ফেরারি প্রেম পর্ব-৩৭

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৩৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

নীহারিকা পুরোপুরি হতাশ হয়ে সবিতার বাড়ি থেকে বিদায় নিলো। এই মাঝরাতে হঠাৎ সবিতার বাড়িতে আসার কারণটা সবিতা তেমন তলিয়ে দেখলনা! এই বিষয়ে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলনা!

নিরাশ ভাব নিয়ে নীহারিকা মাথা নুইয়ে রূপলের মুখোমুখি দাড়ালো৷ নীহারিকার সন্দেহ যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে তা নীহারিকার চুপসে যাওয়া মুখশ্রী দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে রূপল! তুখোর রগচটা ভাব নিয়ে রূপল নীহারিকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই বুঝি এক্ষুণি নীহারিকার গালে কয়েক দফা চড় পরবে তার! রূপলের রাগের কারণ এবং সেই রাগের গভীরতা বুঝতে পেরে নীহারিকা মাথা উঠিয়ে ভীতু দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো! শুকনো গলায় বলল,

“বাবাড়ি চলুন।”

তৎক্ষনাৎ রাগে ফোঁস করে উঠল রূপল। দাঁত কিড়মিড়িয়ে নীহারিকার দিকে ঝুঁকে এলো। ঝাঁজালো গলায় বলল,

“গো এলোন! ইস্টুপিট গার্ল!”

এই বলে রূপল তড়তড়িয়ে বাইকে ওঠে বসল। মুহূর্তেই অস্থির হয়ে উঠল নীহারিকা। অপমান গাঁয়ে লাগালোনা। বাইকের পেছনের গদিতে হাত রেখে সে রূপলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ছটফটে গলায় বলল,

“সরি মিস্টার রূপল৷ এবারের মত আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। পরের বার থেকে আর এমন ভুল হবেনা। আই সোয়ার।”

“আই ডোন্ট বিলিভ ইউ ওকে? যা ইচ্ছা তা করুন আপনি। তবে কোনোকিছুর মধ্যে আমাকে আর জড়াবেন না! আপনি আপনার পথে থাকুন, আর আমি আমার পথে।”

“আমি কিন্তু আপনাকে ফোর্স করিনি আমার সাথে এখানে আসার জন্য। একা একাই বের হচ্ছিলাম আমি। পরে যদি আপনি নিজে থেকে এসেই আমার সাথে জড়িয়ে পরেন সেখানে আমার কী দোষ বলুন?”

রূপল এখনও বুঝতে পারছেনা আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সে কেন নীহারিকার এক কথায় রাতে বিরাতে এভাবে ছুটে আসতে বাধ্য হলো! সেতো দিব্যি আরামের ঘুম ঘুমুচ্ছিল! এত আরামের ঘুম হারাম করে সে কেন এভাবে ছুটে এলো তাই যেন তার বোধগম্য হচ্ছিলনা। বিষয়টাকে এড়িয়ে গেল রূপল। ইতস্তত দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। গলা ঝাকিয়ে বলল,

“ওঠে পড়ুন। এমনিতেই অনেকটা লেইট হয়ে গেছে।”

মিচকি হেসে বাইকের পেছনের গদিতে ওঠে বসল নীহারিকা। শোঁ শোঁ বেগে বাইক ছেড়ে দিলো রূপল। দুজনই নিশ্চুপ রইল। কারো মধ্যে কোনো কথা হলোনা। রাতের শীতল বাতাসটা দেহ-মন ছুঁয়ে দিচ্ছিল দুজনের। মনে জমে থাকা রুক্ষতা কেটে গেল নিমিষেই। দুজনকেই এখন স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। রাগের ছিঁটেফোঁটা নেই কারোর মধ্যে। প্রকৃতি কারো অবসাদ জিইয়ে রাখতে দেয়না!

কিছুক্ষণের মধ্যেই নীহারিকাদের বাড়ির সামনে নীহারিকাকে নামিয়ে দিয়ে রূপল কোনোরূপ কথা বার্তা ছাড়াই বাইক ঘুরিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নীহারিকা অনেক চেয়েও রূপলের সাথে একটিবার কথা বলার সুযোগ পেলনা। ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করছে তার মধ্যে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে ঘুমন্ত একটি মানুষকে রাতে বিরাতে ডেকে এনে সে অযথা হয়রানি করল।

গভীর আফসোস নিয়ে নীহারিকা বাড়ির ড্রইংরুমে প্রবেশ করতেই হঠাৎ চারিদিক থেকে ড্রয়িংরুমের লাইটগুলো জ্বলে উঠল! থতমত খেয়ে নীহারিকা সামনে তাকাতেই দেখতে পেল স্বয়ং পিয়াসা তার মুখোমুখি দাড়িয়ে! শুধু তাই নয় নিহাল এবং তার মা-বাবাও তার সামনে দাড়িয়ে। সবার চোখেমুখে প্রখর রাগী ভাব। ভয়ে শিউরে উঠল নীহারিকা। অমনি নীহারিকার বাবা তেড়ে এসে নীহারিকার মুখোমুখি দাড়ালেন। তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

“এতরাতে কোথায় গিয়েছিলি তুই?”

শুকনো ঢোঁক গিলল নীহারিকা। কথা জড়িয়ে আসতে লাগল তার। “দশদিন চোরের, একদিন গেরস্তের!” এই বাংলা প্রবাদটি মনে পড়ে গেল তার! মিথ্যের আশ্রয় নিলো সে। আমতা আমতা গলায় বলল,

“ঘুম আসছিলনা বাবা। তাই একটু বাইরে গিয়েছিলাম হাঁটতে।”

তৎক্ষণাৎ নীহারিকার মুখের কথা টেনে নিলো পিয়াসা! খরখরে গলায় সে তার শ্বশুড়কে লক্ষ্য করে বলল,

“নীহারিকা মিথ্যা বলছে বাবা! আমি স্বচক্ষে দেখেছি নীহারিকা কারো সাথে বাইকে করে কোথাও একটা ঘুরতে যাচ্ছে! তবে পেছন থেকে বাইকে থাকা লোকটিকে আমি দেখিনি। তখন অলরেডি বাইকটা স্টার্ট করে দিয়েছিল তাই।”

নীহারিকা প্রথম থেকেই আন্দাজ করেছিল পিয়াসা-ই তার বিরুদ্ধে তার মা-বাবা এবং তার ভাইয়ের কাছে নালিশ করেছে! ঐ সময় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে রান্নাঘরের দিকে যে ছায়াটি সে দেখেছিল সেটি তার মায়ের ছায়া নয় বরং তার ভাবি পিয়াসার ছায়া ছিল। এই বিষয়ে তার আর কোনো সন্দেহ রইল না। পিয়াসার কথা শেষ হতে না হতেই নীহারিকার বাবা ঠাস করে নীহারিকার গালে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিলেন! গালে হাত দিয়ে নীহারিকা তাজ্জব দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। নীহারিকার দিকে এক দফা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি জায়গা থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বললেন,

“তোর থেকে এটা এক্সপেক্ট করিনি নীহা। তুই আমার অহংকার ভেঙে দিয়েছিস!”

মনে মনে বেজায় খুশি পিয়াসা! মুখ টিপে হাসতে লাগল সে! আপন মনে বিড়বিড় করে বলল,

“একদম ঠিক হয়েছে। আমাকে জ্ঞান দেওয়া তাইনা? ছোটোরা বেশী পাকামো করলে এমনই হবে!”

গভীর অনুতাপ নিয়ে নীহারিকার বাবা জায়গা থেকে প্রস্থান নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিসেস মারজিনা বেগম এবং নিহাল তেড়ে এলো নীহারিকার দিকে। ছিঃ চিৎকার করে মারজিনা বেগম নীহারিকাকে বললেন,

“মান সম্মান আর রাখলিনা তুই। বেশী স্বাধীনতা দিয়েছি বলে এভাবে তার অপব্যবহার করলি?”

প্রত্যত্তুরে নীহারিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিহাল তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কার সাথে তুই এতরাতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলি বল? ছেলেটা কে ছিল?”

রাগে রি রি করে উঠল নীহারিকা! গালে হাত রেখে সে টলটলিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,

“মিস্টার রূপলকেই জিজ্ঞেস করো ছেলেটি কে ছিল!”

এ কথা বলেই হনহনিয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো নীহারিকা। হতভম্ব হয়ে সবাই নীহারিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। বিচলিত হয়ে পিয়াসা তৎক্ষনাৎ রূপলের নাম্বারে কল করল। বাড়ির কাছাকাছি পৌছে গেছে রূপল। পিয়াসার নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে সে বাইকটি এক সাইডে থামিয়ে কলটি তুলল। শান্ত স্বরে রূপল হ্যালো বলতেই পিয়াসা প্রশ্ন ছুড়ল,

“কোথায় তুমি ভাইয়া?”

“এইতো একটু বাহিরে আছি। বাড়ির কাছাকাছিই আছি। কেন?”

“নীহারিকা কী এতক্ষণ তোমার সাথেই ছিল?”

আগপাছ না ভেবেই রূপল সোজাসাপটা গলায় বলে ফেলল,

“হ্যাঁ! কেন?”

মাথায় আগুন জ্বলে উঠল পিয়াসার! রাগান্বিত হয়ে সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এসবের মানে কী ভাইয়া? এতরাতে নীহারিকা তোমার সাথে কী করছিল? কোথায় গিয়েছিল তোমরা? চলছেটা কী তোমাদের মধ্যে?”

“আশ্চর্য তো! এই সামান্য বিষয়টাকে নিয়ে তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন? তাছাড়া তুই যা সন্দেহ করছিস সেই রকম কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের মধ্যে। নীহারিকা একটি প্রয়োজনেই বলেছিলেন বের হতে। আদার’স আর কিছু নয়।”

“এতরাতে রাতে তার কী এমন প্রয়োজন পরল ভাইয়া? যে তোমাকে সাথে করে তার বের হতে হলো? তোমাদের সম্পর্কটা আমার মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা।”

পিয়াসার মনগড়া কথায় রাগে তেতে উঠল রূপল। তর্জন গর্জন করে সে পিয়াসাকে শাসিয়ে বলল,

“না বুঝে ফালতু কথা বলবিনা পিয়াসা। আমার থেকে দূরে আছিস বলে বেঁচে গেছিস। এই মুহূর্তে যদি তুই আমার সামনে থাকতিস ঠাটিয়ে দুটো চড় খেতিস! ফোন রাখ ইডিয়ট।”

পিয়াসাকে ঝারি মেরে কলটি কেটে দিলো রূপল! রাগে গজগজ করে পিয়াসা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। রূপলের হুমকি ধমকি সহ্য হলোনা তার! বাড়াবাড়ি মনে হলো। নিহাল এবং মারিজনা বেগম নির্বাক হয়ে জায়গায় দাড়িয়ে রইলেন। কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে এর কিছুই বুঝতে পারছেনা তারা! সম্পূর্ণ ঘটনা জানার জন্য নিহালও কৌতূহল নিয়ে পিয়াসার পিছু পিছু তাদের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেল। দাড়িয়ে রইলেন শুধু মারজিনা বেগম।

ফোনটি প্যান্টের পকেটে গুজে রূপল কয়েকদফা রুদ্ধশ্বাস ফেলল। ঘামে ভেজা কপালে লেপ্টে থাকা অগোছালো চুলগুলো টেনে ধরল সে। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে চিন্তিত গলায় বলল,

“ডেম ইট। এবার থেকে আমাকে যতটা সম্ভব নীহারিকার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। সবাই অযথা সন্দেহ করছে আমাদের সস্পর্কটা নিয়ে। যা কখনও হবার নয় তা নিয়ে কেউ সন্দেহ করুক আই কান্ট একসেপ্ট ইট।”

নিহাল অনেক চেষ্টা করেও পিয়াসার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারল না। খিটখিটে মেজাজ নিয়ে পিয়াসা জিম খিঁচে বিছানার এক কোণায় শুয়ে আছে! নিহাল তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই তাকে ঝারি মেরে উঁড়িয়ে দিচ্ছে! কোনো মতে রাতটা পাড় হোক। সকালেই সে তার বাপের বাড়িতে যাবে! রূপল এবং নীহারিকার অবাধে মেলামেশা নিয়ে তার মায়ের কানে বিষ ঢেলে আসবে!

ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নীহারিকা এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পরল৷ সে জানে তার সাথে ইদানিং যেসব আজব ঘটনা ঘটছে তা যদি সে গলা কেটেও সবাইকে বলে তবুও কেউ তা বিশ্বাস করবেনা! বরং সবাই তাকে ভুল বুঝবে৷ প্রমাণ চাইবে। কিন্তু সেই প্রমাণ তো তার পক্ষে এখনও জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য তাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

___________________________________

পরদিন সকালে পিয়াসা তার বাড়িতে গেল। রূপল এবং নীহারিকার সম্পর্ক নিয়ে তার মায়ের কান ভাঙিয়ে আসল! বলল রূপলকে চোখে চোখে রাখতে। নীহারিকার ধারে কাছেও যেন রূপল ঘেঁষতে না পারে। সব শুনে নাজনীন বেগম রাগে ফুলে ফেঁপে উঠলেন! পিয়াসার কথা যদি সত্যি হয় তবে কিছুতেই তিনি রূপল এবং নীহারিকার সম্পর্ক মেনে নিতে পারবেন না! নীহারিকার মত কালো এবং বেঁটে মেয়ে কোনোভাবেই রূপলের মত সুদর্শন ছেলের জন্য যোগ্য নয়! ছেলেকে নিয়ে বেশ অহংকারে গাঁ ভাসাচ্ছেন তিনি! পা যেন মাটিতেই পরছিল না।

মাঝখানে কেটে গেল প্রায় মাস খানেক! সেদিনের পর থেকে রূপল এবং নীহারিকার মাঝে কোনো যোগাযোগ হয়নি। দুজন দুজনের পথে আলাদা চলছিল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সেদিনের পর থেকে নীহারিকার নাম্বারে সেই অচেনা নাম্বারগুলো থেকে ফোন কল আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল! এর উপযুক্ত কারণ নীহারিকা খুঁজে পাচ্ছিলনা। তাকে ভয় দেখানো সেই মহিলা এবং পুরুষটিকে একটি বারের জন্যে হলেও নীহারিকা দেখতে চায়। এই অচেনা আগন্তুকগুলোর জন্যই নীহারিকার পরিবার নীহারিকাকে আগের মত বিশ্বাস এবং ভালোবাসতে ভুলে যাচ্ছে। তার বাবার সাথে তার দূরত্ব তৈরী হয়েছে! রূপল এবং তার স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আঙুল উঠেছে।

এরমধ্যেই রূপল ব্যস্ত হয়ে গেছে তার চাকুরীর প্রিপ্রারেশন নিয়ে! মাস্টার্স পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে এভাবে বেকার অবস্থায় ঘরে বসে থাকার কোনো মানে হয়না। একই সাথে সুহাসিনীকে ভুলে থাকার প্রয়াসে সে নিজেকে পড়াশোনা এবং বিভিন্ন কাজে কর্মে ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে। জীবনের ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়টিকে সে চিরতরে মুছে ফেলতে চাইছে!

প্রায় দুইদিন আগে নীহারিকার ইনকোর্স এক্সাম শেষ হলো। মাসের শুরুতেই সে একটি টিউশন নিয়েছে! ক্লাস সেভেনে পড়ে মেয়েটি। টুকটাক হাত খরচের জন্য টিউশনিটি নেওয়া তার। প্রতিদিন হাত পেতে তার বাবা এবং ভাইয়ের কাছে টাকা চাইতে বড্ড অস্বস্তি হয় তার৷ এরচেয়ে ভালো বরং নিজের মেধা এবং সময় কাজে লাগিয়ে হাত খরচের টাকাটা নিজেই উপার্জন করা। প্রতিদিনের মত আজও নীহারিকা সন্ধ্যা সাতটায় বের হয়ে গেল টিউশনির উদ্দেশ্যে।

রাত দশটা নাগাদ সে টিউশনি থেকে বের হয়ে এলো! ছাত্রীর বাড়িতে আজ ডিনারের দাওয়াত ছিল তার। বাড়ির সবাইকে আগে থেকেই বলে এসেছে সে। নিহাল রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নীহারিকাকে ড্রপ করে আনবে এই কথা ছিল। তবে এরমধ্যেই নিহাল অফিসের কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে গেল। জরুরী মিটিং পড়ে গেল তার। তাই সে নীহারিকাকে বলল একটু অপেক্ষা করতে।

তবুও নীহারিকার যেন তড় সইছিল না। তাই সে একাই ছুটল বাড়ির উদ্দেশ্যে। দু-একটা খালি রিকশা যদিও সে দাঁড় করিয়েছিল তবে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় সে না করে দিলো। ফুটপাত ধরে সে একাই হাঁটতে লাগল। রাস্তার পাশে থাকা বড়ো একটি বটগাছের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেই নীহারিকার গাঁ টা হঠাৎ ছমছম করে উঠল! অজানা কারণে গাঁ টা শিউরে উঠল তার। আশপাশটা ভীষণ নিরিবিলি। ল্যাম্পপোস্টের আলো পৌঁছাচ্ছিলনা সেখানে। মৃদু অন্ধকারে ঢাকা পরিবেশ।

নীহারিকার আশঙ্কাই সত্যি হলো! পেছন থেকে কেউ তাকে মুখ চেপে ধরল! পুরুষালী শক্ত হাত৷ নীহারিকা কিছুতেই সেই শক্ত হাতের বাঁধন খুলতে পারছিলনা। অন্তরআত্তা কেঁপে উঠল তার। ভয়ে হাঁসফাঁস করতে লাগল সে। মুখ চেপে ধরে রাখার দরুন সে চিৎকার করতে পারছিলনা। নীহারিকাকে টেনে হেছড়ে আগন্তুকটি রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখা তার গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যেতেই নীহারিকা তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগালো! পা দ্বারা নীহারিকা সুযোগ বুঝে লোকটির মেইন পয়েন্টে জোরে একটি লাথ দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই লোকটি আহ্ করে চিৎকার করে উঠল। হাতের বাঁধনও খুলে গেল তার। ছাড়া পেয়ে নীহারিকা তাৎক্ষণিক পিছু ঘুরে তাকালো।

মৃদু অন্ধকারেও শাফকাতকে চিনতে বেশী বেগ পেতে হলোনা নীহারিকার! বিধ্বংসী রূপ নিয়ে সে শাফকাতের গলার টুটি চেপে ধরল। শক্ত গলায় বলল,

“কু’ত্তা’র বাচ্চা! তুই?”

ইতোমধ্যে রূপলও ঘটনাস্থলে চলে এলো! হন্ন হয়ে সে শাফকাত এবং নীহারিকার দিকে ছুটে এলো। অনেকক্ষণ যাবত নীহারিকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সে। শাফকাত এবং নীহারিকাকে ঐ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখে বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা কী হচ্ছে এখানে। কারো সাথে কোনো টু শব্দ না করেই রূপল শাফকাতকে এলোপাতাড়ি কি’ল-ঘু’ষি দিতে লাগল! তাজ্জব হয়ে গেল নীহারিকা! অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সে রূপলের দিকে তাকালো। বলল,

“আপনি এখানে?”

“জিজু বলল আপনাকে রিসিভ করতে।”

#চলবে…?

[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here