এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২ #লেখিকা – কায়ানাত আফরিন #পর্ব – ২৭+২৮

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২৭+২৮
সামনে যে এমন কিছু দেখবো, এটা কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি আমি। স্তব্ধ অবস্থায় ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম তাই। আনভীর এবার বললেন,
‘ এটা তোমার ডে ড্রিম না আহি। তুমি সত্যিই দেখছো যা আমি দেখছি।’
আমার চোখ টলমল করে উঠলো অশ্রুতে। এটা কিসের অশ্রু সেটা যেন ব্যক্ত করা অসম্ভব আমার কাছে।
.
.
আমার সামনে সোফায় এক জোড়া মধ্যবয়স্ক কপোত-কপোতী বসে আছেন। যাদের আমি চিনি। খুব ভালোমতোই চিনি। তাদের সঙ্গে আরও দু’জন ছিলো যাদের আমি খেয়াল না করে শুধু সেই দুই প্রবীন দম্পতির দিকেই চেয়ে থাকলাম নিষ্পলকভাবে। ইনারা আর কেউ নন, আমার মামু এবং মামী। আমার মায়ের আপন বড় ভাই। যাকে আজ কতবছর পর দেখলাম তা আমার তেমন একটা ধারনা নেই। চেহারার জৌলুস কমে বার্ধক্যের ছাপ পড়লেও চেহারায় বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি সেটার। আরও যারা ছিলো তারা হলো আমার ছোট মামু আর মামাতো বোন নীলু। বড় মামু আমায় এভাবে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবার। কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ কেমন আছিস রে আহি মা?’

আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
দ্রুত পায়ে মামুর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। চোখের অশ্রুগুলো পড়ছে এবার অবিবারমভাবে। কোনো ইতি নেই। বড় মামু সস্নেহে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন এবার। এতে আমার কান্না যেন আরও প্রগাঢ় হয়ে গেলো। অঝোরে ধারায় কেঁদে উঠি আমি। এই মানুষটাকে বিগত পাঁচটা বছর তন্ন তন্ন করে আমি খুঁজেছি। যোগাযোগ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্ত আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম তাতে। চাচু বা অপূর্ব ভাইয়াকে হাজার বার অনুনয় করে বলেছিলাম একটাবার, একটাবার শুধু মামুর সাথে কথা বলতে দিতে। কিন্ত আমার কথা শোনেন নি কেউ। অপূর্ব ভাইয়া তো আরও না। কেননা শেষবার মামু এসেছিলো আমায় উনাদের থেকে ফিরিয়ে আনতে। শুধু সেই শেষবার না, মা মারা যাওয়ার পর মামু আমায় দত্তক নেওয়ার জন্য অনেক ছুটোছুটি করেছিলো। কিন্ত আমার বাবা যেহেতু বেঁচে ছিলো আর সে এতে সম্মতি জানায়নি বলে মামু পারেননি। তাই শেষবার আমার ১৮ বছর হওয়ার পর যখন জানতে পারেন যে অপূর্ ভাইয়া আমায় আংটি পরিয়ে রেখেছেন এতে রেগে যান কিছুটা। বলেছিলেন যে ওমন নির্দয় পরিবার যে এতবছর শুধু ওত পেতে ছিলো কবে আমার ১৮ হবে আর কবে আমার মায়ের উইল করা সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নিবে এমন জায়গায় কিছুতেই কিছুতেই আমায় রাখবেন না। এতে অপূর্ব ভাইয়া ক্ষেপে গিয়েছিলেন অনেক। বড় মামুর সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমি তাই রাগ করে একবার বাসা ছাড়ার কথা বলতে অপূর্ব ভাইয়া সেদিন একবেলাও খেতে দেননি আমায়। পরপর দু’দিন আমি আমার ঘরে বন্দী অবস্থায় ছিলাম।

তখন থেকে অপূর্ব ভাইয়া চাচুর কথায় আরও সতর্ক হয়ে যান আমায় নিয়ে। কিছুতেই একা বের হতে দেন না। কোনো সুযোগ রাখতেন না যে আমি মামুর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। মেডিক্যাল স্টুডেন্ট লাইফেও অপূর্ব ভাইয়া কড়া চোখে নজর রেখেছেন আমার ওপর। ছেলে বন্ধু তো দূরের কথা, মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলতে দিতো না। এসব কিছু মনে করে আমি আবারও জড়িয়ে ধরলাম মামুকে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লেই আমার রুহ কেঁপে ওঠে। আমার তখন ১৮ বছর হয়েছিলো বিধায় সম্পত্তির জন্য হায়েনার মতো আচরণ করেছিলো চাচু্। সেই সময়টাতে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো মামুর। রাতের পর রাত কেঁদেছিলাম এই ব্যক্তিটির সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। মামু এবার বলে ওঠলেন,

‘ আহা! কাঁদে কেনো আমার মামণিটা? মামুকে পেয়ে খুশি হওনি বুঝি?’

আমি মাথা তুলে তাকাই বড় মামুর দিকে। নিজেকে সংযত করে কান্না চেপে বললাম,

‘ কথা বলবে না। আজ কতদিন পর তোমায় পেলাম। কাঁদবো না তো কি করবো হ্যাঁ?’

বড় মামু হেসে দিলেন আমার কথায়। ছোট মামু ওদিকে আহাজারি কন্ঠে বললেন,

‘ এই আধবুড়ো লোকটাই কি তোর একমাত্র মামু? আমি ও তো আছি।’

তার কথায় হেসে দিলাম আমি। ছোট মামু হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘ কেমন আছিস?’

আমায় কিছু বলতে না দিয়েই মামী বললেন,

‘ এটা কি জিজ্ঞেস করার মতো কথা ছোটন? দেখিস না, যে আহি কত ভালো একটা বর পেয়েছে? এমন একজন থাকলে কোন মেয়ে খারাপ থাকে?’

আনভীর সম্মুখেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। দেখছিলেন আমাদেরকে। মামু হেসে বললেন,

‘ আনভীরই নিয়ে এসেছে কিন্ত আমাদের।’

মামুর কথা শুনে আমি হকচকিয়ে যাই কিছুটা। চোখের পলক না ফেলে রাশভারি চোখ করে তাকালাম মামুর দিকে, তারপর আনভীরের দিকে। উনার ঠোঁট চেপে হাসছেন আমায় দেখে। সেই ঠোঁট কোলে বিদ্যমান প্রশান্তির এক হাসি। আনভীর এবার বললেন,

‘ এবার বুঝলেন মিসেস আনভীর যে নাহিদ কে নিয়ে তোমার অগোচরে কি করছিলাম?’

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম সানন্দে। ছোট মামু টিটকারি সুরে বললেন,

‘ তোকে তো আমি সোজাসাপটা টাইপ মেয়ে ভাবতাম আহি৷ তুই যে তলে তলে প্রেম করে বিয়ের কাজও সেরে ফেলেছিস এটা তো আমি ভাবতেও পারিনি। তবে যাই হোক, একটা পার্ফেক্ট ম্যান কে বিয়ে করেছিস মেয়ে।’

আমি রাঙা মুখে মৌনতা পালন করলাম। তবে এতটুকু সময়ে বুঝতে বাকি রইলো না যে আনভীর মহাশয় ইতিমধ্যে মামুদের ভালোমতোই হাতিয়ে নিয়েছে।। নাহলে আমার ছোট মামু যেই মানুষ, পান থেকে চুন খসলে উনি যেকোনো ব্যাক্তিকে নিয়ে কান্ড বাধিয়ে ফেলতে পারেন। আর সেদিকে আনভীরের এত প্রশংসা বুঝিয়েই দিচ্ছে যে মামু কতটা ভক্ত হয়ে গিয়েছে আনভীরের।

আনভীর এবার বললেন,

‘ আপনারা তাহলে কথাবার্তা বলুন। আমার ছোট্ট একটু কাজ আছে বাইরে। আসতে কতক্ষণ লাগবে বলতে পারছি না।’

‘ কেন বাবা? তুমিও থাকো?’

মামুর কথায় আনভীরের না বলতে ইচ্ছে করলো না। তবুও ইতস্তত করে বললো,

‘ জরুরি কাজ মামা। আপনাকে বলেছিলাম না যে একটা ইন্টারভিউ……’

‘ ওহ হ্যাঁ, আমি তো বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম এর কথা৷ আচ্ছা যাও বাবা। ইউ নো হোয়াট,ো প্রফেশন ইজ ফার্স্ট। ‘

আনভীর সম্মতি জানালেন এতে। যাওয়ার আগে এক ফাঁকে ফিসফিস করে কানে বললেন,

‘ ব্যস্ততায় দ্রুত চলে গেলাম বেবিগার্ল। গিফ্টের রিভিউ এসেই নাহয় নিবো নে কেমন?’

উনার কন্ঠের ধরন দেখে একটা অজানা শিহরণ জেগে উঠলো অন্তরে।

এদিকে আনভীর নাহিদকে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো হঠাৎ। নাহিদ একপলকেই কিছু একটা দেখছে আর আনমনে হাসছে। আনভীর এগোলো নাহিদের দিকে। বললো,

‘ কি রে নাহিদ! আনমনা হয়ে কই গেলি?’

তৎক্ষণাৎ ধ্যান ভাঙলো নাহিদের। ইতস্তত করো বলে ওঠলো,

‘ ত..তেমন কিছু না এআরকে।’

সন্দেহ জাগছে আনভীরের মনে। ও জানে যে এই প্রায় ছয় ফুট ছুঁই ছুঁই গাধাটার সব কাজকর্ম ই ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর। তবুও নিজেকে সামলে রেখে আনভীর বললো,

‘ কিছু না হলে চল তাহলে? দেরি হচ্ছে তো?’

‘ আর একটু পরে গেলে হয় না?’

নাহিদের কথায় ভ্রু নাচালো আনভীর। বললো,।

‘ কাহিনী কি তোর?’

নাহিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে আনভীর এবার তাকালো নীলুর দিকে। হঠাৎ ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো আনভীরের। বললো,

‘ ও এই কাহিনী। আহির এই মামাতো বোনটাকে ভালোলাগছে তোর?’

নাহিদ স্তব্ধ হয়ে আনভীরের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। এটা কি মানুষ নাকি অন্তর্যামী যে এভাবেই বেফাঁস কথা বলে ফেলে? নাহিদ চুলে হাত বুলিয়ে সংবরন করলো নিজেকে। বললো,

‘ মুখে এই কথাটা আর আনবেন না ভাই। ভাবি জানলে কাহিনী হবে। মুখে একবার আনসেন ভালো। এবার এটা গিলে হজম করে ফেলেন।’

বলেই নতমুখ করে চলে গেলো নাহিদ গাড়ির দিকে। আনভীর বিস্ময় পানে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নাহিদ বিড়বিড়িয়ে বললো,

‘ এমন ডেন্জেরাস ভাই যে আমায় কপলােই কেন দিসে আল্লাহ জানে!’

____________

সোফায় এমন টলতে টলতে অপূর্বকে বসতে দেখে চোখ পাকিয়ে তাকালেন অপূর্বের বাবা। গতকাল রাতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেই যে বেরিয়েছিলো, এলো এই অবেলায়। সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন উনি। ইকবাল সাহেব হাতে খবরের কাগজ নিয়ে আসা মাত্রই অপূর্বের বাবা থমথমে গলায় বললেন,

‘ এই লাটসাহেব কে জিজ্ঞেস করো তো ইকবাল , যে গতকাল কোন ঘাটে ভেউ ভেউ করে এসেছিলো?’

অপূর্ব পাত্তা দিলো না বাবার কথায়। নেশা এখনও ভালোমতো কেটে উঠেনি। চেচিয়ে তাই ডেকে উঠলো,

‘ মা কড়া করে এক মগ কফি দাও।’

তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো অপূর্বের বাবা। বললো,

‘ সারারাত বারে বসে ছাই পাশ গিলবে আর সকালে কফির জন্য চেচাঁবে।’

ইকবাল সাহেব খেয়াল করলেন যে মুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছে অপূর্বের। ঢোক গিললো সে। বড়৷ ভাই কে বললো,

‘ ভাইজান সাবধান। বাবাজি কিন্ত খেপে যাচ্ছে।’

‘ খেপবে কেন এই লাটসাহেব টা? আজ কতদিন হয়ে গেলো মালগুলো গুদামে পড়ে আছে সেগুলো স্মাগলিং না করলে কত বড় লসটা হবে দেখেছো? নিজে তো মরবে , সাথে আমাকেও মারবে এই ছেলেটা।’

বিরক্ত হলো অপূর্ব। বলে উঠলো,

‘ একটু শান্তিমতো থাকতে দিবে ড্যাড?’

‘ আমার শান্তি কেড়ে আরও শান্তি চাও? শুনে রাখো একটা কথা। এভাবে মদ টদ খেয়ে ঘুরে না বেরিয়ে আহিকে খুঁজো। সময় নেই আমাদের হাতে। ওর মায়ের সম্পত্তিগুলো নাহয় দেউলিয়া হয়ে যাবে। যেটা আমি কিছুতেই হতে দিবোনা।’

‘ তোমার এসব ভাবতে হবেনা ড্যাড। আগে নিজের গুলো সামলাও। পরে ওর টা হস্তক্ষেপ করো। আর হ্যাঁ, তোমার যেমন ওর প্রোপার্টি নিয়ে মাথাব্যাথা , তেমনি আমার মাথাব্যাথা আহিকে নিয়ে। আই ওয়ান্ট হার এট এনি কস্ট।’

বলেই ক্ষান্ত হয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো অপূর্ব। অপূর্বের বাবা অপ্রসন্ন হলেন। বুঝলেন, এভাবে ছেলেকে দিয়ে কাজ হবেনা। ছেলেকে ওর ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। তাই বলে ওঠলেন,

‘ এত বছর তোর খাচায় বন্ধ করে রেখেছিলি ওকে অপূর্ব। তাই তোর কথায় উঠতো আর বসতো। এমন যে না হয় এই ফাঁকে তোর সম্পদকে অন্য কেউ হাতিয়ে নিয়ে যাবে।’

কথাটা বুকে তীরের মতো বিঁধল অপূর্বের। বাবার কথাটা নিছক মিথ্যে নয়। তাই ধীরপায়ে সে চলে গেলো ওপরের ঘরে। আহিকে যে ও খুঁজছে না এমন নয়। গতকাল ওর একজন লোক একটা তথ্য পেয়েছে আহির সম্পর্কে। এআরকের আশপাশের সব খবরাখবর জোগাড় করেছে। এখন সেটাকে ধরেই খুঁজতে হবে আহিকে।

_____________________

আজকে সময়টা আমার সুন্দর কেটেছে মামাদের সাথে। সারাদিন আমরা অনেক গল্পগুজব করেছিলাম। মামী কথায় কথায় বললেন আনভীরের বাবা মায়ের কথা। আমি বললাম যে উনারা অন্যত্র থাকেন। তারপর নীলুকে সারা বাংলো ঘুরিয়েছি আমি। আনভীরের বেশ কয়েকটা গিটারও দেখিয়েছি। নীলু বুকে হাত দিয়ে বললো,

‘ হায় মে মারজাওয়া। এআরকে আমার সবসময়কার ক্রাশ। আমাদের কলেজ ফ্রেন্ডরা সবসময় আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকি কখন এআরকে গান রিলিজ করবে। ওর একটা এফবি লাইভও মিস করিনি আমি। আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড তো এআরকের ডাইহার্ট ফ্যান। কনসার্টের জন্য গ্যাং নিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসে পড়তো। আর আমি এখন সেই এআরকে’র বাড়িতে? ও এম জি।’

‘ তোর কি হিংসে হচ্ছে নাকি বুড়ী?’

‘ আর বলিস না আপু। এআরকে কে আসলেই ভালোলাগে আমার ফর হিজ ভয়েস এন্ড গুড লুকিং। কিন্ত তা কি আর হবে? সে যে এখন আমার দুলাভাই হয়ে গিয়েছে।’

আমি ঠোঁট চেপে হাসলাম নীলুর কার্যকলাপ দেখে। বিকেলের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য স্থির হলেন মামা। আমি থাকতে বলেছিলাম কিন্ত শুনেননি। বললেন, সামনে যখন বড় করে আমার আর আনভীরের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন দেখা যাবে। আমি অবাক হলাম একটু। ভাবতে পারেনি আনভীর আসলেই এ ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস। উনি হয়তো অপেক্ষা করছেন আমার ডক্টর হওয়ার লাইসেন্সের জন্য। আমার মনে একটা আনন্দের আভাস ফুটে উঠলো এতে।

_______________

আনভীর বাড়িতে আসলেন একটু রাত করে। এসেই সোফায় শরীর এলিয়ে দিলেন। নুড়ী আপাকে বললেন এক গ্লাস পানি আনতে।
নাহিদ ভাইয়া আগ বাড়িয়ে বললো,

‘ ভাবি! উনারা চলে গিয়েছে?’

‘ হুম।’

মুখ গোমড়া করে ফেললেন উনি। বললেন,

‘ আপনি জোড় করেননি?’

‘ আরে হ্যাঁ। কেন থাকলেন না সেটা নাহয় আনভীর থেকেই জেনে নেন।’

‘ আপনার তাহলে আপনার মামাতো বোনটা কে মনে পড়বে না?’

সন্দেহের আভাস ফুটে উঠলো চোখে মুখে। ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ হঠাৎ এ প্রশ্ন?’

‘ আরে……..এ..এমনেই।’

আনভীরও হাসছেন ঠোঁট চেপে। ডিনার সেরে নুড়ী আপাকে একটু হেল্প করলাম আমি টুকটাক। নাহিদ ভাইয়ার ওপর দিয়ে আজ বড় ধকল গিয়েছে। তাই রুমে যেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। আমি রুমের সামনে গিয়েই টের পেলাম ভায়োলিনের আড়ষ্ট সুর। উনি সচরাচর এসময় ভায়োলিন বাজান না। দরজা খুলে দেখলাম রুমটা নিকষ আঁধার। বারান্দায় একটি ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। আমি জামি সে কে। তাই নীরবে নিভৃতে এগিয়ে বসে পড়ি উনার পাশে। আনভীর হঠাৎ থামিয়ে দিলেন। আমি বললাম,

‘ থামালেন যে?’

‘ এভাবেই।’

উনি ভায়োলিন রেখে ফিরে তাকালেন আমার দিকে। পরনে জামাকাপড় পাল্টে একটা ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়েছেন। আমি এখনও ভেবে অবাক হই এত সুন্দর মানুষটা আমার লাইফ পার্টনার বলে। যে আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে। যাকে একদন্ড দেখার জন্য ভক্তরা পাগল হয়ে যায় তাকে যেকোনো রূপে দেখার অধিকার আছে আমার। আনভীর বলে উঠলেন,

‘ তুমি খুশি তো?’

‘ অনেক। জানেন আজ কত বছর পর উনাদের সাথে সময় কাটিয়েছি?’

‘ জানিতো। ওরা তোমার শুভাকাঙ্খী। তাই তো নিয়ে এলাম ওদের।’

‘ আপনি কিভাবে পেলেন মামুর খবর?’

‘ নাহিদ আছে না? ও পাতাল থেকেও খবর আনতে পারবে।’

আমি হেসে দিলাম মিটমিটিয়ে। আনভীর এবার প্রশ্ন করলেন,

‘ মিটিং কবে তোমার ফরেইন ডক্টরদের সাথে?’

‘ এইতো কয়েকদিনের মধ্যেই।’

‘ বেস্ট অফ লাক মিসেস আনভীর। আমি চাই যে এআরকের ওয়াইফ দেশের একজন ভালো ডক্টর হোক। তোমার প্রতিটা স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু মনোযোগ দিয়ে কাজ করো। বুঝেছো?’

সানন্দে মাথা নাড়াই আমি। হঠাৎ আমার চোখ অশ্রুতে টুইটুম্বুর হয়ে উঠলো। কোনো কিছু না ভেবে আচমকাই জড়িয়ে ধরলাম আনভীরকে। থুতনিতে টুপ করে চুমু খেয়ে বুকে মুখ গুঁজলাম। আনভীর আমার এমন কান্ডে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। উনার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ স্পষ্ট টের পাচ্ছি আমি। আমি শ্বাস নিয়ে বললাম,

‘ এতগুলো সারপ্রাইজের ভীড়ে আপনিই আমার বেস্ট সারপ্রাইজ আনভীর। আমার এই অন্ধকার লাইফে আপনিই আলো হয়ে এসেছেন। এত খুশির মধ্যে আমি সবসময়ই বলবো যে, আমি আপনাকেই চাই এবং আপনাতেই দায়বদ্ধ থাকতে চাই। আনভীর নামক মানুষটাতে বিলীন হতে চাই আমি। ধন্যবাদ আপনাকে, আমায় এত ভালোবাসার জন্য।’

আনভীর হাসলেন। রাশভারি কন্ঠে বললেন,

‘ তোমার কথাগুলো যে আমায় মোহে ফেলে দিলো! এখন এই মোহ কাটানোর দায়িত্ব কি তুমি নিবে?’

আমি কথা বললাম না। লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখলাম। সময়টা যেন থেমে গিয়েছে কেমন করে। আনভীর আবার দুষ্টু হেসে বললেন,

‘ থুতনিতে এভাবে কিস না করলেও পারতে। এখন আমার যে আবার লাগবে? এগেইন কিস মি বেবিগার্ল!’

আমি বুকে কয়েকটা কিল মারলাম উনাকে। উনি হেসে পুনরায় আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলেন আমায়। বিড়বিড়িয়ে বললাম,

‘ অভদ্র একটা!’
.
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ!

দুটো পর্ব একসাথে পড়ে হ্যাপি তো গাইস? এবার আমায় বিরাট একটা কমেন্ট করো। ভালোবাসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here