#পর্ব_২৪
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃ_নাহিদ
তোরে কে এতো মাতাব্বরি করতে কইছে,তুই ক্যান ওদের সাথে গেলি…?
আমাকে বলার কী একবার বলা প্রয়োজন মনে করলি না…!
কবীর মাথা নিচু করে আছে, বায়জিদ বকাবকি করেই চলছে..?
নীরবতা ভেঙ্গে কবীর বলে উঠলো, আমি কী খারাপ কাজ করছি নাকি..! অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি,এইটা কি আমার দোষ…!
না রে ভাই দোষ না..! কিন্তু রায়হান মন্ডল যদি জানতে পারে তুই এসবের মধ্যে জড়িত তাহলে, ওরা তোকেও ছাড়বে না..? নাহিদের অবস্থা তো মনে আছে_নদীর পাড়ে মে*রে ফেলে রাখছিলো, তোর কী ভয় লাগে না..!
নাই ভাই আমার ভয় লাগে না,ভয় পেয়ে গর্তে লুকিয়ে থাকলে, সমাজের আগছা গুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে..! আমি আজকে তোমাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই_আমি আসিফ মন্ডলের মেয়ে নাফিসা কে ভালোবাসি,নাফু ও আমাকে ভালোবেসে…!
রায়হান মন্ডল মীম আপুকে আটকে রেখেছে,আর নাফিসাও বাসা থেকে বের হতে পারছে না..!
আমি ওদের দুইজনকে উদ্ধার করবো..?
দেখ ভাই পাগলি করিস না,এইসব ভালোবাসার কথা ভূলে যায়, আসিফ মন্ডল যদি এইসব জানে, আমাদের আর এই গ্রামে থাকতে দিবো না..!
আমি এই গ্রামে থাকতে চাই না ভাই, আমি আমার ভালোবাসা কে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাইতে চাই..!
কোই যাবি তুই আমাকে রাইখা, আমার কথা কী একবারও ভাববি না,পাষাণ হৃদয় করে ছেড়ে যাবি..?
আমি তোমাকে রাইখা যাবো না, তুমি তৈরি থাইকো আমরা হুট করেই এই গ্রাম ছাইড়া যামু, আমাদের দেশের বাড়িতে আব্বার যে জমি আছে, ওইখানের আবার জীবন শুরু করবো_বলো ভাই তুমি আমার সাথে যাইবা এই নরক পুরী থাইকা…!
বায়জিদ কবীরকে জড়িয়ে ধরলো_যাবো আমি তোর সাথে তুই ছাড়া_আর কে আছে আমার..! তুই যে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন…!
আমি জানি ভাই তুমি আমার পাশে থাকবা, আমি সত্যিই নাফিসা অনেক ভালোবাসি..! আমি ওরে নিয়া যামু আমার সাথে, আজকে রাতেই আমি ওরে নিয়া আসমু…!
ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আমি জানি_আমি দোয়া করি তুই জয়ী হয়ে ফিরে আসবি, আমার ভাই অবশ্যই জিতবো..!
———–
পরন্ত বিকেল_ বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে নাফিসা..! যখন শুনছে তার ভাই নাহিদকে মে*রে ফেলছে,আর মীমকে তাদের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে, নাফিসা যেন বাকহীন হয়েছে গেছে, বিচ্ছেদের ভয় তাঁর মনেও ঢুকে গেছে_তার সাথে আবার এমন হবে না তো….!
হঠাৎ পিছন থেকে মায়া হাত রাখলো নাফিসার কাঁধের উপর_নাফিসা চমকে পিছনে তাকালো..!
ভয় পেয়ো না, আমি তোমার বড়ো আপু_তোমার কী হয়েছে আমাকে সবকিছু খুলে বলতে পারো…?
নাফিসা যেন একটু ভরসা পেলো, জরিয়ে ধরলো মায়াকে, কান্না ভেজা কন্ঠে বললো..! আপু আমি একজনকে ভালবাসি,তারে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারি না_চোখের সামনে একটা ভালোবাসার বিচ্ছেদ দেখে”আমার খুব ভয় লাগতাছে_আপু আমার সাথেও এমন হইবো নাকি…?
মায়া নাফিসাকে শান্তনা দেয়_চিন্তা কইরো না, তোমার বড়ো বোন তোমায় সাথে আছে, আমি তোমাকে সাহায্য করবো_এখন আর কান্না কইরো না…!
নাফিসা চোখের পানি মুছলো,ধির কন্ঠে বললো_সেইদিনের ওই ঘটনার পর থাইকা আব্বা আমাকে আর বাড়ির বাহিরে যাইতে দেয় না, আমি আর কবীরের সাথে দেখা করতে পারি নাই, জানি না ও কেমন আছে,কী করতাছে..! আমার কিছুই ভালো লাগছে না, আমি কী করবো কিছুই বুঝতাছি না আপু.?
মায়া বললো এতো টেনশন কইরো না, আমি কাল সকালে তোমাকে বাড়ি থেকে বের হবার ব্যবস্থা করে দিবো..!
আপু সত্যি কইতাছো, আমি যে কী বইলা তোমারে ধন্যবাদ দিমু_সেই ভাষা খুঁজে পাইতাছি না..!
আরে পাগলী বড়ো আপুকে ধন্যবাদ দিতে হয় না,যা এখন ঘরে যাইয়া একটু বিশ্রাম কর…?
নাফিসা খুশিতে হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে আসলো,প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হবে সেটা ভেবেই অনেক আনন্দ হচ্ছে….!
——–
সন্ধ্যা হয়ে গেছে_’মায়া’ মীমের ঘরে আসলো..!
মীম মায়াকে দেখেই বললো যা আনতে বলছিলাম আনছো তো..!
হ্যাঁ আনছি,মায়া কাঁপা হাতে একটা রাম দা আর একটা ছুরি_কিছু দড়ি মীমের দিকে এগিয়ে দিলো…! ভয়ে ভয়ে বললো এইসব দিয়া করবা..!
মীম বললো আমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য_রক্তের অনেক প্রয়োজন, আমি দুইটা লাশ চাই লাশ…!
মায়া একটু চমকে গেলো কিন্তু কিছুই বললো না..
মীম “মায়া” কে বললো আর একটা কাজ করতে পারবা?
হুম”বলো কী করতে হবে..!
তুমি আজকের রাতে শয়তান আসিফ মন্ডল আর তাঁর ছেলের খাবারের ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিতে পারবা..!
মায়া মাথা নাড়ল পারবে…!
আচ্ছা এখন তাহলে যাও.. কাজ হয়ে গেলে আমাকে খবর দিবা..!
মায়া চলে যায়..!
————–
নাহিদ মারা গেছে দুইদিন হলো, বারেক খন্দকার এখনো পাগলের মতো বুক ভাসিয়ে কান্না করছেন ছেলের কবরে..! তার চোখে বারবার ভাসছে ছোট্ট নাহিদের সাথে কাটানো সময় গুলো, ছোট বেলায় আমি নাহিদ কে বলতাম_বাবা আমি যখন বুড়ো হয়ে যাবো, তখন তুই বড়ো হয়ে বিয়ে করে বউ পেয়ে আমাকে ভুলে যাবি না তো..! ছেলে আমার মিষ্টি হেসে বলতো, দরকার পড়লে বউ ছেড়ে দিবো, তোমাকে ছাড়বো না, তুমি আমার দুনিয়া বাবা_আমি সবসময়ই তোমার সাথে থাকবো..! আজকে তুই কোথায় বাবা এতো তাড়াতাড়ি ক্যান ছেড়ে গেলি, তোকে কবর দেবার সাথে সাথে আমার সকল স্বপ্ন গুলোকেও মাটি চাপা দিতে হলো..!
জানিস বাবা আমি অনেক বড়ো অপরাধী_আমি যদি সেইদিন তোর কথা গুলো মেনে নিতাম, আজকে আমাকে এইদিন দেখতে হতো না..! আমি বুঝেছিলাম দুনিয়ায় টাকা সবকিছু না, কিন্তু আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে বুঝতে, আমি তোকে হারিয়ে ফেললাম, এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো..!
হঠাৎ বারেক খন্দকার চোখের পানি মুছলো..! কঠিন কন্ঠে বললো_যাই হয়ে যাক,কিন্তু আমি তোর এই বলিদান বৃথা যেতে দিবো না..!
আমি সব কিছু স্বীকার করবো পুলিশের কাছে, এইসকল কাজের সাথে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করে দিবো..!
তুই আমাকে এতো বড়ো শাস্তি না দিতেও পারতি_এখন আর আইনের শাস্তি আমার কাছে কিছুই মনে হবে না..!
————-
আজকে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে, আকাশে অনেক তাঁরা ঝলমল করছে…! মীম একটা জানালা খুলে দিলো, প্রকৃতির মায়াময় সৌন্দর্য তার কাছে বিষাক্ত লাগছে..!তার মন আকাশ যে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে,এই আকাশে আর খুশির চাঁদ উঠবে না..! আর দেখা দিবে না আশার সূর্য…! কী লাভ আর বেঁচে থেকে যেখানে সকল প্রিয় মানুষ গুলোই হারিয়ে গেছে..?
মীম রাম দা হাতে নিলো, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার পরক করে নিলো_নিজেকে নিজের কাছে কেমন যেন অচেনা লাগছে…!
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো, মীম দরজা খুলে দিলো..!
মায়া বললো, ঘুমের ঔষধ মিশানো। খাবার ওঁরা খেয়ে নিয়েছে…!
মীমের মুখে বিষাদের হাসি, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা.. প্রিয়তম সব আগছা পরিষ্কার করে_আপনার কাছে খুব তাড়াতাড়ি আসবো_একটু অপেক্ষা করুন…!
চলবে…!