মেঘবৃত্ত পর্ব_২৯

মেঘবৃত্ত
পর্ব_২৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

মেঘার জ্ঞান ফিরেছে। ওয়ার্ড বয় যখন বৃত্তকে এই খবরটা দিলো বৃত্ত যেনো চমকে উঠেছিলো। হাতের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো, তার হাতজোড়া কাঁপছে। মাথাটাও মনে হলো দুবার চক্কর দিয়ে উঠলো। বৃত্ত ভেতরে ভেতরে ভয়ে একদম সেটিয়ে যাচ্ছে। বৃত্ত এক ঢোক গিলে ওয়ার্ড বয়কে বললো,
— ও ঘুমাচ্ছে?
— জ্বী, না। জেগেই আছেন।
— ওহ, ঠিক আছে। তুমি যাও এখন।
ওয়ার্ড বয় চলে গেলো। বৃত্ত নতমুখে চেয়ারে এসে বসলো। দুহাতে নিজের ঘন চুলগুলো খামচে ধরে হাঁটু নাড়াচ্ছে অনবরত। বৃত্তের মা ছেলের এই হাল দেখে আর বসে থাকতে পারলেন না। চুলোয় যাক, সব বদনাম। তিনি বৃত্তের পাশে এসে বসলেন। আলতো হাতে বৃত্তের কাঁধে হাত রাখলেন। কাঁধে মায়ের ভরসাপূর্ণ হাতের স্পর্শ পেয়ে বৃত্ত মাথা তুললো। রক্তলাল চোখে মায়ের দিকে তাকালো সে। বৃত্তের মা নরম গলায় বললেন,
— মেয়েটার কাছে যা। ওর এখন তোকে দরকার। যা, বৃত্ত।

বৃত্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেঘার মা’ও একই কথা বললেন। বৃত্ত আর উপায় পেলো না ভাববার। দুহাতে মুখ ঘষে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মেঘার কেবিনের দিকে। যাই হোক, মেঘার সামনে তাকে দাঁড়াতেই হবে। তাহলে, দেরি কিসের?

বৃত্ত আলতো করে কেবিনের দরজা খুললো। চোখ গেলো হসপিটালের ভেতরে শুয়ে থাকা মেঘার ক্লান্ত দেহখানার দিকে। মেঘা সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে। দুচোখের কোণ বেয়ে গড়াচ্ছে জলের রেখা। মেঘার এহেন অবস্থা দেখে বৃত্তের খুব কষ্ট হলো। মেঘার সামনে দাঁড়িয়ে সত্যিটা বলার সাহস একনিমিষেই শূন্যে নেমে এলো। তবুও, বৃত্ত ফিরে গেলো না। দরজা পুরোপুরি খুলে কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করলো।

বৃত্ত মেঘার পাশে দাঁড়াতেই মেঘার চোখ বেয়ে আরো দু ফোঁটা জল গড়ালো। সেই রঙহীন জল দেখে বৃত্ত অপরাধবোধে এক উত্তাল-পাত্থাল সাগরে যেনো ছিটকে পড়লো। চুপচাপ মেঘার পাশের চেয়ারে বসলো সে।
কেটে গেলো কতক মুহূর্ত। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। কথারা যেনো আজ লুকোচুরি খেলছে। মুখ ছিঁড়ে বেরুতেই চাইছে না, আশ্চর্য্য!
মিনিট খানেক পর মেঘার কান্নাভেজা কণ্ঠ বৃত্তের কানে এলো,
— বা-বাচ্চাটা আর নে-নেই, তাইনা?
মেঘার কথা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। কথা বলতে গেলেই বুক ফেটে কান্নার বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্ত, মেঘা কাঁদবে না। ভয়ংকর পণ করেছে যেনো।
মেঘার করা শান্তসুরের প্রশ্ন শুনে বৃত্তের রুহ অব্দি কেঁপে উঠলো। এত শান্ত কারো কণ্ঠও হয়? বৃত্ত তপ্ত কিছু নিঃশ্বাস ফেললো। ছোট করে বললো,
— হুম!

মেঘা মুচকি হাসলো। বৃত্ত সে হাসির পানে মলিন চোখে চেয়ে রইলো। আজ অব্দি মেঘার এই রকম হাসির সাথে বৃত্ত মোটেও পরিচিত নয়। মেঘা যখন খুব কষ্ট পায়, তখনি এমন করে হাসে। বৃত্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চুপচাপ মেঘার নরম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নিলো। মেঘার হাতে মৃদু মৃদু চাপ দিয়ে মেঘার ভাঙ্গা মনকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করলো। মেঘা এবার তাকালো বৃত্তের দিকে। কয়েক ঢোক গিলে বললো,
— দেখ না বৃত্ত! আমি দুনিয়াতে সবেচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি সেই আমার হয়নি। কি ভাগ্য আমার! পূজা করা উচিৎ এমন ভাগ্যকে।
কথাটা বলার সময়ও মেঘার চোখ বেয়ে জল গড়িয়েছে। বৃত্ত মেঘার দিকে চেয়ে বললো,
— সব ঠিক হয়ে যাবে, মেঘ। তুই এভাবে ভেঙে পড়িস না। আমার তোকে এভাবে দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না।

মেঘা আবারও হাসলো। বৃত্ত লক্ষ্য করলো, এই হাসি এক তাচ্ছিল্যের হাসি। তবে আফসোস! বৃত্ত এই হাসির কারণ ধরতে পারলো না। মেঘা বললো,
— সব ঠিক হয়ে যাবে, না? কিন্তু, বাচ্চা? সেটা কি আবার আসবে? বল?

বৃত্ত এবার চুপ হয়ে গেলো। কি বলবে ভেবে পেল না। এই মুহূর্তে চাইলে সে মেঘাকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে পারতো। তবে, সে এটা করবে না। কারণ সে চায়না, মেঘার আশা আরো একবার ভঙ্গ হোক। একজীবনে মেঘা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আর না! এবার একটু হাসুক ও। মন খুলে বাঁচুক নাহয়! বৃত্তকে চুপ থাকতে দেখে মেঘা এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,
— আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী হলেও, আমাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কিরকম সেটা আমরা দুজনই ভালো করে জানি। এরকম অনিশ্চিত সম্পর্কে বাচ্চার আশা করা, খুব বেশিই বোকামি বৃত্ত। আর আমি জীবনে আরেকবার একই বোকামি করতে চাইনা।

বৃত্ত হঠাৎ করেই বললো,
— আমরা দুজন দুজনের প্রিয় বন্ধু, মেঘ। একটা সম্পর্ক সারাজীবন টিকিয়ে রাখতে এই কারণটাই কি যথেষ্ট নয়?
— কি জানি!
মেঘা স্পষ্ট কথাটা এড়িয়ে গেলো। বৃত্তও আর জিজ্ঞেস করলো না। সে জানে, মেঘাকে এখন হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও মেঘা তার উত্তর দিবে না। মেঘা একবার যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, সেই সিদ্ধান্ত দুবার পাল্টায় না। মেঘার জেদ সম্পর্কে বৃত্তের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। মেঘার রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলন যে তার। মেঘাকে সে ভালো চিনবে না তো কে চিনবে?

বৃত্ত মেঘাকে অপেক্ষা করতে বলে মেঘার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করতে চলে গেলো। মেঘা সেখানেই, সেই বেডেই শুয়ে রইলো। এবার সে আর কান্না আটকাতে পারলো না। বৃত্তের সামনে এতক্ষণ শক্ত থাকার ভান করলেও এবার ও আর কান্না আটকালো না। বালিশে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ও। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— তুই জানিস না বৃত্ত, এই বাচ্চাটা আমার জন্যে কি ছিলো। আমি যখনই বাচ্চাটাকে অনুভব করতাম, আমার তখন মনে হত তুই আমার আশেপাশেই আছিস, আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছিস, আমাকে ভালবাসছিস। এখন আমি সব হারিয়ে ফেললাম বৃত্ত। সব হারিয়ে ফেললাম রে। আমি নিজের মধ্যে থাকা তোর অস্থিত্বকেই হারিয়ে ফেললাম।আল্লাহ! মরে যাচ্ছি না কেনো আমি?

মেঘার কান্নার মধ্যে কথা বলার অভ্যাস আছে। দিয়ে অভ্যাসের রেশ ধরেই সে নিজের সমস্ত অভিযোগ, অনুরাগ প্রকাশ করতে লাগলো। ইশ, এই মেয়েটার এত কষ্ট কেনো?

#চলবে
নোট ১- যাদের কাছে পোস্টটা পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। পেজের রিচ অনেক কমে গেছে। পেজের রিচ বাড়াতে আপনাদের এই ছোট্ট রিয়েক্টই সহায়ক। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। ভালোবাসা।

আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/277302930980941/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here