#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ঐশী ভয়ে, ব্যথায় শুভকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শুভ বলে উঠলো,
শুভঃকার জন্য এতো সাজগোজ….?
ঐশী শুভর কথা শুনে চমকে উঠলো। কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।
শুভ আবার বলে উঠলো, ‘ বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো..? খুব ভালো। তোমার মতো মেয়ের কাছে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
“তোমার মতো মেয়ে ” এই কথাটা যেনো তীরের মতো গিয়ে বিধল ঐশীর বুকে।
ঐশীর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।
ঐশীঃ আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন..??
শুভ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ কেনো তুমি বুঝতে পারছো না..?
ঐশী ধাক্কা দিয়ে শুভকে দূরে সরিয়ে বলে উঠলো,’ বুঝিয়ে বললে তো বুঝবো তাই না..
শুভকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়ায় রাগ টা যেনো আরো বেরে গেলো। সে ঐশীর সামনে এসে ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে রাগে।
শুভঃ তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকতে আমাকে কেনো বিয়ে করলে…?
ঐশী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে বয়ফ্রেন্ড আবার ওর। শুভর মাথা ঠিক আছে তো।
শুভ ঐশীকে চুপ থাকতে দেখে আরও বেশি রেগে গেলো।
শুভঃ চুপ করে আছো কেনো বলো…? ওহ্হ তুমি আর কি বলবে ভুল তো আমার। জেনেশুনে তোমার মতো একটা ক্যারেক্টারলেস মেয়েকে বিয়ে করেছি মা’র কথায় আর ফুপিমণির সম্মানের দিকে তাকিয়ে।
ঐশী এবার একটু হেঁসে উঠলো।
ঐশীঃ হুম ঠিক বলেছেন আমার মতো মেয়ে কে আপনি বিয়ে করতেন না। আপনি কি জানেন আপনার মতো ছেলেকেও আমি কোনো দিন বিয়ে করতাম না। শুধু আম্মুর জন্য করেছি। আর আমার বয়ফ্রেন্ড আছে! কি হাস্য কর কথা না। নিজের মতো সবাইকে মনে করেন..? আপনাদের মতো পুরুষদের আমার খুব ভালো করে চেনা হয়ে গেছে। আপনার ব্যাবহার একটা অশিক্ষিত লোককেও হার মানায়। নিজের ঘরে বউ প্রবেশ করা নিষেধ কিন্তু প্রেমিকা যখন তখন প্রবেশ করতে পারবে৷
শুভঃ প্রেমিকা…??
ঐশীঃ কি, অবাক হচ্ছেন..? কিভাবে জানলাম এইসব..?
শুভ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,’ কিসের কথা বলছো তুমি.কার প্রেমিকা .?
ঐশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ ছাড়ুন এইসব। আপনি কি বলে ছিলেন মনে আছে আপনার..? তিন মাস পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো। মুক্তি পাবো এই কাগজ কলমের খেলনা পুতুলের বিয়ে থেকে। আপনার ঘরে কে প্রবেশ করলো কে আপনাকে জড়িয়ে ধরলো। কে কি করলো তাতে আমার কিছু যায় আশে না।
শুভর আর বুঝতে বাকি নেই। ওই দিন সোনিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলো সেটা কি তাহলে ঐশী দেখে নিয়েছে। কিন্তু ওতো নিজে সোনিয়া কে বলেনি ওকে জড়িয়ে ধরতে। এর কারনে ,অপমান শাস্তি দুইটাই ও সোনিয়াকে দিয়েছে। ঐশীর চোখে শাস্তি টা পরলো না জড়িয়ে ধরাটাই বড় হয়ে গেলো
শুভঃ বাহ্ তারপর, তারপর..? তারপর সেই বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে নিবে..?
ঐশীঃ সেটা আমার পারসোনাল মেটার। আমি কাকে বিয়ে করবো..? কাকে করবো না। আপনি ভাবতে হবে না। আপনি আপনার নিজেকে নিয়ে ভাবুন।ওপস ভাবার কি আছে ঘরে এতো সুন্দরী কাজিন থাকতে।
শুভঃ ঐশী তোমার কি মনে হয় না। তুমি একটু বেশি বলে ফেলছো..? দিন দিন তোমার সাহস বেড়ে যাচ্ছে। তুমি আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলছো..?এতো বড় সাহস তোমার…!!
ঐশী শুভর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। তারপর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয়৷ শুভ আবার ওর হাত আঁকড়ে ধরে।
ঐশী রেগে বলে উঠলো,’ হাত ছাড়ুন স্যার…
শুভ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,’ তুমি কোথায় যাচ্ছো..?
ঐশীঃ আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।
শুভঃ তাহলে কাকে বলতে বাধ্য..?
ঐশীঃ সেটা আপনাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না আমি।
শুভঃ তুমি এখন কোথাও যাবে না। আমার কথার বাহিরে এক পা ও ফেলতে পারবে না তুমি।
ঐশীঃ আপনি কে যে আমি আপনার কথা শুনবো..?
শুভঃ আমি তোমার স্বামী।
ঐশী তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ এটা শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ। ‘
শুভঃ যেভাবেই হোক। আমাদের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর যা ইচ্ছে তাই করবে। এর আগে আমার কথায় চলতে হবে তোমাকে।
ঐশীঃ আমি কারো কথায় উপর ডিফেন্ড করে চলার মেয়ে নই সেটা আপনি খুব ভালো করে জানেন। আজ মৌ এর গায়ে হলুদ সবাই হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
শুভঃ ওরা তোমার কাছে আমার থেকেও বেশি ইম্পরট্যান্ট..?
ঐশীঃ আপনি কোনো দিন আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট ছিলেন না। আর ওদের সাথে তুলনা করলে আপনি কিছুই না আমার কাছে। আপনি এক এমন স্বামী যার অপবিত্র জিনিস ভালো লাগে পবিত্র জিনিস না। বলেই শুভ কে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
শুভ এখনো একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অপবিত্র জিনিস বলতে কি বুঝালো ঐশী…?
ঐশী রেগে নিজের রুম থেকে বের হতেই আদিত্যর সামনে পরলো। আদিত্য এই দ্বিতীয় বার ঐশীকে শাড়ি পরতে দেখলো মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। যে চাহনিতে নেই কোনো খারাপ চিন্তাধারা আছে শুধু একরাশ মুগ্ধতা।
ঐশী আদিত্যর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের শাশুড়ীর রুমের দিকে গেলো।
আদিত্যের এই চাহনি ঐশীকে বার বার অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
ঐশীর খুব রাগ হয়।খুব, খুব, খুব রাগ হয় তখন যখন কেউ ওকে অবিবাহিত যুবতী ভেবে ভালোলাগা, ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়। শুভর নিষেধাজ্ঞা ও যত দিন সবাইকে নিজে সত্যি টা না জানাচ্ছে কেউ যেনো বিয়ের বিষয় টা কাউকে না বলে। হয়তো তিন মাস পর সত্যি শুভ ওকে ডিভোর্স দিবে তাই এই নিষেধাজ্ঞা। নিজের ইমেজ খারাপ করতে চায় না। ঐশী ও থাকতে চায় না এই কাগজ কলমের নাম করা ধরাবাঁধা সংসারে।
শাশুড়ীর রুমে গিয়ে শাশুড়ীকে বলে বেরিয়ে পরলো দীপ্তিদের বাসার উদ্দেশ্য।
কিছু দূর যেতেই আবার দেখা হলো আদিত্যের সাথে। আদিত্য ওকে দেখে অবাক হওয়ার বান করলো।
ঐশীঃ আপনি এখানে..? কোথায় যাচ্ছেন..?
আদিত্যঃ কি আসলে জানো তো ঐশী। বাসায় ভালো লাগছে না তাই হাঁটতে বের হলাম।
ঐশীঃ ওহ্হ ভালো। আপনার অফিস..?
আদিত্যঃ আব্বু সামলাচ্ছে। আমার এখন ছুটি। আমি আমার জিনিস পেয়ে গেলে আবারও জয়েন করবো আব্বুর সাথে।
ঐশীঃ ওহ আচ্ছা ভালো। আচ্ছা আমি আসি।
আদিত্যঃ কোথায় যাচ্ছো..?
ঐশীঃ ফ্রেন্ডের গায়ে হলুদ।
আদিত্য আমতা আমতা করে বললো,’ আমিও আসি। ‘
ঐশী আর না করতে পারলো না।
আদিত্যঃ আমি কি কোনো সমস্যায় ফেলে দিলাম..?
ঐশীঃ নাহ্ চলুন।
ঐশী আজ কখনো এতো কিছুর পর ও মৌ এর গায়ের হলুদের আয়োজনে আসতো না। শুধু কিছু কাজ বাকি আছে তাই যাওয়া ।
******
শুনশান নীরবতা ভেঙে খালি পায়ে রাস্তার মাঝ দিয়ে দৌড়াচ্ছে বিথী। আজ সে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর মায়াত্যাগে করবে৷ চলে যাবে বহু দূরে যেখান থেকে চেষ্টা করলেও ফিরে আশা যায় না। সামনে তাকালো একটা বড় ট্রাক ওর দিকেই আসছে। চোখ বন্ধ করে নিলো বিথী গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো একফোঁটা জল। জীবনের শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সে। শেষ বারের মতো পেটে হাত রাখলো। তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। ছোটো সোনামণি টাকে আর এই পৃথিবীর আলো দেখানো হলো না।
ট্রাক চলে আসলো ওর একদম সামনে এখুনি বুঝি সব শেষ। হঠাৎ কোথায় থেকে হাওয়ার বেগে কেউ এসে ওকেনিয়ে রাস্তার কিনারায় পারলো।
এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। আবার কেনো বেঁচে গেলো সে..? ট্রাক চলে গেলো বহুদূর।
চোখ মেলে রেগে তাকালো সেই ছেলেটার দিকে। ছেলেটার হাত, কপাল অনেকটাই কেটে গেছে। বিথীর পা অনেকটা ছিলে গেছে সাথে কপাল দিয়ে রক্ত পরছে।
বিথী কিছু বলার আগেই ছেলেটি ওর গালে থাপ্পড় বসালো।
গালে হাত দিয়ে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অচেনা ছেলের হাতেও থাপ্পড় খেতে হলো। আশেপাশে তাকালো না এই রাস্তায় তেমন কোনো লোক নেই।
ছেলেটা থাপ্পড় দিয়ে খানতো হলো না। রেগে বলে উঠলো,’ তুমি কি চোখে দেখো না, কানে শুনো না..??? আমার যদি আসতে আর একটু দেরি হয়ে যেতো তাহলে ভাবতে পারছো তোমার অবস্থা এখন কি হতো..?? তোমার রক্তে এই রাস্তা লাল রং এ পরিনত হতো।
বিথী রেগে বলে উঠলো,’ তাও ভালো ছিলো৷ কে বলেছে হিরো গিরি দেখিয়ে আমাকে বাঁচাতে..? আমি বলেছি..? কেনো বাঁচিয়ে ছেন বলুন কেনো বাঁচিয়ে ছেন..??
ছেলেটা বেশ অবাক হলো বিথীর আচরণে৷
~ তুমি তো একটা অকৃতজ্ঞ মেয়ে… বাঁচিয়ে ছি কই ধন্যবাদ দিবে তা না আমার সাথে ঝগড়া করছো।
বিথী কিছু না বলে উঠে দাড়াতেই আবারও পরে গেলো। ঠিক করে দাঁড়াতেও পারছে না।
ছেলেটা ওকে সাহায্য করতে চাইলো কিন্তু সে ওই ছেলের সাহায্য নিলো না। নিজে নিজে হাঁটার চেষ্টা করলো৷
ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠলো,’ জীবনে বেশ কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছো এখন মনে হচ্ছে..?? ‘
বিথী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ এমনটা মনে হওয়ার কারন..?
~ এই যে পা চলতে চাচ্ছে না। কারো সাহায্যের প্রয়োজন কিন্তু তুমি সাহায্য নিচ্ছো না। এটা কিন্তু কোনো কঠিন মুহূর্ত থেকে কম নয়।
বিথী কিছু না বলে এই নিস্তব্ধ আকাশের দিকে তাকালো।
ছেলেটা আবার বলে উঠলো,’ আকাশের দিকে তাকালে কষ্ট কমে না বরং বেড়ে যায়।’
বিথীঃ তাহলে কষ্ট কমানোর উপায়…
ছেলেটা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ জীবনের কিছু কঠিন মুহূর্তের কথা শেয়ার করো কষ্ট কমে আসবে।
বিথীঃ সত্যি …?
~ হুম, তিন সত্যি।
বিথীঃ ধন্যবাদ।
~ কিন্তু কেনো।
বিথী কিছু বললো না। সামনের দিকে পা টেনে টেনে হাঁটছে।
ছেলেটি ওর সামনে এসে বললো,’ চলো ওই যে বসার একটা জায়গা দেখা যায় আমরা বসে কিছু সময় কথা বলি।
বিথীঃ আমার এখন অন্য কোথাও যেতে হবে।
ছেলেটি মজা করে বললো,’ কোথায় আবার মরতে যাবে..?’
বিথীর বুক ভয়ে কেঁপে উঠল। এই সাহস যে এখন আর ওর নেই। কিন্তু এখন সে কোথায় যাবে..? আবার কি ফিরে যাবে সেই নরকে নাকি বাবার বাড়িতে।
ছেলেটার জোরাজোরি তে গিয়ে বসলো একটা ট্রুলের উপর।
~একটা কথা বলবো তোমাকে…?
বিথী তাকালো সামনে বসা সুদর্শন যুবকটির দিকে।
বিথীঃ বলুন।
~ আল্লাহর এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মরতে কেনো গিয়ে ছিলে..? এমন কি হয়েছিলো..?
বিথী কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই কয়েক মিনিটের পরিচয়ে কাউকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে ইচ্ছুক নয় সে।
~ আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।
বিশ্বাস কথাটা শুনে হেঁসে উঠলো বিথী।
~ হাসছো কেনো..? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছো। তোমার আব্বু কি করে…?
বিথী কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠলো,’ আমার বাবা একজন বিজনেসম্যান। ‘
ছেলেটা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,’ সফল বিজনেসম্যান এর মেয়ে এসেছে ট্রাকের নিচে চাপা পরে মরতে। হাস্যকর নয় কি কথাটা।
বিথী নিজেও হেঁসে উঠলো…
ছেলেটা অবাক হয়ে গেলো বিথীর হাসি দেখে। ঠোঁটের কোনে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। কপালের রক্ত শুকিয়ে গেছে। মেয়েটার হাসি খুব সুন্দর, মুখটা খুব মায়াবী কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না এই মেয়ে একটা বিজনেসম্যান এর মেয়ে। চোখের নিচে কেমন কালি পরে আছে।মনে হয় অনেক দিন ধরে মানুষিক, শারীরিক নির্যাতনের কারণে মেয়েটার এই অবস্থা। কেমন দুর্বল ও দেখাচ্ছে।
বিথী আপন মনে কয়েক বার বিশ্বাস কথাটা আওরালো তার পর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো শুনবেন আমার সেই কালো অতীতের কথা..?
ছেলেটা খুব আয়েশ করে বসলো।
~ হুম বলো আমি শুনবো।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।