গ্যাংস্টার_লাভ পার্ট_২৪(রহস্য উন্মোচন)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
রেহান নিজেকে ঠিক করে বলতে শুরু করলো
রেহান : আব্বু তাড়াতাড়ি বাসায় আসে। রিহার সাথে খেলছিল আব্বু আর রিহার আম্মু । আর দাদু নিজের ঘরে ছিল তখনই হটাৎ কেউ জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দেয়। রিহার আম্মু খুলতে গেলে কিছু লোক রিহার আম্মুর মাথায় গান ঠেকায় রিহার আম্মু চিৎকার করতে গেলে মুখ চেপে ধরে ভিতরে যায় । রিহার ঘর ছিল কাচের ভিতর থেকে সব দেকা যাবে কিন্ত বাইরে থেকে কিছু দেখা যাবে না । আমার আম্মু লোকগুলোকে দেখে তাড়াতাড়ি রিহা কে রেখে দরজা আটকিয়ে বাইরে লোকগুলোর কাছে যায় ।
রেহান এর আব্বু : এই তোমরা কারা আর ভাবীকে ওভাবে ধরে রাখছ কেনো ছার আমি পুলিশে ফোন করছি
কথাটা বলতে দেরি কিন্ত ওদের সুট করতে দেরি না রিহা ভিতর থেকে সব দেখছিল । বাড়িটা ফাঁকা জায়গায় ছিল বলে আশেপাশে তেমন বাসা ছিল না।
লোকগুলো আমাদের বাড়ির সব টাকা গহনা নিয়ে যায় আমার দাদুর ঘরে ও গিয়ে দাদুকে খুন করে । রিহার আম্মু ছটপট করছিলো তাই রিহার আম্মু কে মেরে ফেলে । সব কিছু নিয়ে যাওয়ার সময় সব ঘর ভালো করে দেখিলো কেউ আছে কি না রিহার ঘরের দরজা বাইরে থেকে দেওয়া ছিল বলে ওরা যেতে গিয়ে ও যাইনি কারণ পুলিশের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল আমার আব্বু রুম থেকে বের হবার আগে ফোন করে সেই জন্য ওরা চলে আসে কিন্ত শেষ রক্ষা করতে পারেনি । অমানুষ গুলো আমার পরিবার কে মেরে ও শান্তি হইনি রিহার আম্মুর দিকে ওদের নজর যায় আর রিহার আম্মুর সাথে
কথাটা বলতে গিয়ে রেহান কেদে উঠে অনি ওর কাঁধে হাত দেয়। রেহান আবার বলতে শুরু করে
রেহান : জানিস যখন পুলিশ যায় তখন সব শেষ কিন্ত আমার আব্বুর সেন্স ছিল পুলিশ আমার আব্বুর বন্ধু ছিল । আমার আব্বু পুলিশকে ডেকে রিহার কথা বলতে বলতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে
আমার ছোট্ট রিহা ঘর থেকে সব দেখেছে ওই টুকু বয়সে ও নিতে পারেনি । ছোটো থেকে ও ভয় পেলে খাটের নিচে চলে যায় সেদিন ও দরজা আটকিয়ে খাটের নিচে চলে যায় সবাই অনেক চেষ্টা করছে কিন্ত ওকে আনতে পারেনি রিহার একটা কথা আমাকে মেরো না আমাকে মেরো না
পরেরদিন সকালে যখন আমি আম্মু আর রিহার আব্বু যাই গিয়ে দেখি সব শেষ । নিজের দাদু আব্বুর নিথর দেহ পরে থাকতে দেখছি চিৎকার করে ও কাদতে পারিনি কেননা আমি ছেলে আম্মু প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল রিহার আব্বু ও নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিল না তখন পুলিশ রিহার কথা জানলে রিহার আব্বু ছুটে যায় অনেক চেষ্টা করে ও ওকে বের করতে পারেনি শেষে আমি যাই আমাকে ও ছোটোবেলা থেকে অনেক ভালোবাসে আমার সব কথা শুনত আমি বলার পর ও বেরিয়ে আসে। সেদিন ও আমাকে বলেছিল
রিহা : ওরা খুব দুষ্টু সবাই যে মেরে দিচ্ছে তুমি ওদের শাস্তি দিবে নাহলে আমি বাঁচবো না
কথাটা বলতে বলতে রিহা সেন্স হারায়। সেদিন ওকে ছুয়ে বলেছিলাম আমি সবাইকে শাস্তি দেবো কাউকে ছাড়বো না। আমার পরিবারে উপর দিয়ে এতো সব ঝড় গেলো সব যেনো স্বপ্নের মত লাগছিল কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন আমি বেশি বড়ো না ১২বছর বয়স ।
নিজের হাতে আব্বু দাদু আমার মামনির সব কাজ শেষ করে বাসায় এসে চুপ করে থাকি আম্মুর অবস্থা তেমন ভালো ছিল না আর রিহা সে তো সেন্স হচ্ছে বার বার একবার সেন্স ফিরলে শুধু বলছে আমাকে মেরো না আমাকে মেরো না ।নিজের আম্মু এই অবস্থায় আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না
রিহার ওমন ব্যাবহারে রিহাকে হসপিটালে ভর্তি করে রিহা আস্তে আস্তে অসুস্থ় হতে থাকে। ডক্টর অনেক চেষ্টা করে কিন্ত কিছু করতে পারেনি কারণ ওই টুকু বাচ্চা ওতো সব নিতে পারেনি যখন আমার আম্মু নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি তখন রিহা কি করে পারবে । রিহার আব্বু ওকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায় । আমরা ও ওই বাসা ছেড়ে দি আস্তে আস্তে আমি বড় হই রিহা ও সুস্থ হয়ে উঠে কিন্ত ওর আগের কথা কিছু মনে নেই । আর ওর মাথার উপর চাপ পরলে ও হইতো কোমায় চলে যেতে পারে।
রেহান এবার জোরে কেদে উঠে । অনি কে জড়িয়ে ধরে
রেহান : আমি রিহাকে হারাতে চাই না কিছুতেই না আমার ছোট্ট রিহা কত কষ্ট সহ্য করছে আমি চাইলে ও যেতে পারতাম না এতো বছর রিহার থেকে দূরে থেকেছি শুধু নিজেকে গড়ে তুলবো বলে কিন্ত দিন শেষে ওকে দেখার জন্য মন ছটপট করতো রিহার আব্বুর কাছে আমি রিহার খোজ নিতাম । একদিন রিহার আব্বু ফোন করে বলে রিহা আবার আগের মত হয়ে যাচ্ছে কারণ রিহার সৎ মা মানে যাকে রিহা সৎ মা হিসেবে জানতো তাকে রিহা মেনে নিতে পারছে না তাই আমি রিহাকে বিয়ে করি
অনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
অনি : ওসব দিন গুলি মনে করে কোনো লাভ নেই শুধু কষ্ট হবে
রেহান : সব কিছুর পর ও আমি সেই লোকগুলোকে পেলাম না কিন্ত আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো
অনি :আমি তোর পাশে সব সময় আছি এখন তুই এসব কান্না বন্ধ কর তেমন যেনো রিহা রিহা মনে হচ্ছে
রেহান হেসে দেয়
রেহান: আমার রিহা কিন্ত কাদে না
অনি : ঠোঁট তো উল্টিয়ে তো থাকে
রেহান : সেটা তো ওর স্বভাব
রেহান কিছু একটা ভেবে অনিকে জড়িয়ে ধরে
রেহান : ধন্যবাদ তোরা না থাকলে আমি এতো দূর আসতে পেতাম না
অনি : সালা আমি তোর বন্ধু তুই তো আপন ভাবিস না
রেহান : না ভাবলে এই বছর এর কান্না আজ বেরিয়ে আসে
তখনই রেহান এর ফোন বেজে উঠে
অনি : এই ফোন কে চুপ করা সেই থেকে বেজে যাচ্ছে
রেহান : এতো রাতে কে ফোন করলো ?
রেহান ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিহা ফোন করছে
রেহান : এতো রাতে রিহা ফোন করছে কেনো ?
রেহান ফোন ধরে বলে।
রেহান : হা রিহা
রুশ : ভাইয়া আমি রিহা না
রেহান : ওহ তুমি কি অবস্থা কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো
রুশ : না ভাইয়া আসলে অনিকে ফোন দিচ্ছি কিন্ত ধরছে না তাই রিহার ফোন দিয়ে দিলাম
রেহান : আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিচ্ছি
রেহান অনির আছে গিয়ে ফোন দেয়
অনি : কে ?
রেহান : দেখ
অনি ফোন ধরতেই ঝাড়ি
অনি তো মনে মনে রেহান কে গালি দিচ্ছে । রেহান বেচারা কি করতে এসে শুয়ে পরলো আজ ওর মন খুব খারাপ আর এই সময় ওর রিহাকে চাই ।
রেহান কপালে হাত দিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পরে নিজেও জানে না । অনির ডাকে চোখ মেলে তাকায়
রেহান : কিহলো ?
অনি : তোর ফোন সালা এতক্ষণ ঝাড়ি খেতে হলো ।
রেহান : কি বলছে?
অনি : কখন আসবো তাই
রেহান : চল এখন বেরিয়ে পরি এটাই ঠিক হবে
অনি : কি তুই পাগল হলি
রেহান : দেখ ওদের দেখে মনে হচ্ছে না এতো সহজে মুখ খুলবে তাই ফাউ এখানে থেকে কি হবে আর অফিসের কাজ বাসায় করবো আর এখন লকডাউন দেরি করা ঠিক হবে না রিহার জন্য মন কেমন করছে ।
অনি : ওরে রিহার মজনু এখন ৪টা বাজে
রেহান: so what এখন বের হলে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাবে তুই পেকিং করে নে
রেহান এর জোরাজুরিতে অনিকে যেতেই হলো রেডী হয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো ।
সকালে
রিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশে কেউ নেই রিহা উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। দেখে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে
রিহা : ওই আমাকে ডাকলি না কেনো ?
রুশ : তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই
রাইসা : রিহা মা আসো খাবার খাবে চলো
মাইসা চৌধুরী : তুই থাক আমি যাচ্ছি
রাইসা খান: সারাজীবন তো তুই খাওয়াবি আজ আমি না হয় খাওয়াই রিহা আমার সাথে আসো
রিহা ওর মামনির দিকে একবার তাকিয়ে খেতে গেলো। আজ রিহা দেরি করে উঠছে তাই সবাই খেয়ে নিচ্ছে
রিহা খাচ্ছে আর রাইসা খান খাবার দিচ্ছে
রিহা : আন্টি আমি আর খেতে পারবো না
রাইসা : কোনো কথা না খেতে বলছি
অনেক জোরাজুরিতে রিহা খাচ্ছে
রাইসা খান : রিহা রেহান কি তোমাকে নিজে থেকে বিয়ে করছে নাকি ওর আম্মু বলেছে তাই
রিহা : নিজে থেকে
রাইসা : এটা কি করে হয় (অবাক হয়ে)
রিহা : কেনো কোনো সমস্যা ?
রাইসা : না আসলে তেমন কিছু না
রিহা : বলতে পারেন (খেতে খেতে)
রাইসা খান এর কথা শুনে রিহার মন খুব খারাপ হয়ে গেলো।
চলবে