গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ২০
ভোরে বুকের উপরে বারী কিছু অনুভব করায় চোখ মেলে তাকালো স্পন্দন। নিমিষেই এক আকাশ ভালোলাগা কাজ করলো তার। শুভ্রতা তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। এ যেন শান্তির ঘুম। এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সূর্যের কিরণ মুখে এসে পড়ল শুভ্রতার। আরামের ঘুম নিমিষেই বিলীন হয়ে গেল তার। বিরক্তি নিয়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারছে না। স্পন্দন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।
–” কি হচ্ছে এইটা?”
–” ঝড়া পাতার বাসর ম্যাম।”
–” ছিঃ। অসভ্য লোক একটা।”
শুভ্রতা উঠতেই সমস্ত পাতা তার কোলে পড়লো। উঠে শরীর ঝেড়ে স্পন্দনকে বলল,
–” বাসায় কিভাবে যাবো?”
–” বাসায় যেয়ে কি করবে তারচে বরং এইখানে সংসার বানাই আমরা।”
–” মরণ।”
শুভ্রতার কথা শোনে হাসলো স্পন্দন। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো সাতটা বাজে। কিন্তু ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। মনে মনে খুশি হয়েও মুখে হতাশার চাপ প্রকাশ করে বলল,
–” ফোন বাবাজি আমাদের কোনো হেল্প করতে পারবে না। হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।”
দুইজন হাঁটতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখলো মানুষজনের বসবাস । তবে তাদের কথা বার্তা পাহাড়ী মানুষের মতো। গায়ের পোশাকও অদ্ভুদ। শুভ্রতার হঠাৎ লজ্জা লাগলো একটি মেয়েকে দেখে। লজ্জা পাওয়ার কারণও আছে, মেয়েটির পোশাক খুব অদ্ভুদ, শাড়ির মতো দেখতে কিন্তু হাঁটুর সামান্য নিচ পর্যন্ত। হাতের পুরো অংশ দেখা যাচ্ছে। আড়চোখে তাকালো স্পন্দনের দিকে নাহ স্পন্দন আশ পাশ ভালো করে দেখছে।
–” কই জরুর সাহেব?( কোনো দরকার স্যার?)”
পিছনে ঘুরল স্পন্দন। মাঝ বয়সী এক লোককে দেখে মুচকি হেসে তাদের ভাষায় উত্তর দিলো, যা বাংলায়,
–” আমরা দুজন পথ হারিয়ে এইখানে চলে এসেছি। ঢাকা যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা যদি সাহায্য করতেন তাহলে খুব ভালো হতো।”
লোকটি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। ভয়ে শুভ্রতার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সন্দেহর নজরে তাকিয়ে বলল,
–” এ ছুকরি কনছে?”
স্পন্দন ভাবলো, এইখানে যদি বলা হয় তারা চাচাতো ভাইবোন পরে সত্যিকারের ভাইবোন বানিয়ে দিবে কারণ এইখানে চাচাতো মামাতো ভাইবোনকে নিজের আপন ভাইবোন ভাবা হয়। এতে স্পন্দনের মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তাই দিশেহারা হয়ে বলেই ফেলল,
–” তে মারি পাত্নীছে ।”
শুভ্রতা ভয়ানক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল স্পন্দনের উপর। স্পন্দন ফিসফিস করে বলল,
–” এ ছাড়া উপায় নেই। পরে আমাকে খুন করতে পারে।”
স্পন্দনের কথা বিশ্বাস করলো শুভ্রতা তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
লোকটি তখন আবারো বলল,😐
–” হা সারুম। একটা সমস্যা আছে স্যার। পনেরো দিনের হরতাল। পরেনো দিন পর ঢাকায় যেতে পারবেন।”
( ওই ভাষায় লেখার চেয়ে বাংলাতে লিখে ফেলছি। লোকটি ওদের বাসায় কথা বলছিল।)
শুভ্রতার চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। স্পন্দন মনে মনে খুব খুশি। শুভ্রতা তখন স্পন্দনকে বলল,
–” আমরা এখন কি করবো তাহলে?”
স্পন্দনের বলার আগেই লোকটি বলে উঠলো,
–” আপনারা বরং পনেরোদিন আমাদের এইখানে থাকেন। আমাদের গ্রামের মেম্বারের মেয়ের বিয়ে। অনেক বড় অনুষ্ঠান হবে। তাছাড়া আপনারা তো আমাদের অতিথি।”
স্পন্দন এক কথায় রাজি হয়ে গেল। যেহেতু এই ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
অন্যদিকে আসু এবং অন্তু গালে হাত দিয়ে বসে আছে। একে তো হরতাল তার উপর স্পন্দন শুভ্রতা নিখোঁজ। চিন্তায় তাদের হার্ট অ্যাটাক করার উপক্রম। আসু কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলতে লাগলো,
–” স্যার ওদের কোনো খুঁজ এখনও পাননি? স্পন্দন ভাইয়া একটা জল্লাদ। শুভ্রতাকে যদি রাগের বশে খুন করে ফেলে তখন আমি শুভকে কই পাবো?”
–” স্পন্দন শুভ্রতাকে ভালোবাসে। সো বাজে কথা না বলে উপায় খুঁজো।”
–” শুভ্রতা বিবাহিত জানেন না? আজে বাজে কথা সব সময়।”
ধমক দিয়ে বলল আসু, অন্তু নিজের চুল টেনে টেনশন দূর করতে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না। নিজেকে সামলিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলতে লাগলো,
–” শুভ্রতার হাজবেন্ড মারা গেছে তুমি জানো না? ”
–” হুম জানি কিন্তু শুভ্রতা রাজি হবে না।”
–” রাজি হওয়া আর না হওয়া পরে দেখা যাবে। এখন কিভাবে এইখানে পনেরো দিন থাকবো সেটা চিন্তা করো। তিনজনের জন্য এসে এখন পনেরো দিন। বউ নিয়া আসলে ভালো হতো ফ্রী-তে হানিমুন করা যেতে পারতো। কিন্তু এখন এতগুলো স্টুডেন্ট নিয়ে চিন্তায় মরছি। আল্লাহ জানে পনেরো দিনে যদি এরা অঘটন ঘটিয়ে ফেলে আমার চাকরি তো আমার বাপ খেয়ে ফেলবে।”
আসু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
–” স্যার অঘটন কেন ঘটাবে? তাছাড়া আমরা এখনো ছোট নই বড় হয়ে গেছি। দেখছেন না সবাই কত খুশি।”
–” এইটাই তো সমস্যা। সবাই খুশি কেন জানো? অনেকে খুশি ঘুরতে পারবে বলে আবার অনেকে খুশি বয়ফ্রেন্ড সাথে আছে বলে। আমার তো বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এই জাতির স্টুডেন্ট নিয়ে ভয় হচ্ছে। হে আল্লাহ রক্ষা করো কেউ যেন আবার অন্যকিছু করে না বসে।”
আসু লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। আসুর পিছনে অন্তুও উঠলো। আসু লজ্জা মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো,
–” আপনি উঠছেন কেন?’
–” তোমার দেখাদেখি।”
–” আমি তো লজ্জা পেয়ে উঠে গেছি। ছিঃ স্যার আপনার মাইন্ড কত্ত খারাপ। আমরা ঘুরতে আসছি আর আপনি বাজে চিন্তা করছেন।”
–” আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে। শুধু শুধু চিন্তা করার পাত্র আমি নই।”
________________
শুভ্রতার গায়ে সেই পোশাক। যে পোষাকে লজ্জায় লাল হয়ে গেছিল সেই পোশাক এখন তার গায়ে। চুপচাপ একটা রুমে বসে আছে কিছুতেই সে বাহিরে বের হবে না। এলাকার মানুষের কাছে এই পোশাক কিছুই নয় কিন্তু স্পন্দন সে তো এইখানকার মানুষ নয়। লজ্জায় মাথা নিচু করে দুআ করছে তার জামা যেন তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। হঠাৎ দরজার কটমট শব্দে দরজার দিকে তাকালো। বাঁশের তৈরি এক চালা দরজা। স্পন্দনকে দেখে অবাক হলো ভীষণ। স্পন্দনের পরনে লুঙ্গি আর পতুয়া। লুঙ্গি হাঁটুর নিচ পর্যন্ত, মাথায় গামছা দিয়ে পাগড়ি। সে শুভ্রতার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্পন্দনের তাকানোতে আরো অস্বস্তি বোধ করলো শুভ্রতা। স্পন্দন শুভ্রতার মুখ দেখে বুঝতে মেরে মুচকি হেসে শুভ্রতার পাশে বসলো, মাথা থেকে গামছার পাগড়ি খুলে শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল,
–” জড়িয়ে নেও। অস্বস্তি বোধ হবে না। বাই দা ওয়ে খুব সুন্দর লাগছে।”
শুভ্রতা কথা না বলে গামছা এক প্রকার কেরেই নিলো। সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
–” আমাদের খেতে দিবে না? আসলে খুব ক্ষুধা লাগছে।”
স্পন্দন হেসে বলল,
–” পেটুক মেয়ে একটা। ওয়েট করা এক্ষুনি নিয়ে আসবে। দেখেছো মানুষগুলো কত্ত ভালো।”
–” তা অবশ্য ঠিক।”
____________________
টিভি অন করে চোখের পানি ফেলছেন মিসেস সাবিনা বেগম। শুভ্রতা পনেরো দিন পর আসবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে তার। মেয়েটার জন্য চিন্তায় তার প্রচুর মাথা ধরেছে। স্পন্দনের নাম্বার অফ। চিন্তায় সে অস্থির। স্পন্দনের বাবা বাসায় ফিরতেই চেঁচিয়ে কান্না করতে লাগলেন। ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন উনি,
–” চিন্তা করো না। ওরা ঠিক আছে। তাছাড়া স্পন্দনও নাকি গিয়েছে। ”
–” স্পন্দন কেন গিয়েছে?”
–” তোমার ছেলের মনের হাবভাব কেউ বলতে পারবে? যখন যা ইচ্ছা করবে। এখন অফিস সামলাবে কে? সাকিব একা তো কিছু পারবে না। আর আমি আজ এক মৌলভীর কাছে গিয়েছিলাম উনি বলেছেন, শুভ্রতার বিয়ে এখন সম্ভব নয়। চার মাস দশদিন পর বিয়ে পড়াতে হবে। ইসলামের নিয়ম এইটা, সুরা বাকারার ২৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিধবা নারীর ইদ্দত পালন তথা অপেক্ষার সময় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই ৪মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন (অপেক্ষা) করতে হবে। যা একটি জটিল সমস্যা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট ঘোষণা। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সাবু।”
হতাশ কণ্ঠে বললেন সাকিবের বাবা। সাকিবের মা কিছুটা শান্তি পেয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
–” হুম। ভালো হয়েছে এই ফাঁকে মেয়েটাও একটু ঘুরাঘুরি করে আসুক।”
অন্যদিকে নীলুর কথা শোনে চমকে উঠলো সাকিব,
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বাসা থেকে প্রচন্ড চাপ আসছে। যেহেতু আমার মাথা প্রায় ব্যাথা করে সেই কারণে এখন আমার ফোন চালানো বারণ। খুব কষ্টে এই পর্ব লিখেছি। আগামী পর্বে হয়তো শেষ করে দিবো। মনে হচ্ছে এইটাই আমার শেষ গল্প আর কখনো গল্প জগতে আসতে পারবো কিনা জানি না। ধন্যবাদ। রি-চেইক করা হয়নি।