#পর্ব_১৮
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
প্রিয় বাবা…!
শুরুতে আমার সালাম নিবেন… ছোট থেকেই অতি আদরে আমাকে আপনি বড়ো করে তুলছেন…!
কখনো কোনো কিছুর অভাব বোধ করতে দেন নাই,যখন যা চেয়েছি, আমার সব ইচ্ছা পূরণ করছেন..! ছোট বেলায় আমি যখন গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম, হঠাৎ করেই আমার আম্মু আমাকে ছেড়ে ওই পাড়ে পাড়ি জামালেন…
জানি না,কী দোষ করছিলাম, আমার আম্মু কেন আমাকে ছেড়ে গেলো বুঝলাম না..!
আপনাকে মাঝে মধ্যে বলতাম,বাবা আম্মু কী আর আসবে না..? আমাকে কোলে নিয়ে দুই গালে চুমু খেয়ে বলবে না, আমার লক্ষি বাবু.. একদম দুষ্টুমি করবে না, তাহলে আম্মু অনেক রেগে যাবে, অনেক অনেক বকা দিবে..
ও বাবা বলো না, আম্মু কী আর ঘুম পাড়ানি গান শুনাবে না…? আম্মু কী আর আসবে না…?
বাবা তুমি আমাকে কোলে নিয়ে শান্তনা দিয়ে বলতা, তোমার আম্মু এই কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে,একটু রাগ করছে তো তাই আড়ালে চলে গেছে…
বাবা আমি কাকে আম্মু ডাকবো..? কে আমাকে আদর করবে,কে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে….? আমার শত শত প্রশ্ন ছিলো তোমার কাছে..!
বাবা তুমি আমার জন্য কিছু দিন পর, নতুন আম্মু নিয়ে আসলে… আমি খুশি হয়েছিলাম, এইবার মনে হয়,আমি যে কোলটার অভাব বোধ করতাম,সেই অভাব আমার মিটা যাইবো…!
জানো বাবা, আমার খুশি বেশিদিন টিকে থাকে নি..
সৎ মা প্রথম ভালো ব্যবহার করলেও, কিছুদিন পর আমাকে আর আপন ভাবতে পারে নাই….
আমি একা হয়ে যাই বড্ড বেশি একা, তুমিও আমাকে সময় দিতা না,বলতা মায়ের কাছে যাইতে,আর আম্মু তো আমাকে সহ্য করতো না…
জানো বাবা টাকায় সব হয় না,যদি তুমি টাকার পিছনে এভাবে না ছুটতে, আমাকে একটু সময় দিতে, আমার কোনো কষ্ট থাকতো না…
তুমি টাকার জোরে আমার জন্য নতুন “মা” এনেছো কিন্তু ভালোবাসা এনে দিতে পারো নাই….
বাবা তুমি অন্যায় ভাবে অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতাছো,সৎ ভাবে কম টাকা ইনকাম করা যায়, কিন্তু বিশ্বাস করো বাবা_ এই কম টাকায় স্বর্গের সুখ কিনা যায়…
বাবা তুমি কি জানো, তোমার এই মাদক দ্রব্য অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে, আমার মতো ছেলেরা এতে আসক্ত, তাঁরা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে..! তাঁরা এই নেশায় আসক্ত হয়ে কাজ কর্ম বাদ দিয়ে দিছে, বাবার কাছে টাকা আবদার করে,বাবা আর কতোদিন টাকা দিতে পারবে, ওঁরা চুরি শুরু দেয় বাবা..! ছোট ছোট চুরি করে যখন ধরা পড়ে মাইর খায়,তখন ওরা ডাকাতদের দলে নাম লেখায়,ওরাই সন্ত্রাসী হয়ে একদিন সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়, ওদের জন্যেই আমাদের মা বোনদের নিরাপত্তা থাকে না মুক্ত ভাবে চলাফেরা করার…
বাবা একবার চিন্তা করে দেখো, আমি যদি সন্ত্রাসী হয়ে তোমায় সামনে দাঁড়াই সমাজের পরিচয় দেই, আমি বারেক খন্দকারের ছেলে…!সমাজ তোমাকে সন্ত্রাসীর বাবা বলবে, তোমার অনেক কষ্ট লাগবে, জানি বাবা তোমার অনেক কষ্ট হবে তখন… কিন্তু এখন একটু ভাবো,সেই সন্ত্রাসী বাবাদের কাতারে একটু নিজেকে দাঁড় করাও তাদের কষ্টটা একটু অনুভব করো বাবা,একটু তো অনুভব করো.…
দেখছো তোমার কষ্ট হচ্ছে, তাদের ও বুকের পাঁজর ভাঙ্গা কষ্ট হয়…!
তাদের কষ্টের কারণ শুধু তুমি বাবা তুমি শুধু…
তোমার টাকার পিছনে ছোটার নেশা তাদের সোনার মতো ছেলেদের নষ্ট করে দিছে… তোমার অল্প টাকায় হয় না, তোমার কাছে তো টাকাই সব কিছু…
আমি তোমার কাছে এসেছিলাম, একটা খবর দিতে, আমি জানি তুমি এটা শুনলে অনেক খুশি হইতা…!
কিন্তু দেখো নিয়তি কী করলো, তোমার অপকর্ম গুলো আজকেই ফাঁস করে দিলো…!
বাবা তুমি কেমনে পারলে আমাকে আটকে রাখতে, তোমার কী মায়া লাগল না, তোমার কী একটুও কষ্ট হলো না…জানো বাবা, গ্রামে আমি একজন মেয়েকে পছন্দ করছি, আমি তাকে বিয়ে করতে চাই…!
এই খবর টা দিবার জন্য আমি ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে, তুমি আমাকে আটকে দিলে,জানো আমি কথা দিয়ে এসেছিলাম আমি ফিরে আসবো, কিন্তু তুমি আমাকে ফিরতে দিলে না…!
বাবা আমি শেষ করবো তোমার অবৈধ সব কারবারের খেলা, আমি বিয়ে করতে পারবো নাকি জানি না, কিন্তু আমি সমাজকে বাঁচাবো…
তুমি অনেক অন্যায় করেছো, এইবার তোমার শাস্তি পাবার সময়, তুমি অনেক বাবার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছো..! আমি তোমার ছেলেকে তোমার কাছে থেকে কেড়ে নিলাম, আমি তোমার কেউ না বাবা আমি তোমার কিছু লাগি না…! বাবা তোমার সবচেয়ে বড়ো শাস্তি হলো_পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ….!
তুমি যেদিন আমার দেহটা লাশ হিসাবে পাইবা, আমার আম্মুর কবরের পাশে আমার লাশটা দাফন দিবেন…
বাবা যদি পারেন, আপনার সবকিছু গোড়া থেকে শেষ করবেন, আমি আগছা গুলো তুলে ফেলার জন্য, বেড়িয়ে গেলাম, আপনার এই কারাগার থেকে…?
ভালো থাকবেন, আমাকে মাফ করে দিবেন…!
ইতি আপনার ছেলে
নাহিদ খন্দকার
হাত থেকে চিঠিটা পড়ে গেলো, বুকের পাঁজর যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে…! বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ..!
বারবার এই কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,কী শুনাইলি নাহিদ, আমি সইতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি,টাকা দুনিয়ায় সব না রে,সব না, তুই ফিরে আয় বাবা,তুই ফিরে আয় আমার বুকে…
বারেক খন্দকার পাগলের মতো বুক চাপড়ে কান্না করছেন, আজকে যেন তার পাপের রাজত্বের খুঁটি গুলো কেঁপে উঠছে,বারেক তার ভুল গুলো বুঝতে পারছে.. আজকে বিবেকের চোখ খুলে গেছে…!
তার ভুল বুঝতে দেরি হয়ে গেলো না তো, নাহিদ আসবে তো তার আবার এই মরুভূমির মতো হ্নিদয়ে বাবা ডেকে ভালোবাসা পানি ঢালতে…
এই কে কোথায় আছিস গোডাউন গুলো পরিষ্কার কর,সব কিছু ফেলে দে.. আমার কাছে আমার ছেলে সব কিছু, আমি কালকেই যাবো বানিয়া পাড়া, আমার ছেলেকে আমি নিয়ে আসবো, আমার ছেলের বউকেও নিয়ে আসবো, সুখের ঘর বাধবো আমি,সেই ঘরে কোন অশান্তি থাকবে না, শান্তি আর শান্তি থাকবে,সুখ আর সুখ…বারেক খন্দকার চিঠিটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন,আবল তাবল বকতে বকতে হঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়লেন…?
————-
তিনদিনের অপেক্ষার শেষে মীম আর নিজকে ধরে রাখতে পারলো না, বাবার সামনেই চোখের জল ছেড়ে দিলো….!
রহিম মিয়া চমকে উঠলেন, বললেন_কিরে “মা” কোনদিন তো তোরে এইভাবে কান্না করতে দেখি নাই, আজকে হঠাৎ কী হইলো…!
বল আমাকে কি হয়েছে….!
চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,জানো আব্বা জীবনে কখনো কাউকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাই নাই, ইচ্ছা ছিলো না সংসার করার আর না ঘর_ বাঁধার স্বপ্ন দেখার…?
কিন্তু একজন মানুষ হুট কাইরা আইলো আমার জীবনের গলিতে… অনেক অনেক স্বপ্ন দেখাইলো..!
আমিও স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, আমিও তারে ভালোবাসলাম, সে শহরে চলে গেলো, তার বাবাকে নিয়ে আসতে…! আমিও আশায় রইলাম,ওনি আসবেন.. আমাকে নিয়ে যাবেন…!
কিন্তু দেখো আব্বা ৩টা দিন হইয়া গেলো ওনি আসলেন না, আমার কেমন জানি লাগতাছে আব্বা আমার ভালো লাগতাছে না..মীম রহিম মিয়া কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো…!
নিরুপায় বাবা, মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্তনা দিলেন, কান্দিস না “মা” দেখিস ঠিক আইবো…
———
নদির পাড়ে বসে বসে তিনজন বুদ্ধি করতাছে, রুবেল কবীর আর নাফিসা….! কি ভাবে তারা ওই পাতাল পুরীতে ঢুকতে পারবে…দূর থেকে একটা নৌকা এইদিকেই ভেসে আসছে, নাফিসা উঠে দাঁড়ালো…
নৌকা কাছে আসতেই নাফিসা চিল্লাতে লাগলো দেখ নাহিদ ভাইয়া আইছে…!
কবীর উঠে দাঁড়ালো, নাহিদ কে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো…!
সবকিছু ঠিক আছে,হবে কী এইবার বিয়ে শাদি, মীম আপুর জীবনে কী এইবার আসবে সুখের তিথি…!
এতো দেরি করে আসলেন ক্যান ওহে অতিথি..!
…
সবকিছু এলোমেলো,ঠিক হবার কিছুই নেই বাকি…!
জীবনে সুখের ফুল ফুটবে না আর, পরপারে দিতে হবে বুঝি পাড়ি…
…
কী আবল তাবল কথা বলেন নাহিদ ভাইয়া, এইখানে যখন চলে এসেছেন,সব কিছুই ঠিক হয়ে ইনশাআল্লাহ..
কবীরের সাথে নাফিসা ও বললো,সব ঠিক হবে, চিন্তা কইরেন না, এখন বলেন এতো দেরি ক্যান…?
নাহিদ বলতে শুরু করলো,তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল কাহিনী…!
নাহিদের বাবাও এইসবে জরিত শুনে ওরা সবাই অবাক হলো..? রুবেল বললো, আমরা একটা ফন্দি করতেছি,হানা দিবো ওদের গোপন আস্তানায়, আপনি কি থাকবেন আমাদের সাথে…?
হুম আমি থাকবো আপনাদের সাথে, আমি চাই নারীদের নির্যাতন করা বন্ধ হোক, একটা মাদক মুক্ত সমাজ হোক…
নাফিসা বলে উঠলো ভাইয়া মীম আপু আপনার জন্য অপেক্ষা করতাছেন, কান্না করছে কালকে অনেক…?
আমি জানি ওনি অপেক্ষা করবেন, আচ্ছা আমাকে একটু মীমের সাথে দেখা করাও,পরে যাবো তোমাদের সাথে….!
সবাই একসাথে রওনা দিলো মীমের বাড়ির দিকে…
চলবে….