টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে_পর্ব ১৫

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_১৫.
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছেলেটি খুব আয়েশ করে বসলো।
~ হুম বলো আমি শুনবো।

বিথী ছেলেটির শুনার আগ্রহ দেখে হেঁসে উঠলো।

ডুব দিলো অতীতে,

****

দিনটি ছিলো ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্ঠান।

বিথী আর তীব্র এক ভাই এক বোন। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়াই খুব আদরের ছিলো।

ওর আব্বু চাচ্চুরা দুই জন। ছোট চাচ্চুর এক মেয়ে ঐশী। বিথী ওকে নিজের বোনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। খুব সুন্দর কাটছিলো দিন গুলো।সারাদিন বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো ঐশী আর তীব্র। বিথী একটু ওদের থেকে চুপচাপ প্রকৃতির মেয়ে।

ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলো বিথী। ওই দিন ছিলো নবীন বরন অনুষ্ঠান।

খুব সুন্দর করে বাসন্তী রঙের শাড়ি, চুড়ি, চোখে কাজল,কপালে ছোট্ট টিপ,চুল বেঁধে সুন্দর করে বকুল ফুলের মালা জড়িয়ে নিলো। শ্যামবর্ন মুখটায় হালকা মেক-আপ করেছে। নিচে যেতেই ঐশী হা করে তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে।
ঐশীঃ আপু তোমাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।
বিথী একটু মন খারাপ করে বললো,’ কেনো আগে কি সুন্দর মনে হতো না।’
ঐশী বিথীর মন খারাপ দেখে আদুরে গলায় বললো,’ তোমাকে আমার কাছে সব সময় সুন্দরী লাগে। আমার চকলেট আপু..’
বিথীও হেঁসে উঠলো,’ ঐশী সব সময় বিথীকে চকলেট আপু ডাকে’

ঐশী এক দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে বড় আম্মু কে নিয়ে আসলো।

ঐশীঃ দেখো তো বড় আম্মু আমার চকলেট কে কেমন লাগছে…?

বড় আম্মু বিথীরকে দেখে কপালে চুমু দিয়ে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে তীব্র বলে উঠলো,’ খুবি পঁচা লাগছে।’

ঐশী তীব্র কে মারতে গেলো শুরু হয়ে গেলো দুই জনের ঝগড়া।

বিথী তারা দিয়ে বললো,’ ঐশী দেরি হয়ে যাচ্ছে। ‘

ঐশী তীব্রকে ভেংচি কেটে গিয়ে বাইকে বসলো। পেছনে বিথী ওকে শক্ত করে ধরে বসলো।

ভার্সিটির সামনে গিয়ে বিথীকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসলো ঐশী। আশার সময় বলে আসলো বিথী যেনো সন্ধার আগে বাসায় চলে আশে। ঐশী আজ ওর নানুর বাসায় যাবে। ঐশীর মামা নেই অনেক আগেই মা-রা গেছে। একজন মামা ছিলো।

সারাদিন খুব ভালো কাটলো বিথীর। ভার্সিটির থেকে বের হলো বাসার উদ্দেশ্য। ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

ভার্সিটির সামনে আসতেই আকাশ অন্ধকার হয়ে গেলো। আঁধারে আকাশ ছেয়ে গেছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। হয়তো বৃষ্টি এখনি শুরু হবে হঠাৎ এলোমেলো বাতাসে আকাশ আরো অন্ধকার হয়ে গেলো। সবাই দৌড়া দৌড়ে করে নিজের গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটা ফোঁটা পরলো বিথীর উপর তারমানে এখনি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বিথী আশেপাশে একটাও রিক্সা পেলো না। রাগে দুঃখে হাঁটা ধরলো। বেশি দূর যেতে পারলো না টিপ টিপ বৃষ্টি থেকে শ্রাবণ ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। পাশেই একটা ছাউনি দেখলো যেখানে কয়েক জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। বিথীও প্রায় ভিজে গেছে। বৃষ্টি বেশি ভিজলে ওর জ্বর চলে আশে তারা তারি গিয়ে দাঁড়ালো সেই ছাউনির নিচে। বুকের ভেতর অজানা ভয়ে কুঁকড়ে আছে। ৪-৫টা পুরুষের মাঝে ও একা দাঁড়িয়ে আছে পরনের শাড়ি লেপ্টে আছে শরীরের সাথে।
বিথী খেয়াল করলো পাশের লোকটা কেমন লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বিথী নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলো। আরেক পাশের লোকটা হালকা করে ওর পিঠের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। ভয়ে ওর শরীর থর থর করে কাঁপছে। বা’ পাশের লোকটা ওর হাতটা ধরে বললো,’ কি শীত করছে বুঝি..? এসো আমার কাছে এসো জড়িয়ে ধরি শীত কমে যাবে।

এবার ভয়ে বিথী কেঁদে দিলো। বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় গেলেই ভালো ছিলো। কেনো এখানে আসতে গেলো। এখন যদি এই লোকগুলো ওর সাথে কিছু করে। কেউ আসবে না ওকে রক্ষা করতে। ঐশীর কথা ভেবে কেঁদে উঠলো আবার। ঐশী থাকলে এতো কিছু কখনো হতো না। সে এখন কি করবে মাথা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। যতদূর চোখ জায় কেউ নেই এই তুমুল বৃষ্টিতে কে-ই বা রাস্তায় থাকবে।

আরেকটা লোক ওর কোমরে বাজে ভাবে হাত দিতে গেলে কেউ একজন সেই হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।

বিথী এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। শাড়িটা খামচে ধরে আছে।

লোকটা হাত ধরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রেগে গেলো।

লোকটি ছেলেটার কলার ধরতে গেলে ছেলেটা উনার নাক বরাবর ঘুসি মরলো সাথে সাথে নাক ফেটে রক্ত গড়িয়ে পরছে। বাকি লোকগুলো ভয়ে এই বৃষ্টির মধ্যে দৌড় লাগালো।

বিথী এমন দৌড়ানোর আওয়াজ শুনে চোখ খুলে সামনে তাকালো।

বিথী অবাক হয়ে আশেপাশে তাকালো না কেউ নেই। লোকগুলো কোথায় গেলো..?
হঠাৎ একটা পুরুষালি কন্ঠ কানে আসলো।
~ আল্লাহ শরীর দিয়েছে কি দেখিয়ে বেড়ানোর জন্য না-কি রাস্তা ঘাটে পুরুষদের বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

এমন কথা শুনে বিথী টলমল চোখে সামনে তাকালো। সে তো ইচ্ছে করে এমন পরিস্থিতি তৈরিতে করতে চায়নি।
সামনে তাকিয়ে ওর দৃষ্টি আটকে গেলো সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন এক যুবককে দেখে।

ছেলেটি বড় বড় পা ফেলে ওর সামনে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ শাড়ির আঁচল ঠিক করুন… আপনাদের মতো মেয়েদের কারণে আজ আমাদের দেশে ধর্ষনের হার দিন দিন এতো বাড়ছে। তারপর সব দোষ দিবেন পুরুষদের। আপনারা নিজেরা সতর্ক হয়ে চলবেন না আর সব দোষ পুরুষ জাতির।

বিথী অপমানে চোখ নামিয়ে নিলো। এই বৃষ্টিতে ভিজেও ছেলেটার শরীর থেকে মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ বিথীর নাকে ঠেকলো।
বিথী আবারও তাকালো ছেলেটার দিকে কালো মাক্স এর জন্য মুখটা ডেকে আছে। তবে চোখ গুলো ভীষণ সুন্দর ছেলেটির।

হঠাৎ বিথী প্রশ্ন করে উঠলো,’ আপনি কে..??

ছেলেটা থেমে গেলো। কিছু না বলে যেভাবে বড় বড় পা ফেলে এসে ছিলো আবারও বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।

বিথী শুধু তাকিয়ে রইলো ছেলেটির যাওয়ার দিকে।

কিছু সময় পর ওর সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো।

রিক্সা ওয়ালাঃ আপা মনি উঠে পরেন।
বিথী এই বৃষ্টিতে রিক্সা দেখে বেশ অবাক হলো তবে কিছু না বলে তারাহুরো করে উঠে বসলো।

বাসার সামনে এসে লোকটিকে টাকা দিতে গেলে উনি বললো, টাকা দিয়ে দিয়েছে। বিথী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিক্সা চলে গেলো।

তারপর অনেক দিন চলে যায়। বিথীও বৃষ্টিতে ভিজার কারনে অসুস্থ ছিলো তাই আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না। ঐশীকে সবটা খুলে বলার পর সে তো ওই ছেলেকে দেখার জন্য অনেক পাগলামু করে।

সুস্থ হওয়ার পর ভার্সিটিতে গিয়ে প্রায় ওই ছেলেটাকে খুজতো।কিন্তু আর ওই ছেলের দেখা পাওয়া যায় নি। একদিন সেই লোকগুলো হাত পায়ে বেন্ডেজ করা পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওর সামনে এসে পায়ের কাছে পড়ে মাফ চাইলো। বিথী সেদিন অবাক হয়ে শুধু এদিক ওদিক কাউকে খুঁজছিলো কিন্তু তাও দেখা পাওয়া যায়নি সেই যুবকের।

বেশ কয়েকদিন ধরে বিথী লক্ষ করছিলো কেউ একজন ওর পিছু নিচ্ছে। লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখছে।

একদিন বিথী বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাচ্ছিলো বেশ ঝাল লাগার কারনে,, এদিক ওদিকে পানি খুঁজতে ছিলো সেই সময় ওর সামনে একটা পানির বোতল এগিয়ে দেয় একটা ছেলে। ঝালে বিথী ঢকঢক করে পুরো পানি খেয়ে নেয়।

তারপর পিছনে ফিরে অচেনা ছেলেদেখে ওই বৃষ্টির দিনের কথা মনে পড়ে। ওর বিপদের সময় এমনি এক সুদর্শন যুবক ওকে বাঁচিয়ে ছিলো। আজ কেও ঝালের সময় পানি দিয়েছে বিথী খুশিতে আত্ম হারা হয়ে যায়। এই বুঝি সেই যুবক যাকে সে ওই দিন পর থেকে এক বারের জন্যও ভুলতে পারেনি। খুশিতে সে কি বলবে,কি বলা উচিৎ সব ভুলে যায়। ঠিক সেই দিনের মতো মুখে কালো মাক্স কিন্তু চোখগুলো ভিন্ন হয়তো বৃষ্টির মধ্যে একরকম এখন অন্য রকম লাগছে।
ছেলেটি রেগে ওকে বলে উঠলো,’ যে জিনিস খেতে পারেন না ওই জিনিস খেতে যান কেনো..? আরও অনেক ভাবে ওকে বকা দেওয়া শুরু করলো।

কিন্তু বিথীর কানে তো কিছুই যাচ্ছে না। সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। ঠিক এইভাবেই তো বকে ছিলো সেই ছেলেটি।

তারপর থেকে ছেলেটির সাথে ওর দেখা হওয়া কথা বলা শুরু হয়। এক সময় তারা বন্ধু হয়। বন্ধু থেকে কখন যেনো ভালো লাগায় পরিণত। এক পর্যায় তা ভালোবাসায় পরিণত হয়।এভাবে কেটে যায় দুই বছর কিন্তু কেউ কাউকে কিছুই বলতে পারেনি।
ছেলেটি ওইদিন ওকে প্রথম ওর মুখ দেখায় বিথী হা করে তাকিয়ে থাকে এতো সুন্দর ছেলের দিকে ।

ছেলেটির নাম আকাশ….

আকাশ ওকে ওই দিন আংটি দিয়ে প্রপোজ করে। বিথী ও রাজি হয়ে যায়। ওরা রিলেশনশিপ এ চলে যায়। সে দিন ওরা অনেক জায়গায় ঘুরতে যায়। অনেক মজা করে সারাদিন। দুই বছর পর ভালোবাসা প্রকাশ হয়, আকাশ ওর মুখ দেখায় ।
সন্ধ্যায় যখন আকাশ বিথীকে নামিয়ে দিয়ে যায় তখন বিথীর হাত বুকে টেনে ধরে বলে,’ খুব জলদি কালো কুচকুচে শাড়ি দিয়ে তোমাকে বউ সাজিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। বিথী সে দিন লজ্জায় দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে। সে দিকে তাকিয়ে আকাশ মুচকি হেসে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আকাশ সব সময় বলে ওর বউকে ও কালো কুচকুচে শাড়ি দিয়ে বউ সাজিয়ে ওর ঘরে তুলবে।

বিথী খুশিতে এসে ঐশীকে ধরে ঘুরা শুরু করে। ঐশী যখন জিজ্ঞেস করে আজ এতো খুশি কেনো? বিথী ওকে সবটা খুলে বলে। ঐশীতো শুনে অবাক এতো কিছু হয়ে গেলো ও কিছুই জানেনা কিছুটা মন খারাপ করলো। পরক্ষনে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো ছেলেটার বাড়ি কোথায়..? ছেলে কি করে..?? কিছু কি জানো..?

বিথী হেঁসে উঠলো ঐশীর কথা শুনে তারপর কিছুটা চিন্তিত মুখে বললো,’ ওর পৃথিবীতে একটা বুড়ি নানু বাদে আর কেউ নেই। ও একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। এই ঐশী শুননা আব্বু কি ওকে মেনে নিবে..?

ঐশী ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,’ একদম না ‘
বিথীঃ তাহলে আমি কি করবো আমি যে ওকে ছাড়া বাঁচবো না। দরকার হলে পালিয়ে যাবো ওর সাথে।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here