তুমি আমার মুগ্ধতা পর্ব =২

#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#পার্ট০২
#Writer: #মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৮.

“প্রান্তিক ধা ক্কা দিয়ে ফে’লে দেয় অর্ষাকে। অর্ষা’র ব্যাপারটা বুঝতে বেশ ক্ষানিক সময় লাগলো। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

” আমার বউ সাজার শখ তোমার তাইনা? তোমার শখ পূরণ করছি ওয়েট।”

“মা্ মানে?”

প্রান্তিক অর্ষার কথা কর্ণপাত না করে গার্ডদের মধ্যে একজনকে ডেকে বললো,

“এক্ষুনি লয়ার জাঈনকে কল করো। কুইক…”

“অর্ষা বিছানা থেকে উঠে গিয়ে বললো, ” লয়ারকে ডাকবে মানে? কি চাইছেন আপনি?”

“বিয়ে, বিয়ে করতে চাইছি তোমাকে।”

ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে প্রান্তিক কথাটি বলতেই অর্ষা মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

“যেই বিয়ের জন্য বাসা থেকে পা’লি’য়ে এলাম, এখনো সেই বিয়ে আমার পেছন পড়ে আছে?”

৯.

“প্রান্তিক মেয়েটি কে?”

অত্যান্ত ক’ঠি’ন কন্ঠে কথাটি বললেন, প্রান্তিকের মা ‘মিসেস আহানা চৌধুরী।”

মিসেস আহানা চৌধুরী ‘চৌধুরী ম্যানশনে থাকেন। আর প্রান্তিক তাদের বাগান বাড়িতে। তার মা এতোটাই ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকে যে, প্রান্তিক’কে কখনোই সময় দিতে পারেনি। প্রান্তিকের মনে ব্যাপার’টা ভীষণ দা’গ কা টে। তাই সে আলাদা বাগান বাড়িতে থাকে। মাঝে মাঝে প্রান্তিকের কাজিন টয়া এই বাগান বাড়িতে আসে। টয়া’কে প্রান্তিক যদিও পছন্দ করে না। তবে, বাধ্য হয়েই সহ্য করতে হয়। মেয়েটা বড্ড গায়ে পড়া টাইপের। এমন না, যে প্রান্তিকের মা মিসেস আহানা চৌধুরীও টয়াকে পছন্দ করেন। তিনিও তেমন একটা পছন্দ করেন না টয়াকে। টয়া বোনের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও টয়াকে তিনি তার স্বামী নিহাল চৌধুরীর থেকে ভীষণ কম পছন্দ করেন।

“সেইটা জেনে আপনি কি করবেন মিসেস আহানা চৌধুরী?”

“প্রান্তিক আমি জানি তুমি আমার আসাটা ভালোভাবে নাওনি কিন্তু তাও তোমাকে বলতে হবে মেয়েটি কে? আমি মা হিসেবে জানতেই পারি..কি জানতে পারিনা?”

“না জানতে পারেন না। কারণ আপনি সেই অধিকার হারিয়েছেন।”

“প্রান্তিক…”

“এইটা ভদ্রলোকের বাসা। এইটা আপনার চৌধুরী ম্যানশন পাননি, যে যা ইচ্ছে তাই করবেন। আর টয়া গিয়ে আপনাকে বলেছে তাইনা? টয়াকে বলে দিবেন এইখানে যেনো আর না আসে। ওকে আমি নিতে পারছিনা আর। কেবলমাত্র আপনার হাসবেন্ড এতোটা প্রশ্রয় দিয়েছে বলে, মেয়েটা এতোটা বাড় বেড়েছে।”

আহানা চৌধুরী বেরিয়ে যান ছেলের কথা শুনে। সেই শান্ত সৃষ্ট ছেলেটা সময়ের সাথে সাথে কেমন জানি বদলে গেলো।

অর্ষা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিল। অবাক হয়ে ভাবছে, তার আর এই লোকটার ভাগ্য এতোটা মিল কেন?!

১০.

আফ্রা এইবার বেশ ঘা’ব’রে যাচ্ছে। ছোট মা তাকে এমন দৃষ্টিতে বার বার পরখ করছে কেন? নিশিতা মির্জা বার বার আফ্রার দিকে তাকিয়ে পরখ করছে আফ্রাকে। তারপর সোফায় বসে পেপার হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,

“অর্ষা কোথায় সেইটা আর কেউ না জানলেও তুমি জানো আমি তা খুব ভালো করেই জানি আফ্রা। অর্ষা কোথায়?”

নিশিতা মির্জার শীতল কন্ঠ ঠিক হ’জ’ম করতে পারছেনা আফ্রা। ভ য়ে মায়ের দিকে তাকায় সে। তার মা ছোট জা’কে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক সে সময় হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় নিশিতা মির্জা বড় জা’কে।

“তুমি কোনো কথা বলোনা ভাবী। আফ্রা যেমন তোমার মেয়ে, তেমনি কিন্তু আমারও মেয়ে। অর্ষা আর আফ্রা আমার কাছে সমান।”

থেমে যায় আফ্রার মা। আফ্রার দিকে তাকায় নিশিতা মির্জা তারপর বলে,

“আমার পাশে এসে বসো।”

আফ্রা চুপচাপ গিয়ে সেফায় বসে৷

“আমি তোমাকে কিছুই বলবনা আফ্রা। তুমি বলো, অর্ষা কোথায়?”

“আম্ আমিৃ আমি সত্যিই জানিনা ছোট মা..”

কাঁ’পা কাঁ’পা কন্ঠে আফ্রার উত্তর শুনে নিশিতা মির্জা বললেন,

“আর আমি যদি বলি, তুমি জানো অর্ষা কোথায়..”

কথা বলেনা আফ্রা। তখনি শাফওয়াত উপর থেকে নেমে আসে তার বাবা দূর্জয় মির্জার সাথে।

“কি হয়েছে ছোট মা?”

“আমি জানি শাফওয়াত, আফ্রা জানে অর্ষা কোথায়।”

“কাম অন ছোট মা। তুমি চিন্তা করোনা আমি কথা দিচ্ছি অর্ষাকে তোমার কাছে এনে দিব। আর সত্যিই আফ্রা জানেনা, অর্ষা কোথায়। জানলে অবশ্যই আমাকে বলতো।”

ছোট মাকে জড়িয়ে ধরে কথাটি বলে শাফওয়াত। নিশিতা মির্জার কোনো ছেলে নেই বলে শাফওয়াতকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসেন। নিশিতা মির্জা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আফ্রার দিকে। চোখাচোখি হতেই আফ্রা চোখ নামিয়ে ফেলে। তৎক্ষনাৎ নিশিতা মির্জা বললেন, “তোমার ফোনটা দাও আফ্রা।”

১১.

আহানা চৌধুরী বাসায় ঢু’ক’তেই টয়া ন্যাকা কান্না কেঁদে বললো,

“আমার কথা মিললোতো খালামনি?দেখলেতো মেয়েটিকে?”

আহানা চৌধুরীর মেজাজ বি’গ’ড়ে যায়। রাগান্বিত হয়ে বললেন,

“শুন টয়া, তুই জানিস প্রান্তিক তোকে পছন্দ করেনা, তাও তুই কেন? ওর পেছনে পড়ে আছিস? তোর আংকেল যতোই বলুক, এক হাতে কিন্তু তালি বাজেনা।”

“আমার ছেলে আমার পেছন অনুযায়ী’ই বিয়ে করবে আহানা।”

কথাটি বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে নীল চৌধুরী। আহানা মির্জা তাচ্ছিল্য করে হাসে।অত:পর বলে,

“ছেলেটা শুধু তোমার একার নয় নীলয়।”

“প্রান্তিক টয়াকেই বিয়ে করতে হবে আহানা।”

“আমার ছেলে আমার পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করবে। আর তুমি ভালো করেই জানো, পাত্রী আমার ঠিক করা।”

“প্রান্তিক টয়াকেই বিয়ে করবে। টয়াই হবে এই বাড়ির বউ।”

“না, এই বাড়ির পুত্রবধূ হবে, মির্জা কোম্পানির Owner নিশিতা মির্জার মেয়ে, অর্ষা মির্জা। This is the Final. I Don’t want to say anything more about this.

১২.

“বউউ..এখন সাইন করছোনা কেন? সাইন করো..নয়তো আমি তোমার মিস্টার হাসবেন্ড হবো কেমন করে?”

প্রান্তিক বেশ রসিকতা নিয়ে কথাটি বললে অর্ষাকে। অর্ষার মুখমণ্ডল দেখে মনে মনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে প্রান্তিকের। তাও সে হাসিটা প্রকাশ করলোনা।

“আমি সাইন করবনা। আমি এইখান থেকে চলে যাব।”

অর্ষা উঠে যেতে চাইলে হাত ধরে ফেলে প্রান্তিক। গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“বসো। এক পা’ও নড়বেনা তুমি। সাইন করো..”

“করবনা বললামতো আজব লোকতো আপনি। চিনেন না জানেন না, একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন!”

“ওমা..তুমি চিনোনা, জানোনা, একটা ইয়াং হ্যান্ডসাম ছেলেকে জামাই বানিয়ে ফেলতে পারো, আর আমি বউ বানাতে পারবনা? যদিও আমি জানি আমি খুব স্মার্ট একজন পুরুষ। কিন্তু তাই বলে জামাই বানিয়ে ফেলবে?” অনেকটা এটিটিউড নিয়ে কথাটি বললো প্রান্তিক। অর্ষা ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে পড়ে যাওয়ার অবস্থা মেয়েটার। লয়ার জাঈন হা করে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে। গার্ডরাও। প্রান্তিক চারিদিকে চোখ বুলিয়ে চিৎকার করে বললো, “এই মেয়ে স্টপ.. পা গ লের মতো হাসছো কেন? আজব!”

অর্ষা চুপ হয়ে যায় ধ ম ক শুনে। আবার কয়েক মিনিট পর হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে, “আমার হাসি পেলে আমি কি করব আজবতো..”

“আর একবার হাসলে..”

প্রান্তিক থ্রেট শুনে চুপসে যায় অর্ষা। চারিদিকে তাকালো সে। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলো, ভুল জায়গায় ভুল কাজটা করে ফেলেছে সে। অর্ষা’র দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে আছে অর্ষা। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। এই চোখে তাকাবেনা সে। এই চোখে আ’গু’ন জ্বলছে আপাতত।

প্রান্তিক দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,

“অনেকতো দাঁত বের করে হেসেছো, এখন সাইন করো।”

“করবনাহহহহ”

অর্ষা’র হাত টা’ন দিয়ে নিজের কো’লে অর্ষাকে বসায় প্রান্তিক। থত’ম’ত খেয়ে যায় অর্ষা। গার্ডরা সবাই সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফ্লোরে রাখে। মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়েছে অর্ষার। চোখ বন্ধ করে আছে সে। তাকাবেনা প্রান্তিকের চোখের দিকে। এই চোখে নিশ্চয়ই কিছু আছে। নয়তো এমন অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে কেন তার মনে?

“চোখ বন্ধ করেই সাইন করবে?”

“আমি সাইন করবনা।”

“শুনো মেয়ে, তোমার চোখে দেখেছি আমার সর্বনাশ,যেই সর্বনাশের দা’ব’দা’হে তাপে পুড়ে ছার’খা’র হচ্ছি আমি। এ কেমন অনুভূতি সে কি তুমি বলতে পারো? বলতে পারো? কেন এমন কাতর ভাবনা আমায় স্পর্শ করেছে?”

মিনমিনিয়ে কথাটি বললো প্রান্তিক।

১৩.

আফ্রা ভ য়ে ভ য়ে ভাবছে কখন ছোট মায়ের হাত থেকে ফোনটা সে পাবে। দূর্জয় মির্জা বললো,

“কিছু পেলে ভাবী?”

নিশিতা মির্জা ফোনে নজর রেখে বললো,

“খুঁজছি। ভালো করে দেখে বলছি।”

শাফওয়াত বললো,

“কিছুই পাবেনা ছোট মা। কারণ, সত্যিই আফ্রা জানেনা।”

নিশিতা মির্জা ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

“হুম ঠিকিই বলছো শাফওয়াত, আফ্রা কিছুই জানেনা। অর্ষা কিভাবে পারলো বলোতো এইভাবে চলে যেতে? আমার কথা একবারও ভাবলোনা?”

শাফওয়াত নিশিতা মির্জার হাত মুঠো করে ধরে বললো,

“অর্ষা ফিরে আসবে ছোট মা। চলো মিটিং আছেনা অফিসে?”

নিশিতা মির্জা আফ্রার ফোন আফ্রার হাতে দিয়ে বেরিয়ে পড়ল শাফওয়াত আর দূর্জয় মির্জার সাথে অফিসের উদ্দেশ্যে। আফ্রা ফোনটা হাতে নিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, “ভাগ্যিস সআ মেসেজ ডিলিট করে দিয়েছিলাম।”

নিশিতা মির্জা পিছু ফিরে আফ্রার দিকে তাকিয়ে ভাবে, “আমি জানি তুমি জানো অর্ষা কোথায়। তোমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে আফ্রা।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here