#তোমায়_পাবো_বলে
পর্ব_৩৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
ইতোমধ্যেই পরশ ওয়াশরুমের দরজা থেকে আমায় ইশারা করে বলছেন যেন বাবাই পরশকে কল করেন! আমি যেন কিছুতেই রাজি না হই পরশকে কল করে এই বাড়িতে নিমন্ত্রণ করতে!
সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি আমি! বাবার নেতিয়ে যাওয়া বিবর্ণ মুখমন্ডলে ক্লেশ, গ্লানি, লজ্জা এবং তীব্র অপরাধবোধ প্রগাঢ় ভাবে ফুটে উঠেছে। পৃথিবীর কোনো মেয়েই তার বাবাকে এহেন বিমূর্ষ অবস্থায় দেখে বাবার করা আবদারের বিপরীতে যেতে পারবে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করবে বাবার আবদার মেটানোর। আমি ও ঠিক সেভাবেই বাবার নিরান্দন, বিষাদপূণ মুখশ্রীতে চেয়ে পরশের কাছে বাবাকে অতি পর্যায়ে টেনে এনে ছোট করতে পারছি না! বিবোধ বোধে তীব্র আঘাত অনুভব করছি! অন্যদিকে পরশ ক্রমাগত ইশারা করেই চলছেন, বাবার করা আবদারে রাজি না হতে! পরশকে হারিয়ে না দিতে! এই পর্যায়ে এসে আমি মাথা নুয়াতে বাধ্য হলাম। পরশের দিকে আর এক দফা তাকালেই হয়তো বাবার আবদারের বিপরীতে যেতে হবে আমার!
কিয়ৎক্ষন সবার মধ্যেই পিনপনত নীরবতা বিরাজমানের পর মাথা উঁচিয়ে আমি যেই না বাবাকে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে যাব অমনি বাবা দীর্ঘশ্বাস নির্গত করে আমার মুখপানে চেয়ে বললেন,,
“বিষয়টা আসলেই খুব খারাপ দেখায় টয়া! মেয়ের বাবা হওয়ার সুবাদে আমার যথার্থভাবেই উচিত মেয়ের জামাই এবং মেয়ের শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীকে নিমন্ত্রণ করা! বিয়ের দুমাস হতে চলল তোদের। অথচ মেয়ের বাবা হওয়া সত্ত্বে ও আমি এখন ও অবধি তোর শ্বশুড়বাড়ির লোকজনদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারি নি। আদর, যত্ন, সেবা, আত্নি কিছুই করতে পারি নি। বলা বাহুল্য, ভবিষ্যতে হয়তো তোর শ্বশুড় বাড়ির লোকজন তোকে খোঁটা দিতে পারেন! বলতেই পারেন, তোর বাবা খুব দাম্ভিক, বদরাগী, কিপটে এবং জাদরেল স্বভাবের! মেয়ের প্রতি, মেয়ের ভালো-মন্দের প্রতি এবং মেয়ের শ্বশুড়বাড়ির প্রতি কোনো খেয়ালই নেই উনার! তার উপর মেয়েকে দিয়ে আমাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, নিজ থেকে নিমন্ত্রণ জানান নি। বিষয়টা খুব দৃষ্টিকটু দেখায় না?”
বাবার সুবুদ্ধি উদয় হওয়ার খুশিতে আমি আনন্দঘন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার পূর্বেই পরশ ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত কপাটি কেলিয়ে হাসছেন আর চড়কির মতো গোল গোল আকারে ঘুঁড়ছেন। জিতে যাওয়ার পৈশাচিক খুশি লোকটার মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে! ফিক করে হেসে উঠে আমি বাবার হাত দুখানা চেঁপে ধরে বললাম,,
“কিছুটা দেরি হয়ে গেলে ও তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছ বাবা। আমি না চাই না জানো তো? শ্বশুড় বাড়ির লোকজনদের কাছে ছোট হয়ে থাকতে! আমার বাবাকে তাদের কাছে বিন্দু পরিমান ছোট করতে! কেউ না জানুক অন্তত আমি তো জানি, আমার বাবা কতটা মহান! হয়তো উপর থেকে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই রাগী। তবে ভেতরের মনটা শিশুর মতো কোমল এবং নমনীয়।”
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মমতাময় গলায় বললেন,,
“আমি জানি, আমার ছোট মেয়ে আমাকে কতটা ভালোবাসে। তাই তো তার উপরই আমার সমস্ত রাগ, জেদ, জোর, অভিমান, সীমাবদ্ধ! নানা হওয়ার খুশিতে আমি ও দারুন খুশি জানিস? এই প্রথম তোর কাছে খুশিটা শেয়ার করলাম! নানা ভাইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমি। তোর প্রথম সন্তান কিন্তু এই বাড়ি থেকেই হবে টয়া। সব মেয়েদের প্রথম সন্তান তার বাপের বাড়ি থেকেই হয়। আশা করি, তোর স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী এই নিয়মটার কথা মাথায় রাখবেন!”
“তুমি যা বলবে ঠিক তাই হবে বাবা। পরশ বা আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী এতে দ্বিমত পোষন করবেন না।”
বাবা মিষ্টি হেসে স্থান ত্যাগ করে দাঁড়ালেন। পুনরায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“ঘুমিয়ে পড়। কাল সকালে কথা হবে। পরশের পরিবারকে ও কাল সকালেই নিমন্ত্রণ করব। ভাবছি পিয়াস এবং মিলির বিয়েটা ও কাল বা পরশুর মধ্যে ফিক্সড করে নিব। বড় আপা খুব তাড়া দিচ্ছেন!”
“তাহলে তো খুবই ভালো বাবা। আমরা মিলি আপুর বিয়েটা খেয়েই না হয় ঢাকায় যাব। তুমি বরং কাল বা পরশুর মধ্যেই বিয়ের ডেইটটা ফিক্সড করে নাও। শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার পর হয়তো আগামী ৪/৫ মাস ও আমি এই বাড়িতে আসতে পারব না বাবা! পিয়ালী আপু এবং পায়েলের বিয়ে ও অনেকটা ঘনিয়ে আসছে!”
“তুই যা বলছিস তাই হবে মা। এখন ঘুমা। বাবা আসছি কেমন?”
প্রস্থান নিলেন বাবা। যাওয়ার সময় রুমের দরজাটা হালকা ভেজিয়ে দিয়ে গেলেন। ইতোমধ্যেই পরশ ঝড়ের বেগে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আমার হাত দুখানা টেনে ধরে সোজা দাঁড় করিয়ে দিলেন। বাঁ কোমড়টায় হাতে রেখে লোকটা আমার ডান হাতের আঙ্গুলে নিজের হাতের সবক’টা আঙ্গুল মিশিয়ে আমায় নিয়ে গোল গোল হয়ে ঘুড়তে লাগলেন আর দাঁত কেলিয়ে হেসে গুনগুন করে বললেন,,
“ইয়েস! মে জিত গেয়া। জাদরেল শ্বশুড়ের সাথে চ্যালেন্জ্ঞে আমি জিতে গেছি! এবার দেখার পালা এই দজ্জাল শ্বশুড় কিভাবে আমায় নিমন্ত্রণ জানান। ঠিক কতটা কাতর ভঙ্গিতে বলেন এই বাড়িতে আসতে, উনার মেয়েকে নিয়ে যেতে!”
“শুনুন পরশ। আমার বাবা যেহেতু ভুলটা বুঝতেই পেরেছেন। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় না আপনার উচিত হবে বাবার অনুভূতি নিয়ে কোনো হাসি, তামাশা করার। বাবাকে কোনো রকম ঠাট্টার খোড়াক তৈরী করার। বাবা কল করে নিমন্ত্রণ জানালে এক কথাতেই আপনি রাজি হয়ে যাবেন প্লিজ। বাবাকে বাধ্য করবেন না কাকুতি, মিনতি করতে। হাজার হলে ও বাবা আপনার বয়োজ্যেষ্ঠ, আপনার নিজের বাবার সমতুল্য!
পরশ আকস্মিক নাচ থামিয়ে বেশ তৎপর গলায় প্রত্যত্তুরে বললেন,,
“তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে কেন টয়া? বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা সাপে-নেউলের! আমি সবসময় চাইব বাবার সাথে হাসি, ঠাট্টা করতে। ইচ্ছেপূর্বক বাবাকে ক্ষ্যাপাতে! এর মানে এই নয় যে, বাবাকে আমি সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ করি না। বাবার প্রতি আমার আলাদা এক অনুভূতি আছে। যা আমি প্রকাশ করতে চাই না। আমি চাই সবসময় এভাবেই বাবার পিছনে লেগে থাকতে, ঝগড়া-বিবাদ করতে, সম্পর্কটাকে সবসময় এভাবে জমিয়ে রাখতে৷ অতিরিক্ত সম্মানবোধ দেখিয়ে সম্পর্কটাকে এক ঘেঁয়ে করতে চাই না। আমাদের শ্বশুড়, জামাইয়ের সম্পর্কটা হবে একদম আলাদা। আট, পাঁচটা শ্বশুড়-জামাইয়ের সম্পর্কের মতো অতোটা স্বাভাবিক বা সহজ নয়!”
“ওহ্ তাই? তার মানে আপনি সবসময় আমার বাবার পিছনে এভাবেই লেগে থাকবেন?”
“হ্যাঁ থাকব! এভাবেই লেগে থাকব। শ্বশুড়-জামাইয়ের লড়াই আজীবন ঠিক এই ভাবেই বহাল থাকবে!”
ফিক করে হেসে দিলাম আমি। পরশ আমায় ছেড়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজাটা আটকে দিলেন। অতঃপর আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আচমকা আমায় কোলে তুলে নিলেন। কটমট দৃষ্টিতে লোকটার লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাতেই লোকটা আমার নাকে নাক ঘঁষে বললেন,,
“আজ যে আমার মেয়ের মাম্মাম আমাকে ঠিক কতটা খুশি করেছে তার কোনো এক্সপ্লেনেশান হয় না। তাই আজ রাতটা আমার মেয়ের মাম্মামকে আমি খুব বেশি ভালোবাসতে চাই। ঠিক প্রথম রাতের মতো!”
লজ্জায় কুঁকড়ে উঠে আমি লোকটার বুকের পাজরে মুখ লুকালাম। মন্থর গলায় বললাম,,
“আপনি কি করে জানলেন? আমাদের মেয়ে হবে?”
“ছেলে বাবু হলে ও কিন্তু আমার কোনো আপত্তি নেই! তবে আমি চাই আমাদের প্রথম সন্তান মেয়ে বাবু হউক!”
“আর যদি দুইটা মেয়ে বাবু হয়? তখন?”
“তখন তো আমি খুশিতে পাগল প্রায় হয়ে যাব। বাঁধ ভাঙ্গা খুশিতে ঠিক আত্নহারা হয়ে উঠব!”
“তখন আমায় কি গিফটস দিবেন হুম?”
“তুমি যা চাইবে!”
“আমাদের কিন্তু এখন ও হানিমুনে যাওয়া হয় নি!”
“মাথায় আছে আমার। জাস্ট কয়েকটা মাস সময় দাও আমায়। আমরা ও হানিমুনে যাব। চার চারটে কাপল মিলে আমরা হানিমুনে যাব!”
“মানে? আপনি মিলি আপু, পিয়ালী আপু এবং পায়েলের কথা বলছেন?”
“ঠিক তাই!”
মিষ্টি হেসে আমি পরশের গলা জড়িয়ে ধরলাম। ক্রুর হেসে পরশ আমায় নিয়ে বিছানায় শায়িত হলেন। তীব্র ভালোবাসায় আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন লোকটা এক অজানা শহরে! যে শহরে ভালোবাসার কোনো এক্সপ্লেনেশান হয় না!
,
,
পরের দিন। ঘড়িতে প্রায় ১০ টার কাছাকাছি। সকালের নাশতা শেষে বাড়ির সবাই বসার ঘরে গোল হয়ে বসে আছি। বাড়ির প্রতিটা সদস্য এই গোল বৈঠকে উপস্থিত। বৈঠকের মধ্যমনি হয়ে বসে আছেন বাবা। সবার উৎসুক দৃষ্টি বাবার দিকে। বাবা ফোন হাতে নিয়ে দারুন জড়তায় ভুগে কিয়ৎক্ষন পর পর আমাদের সবার দিকে ক্ষীণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন। মা আমার পাশে বসে কেবলই দাঁতে দাঁত চেঁপে বাবাকে বলছেন, তাড়াতাড়ি পরশকে কলটা করতে। বেলা বয়ে যাচ্ছে। বাবা গলা খাঁকারী দিয়ে বার বার পরশের নাম্বারে ডায়াল করে ও মাঝ পথে হুট করে কলটা কেটে দিচ্ছেন। প্রায় চার বার এই একই কাজ পুনরাবৃত্তি হওয়ার পর মা অবশেষে রাগান্বিত গলায় বাবাকে শুধিয়ে বললেন,,
“কি চাইছটা কি তুমি? মেয়ের জামাইকে কল করবে না? মেয়ের শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে নিমন্ত্রণ করবে না? এতই অহংকার তোমার?”
বাবা আবদার সূচক গলায় মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“তুমি একটু আমার বদলে মেয়ের জামাইয়ের সাথে কথা বলে দিবে?”
“কেন কেন? আমি কথা বলব কেন? চ্যালেন্জ্ঞ নেওয়ার সময় কি আমি চ্যালেন্জ্ঞটা নিয়েছিলাম? না আমি মেয়ের জামাইয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম?”
বাবা মাথা নুঁইয়ে নিলেন। নিরুপায় হয়ে আঁখিদ্বয় বুজে বাবা বুকে এক গাধা সাহস সন্ঞ্চার করে পরশের নাম্বারে এবার ডায়াল করেই নিলেন। কানে ফোন চেঁপে বাবা চোখ, মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছেন। বাবার এহেন হটকারী কার্যকলাপ দেখে উপস্থিত সবাই মুখ চেঁপে হাসতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পর পর দুবার কান থেকে ফোন নামিয়ে বাবা পরশের নাম্বারে অনবরত ডায়াল করেই চলছেন। ঐ পাশ থেকে ফোন তুলছেন না পরশ। বুঝতে আর বাকি রইল না পরশ ইচ্ছাকৃত ভাবে বাবাকে ঘাটাচ্ছেন! চতুর্থ বারের বেলায় বাবা কপালের ভাঁজে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বিড়বিড় গলায় বললেন,,
“ইচ্ছে করেই ছেলেটা আমায় রাগাচ্ছে। ভাব দেখাচ্ছে ভাব! আমার হেরে যাওয়ার খুশিতে নিশ্চয়ই সে শয়তানী চাল চালছে। আমাকে আর ও হেনস্তা করার ফন্দি আঁটছে। উফফফ অসহ্যকর এই ছেলে!”
হাসি গলাধঃকরন করে আমি বাবার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কি হয়েছে বাবা? পরশ ফোন তুলছেন না?”
“নাম্বার ব্যস্ত বলছে। নিশ্চয়ই আমার সাথে বজ্জাতি করছে!”
উপস্থিত সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠতেই বাবা সবার দিকে অগ্নিঝড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই সবাই হাসি থামিয়ে শুকনো ঢোক গিলতে আরম্ভ করলেন! মা ঠোঁট কামড়ে হাসি চেঁপে বললেন,,
“দেখি, ডায়াল করতে থাক। যতক্ষন অবধি না জামাই ফোন তুলছে। ব্যস্ত মানুষ তো! হয়তো অফিসের কাজে মহাহাহা ব্যস্ত৷ আমার মেয়ে জামাই তো আর তার শ্বশুড়ের মতো নিকাম্মা নয়! যে সারাক্ষন বাড়িতে থেকে থেকে অলস সময় পাড় করবে!”
বাবা ক্ষেপে উঠে ও মায়ের উপর রাগ ঝাড়লেন না। সন্তপর্ণে রাগটাকে আয়ত্তে নিয়ে এলেন। প্রায় ষষ্ঠ বারের বেলায় ঐ প্রান্ত থেকে পরশ কলটা তুলতেই বাবা কলটা লাউড স্পীকারে রেখে দিলেন। গলা খাঁকিয়ে বাবা হ্যালো বলার পূর্বেই পরশ ঐ প্রান্ত থেকে রূঢ় গলায় বললেন,,
“হ্যালো কে? বার বার বিরক্ত করছেন কেন? কলটা কেটে দিচ্ছি মানে আমি ব্যস্ত আছি! এতটুকু বুঝার বুদ্ধি ও মাথায় নেই আপনার? ভারী আশ্চর্যকর লোক তো!”
বাবার পাশাপাশি উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে উঠলেন। শার্টের কলারটা ঠিক করে বাবা নমনীয় গলায় বললেন,,
“স্ক্রীনের দিকে তাকাও। নাম্বারটা ভালো দেখে এরপর কথা বল!”
“দেখেছি! তো? কি হয়েছে? আননৌন নাম্বার। আপনাকে নিশ্চয়ই চেনার কথা নয় আমার!”
“ভয়েসটা ও চিনতে পারছ না?”
“উমমমমম..কিছুটা পরিচিত লাগছে! কিন্তু কেন বলুন তো?”
“কেন?”
“কারন আমার জাদরেল শ্বশুড়ের গলার স্বরটা ও কিছুটা এরকম! তবে উনি আপনার মত এতটা মিষ্টি স্বরে কথা বলেন না! খুব অহংকার আমার শ্বশুড়ের বুঝেছেন? গলায় অহংকারী একটা ভাব আছে! আপনি হয়তো আমার শ্বশুড়ের কাছের কেউ হতে পারেন! নিশ্চয়ই আপনাকে উনি হায়ার করেছেন তাই না? আমাকে মানিয়ে এই বাড়িতে আনার জন্য?”
“এই যে এই লোকটার সাথে কথা বলছ তার গলায় অহংকারী ভাব নেই?”
“না নেই। থাকলে এতক্ষন কথা বলতাম নাকি? ঠিক মুখের উপর কলটা কেটে দিতাম। অহংকারী পুরুষ মানুষ আমার পছন্দ না। তাই বোধ হয় আমার শ্বশুড় মশাই স্বয়ং অহংকারী স্বভাবের পড়েছেন!”
দাঁতে দাঁত চেঁপে ও বাবা রাগ সংবরন করতে না পেরে বললেন,,
“তুমি কি সত্যিই আমাকে চিনতে পারছ না? আমার নাম্বারটা সত্যিই কি তোমার ফোনে সেইভ করা নেই? আমাকে কি আমাকে হায়ার করা লোক মনে হচ্ছে?”
“না নেই! অপ্রয়োজনীয় কারো নাম্বার আমার ফোনে সেইভ করা থাকে না। অবশ্য জোর দিয়ে বলতে পারছি না, আপনি আমার শ্বশুড়ের হায়ার করা লোক। তবে সন্দেহ করছি!”
“আচ্ছা? তুমি কি এভাবে জনে জনে বদনাম করে বেড়াও তোমার শ্বশুড় মশাইয়ের নামে?”
“হ্যাঁ করি! প্রয়োজন হলে করি! আপনি নিশ্চয়ই আমার শ্বশুড় মশাইয়ের কাছে এসব বলতে যাবেন না! আচ্ছা যাই হোক, এখন বলুন? আপনি কে? আপনার পরিচয় কি?”
“মশকরা করছ আমার সাথে? ইয়ার, দোস্ত পেয়েছ আমায়?”
“স্যরি স্যার! আমি আপনার সাথে মোটে ও ইয়ার, দোস্ত হিসেবে কথা বলছি না। সম্পূর্ণ একজন অপরিচিত মানুষ হিসেবে কথা বলছি। সত্যি বলতে গেলে আপনার সাথে অহেতুক মশকরা করার পর্যাপ্ত সময়টা ও নেই আমার!”
“আমি তোমার শ্বশুড় বলছি! আফজাল হোসেন বলছি!”
“হ্যাঁ তো? কি করতে পারি? আমি জানি আপনি আমার শ্বশুড় মশাই বলছেন! যার সাথে আমার কোনো সু-সম্পর্ক নেই। না আছে কোনো বুঝা-পড়া। সেক্ষেত্রে তো আপনি আমরা অপরিচিতই হলেন তাই না?”
“তার মানে তুমি ইচ্ছে করে আমার সাথে নাটক করছিলে?”
“হ্যাঁ করছিলাম। আপনি ও কিন্তু আমার সাথে কম নাটক করেন নি! আপনার এক মেয়েকে নিয়ে যা নাটক করেছেন আপনি! বাপরে, বাপ! হেরে যখন ভূত হলেন ঠিক তখনই মেয়ের জামাইকে কল করতে বাধ্য হলেন তাই না? অহংকার ভেঙ্গেছে তো আপনার?”
“শুনো? আমি তোমার সাথে নতুন করে কোনো দ্বন্ধে জড়াতে চাই না। আজ বা আগামী কালের মধ্যে তোমার পুরো পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসবে৷ নিমন্ত্রণ রইল তোমাদের!”
“স্যরি স্যার! আমি আসতে পারব না। আপনি এক কাজ করুন। আপনি এসে আপনার মেয়েকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যান!”
“গুরুজনদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? মুখের উপর মানা করে দিলে?”
“আপনি জানেন না? মেয়ের জামাইদের সাথে কিভাবে আদুরে গলায় কথা বলতে হয়? সব ক্ষেত্রে ঝাঁঝালো গলায় কথা বললে হয় না! মেয়ের জামাইদের সাথে নমনীয় হতে হয়!”
“এখন কি আদর, সোহাগ করে বলতে হবে? বাবা এসো, তোমার পরিবার নিয়ে এসো, এসে আমার মেয়েকে নিয়ে যাও, আমাকে এবং আমার পরিবারকে উদ্ধার কর, তুমি বা তোমরা না এলে আমি ভীষণ কষ্ট পাব বাবা! এভাবে ননাই করে কথা বলতে হবে?”
“আলবাদ বলতে হবে! ঠিক এভাবেই আহ্লাদী স্বরে বলতে হবে! দেখি, বলা শুরু করুন। আমি অপেক্ষা করছি!”
#চলবে…?