কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৬) লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৬)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

৮.
রমজান মাস! সংযমের মাস। আমি নিজেকে যথেষ্ট গুটিয়ে রাখছি সব আলতু ফালতু কাজ করা থেকে। এর মধ্যে একটা কাজ হলো ডাক্তারকে বিরক্ত করা। ডাক্তারের প্রতি এখন একটা ফিলিং আসে। তার কথা মনে পড়লেই মুখে হাসি লেগে থাকে। ফেসবুকে ভালোবাসার লক্ষণ গুলো দেখি সারাক্ষণ। আমার সাথে প্রায় সবই মিলে যায়। মাঝখানে কয়েকদিন সবসময় খালামণির বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরতাম। ভাব খানা এমন যে আমি কেবলই খালামণির বাড়িতেই এসেছি। তবে আসল সত্যি তো আমি জানি। আমি তো যাই ডাক্তারের একটুকু দর্শনের জন্য। সেদিন একটা কান্ড ঘটিয়েও ফেলেছি। আমি রোজকার মত একটু সেজেগুজে ডাক্তারদের মেইন গেইটের সামনে ঘুরঘুর করছিলাম। ওমনি কোথা থেকে ডাক্তার এসে হাজির। এর আগে কখনোই সামনা সামনি পড়িনি আমি তার। তাকে বারান্দায় দেখতাম বা বাহিরে লনে হাঁটতে দেখতাম। লনের দৃশ্যটুকু মিফতা ভাইয়ের ছাদের সেই রুম থেকে দেখতাম। লুকিয়ে চুরিয়ে ডাক্তারকে দেখার আলাদাই মজা। তো আমি সেদিন গেইটের সামনে পায়চারি করছিলাম। এই মাথা ওই মাথা হাঁটছিলাম। হঠাৎ করেই গেইট খুলে গেল আর আবিষ্কার করলাম ডাক্তারকে। ডাক্তার টিপ টপ হয়ে বেরিয়েছিল। আমি হা করে গিলছিলাম। শুনতে বাজে লাগলেও প্রকৃত অর্থে তাই করেছিলাম। ডাক্তার বিব্রতবোধ করলেন। আমাকে না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলেই আমি তার পথ আটকালাম। হেসে বললাম,
-“কেমন আছেন ডাক্তার?”
-“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তুমি?”
-“আমিও।”
-“কোথায় যাচ্ছেন?” আমার এই প্রশ্নে ডাক্তার কিছুটা নয় অনেকটাই বিরক্ত হয়েছিলেন। আমার তাতে কী? আমি কী সেসবের থোরাই কেয়ার করতাম? ভদ্রতার খাতিরেই সে উত্তর দিল,
-“এই সময়ে আমি হসপিটাল যাই।”
-“আমিও।”
-“কী তুমিও?”
-“আমিও এই সময়ে কলেজ যাই।”
-“তাহলে এখন এখানে কী করছ? কলেজে যাও।”
-“আজ তো শবে বরাতের বন্ধ। কাল সারারাত যে ইবাদত করলাম এখন না ঘুমিয়ে ক্লাস করব?”
-“তা ঘুমাচ্ছো কোথায়? রাস্তায় ঢ্যাং ঢ্যাং করছ।”
-“ছিঃ এসব কেমন শব্দ ব্যবহার করেন? আচ্ছা? আপনার জিএফ টিএফ আছে?”
-“জিএফ থাকলেও টিএফ নেই।”
-“জিএফ আছে?”
-“হ্যাঁ আছে। সবারই থাকে।”
-“সবাই আর আপনি এক হলেন?”
-“কেন! আমার জিএফ থাকতে নেই নাকি?”
আমার কী হয়েছিল কে জানে! আমার গলায় কান্না দলা বেধেছিল। কোনোরকমে বললাম,
-“না পারেনা।”

এই আমার আর তার শেষ দেখা আর শেষ কথা। তারপর থেকে আজ বিশ দিন হতে চলেছে কোনো দেখা স্বাক্ষাত নেই। খালামণিদের বাসায় ইফতারের দাওয়াত ছিল আমি সেখানেও যাইনি। সকালে খবর পেলাম যে সন্ধ্যায় দাওয়াত, তখন দুপুরেই বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করে নিলাম সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যাব। আর মাকে কোনোরকম ম্যানেজ করে বিকেলেই বেরিয়ে পড়লাম। খালামণি আর মৈত্রী আপু আমার উপর রাগ করেছে খুব। এখনো রেগেই আছে। আমি এখন ভারী উদাসীন। সেদিকে খবর রাখারও সময় নেই। মৃদুল ভাই তো ধমকে গিয়েছিলেন কেন বন্ধুদের সাথে বেরিয়েছি। আমিও তাকে দুই তিনটা কথা শুনিয়ে দরজায় খিল দিলাম। ডাক্তার কেন ডাক্তারের বাড়ির আশেপাশের কাউকেই এখন ভালো লাগেনা। আমি এইবার বোধ হয় সিরিয়াস ক্রাশ খেয়েছি। নইলে তার জিএফ আছে শুনে আমার এত রাগ, অভিমান হয় কেন?
অবাক করা ব্যাপার আমি সেদিনের পরে দুইরাত কেঁদেওছি। এখন কিছুই ভালো লাগেনা। শুধু রোজা রাখি, নামায পড়ি, কোরআন তিলাওয়াত করি। ঘর থেকে বের হইনা ঠিকমত।

৯.
মেরুন থ্রী পিসটা পড়ে চুল ঠিক করলাম। হালকা একটু সাজলাম। সাজ বলতে কোথাও কারো বাসায় যেতে হলে নিজেকে যে একটু পরিপাটি করে নিতে হয় তেমন। সামনের বিল্ডিংয়ের তিয়াস ভাইয়াদের বাসায় দাওয়াত। আন্টি বারবার করে বলে গেছেন আজ ইফতার এবং ডিনার দু’টোই তাদের বাসায় করতে হবে। একটু আগেও কল করেছেন। খালামণিরাও নাকি এসে গেছে। আমার আপাও দুপুরে এসেছিল। এখন আপা সহ যাচ্ছি। আমি নিজেকে ধাতস্থ করলাম। শুধু শুধু অচেনা, অজানা লোকের জন্য কেঁদেকুটে কোনো লাভ নেই। ইট জাস্ট এ টাইম ওয়েস্ট! নিজেকেই তো ভুলে বসেছি আমি। এর থেকে ভালো সবার সাথে এঞ্জয় করি। মৈত্রী আপু আর খালামণির রাগ ভাঙাই। ঐ একটা উটকো ঝামেলার জন্য তাদের মনে কত কষ্ট দিলাম! ধুর! মনে পড়লেই কেমন বাজে লাগে।

তিয়াস ভাইয়াদের বাসায় ঢুকে দেখি এলাহি কান্ড! আরো দশটা পরিবার আমন্ত্রিত। সবাই আমাদের চেনাজানা। নিতুন আপুরাও ছিল। সমবয়সী দুই তিনটাও আছে। একটা হৈ চৈ পড়ে গেল। ইফতারে মহিলারা সব একসাথে বসেছে পুরুষরা সব একসাথে। আমি খালামণি আর মৈত্রী আপুকে এতক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিলাম যে রাগ না ভেঙে আর থাকতে পারেনি। ইফতার শেষে সবাই আন্টির একটা বড় নামাযরুম আছে সেখানে নামায পড়লাম। পুরুষরা সব মসজিদে গেছে। নামায শেষে চা নিয়ে বসে সবাই। আমি এবার ড্রয়িং রুমে যাই। মিফতা ভাই, তিয়াস ভাই, আমার আপা, মৈত্রী আপু, নিতুন আপু আরো কয়েকজন সোফায় বসে গল্প করছে। তিয়াস ভাইদের ফ্ল্যাটটা বেশ বড়। সেই সুবাদে ফার্ণিচার গুলোও বড়। সোফা একটাই এই মাথা থেকে ঐ মাথা। তাই দুইপাশ মিলিয়ে বিশজন ইজিলি বসতে পারবে। আমি যেতেই তিয়াস ভাই বললেন,
-“অর্নি! তুমি এসেছ?”
খেয়াল করে দেখলাম মিফতা ভাইও আমাকে দেখে চমকে গেছেন। আসলে আসার পর এদের কারো সাথেই দেখা হয়নি। তিয়াস ভাইও আমাকে দেখেনি। আমি হেসে বললাম,
-:না আসার কী আছে? আমার কী আসা মানা!”
-“না মানে আজ তুমি কোনো রেস্টরন্ট যাওনি?”
মূহুর্তেই হাসির রোল পড়ে গেল। মিফতা ভাইকে দেখলাম সে মিটিমিটি হাসছে। আমি মৃদুল ভাইকে দেখলাম না এই মজলিসে। তিনি আসেনি? আমি তাদের হাসি তামাশাকে ওত একটা পাত্তা দিলাম না। মনের সুখে চায়ে চুমুক দিলাম। মাইন্ড সেটআপ করেই রেখেছি। যত কিছুই হয়ে যাক না কেন নিজেকে সুখী মনে করব অল-টাইম। তাহলেই শান্তিতে থাকব। কিন্তু বিধিবাম! আমি যখন সবচেয়ে সুখী মানুষের অভিনয় করছিলাম তখন শুনি তিয়াস ভাই বলছেন,
-“আরে অভ্র! তুই কোথায় হারিয়ে গেছিলি বেটা! নামায শেষে দেখলামই না! মৃদুল তুমিও তো ছিলেনা। কোথায় ছিলে তোমরা!”
অভ্র নাম শুনেই আমার বুকটা ধ্রিম করে শব্দ করল মনে হলো। পেছন ফিরে দেখি ডাক্তার অভ্র দাঁড়িয়ে। তার সাথেই মৃদুল ভাই। আমার দিকেই দুইজন তাঁকিয়ে আছে। একজনের চোখ পড়তে পারলাম না। তবে আরেকজনের চোখ পড়তে পারলাম। সেটা হলো মৃদুল ভাইয়ের চোখ। যেখানে স্পষ্ট লিখা আছে,
-“অর্নি তোর খবর আছে!”
কিন্তু কেন? শুধু শুধু রাগই কেন?

#চলবে।
(রি-চেইক দিতে পারলাম না এখন। ভুল ত্রুটি দেখলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here