মেঘবৃত্ত পর্ব_২৬

#মেঘবৃত্ত
পর্ব_২৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে গেলো, হেমন্তকাল পেরিয়ে ঠকঠক করা শীত এলো। মাসের নৌকা পা ভেজালো, নভেম্বরে। দেখতে দেখতে মেঘার প্রেগন্যান্সি তিনমাসে পা রাখলো। চোখের পলকে এ কটা দিন কেমন করে পেরিয়ে গেলো, মেঘা টেরই পেলো না।
এই তো, আজকের কথা! দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে মেঘা নিজ ঘরে এলো। দেহখানা বড্ড ক্লান্ত, নেতিয়ে গেছে একদম। শ্যামা রঙের শরীরে ঘামের ফোঁটা চকচক করছে যেনো। এখন একটা গোসল না হলেই নয়! মেঘা চটপট শাড়ি হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। আধা ঘন্টা পর গোসল সেরে বের হয়ে এলো সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করায় মনযোগ দিলো। শাড়ীর কুচি ঠিক করতে সহসা চোখ গেলো নিজের উদরের দিকে। নিজের হালকা ফুলে উঠা পেট নজরে পড়তেই মেঘা একদম হা হয়ে গেলো। দু মিনিট ‘ থ ‘ হয়ে চেয়ে রইলো নিজের এই ছোট্ট পেটে বর্ধমান এক ছোট্ট বাচ্চাটার দিকে। কম্পিত হাতে শাড়ীর আঁচল সরিয়ে আনমনা হয়ে আলতো করে পেটে হাত বোলালো সে। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো,
‘আমার বাচ্চাটা’
কথাটা মুখ ছিঁড়ে বেরুতেই মেঘার পাতলা ঠোঁটটা যেনো হেসে উঠলো। পেটে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ নিজ সন্তানকে অনুভব করার চেষ্টা করলো। মনে মনে কল্পনা করলো,
মেঘবৃত্ত ও একটি সন্তান। তিনজন হাঁটছে পাশাপাশি, কথা বলছে, খিলখিলিয়ে হাসছে। দূরের চাঁদ তাদের সুখ দেখে লজ্জা মেঘের আড়ালে মুখ লুকাচ্ছে। আর মেঘা? সে তো সর্বদার মত দু চোখ জুড়িয়ে চেয়ে দেখছে, তার সেই সমগ্র দুনিয়াটাকে। এর চেয়ে শ্রেষ্ট অনুভূতি এভুবনে কি দুটো আছে?

মেঘার এসব সুখী সুখী ভাবনার সুতো কাটলো, এক ভয়ঙ্কর কথা মনে পড়ায়। মনে হলো, পেট বেড়ে গেছে তার। এখন বৃত্তের মা নিশ্চয়ই বিষয়টা খেয়াল করবেন। তখন, মেঘা কি করবে? বৃত্তের মা একবার সন্দেহ করলে, মেঘার আর নিস্তার নেই। এমনিতেই মেঘার গায়ের রং নিয়ে বৃত্তের মা নাখোশ। তার মধ্যে, মেঘা বিয়ের দু সপ্তাহের মাথায় প্রেগন্যান্ট কথাটা শুনলে তো তিনি মেঘাকে আস্তই রাখবেন না। আর যদি সেই বাচ্চার বয়স হয় দু মাস! তখন? ভয়ে মেঘার আত্মা যেনো শুকিয়ে এলো। মেঘা চটজলদি হাত চালিয়ে শাড়ি খুলে ফেললো। তার বদলে, গায়ে জড়ালো ঢিলেঢালা লিলেনের ত্রিপিস। এখন আর পেটের ফোলাটা খুব একটা বুঝা যাচ্ছে না। যাক, বাঁচা গেলো।
রাতের খাবার গোছানোর সময়, বৃত্তের মা মেঘার পাশে এসে দাঁড়ালেন। মেঘা তখন বাসনপত্র ধুয়ে তাকে সাজিয়ে রাখছিলো। বৃত্তের মা দুপুর থেকে মেঘাকে তীক্ষ্ম নজরে আগাগোড়া জরিপ করছেন। হুট করে মেঘার শাড়ি ছেড়ে এরূপ ঢিলেঢালা শাড়ি পড়া উনার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। বিয়ের একমাসও এখনো পেরোয় নি। তারমধ্যেই, মেঘার এরূপ সাজসজ্জাহীন বিষয়টা তার মাথায় ভোঁতা বিরক্তি তৈরি করছে। বৃত্তের মা আর সহ্য করতে পারলেন না। মেঘার পাশে দাঁড়িয়ে কথা তুললেন,
— মেঘা?
মেঘা ততক্ষনাৎ বাসন ফেলে শাশুড়ির দিকে তাকালো। নম্র কণ্ঠে বললো,
— জ্বি, মা?
— আজ শাড়ি পড়ো নি কেনো?
হুট করে বৃত্তের মায়ের এহেন প্রশ্ন শুনে মেঘা থতমত বনে গেলো। কি বলবে, কথা খুঁজে পেলো না। ভয়ে ভয়ে বললো,
— আসলে, গরম লাগছিলো আজ। তাই, আরকি…
— এই শীতের মাসে তোমার গরম লাগছিল?
বৃত্তের মা তীক্ষ্ম কণ্ঠে প্রশ্নটা করলেন। মেঘা এবার বোকা বনে গেলো। বুঝে গেলো সে, বৃত্তের মতন গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলা তার দ্বারা কখনোই সম্ভব হয়ে উঠবে না। বৃত্তের মত ফটাফট একের পর মিথ্যে বলাও এক আর্ট। মেঘার ক্ষেত্রে এই আর্টটা একদম নেই বললেই চলে। মেঘা মাথানত করে আস্তে করে বললো,
— আমি দুঃখিত মা। কাল থেকে আমি আবার শাড়ি পড়বো।
বৃত্তের মা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। আজকাল ছেলেমেয়ের স্বামীর প্রতি এহেন উদাসীনতা দেখে তিনি হতাশ।তার মতে, বাড়ীর বউয়ের শাড়ি পড়া হলো এক দারুণ সৌন্দর্য। কিন্তু, এই মেঘা… বৃত্তের মা হতাশ নিঃশ্বাস ফেললেন। কিছুক্ষণ পর মেঘার দিকে আরো একটু ঘন হয়ে দাঁড়ালেন উনি। মেঘার দিকে ঝুঁকে ধীর কণ্ঠে বললেন,
— শোনো মেঘা। জানি কথাটা আমার বলা উচিৎ না। তবুও, আর কেউ বলার নেই বলে আমিই বলছি এসব। ঘরের বউরা যদি সর্বদা সেজেগুজে না থাকে, তবে পুরুষ মানুষের মন অন্যদিকে নিজের সাজসজ্জা খুঁজে নেয়। আর শাড়ি হলো স্ত্রীদের অন্যতম সাজের কাপড়। স্ত্রীকে শাড়ি পড়া দেখলে সকল পুরুষই মুগ্ধ হয়। আমি কি বলতে চাইছি, বুঝেছো নিশ্চয়ই?

নিজ শাশুড়ির মুখে এমন লজ্জাজনক কথা শুনে মেঘার তুমুল অস্বস্তিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই পরিস্থিতি হয়ে উঠলো প্রচণ্ড বিদঘুটে! মেঘা নতমুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো। চেহারা লজ্জায় লাল টকটকে হয়ে গেলো। মনে মনে তুমুলভাবে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে ছাড়া পাওয়ার দোয়া করতে লাগলো। বৃত্তের মা হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারলেন। তিনি ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু মেঘা সে জায়গায়টায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। নড়াচড়া অব্দি থেমে গেলো তার। কন্ঠনালী আটকে গেলো, কান ভনভন করতে লাগলো, তৃষ্ণা পেলো প্রচন্ডরকম।
___________________________
আজ মেঘবৃত্তের ফাইনাল এক্সাম প্রথম দিন। সকালে সিলেবাসটা আরো একবার গুছিয়ে নিয়ে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। বৃত্তের মা পেছন থেকে বরাবরের মত একটাই দোয়া করলেন,
‘ হে আল্লাহ এ দুজনের আশা তুমি পূরণ করো। দুনিয়ার যত সাফল্য আছে, তা তুমি এদের জন্যে সহজ করে দাও। আমিন। ‘

#চলবে
নোট ১- যাদের কাছে পোস্টটা পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। পেজের রিচ বাড়াতে আপনাদের এই ছোট্ট রিয়েক্টই সহায়ক। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। ভালোবাসা।

আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/275660984478469/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here