#পর্ব_২৬
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
গভীর রাত”হঠাৎ বায়জিদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চারদিকে তাকিয়ে কবীরকে খুঁজলো_কিন্তু কবীরকে কোথাও দেখতে পেলো না…!
বায়জিদ মনে মনে ভয় পেলো,যা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই হয়েছে..! কতোবার নিষেধ করলাম রাতে বাহিয়ে যাস না_কে শুনে কার কথা..! কখনো আমার একটা কথা কানে নিলো না..? এখন যদি কোন বিপদ হয়_ কবীর মনে হয় মন্ডল বাড়িতে গেছে..!
বায়জিদ আর দেরি করলো না,রওনা দিলো মন্ডল বাড়ির দিকে..!
মাঝ রাত, হালকা বাতাস বইছে, হারিকেনের মৃদু আলো_এই নিঝুম প্রহরে নাফিসা কবীরের কাঁধে হেলাল দিয়ে বসে আছে ছাদের উপর..!
তুমি কি বাড়ি যাইবা না, তোমার ভাই তো চিন্তা করবো,সারা রাত এইভাবে থাকবা নাকি..!
নাফু আমার কেমন জানি ভয় লাগতাছে, হয়তোবা কিছু হতে চলছে..! তোমারে হারাই ফেলমু না তো, তুমি আমাকে ছাইড়া যাবা তো…?
নাফিসা কবীরের দিকে ঘুরে বসলো, মুচকি হেসে বললো,আরে কী সব ভাবো” কিছু হইবো না..! আমি তোমাকে কোনো সময় ছাড়তে পারমু না, প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমারে অনুভব করি, কল্পনায় সারাক্ষণ তোমার বসবাস_কল্পনাতেও আমি তোমার থেকে দূরে যাইতে পারি না, বাস্তবে কেমনে দূরে যামু..!
কবীর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো_মাথায় হাত দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো ছাদের উপর..! হারিকেনের মৃদু আলোতে নাফিসা খেয়াল করলো কবীরের চোখে পানি..! নাফিসার মনেও একটু ভয় ঢুকে গেলো সত্যি কিছু হতে চলছে নাকি..! নাফিসা নিজেকে শান্ত করলো…!
আচ্ছা তোমার চোখে পানি ক্যান তুমি কি কান্না করতাছো..!
কোই আমার চোখে পানি, আমি কান্না করি না..?
মিথ্যা বইলো না, আমি তোমার চোখে পানি দেখছি..!
জানো নাফু ছোট বেলায় ভাইয়ের কাছে একটা কথা শুনছিলাম, সামনে যদি কোন বিপদ থাকে,চোখ নাকি ওইটা জানতে পারে,তাই নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে,চোখ কান্না করে_আমি করি না..!
নাফিসা কবীরের দিকে ঝুঁকে বসলো, আলতো করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো_এই যে শুনছেন কবি সাহেব_এই দুই চোখে লোনা পানি নয়, ভালোবাসার নেশাক্ত চাহনি দেখতে চাই..! এই মুখে ভয়ের কথা নয়,প্রনয়ের কবিতা শুনতে চাই…!
কবীর মুচকি হাসলো_নাফিসা কবীরের বুকে মাথা রেখে..! জোরে একটা হাসি দিলো..!
আরে নাফু এতো জোরে হাসো ক্যান তোমারে ভূত ধরছে নাকি_আমি কিন্তু ভূতে ভয় পাই, তোমারে ভূত ধরলে আমারে ছাড়ো_কবিরাজ ডেকে আনি হা হা হা..!
নাফিসা কবীরের বুকে মৃদু একটা কিল মা’রলো..!
হায় হায় আমাকে আবার মা”র’তাছো_সত্যি ভূত ধরছে মনে হয়..
নাফিসা বললো,হ্যাঁ ভূত ধরছে তো প্রেমের ভূত, আমাকে প্রেম রোগে ধরছে_এখন ভালো করার একমাত্র কবিরাজ আপনি…!
কবি থেকে কবিরাজ করে দিলাম হা হা হা…!
আমার শুনতে ভালো লাগে তোমার স্পন্দিত হ্নিদয়ের আওয়াজ_তাইতো তোমার বুকে মাথা রেখে হারিয়ে যাই অন্য জগতে..! চলো না এই নরক পুরী থাইকা দূরে কোথাও চলে যাই..! যেখানে থাকবে শুধু ভালোবাসা..!
কবীর নাফিসা কে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো_মাথায় একটা আলতো কিস করে বললো..!
আমার সাথে যাইতে চাও_থাকবা কোই,কী খাবা..?
শুধু ভালোবাসা দিয়া কি পেট ভরে..!
আল্লাহ তো একটা ব্যবস্থা করে দিবো, তুমি এতো চিন্তা করো ক্যান_তোমার সাথে আমি গাছ তলায় ঘর বেঁধে থাকতে পারমু” শুধু তোমার কাছে আবদার তোমার বুকটা আমার জন্য বালিশ করে দিয়ো, আমি স্বর্গের সুখ নিয়ে জীবন কাটাতে পারমু..! শুধু এইভাবে সারাজীবন বুকে জড়িয়ে রাইখো, তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই…!
এই নিঝুম অন্ধকার রাতে, হারিকেনের মৃদু আলোতে_স্বাক্ষী রাখলাম এই ধরনীকে” যদি কখনো প্রনয়ের কাঠ গড়ায়, আমাকে অপরাধি ঘোষণা করা হয়_সেইদিনও বলবো আমি ভালোবাসি শুধু যে তোমায়..!
আসুক না মরণ রাখবো জীবন বাজি..! তোমার সাথে আজীবন থাকার ইচ্ছায়_করবো খোদার কাছে প্রাণ ভরে আকুতি..! আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি মায়াবতী..!
আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি প্রিয়তম..
খোলা আকাশের নিচে দুইজন রাত পার করে দিলো, কবীরের বুকে মাথা রেখে নাফিসা ঘুমিয়ে গেছে..! কবীর তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,কতো ভাবনায় বিভোর_চোখের ঘুম উড়ে গেছে…!
———–
ভোরের আলো ফুটতে এখনো কিছু সময় বাকি..!
হঠাৎ আসিফ মন্ডলের ঘরের দরজা টা খুলে গেলো..?
রক্তে স্নান করা দেহ নিয়ে হাতে রাম দা_ ঘরে প্রবেশ করলো মীম..! তাঁকে দেখতে এক প্রকার রাক্ষসির মতোই লাগছে,সারা শরীরে রক্তের দাগ_অনেক ভয়ংকর লাগছে দেখতে…!
মীম দেখলো আসিফ মন্ডল বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে_মুখের দিকে তাকিয়ে মীমের শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো..!
ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে আসিফ মন্ডলের আছে একটা শয়তানি চেহারা..! গাছের গোড়া কেটে দিয়ে আগায় পানি দেওয়া যার স্বভাব..!
সমাজের আগছা নামক সন্ত্রাসী গুলো তার হাতেই তৈরি..তাই তারও আর বেঁচে থেকে আগাছা বাড়ানোর কোনো দরকার নেই..!
মীম এক কোপে আসিফ মন্ডলের মাথাটা দেহ থেকে আলাদা করে দিলো.! মাথাটা ছিটকে দূরে পড়ে গেছো, দেহটা কাঁপছে অনবরত..! মীম বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে..!
মীম কে” যে ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল,সেই ঘরে গিয়ে মীম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে_প্রতিজ্ঞা পূরণ করা হয়ে গেছে..! এখন শুধু একটা ওয়াদা পূরণ করা বাকি_প্রিয়তম অপেক্ষা করছেন_ আমাকে যেতে হবে তাড়াতাড়ি..!
আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ, কিন্তু আমার সাথে সারাজীবন অন্যায় করা হয়েছে_সারাজীবন যে কষ্টের নদীতে ভেসে বাড়িয়েছি, এখন মুক্ত হবার পালা_বিদায়ের সময় সামান্য কষ্ট আমার কাছে ক্ষুদ্র বটে, আমি কথা দিয়েছি প্রিয়তমকে খুব তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে আসবো_সেই সময়টা এসে গেছে..!
আজকে আমাদের দেখা হবে, আমিও পাড়ি দিচ্ছি ওই পাড়ে..! অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে..! এখন আমার বিদায়ের পালা..!
ঠোঁটের কোনে রহস্যময় মুচকি রেখে_হঠাৎ মীম আয়নায় ঘুষি মারলো, আয়না ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো..! ভাঙ্গা এক টুকরো কাঁচ তুলে নিলো হাতে দুনিয়া তার কাছে বিষাক্ত_এখন মুক্তি দরকার..!
হঠাৎ করেই কাঁচের টুকরো টা ঢুকিয়ে দিলো গলায়..!
———
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে কবীর চমকে উঠলো, এতো রাতে কী হলো, নাফিসা কে বুক থেকে নামিয়ে রেখে সিড়ি বেয়ে নেমে আসলো নিচতলায়,কোনার ঘরে আলো জ্বলছে_ঘরের দরজায় গিয়েই কবীর হতবাক হয়ে গেলো, মীম মাটিতে পড়ে ছটফট করছে…
কবীর দৌড়ে গেলো গলা থেকে কাঁচের টুকরো বের করতেই মীমের দেহটা নিথর হয়ে গেলো..! কবীর চিৎকার করে উঠলো তুমি এটা কী করলে আপু, এমন করার কী খুব দরকার ছিল_নিয়তি ক্যান এমন করে আমাদের সাথে…!
কবীরের চিৎকারে মায়া ছুটে আসলো পাশের ঘর থেকে,নাফিসার ঘুম ভেঙ্গে গেলো_খুঁজতে লাগলো কবীরকে…!
মায়া এসে বলতে শুরু করলো, তুমি মে*রে ফেলছো মীম কে..?ক্যান মারলে তাকে..!
বায়জিদ এসে হাজির মন্ডল বাড়িতে_সবার চিল্লাচিল্লি শুনে ছুটে আসলো সেই ঘরে..!
কবীর তুই এটা করতে পারলি, একবার আমার কথা চিন্তা করলি না..?ক্যান এমন করলি..?
ভাই আমি খু*ন করি নাই_আমি খু*নি না, বিশ্বাস করো আমি খু*নি না..!
বায়জিদ চুপ করে আছে, কিছু বলছে না..!
পিছনে নাফিসা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবীর তার কাছে গেছে,নাফু তুমি তো বিশ্বাস করো আমাকে, তুমি বলো আমি খু*নি না,চুপ করে আছো ক্যান বলো..!
তখনো কবীরের হাতে কাঁচের টুকরো টা ছিলো..!
কবীরের যেন হুস হলো, চমকে উঠে কাঁচের টুকরো টা ফেলে দিলো..!
নাফিসা মলিন মুখে বললো_তুমিই খু*নি…?
কবীর নাফিসার মুখে এই কথাটা শুনার পর তার মনে হলো পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে, আকাশ তার মাথায় ভেঙ্গে পড়ছে..!
ঠোঁটের কোনে কষ্টের হাঁসি নিয়ে_কবীর বললো আমি খু*নি শাস্তি দেন আমারে…!
কবীর তাকিয়ে দেখলো, জানালার পিছনে আবছা ছায়া তাকে দেখেই হুট করে সরে গেলো…!
চলবে…..