কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৫) লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৫)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

মৃদুল ভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম সে তার বউয়ের কাজ করবে খুশিমনে। আমার জামাইটাও এমন হলেই হয়! আমি তাকে বললাম,
-“মা খাবার পাঠিয়েছেন। খেয়ে নিতে বলল।”
-“দুই প্লেট যে! তোরটাও পাঠিয়ে দিয়েছে?”
আমি মন খারাপ করে ছোট করে জবাব দিলাম, -“হুম।”
মৃদুল ভাই হাসলেন। হেসে নিজের প্লেট টা নিয়ে বিন ব্যাগে ধপাস করে বসে পড়লেন। তারপর খেতে থাকেন। আমারও ক্ষুদার জ্বালায় পেট চো চো করছিল। তাই আমিও ভাইয়ের টেবিলের চেয়ারে বসেই খাওয়া শুরু করলাম। মৃদুল ভাই বললেন,
-“এই অর্নি? মুভি দেখবি!”
-“কীসের মুভি?”
-“কীসের মুভি মানে? ওহ! কী ক্যাটাগরির?”
-“হুম।”
-“রোমান্টিক।”
-“কোনটা?”
-“আচ্ছা, ফিফটি শেডস্ অব গ্রে দেখবি?”
-“সেটার মুভিও আছে!”
-“হ্যাঁ! জানতি না?”
-“না তো। ঐ দিন নিতুন আপুর ….
-“জানি। ভাইয়ের থেকে বই নিয়েছিলি। আচ্ছা ঐ বইয়ের প্লট টা কীসের জানিস তো?”
-“আমি কীভাবে জানব? না কখনো পড়েছি না কখনো দেখেছি। কভার পেজটাও দেখতে পারলাম না। মিফতা ভাই একদম প্যাকেট করে দিয়েছিল।”
-“আচ্ছা। তাহলে এখন দেখ।”

আমি বেশ উৎসুক হয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম। এখান থেকে টিভি ভালো ভাবে দেখা যাবে। ভাইয়ার টিভিতে নেট কানেক্ট করাই আছে। ভাইয়া নেটফ্লিক্স এ ঢুকে একটা মুভি চালু করে দিল। উত্তেজনার বশে নাম টাম কিছু খেয়াল করলাম না। নায়ক নায়িকা কে সেটাই বুঝলাম না। শুধু কিছু ছেলে মেয়ে ভয়ে ভয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে স্ক্রিনে একটা ভূত ভেসে উঠতেই “আআআআআ” করে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। মৃদুল ভাই হাসছেন আর রুটি মুখের ভেতর পুরছে, আরামসে খাচ্ছে। আমি এত ভয় পেলাম। এটা রোমান্টিক! এটা তো হরর মুভি। আমি বুঝতে পারলাম এটা অন্য একটা মুভি। কারণ উপরে কোণায় নাম শো করছে। এখান থেকে বসে যা বুঝলাম ফিফটি শেডস অব গ্রে লেখা নেই। রাগে দুঃখে প্লেটটা নিয়ে রুম থেকেই বের হয়ে গেলাম। মৃদুল ভাই আস্ত বেয়াদব!

৭.
মৈত্রী আপা এসেছন বারোটার দিকে, আমার আপা এলেন একটায়। তারা আসার পরপরই একটা হৈ হৈ ভাব বয়ে গেছে চারিদিকে। মৃদুল ভাই আর মিফতা ভাই বাজার করে এনেছেন। এখন তারা কোথায় আমি জানিনা। আমি আপাদের সাথে গল্প করছি। মৈত্রী আপু আমার চুলে তেল দিচ্ছেন। বারবার বললাম যে শ্যাম্পু করেছি তবুও তেল দিচ্ছেন। মৈত্রী আপুর স্পেশালিটি তেল মালিশ করা। কারো চুলে যদি তেল দেওয়া না থাকে বা কারো মাথা গরম থাকলে আপু তার মাথায় তেল মালিশ করে দেয়। অবশ্য আপুর মালিশ টা এত ভালো হয়! মৈত্রী আপুর স্বামী বর্তমানে ইউএসএ আছেন। তার মা আর বোনদের কাছে। দুদিন হলো গিয়েছেন। ঈদের আগেই চলে আসবেন সবাইকে নিয়ে। এই কয়দিন আপু এইখানেই থাকবে। এটা ভেবেই আমার আনন্দ লাগছে। আহা! জম্পেশ আড্ডা হবে।

তেল মালিশ করার পর কিছুক্ষণ শুয়েছিলাম। পরে কখন চোখ লেগে গেল! উঠে দেখি সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। আমার মাথায় হাত। তিনটায় ঘুমিয়েছিলাম আর উঠলাম সাতটায়। চোখ মুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে কাউকে কোথাও পেলাম না। নিচে নামার পরে দেখলাম খালামণি আর তার রান্নার লোক কি রান্নাবান্না করছেন। একটু সামনে গিয়ে দেখলাম স্পাইসি নুডলস, চিকেন ফ্রাই আর চা, দুধ চা! আমি এই দুইদিন ডায়েট ফলো করছিনা। অর্থাৎ অঘোষিত ভাবে আমার ডায়েট এখন বন্ধ। আপাতত কয়েকদিন খাই। সামনে আবারও শুরু করব। খালামণি আমাকে দেখে আদুরে গলায় বললেন,

-“উঠেছিস বাচ্চা!”
-“হুম। মা কোথায় গো?”
-“তোর বাবা এসেছেন কিছুক্ষণ আগে। বাসায় গেছে আবার রাতে আসবে। আমরা দুইবোন রান্নাবান্না করেছি। রাতে সবাই একসাথে খাবে। অবন্তীদের পরিবারকেও দাওয়াত করলাম। অভ্র আর অবন্তীকে মিফতা ডেকে এনেছে। ভাবী এশার নামায পরেই আসবেন।”
-“সবাই কোথায়?”
-“সবগুলো ছাদে গেছে। ক্যারাম খেলছে মনে হয়। আমি তোদের জন্য এসব তৈরি করে নিয়ে আসছি। তুই যা জলদি! ওরা বেশিক্ষণ হয়নি যে গেছে। খেলা শুরু করার আগেই গিয়ে ভাগ বসা।”
-“আচ্ছা!”

আমি একপ্রকার দৌঁড়ে রুমে এলাম। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি আজকে সবগুলো লাইট জ্বালানো আছে। ফেইরী লাইট গুলোও জ্বলজ্বল করছে। আহ! কী অপরূপ দৃশ্য। আমাকে দেখেই আপা বলল,
-“এত দেরি করে এলি কেন? আমরা অলরেডী খেলা শুরু করে দিয়েছি।”
-“তোমরা আমাকে ছাড়া খেলতে পারো না!”
মৃদুল ভাই ফোঁড়ন কেটে বলল, -“কেন রে? তোকে ছাড়া খেলতে পারব না কেন? তুই কী পিএম?”
-“ধরে নাও তাই!”
মিফতা ভাই বললেন,
-“আচ্ছা থাক! ও তো এত বেশিও দেরি করেনি। আমরা তো মাত্র তালগাছটা ভেঙেছি। চল টিম করে খেলি।”

অবন্তী আপু চেচিয়ে বলল,
-“আমি মৃদুল ভাইয়ের টিমে।”
আপা বলল, -“আমি মিফতার টিমে।
মৈত্রী আপু বললেন, -“আমি একাই খেলব।”
বাকি আছি আমি। এখন আমি কী করব? রেসলার মার্কা ডাক্তারটার সাথে টিম করব? করতেই পারি। ডাক্তার যদি কিছু মনে না করে তো! আমি অবশ্য চুপই ছিলাম। মৈত্রী আপু বললেন,
-“অভ্র তোর টিমে অর্নিকে নে।”
-“আমার সাথে?”
-“হ্যাঁ। সমস্যা আছে? আরে অর্নি দারুন খেলে।”
মৃদুল ভাই বলল,
-“তাহলে ওকেই একা দে। তুই অভ্র ভাইয়ের সাথে টিম কর।”
-“না মৃদুল! আমার আজ একাই খেলতে ইচ্ছা করছে। আমি আজ ওয়ান ম্যান আর্মি।”

অগত্যা ডাক্তারের টিমে আমি পড়লাম। ডাক্তার ভালোই খেলে। তবে সবচেয়ে ভালো মিফতা ভাই খেলেন। আপা তো ঠিকমতো পারেইনা। তাই তো সুযোগ বুঝে মিফতা ভাইয়ের টিমে চলে গেলেন। সবাই সমান সমান খেয়েছে সাদা আর কালো দুইটাই। এখন রেড খাওয়া নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। আমি ডাক্তারটাকে বললাম,
-“শুনুন!”
আমার কথা শুনে ডাক্তার এমন ভাবে আমার দিকে তাঁকালেন আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। এদিক ওদিক তাঁকিয়ে দেখলাম সবাই কেমন করে তাঁকিয়ে আছে। আমি চোখ মুখ কুঁচকে বললাম,
-“কী হয়েছে? হাদার মতো সবকয়টা তাঁকিয়ে আছো কেন?”
আপা বললেন, -“না কিছুনা।”
আমি ডাক্তারকে আবারও বললাম,
-“শুনুন না!”
ডাক্তার চটপট জবাব দিলেন, -“হ্যাঁ বলো!”
এবার মৈত্রী আপুর আর অবন্তী আপুর চাপা হাসির শব্দ শুনলাম। পাত্তা দিলাম না। ডাক্তারকে বললাম,
-“আমি এই শটটা খেলি? প্লিজ!”
-“আচ্ছা নাও।”
আমি স্টিক হাতে নিলাম। সবাই একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ফিলটা এমন হচ্ছে আমি একা মানুষ মাঠের ময়দানে সবার সাথে লড়াই করে জিত আনতে চলেছি। মৃদুল ভাই বললেন,
-“মুটকি দেখিস তোর হাতের চাপে বোর্ডটা আবার না ভেঙে যায়!”
সবাই হেসে দিল। কেবল ডাক্তার আর মিফতা ভাই ছাড়া। ভালো লাগল ব্যাপারটা। লোকগুলো আমার সম্মানটা ধরে রাখতে চাইছে। মৃদুল ভাইয়ের মুখে ঝামা ঘষে আমি রেড খেয়ে ফেললাম। আর আমার টিম জিতে গেছে। আমি আর ডাক্তার উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলাম। তারপর খুশিমনে খালামণির রেখে যাওয়া নুডুলস নিয়ে খেতে থাকলাম। মিফতা ভাই হেসে দিলেন। আর মৃদুল ভাইয়ের চোখ গরম। তাতে আমার কী? আমি আর আমার রেসলার মার্কা ডাক্তারটা জিতে তো গেলাম। মনে মনে ভাবলাম কাপল হিসেবে আমরা খারাপ হবো না। কো-অপারেশন ভালো আমাদের। ডাক্তারটার দিকে তাঁকিয়ে একটা চোখ মেরে দিলাম। ডাক্তার মুহূর্তেই নুডুলস খাওয়া থামিয়ে দিলেন। একদম তাজ্জব হয়ে গেছেন তিনি। হা হা হা!

#চলবে।
(এখানে নায়কের কোনো ব্যাপারই আসছেনা। প্রথমত এটা অর্নির মনের কথা। তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। তার সাথে ঘটা সব লিখিত ভাবে। বাকি সবই তার সাথে ঘটাই পাবেন। এখন অর্নি তো নিজেও বুঝছেনা তার জীবনসঙ্গী কে হবে? তাহলে আমরা শুধু শুধু মাথা ঘামাই কেন? আমরা বরং তার মতই ব্যাপারটা উপলদ্ধি করি, উপভোগ করি। আজকে আপনাদের মন্তব্য চাইছি। নাইস, নেক্সট না। গঠনমূলক মন্তব্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here