার বড্ড ইচ্ছে আমার। একবার তোমাকে এত করেও চেয়ে পাইনি পরেরবার এই সুযোগ আমি কিছুতেই মিছ করবো না। কিছুতেই না। নীলাদ্রিতা, নীল শাড়িতে যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন তোমাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন বুনেছিলাম, জানো আমার সেই স্বপ্ন! উহ তোমাকে তো বলা হয়নি আমার সেই স্বপ্নের কথা। ” আমার স্বপ্ন- “নীল শাড়ি তে খোলা চুলে আমার হাত ধরে হাটবে তুমি, অনেক বাতাসে যখন তোমার চুল তোমার মুখে এসে পরবে, তখন পরম মমতায় মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিব আমি। ছুঁয়ে দিব তোমার সুন্দর নিষ্পাপ মুখ টা। লজ্জায় তোমার সুন্দর মুখ টা লাল হয়ে যাবে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকব আমি, আর তুমি আমাকে উপহার দিবে, তোমার অদ্ভুত সুন্দর নিষ্পাপ হাসি টা। যে হাসিতে ঝড়বে মুক্তো আর ফুটবে ফুল, কৃষ্ণচূড়া ফুল !! হারিয়ে যাব আমি সেই হাসি তে…
আর তোমার পায়ে নুপুর পড়িয়ে দিব আমি। তুমি হাঁটবে আমি কান পেতে শুনবো তোমার নূপুরের ধ্বনি!! তোমার সুন্দর পা গুলোতে সুন্দর নুপুর বাজবে, আনমনে তাকিয়ে থাকবো আমি। হঠাৎ করেই তুমি জড়িয়ে ধরবে আমায়। তোমার শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে আসবে। আদরে আদরে শিহরিত হবে তুমি…
এলোমেলো বাতাসে কোন এক রাজকন্যার শাড়ির আচল উড়ছে, তা দেখে চাঁদ মামা লজ্জায় পালাবে!! পুরো দুনিয়া অন্ধকার হওয়ার আগেই আরো একটা সুন্দর আলো আমার চোখে ভাসবে, তোমার আলোয় আলোকিত হবে পৃথিবী। ফুল ফুটবে, গান গাইবে পাখি, আকাশে সাত রঙা প্রজাপতির মেলা বসবে।!! অবাক পৃথিবী আশ্চর্য হয়ে তোমার পানে তাকিয়ে থাকবে।…
গভীর আবেশে তোমার কোলেই ঘুমিয়ে পরবো আমি। হঠাৎ ঘুম ভাঙবে আমার। তাকিয়ে দেখবো, আমার রাজকন্যা টাও ঘুমিয়ে গেছে। তোমার চুল গুলো নেড়ে দিব আমি। তখনই জেগে উঠবে তুমি। ঘুম থেকে উঠেই দেখবে তোমার পাশে একটি লাল গোলাপ!! আমার পক্ষ থেকে গোলাপ টা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাবে। অবাক হয়ে তাকাবে তুমি। গোলাপ টাকে বলবে, কিগো ফুল, সুগন্ধ নেই কেন তোমার??
গোলাপ বলবে, এক দেশে কি দুই রানী বাস করে?
একি তুমি কাঁদছো নীলাদ্রিতা! তোমার চোখের জল সহ্য করার ক্ষমা আমার কোনদিনও ছিলো না। আজও নেই। তাই বলছি প্লিজ চোখের পানিটা মুছে নাও। কি ভেবেছ মরেগেচি বলে তোমার থেকেও দূরে চলে গেছি। তুমি ভূল নীলাদ্রিতা। আমি তোমার খুব কাছে আছি। চোখটা বন্ধকরো, দেখবে তোমার চোখের সামনে আমি। প্লিজ আর কাঁদবে না। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো তোমার হাসিতে। তোমার ঠোঁটের সিগ্ধ নির্মল হাসিটা আমি বড্ড ভালোবাসি। সবসময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি। আমাকে বাঁচিয়ে রাখোনা তোমার ওই হাসিতে। তোমার হাসিতেই যে আমার সব শান্তি। একটা কথা রাখবে? নিজের জিবনটা নতুন করে শুরু করো। কি ভাবছো? আমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছি। কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছি। আমি কিন্তু এতটাও ভালোমানুষ না। নিজের ব্যাক্তিগত মানুষটা আমি কাউকে দিবো না। শুধু একবার চলে আসো আমার জগতে। এখানে যে আমি তোমার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছি।আমার জগতে তেমার নিমন্ত্রণ রইলো। এখানে তুমি সম্পূর্ণ আমার, আমার। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছ সেই প্রর্থনা করি। তোমার জগতে তোমার ভালো থাকার অধীকার আছে। তাই বলছি নিজের জিবনটা নতুন করে শুরু করো। আর একটা কথা রাখবে আমার। আমার মা-কে একটু দেখো। আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই। আমার মা-কে একটু ভালোবাসবে নিলাদ্রিতা? ভাবছো তো কেমন ছেলে আমি? একমাত্র মা-কে রেখে কেন এই পথ বেছে নিলাম। যখন আমি এই ডেথ এর ধ্বংসের পরিকল্পনা করি তখন জানতাম না এর পরিণাম এতটা ভয়াবহ হবে। এখানে আমি না হলে অন্য যে কাউকে তার জিবন দিতে হতো। ডেথ আমাদের মতো সাধারণ ছিলো না।” অনেক আশা নিয়ে রেদওয়ান তুহিন তাহমিদ সোহনকে নিয়ে হ্যাকিং গ্রুপ ক্রিয়েট করি। ওদের লিড করতাম আমি। দলের লিডার হয়ে অন্যকাউকে কি করে মৃত্যর দিকে ঠেলে দিতাম আমি। কার্থেজের “হার্নিবল” নামটা নিশ্রয় শুনেছ। তারপর স্কপিও। আমি নেপোলিয়ন, ওয়েলিংটন জীবন বিস্তৃতি পরিসরে অধ্যায়ন করেছি যাতে ওদের মতো করে আমার দলকে লিড করতে পারি। তারপর ওয়াশিংটন, লিংকন, জেনারেল জর্জ প্যেটন, ডেয়াইট আইশেনোয়্যার, ওমর ব্রাডলে প্রমুখ ইত্যাদি আরো অনেকে আছে। যারা সেই সময়ের বিখ্যাত নেতা ছিলেন। আমি ভালোভাবে দল লিড করেছিলাম, তবে যখন ডেথ এর পুরো পরিকল্পনা জানতে পাড়লাম তখন আর কিছুই করার ছিলো না। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সাহসিকতা অন্যতম গুন। আর সাহসিকতার অন্যতম লক্ষণ প্রতিজ্ঞায় অটুট থাকা। ফলাফল যাই হোক প্রতিজ্ঞায় অটুট থাকতেই হবে। তাই আমি আর পিছপা হতে পারিনি।
এই চিঠির সাথে আমি একটা চেইন রেখে গেলাম। সাথে আমার নামের লকেট। ইচ্ছে ছিলো আমাদের সোহাগ রাতে নিজ হাতে পরাবো তোমার গলে। সেটা তো আর হলো না। এটা তুমি নিজে পরে নিও। মনে রাখবে আমি সবসময় তোমার সাথে আছি।
ভালো থেকো নিলাদ্রিতা, আর নিজের জিবনটা নতুন করে গুছিয়ে নিও।
ইতি,
তোমার হতভাগা প্রেমিক।
চিঠিটা বুকের মাঝে ধরে রাখে। তারাভরা দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
” অথচ আমি আমার এই হতভাগা প্রেমিকটাকেই চেয়েছি স্বামি রুপে।”
তুমি বলেছিলে অন্যকাউকে বিয়ে করে নিজের জিবন শুরু করতে। একবারও ভাবোনি এই কাজ করা কতটা কঠিন। কতটা যন্ত্রনার। আমি তো মনে প্রানে তোমাকেই স্বামি হিসাবে মেনে নিয়েছি সেখানে অন্যকেউ? সম্ভব না। আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারলাম না। জানো খুব করে ইচ্ছে করে তোমার কাছে চলে যায়। এ বুকে লুকানো যত কষ্ট আছে সবটা কেঁদে ভাসিয়ে দেই তোমার বুকে। কষ্ট হয় আমার। খুব কষ্ট হয়। তুমি তো তোমার জগতে আমার জন্যে অপেক্ষা করছো। আমি না হয় এজিবনটা প্রতিক্ষায় কাটিয়ে দিবো। তবু তো আমরা এক হবো তোমার রাজ্যে। যেখানে আর হাড়ানো ভয় থাকবে না। আমি যে তোমার আমন্ত্রণের প্রতিক্ষায় দিন গুনছি। তোমার করা নেমন্ত্রণ আমি মনে প্রানে সুপে নিয়েছি। তাইতো আর এই জিবনে কারো ঠাঁই হলো না। ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।
সমাপ্তি,,,,,,,,,
[আসসালামু আলাইকুম। পাড়লাম না হ্যাপি এন্ডিং দিতে। আসলে এই গল্পের থিম আমি সেড এন্ডিং ভাবছিলাম। হ্যাপি এন্ডিং কি ভাবে দিবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। তাছাড়া এটা একটা ক্রাইম থ্রিলার সেখানে হ্যাপি এন্ডিং বুঝতে পারলাম না। ডাক ওয়েব সম্পর্কে যাদের ধারনা আছে তারা একটু বলবেন এখানে রাজত্ব করা কি এতটাও সহজ? মনিরুল ইসলামের মতো একজন ক্রিয়েটিভকে মারা কি এতটাই সহজ। মতামত আপনাদের? আর হ্যাঁ আমি যদি আমার গল্পের মাধ্যমে আপনাদের ভালোকিছু উপহার দিয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই আমার পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে রিভিউ রেটিং দিয়ে আসবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।]