মেঘবৃত্ত পর্ব_২৭

মেঘবৃত্ত
পর্ব_২৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মাত্রই বের হলো সবাই। হলের বাইরে একেকজন ভিড় জমিয়েছে উত্তর পর্যালোচনার জন্যে। খানিক পর মেঘবৃত্ত হল ছেড়ে বের হলো। বৃত্ত চোখের চশমাটা খুলে ব্যাগে রেখে দিলো। বৃত্তের চোখে মেজর কোনো সমস্যা নেই। শুধু পড়াশোনা আর পরীক্ষার সময়ে সে চশমা পড়ে। বৃত্ত যতবার চশমা চোখে দেয়, ততবার মেঘা শুধু হা হয়ে চেয়ে রয়। চশমা পড়া অবস্থায় কাউকে এতটা মারাত্মক লাগতে পারে, সেটা বৃত্তকে না দেখলে মেঘা তো জানতোই না।
মেঘবৃত্ত একসাথে হাঁটছে। মেঘা প্রশ্নপত্র নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করছে বৃত্তকে। বৃত্তও ধৈর্য্যসহকারে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। প্রায় বিশটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর বৃত্ত একসময় বিরক্ত হলো। ভ্রু অটোমেটিক কুঁচকে গেলো তার। সে তেঁতো কণ্ঠে বললো,
— চুপ কর, ভাই। চুপ কর। আর কত প্রশ্ন করবি। মুখ ব্যথা করে না তোর? তোরে উত্তর দেওয়ার ঠেলায় আমার মুখ ব্যথা হয়ে গেছে, বাল। আর একটাও কথা বলবি তো তোরে ওই ঝিলে ধরে চুবামু, ড্যাম সিওর।

মেঘা ঠোঁট উল্টালো। বোকা বোকা কণ্ঠ তার,
— আমার খুব টেনশন হচ্ছে রে। ফাইনাল এক্সাম পাশ না করতে পারলে আমি শেষ। একদম আল্লাহর পেয়ারা হয়ে যাবো।
— নো টেনসন। এত জলদি তুই আল্লাহর পেয়ারা হবি না। পাশ করবি, চিন্তা নেই।
— করলেই ভালো। না করলে…

মেঘা পুনরায় হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। বৃত্ত ক্যান্টিনের দিকে যেতে যেতে বললো,
— ক্ষুধা লাগছে, না? চল, কিছু খেয়ে নেই।

ক্যান্টিনে বসামাত্রই ক্যান্টিন বয় দিহান দৌঁড়ে এলো বৃত্তদের দিকে। বৃত্তের পাশে এসে অত্যন্ত উচ্ছল কণ্ঠে বললো,
— ভাই, কেমন আছেন? অনেকদিন পর আমার এখানে আসলেন।
মেঘা পাশে বসেছিল। দিহান মেঘাকে লক্ষ্য করতেই বললো,
— মেঘাপু, কেমন আছো? তোমারে এখন আপু বলবো না ভাবি বলবো? যতই হোক, বৃত্ত ভাইয়ের বউ তুমি!

কথাটা বলে দিহান নামক ছেলেটা ফিক করে হাসলো। মেঘা মুচকি হেসে বললো,
— আপাতত আপুই বলো তুমি।

বৃত্ত বললো,
— চারটা সিঙ্গারা, দুটো কোক আর দুটো ছোট দেখে স্যান্ডউইচ আনতো। ক্ষুধা লাগছে খুব। আর হ্যাঁ, গরম গরম হয় যেনো।
দিহান বললো,
— ভাই এটা কি বললেন? আমি কি কখনো আপনারে ঠান্ডা খাবার দিসি? আমি পাঁচ মিনিট বসেন, আমি জলদি জলদি খাবার আনতাছি।
বৃত্ত হাসলো একটু। এই দিহান নামক এই হিন্দু ছেলেটা
‘বৃত্ত ভাই’ বলতেই পাগল। বৃত্ত এককালে তার মায়ের চিকিৎসার সম্পূর্ণ টাকা দিয়েছিলো, যার কারণে তার মা একদম সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এখনো বৃত্ত মাঝমধ্যে ছেলেটার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়, তার মাকে ভালো মন্দ খাওয়ানোর জন্য। সেই থেকে দিহান ছেলেটা বৃত্তকে একপ্রকার পূজাতুল্য ভাবে। বৃত্তও দিহানকে খুব আদর করে।

খাবারের অর্ডার দেওয়ার পর বৃত্ত আর মেঘা বসে বসে গল্প করছে। হঠাৎ সেখানে আগমন ঘটলো তিতির, নেহা, সিদ্ধার্থ, প্রনয় আর রাতুলের। শিহাব সহ এরা ছয়জনই মেঘবৃত্তের খুব কাছের বন্ধুগন। ভার্সিটি চুষে বেড়ানো ওদের কাজ। আজ শিহাব পরীক্ষা দিয়েই বাসায় চলে গেছে। কি কাজ আছে যেনো তার। তারা পাঁচজন বৃত্তের কাছে এসে বসলো। মেঘা তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে তাদের হালচাল জিজ্ঞেস করলো। সিদ্ধার্থ একসময় মেঘাকে বললো,
— তা, মেঘা? তোরে এখন কি ডাকবো? ভাবি বলে ডাকি একবার? ডাকি?
কথাটা বলেই সিদ্ধার্থ হাসলো খুব। বাকি সবাইও হাসলো তার কথার তালে। মেঘা একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। গাল ফুলিয়ে বললো,
— যা ইচ্ছে ডাক। কিন্তু, ভাবি ডাকবি না। আনইজি লাগে খুব।
প্রণয় বললো,
— ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকমু না তো কি ডাকমু? বইন? বৃত্তের বইন নাই একটাও। শেষমেষ তুমিই বইন হইয়া যাও তার। কি কস বৃত্ত?

মেঘা হাসলো। বললো,
— তোর যদি মন চায়, বোন বলেই ডাক তাহলে। কিন্তু সাবধান, আমার হাত কিন্তু শক্ত খুব। একটা বাড়ি পিঠে পড়লে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে যাবে একদম।

প্রনয় ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,
— থাক, থাক। আর বাড়ি-টারি দেওন লাগবো না। তুই সক্কলের ভাবিই বালা। এহন খুশি?
মেঘা ভাবসাব নিয়ে বললো,
— খুব!

মাঝখানে ফোঁড়ন কাটলো তিতির। বৃত্তকে বললো,
— তাহলে, তোদের লজিক অনুযায়ী বৃত্তও আমাদের দুলাভাই? কি বলিস বৃত্ত?
বৃত্ত এতক্ষণ ফোন নিয়ে মগ্ন ছিলো। তিতিরের করা প্রশ্ন শুনে বৃত্ত ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো। শার্টের কলারটা হালকা ঢিলে করে পিছন দিকে ঠেলে দিলো। চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে উঠলো,
— আমার কোনো সমসসা নেই। চাইলে দুলাভাই ডাক, শালা ডাক, পারলে কিছু না ডাক। আমার কোনো সমস্যাই নেই।

নেহা হেসে বললো,
— তুই কখনো শোধরাবি না!
বৃত্ত বললো,
— কিসের শোধরানো? সত্যি কথা বললাম। তোদের সেই সত্যি পছন্দ হয়নি, সেটাতে আমার কি?

আবারো হেসে উঠলো সম্পূর্ণ ক্যান্টিন। একসময় রাতুল বললো,
— এই বৃত্ত? একটা গানের আসর বসে যাক? কি বলিস?
বৃত্ত বাঁধ সাধলো। বললো,
— আজ না। আজকে গিটারও আনিনি। কেমনে গাইবো? আজ না! অন্য একদিন।
সিদ্ধার্থ বললো,
— গিটার নেই তো কি হয়েছে? টেবিলে হাত দিয়ে সুর তুলবো।
বৃত্ত ভাবলো একটুসময়। অতঃপর, টেবিলে দুহাত রাখলো সে। বৃত্তের মনোভাব দেখে বাকি সবাই টেবিলে হাত রাখলো। অতঃপর, ছয় জোড়া হাত টেবিলে বাজনা তুলতে লাগলো। মেঘা সুরের তালে গাওয়া শুরু করলো,

সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে..
সেই তুমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি
ওহ.. বুকেরই সব কষ্ট দুহাতে ছড়িয়ে
চলো…বদলে যাই…….

সাতটি কণ্ঠে মুখরিত হলো পুরো ক্যান্টিন। একে একে সবাই খাওয়া ছেড়ে ভিড় জমালো বৃত্তদের টেবিলে। এরইমধ্যে দিহান খাবার এনে টেবিলে রাখলো। অতঃপর, নিজে গান শোনার জন্যে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। সেই আগের মত, সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটালো সবাই। সেই আগের মতই, তাদের বন্ধুত্ব মুগ্ধ করলো সবাইকে।

#চলবে
আজ বড় করে দিয়েছি। এবার বেশি বেশি রিয়েক্ট আর গঠনমূলক কমেন্ট করার দ্বারা আমার মনটাও ভালো করে দিন। এটুকু আবদার তো আভামহলের কাছে করতেই পারি!

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/276241347753766/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here