#উমা [কপি করা নিষেধ]
৩৬তম_পর্ব
মকবুলের হাতে অবস্থিত লাঠির প্রবল আঘাতে ধপ করে বসে পড়ে উমা। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসে হাত থেকে। বা হাত দিয়ে ডান হাত চেপে ধরে উমা। তখনই এক জোড়া হাত মকবুলের কলার টেনে ধরে তাকে ছিটকে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় মকবুল হতবিহ্বল হয়ে যায়। মেঝে বসে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে তাকে সামনে দাঁড়ানো হৃষ্টপুষ্ট মানবের পানে। রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। ললাটের শিরা উঁচিয়ে আছে। তীব্র চাহনীতে গলা শুকিয়ে আসে মকবুলের। শুকনো ঢোক গিলে শুকনো গলায় বলে,
“রুদ্র বাবু, আপনি?”
রুদ্র এখনো তীর্যক ভয়ংকর চাহনীতে তাকিয়ে আছে। উমা নিজের সামনে রুদ্রকে দেখে কিছুটা চমকে গেলো। রুদ্রের এখানে আসার কথা নয়, মানুষটি এতোটাই ব্যাস্ত থাকে যে তার সময়টা পাওয়াটা আকাশে চাঁদ পাবার মতো হয়েছে। এই ঢাকা যাচ্ছে, এই মংলা যাচ্ছে। সরকারী বিভিন্ন প্রজেক্টের সাথে সে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, ধরনী কল্যান সংগঠনের বিভিন্ন কাজেও সে ব্যাস্ত থাকে। বিভিন্ন ঋণ এবং বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপারে তাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। অতিসদ্য, ডা.ইউনুস নোবেল পাবার পর এই ক্ষুদ্র ব্যাংকের প্রচার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সিডরের জন্য সাতক্ষীরার সকল বৈদেশিক ত্রাণ এবং যাবতীয় সাহায্য এর জন্য রুদ্র অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলো। তাই রুদ্রের ফাঁকা সময় রাত দশটার পর। কিন্তু এই সময়ে তাকে সংগঠনের অফিসে দেখবে কল্পনাও করে নি উমা। রুদ্র দৃষ্টি সরিয়ে উমার দিকে চাইলো। উমা সাথে সাথে মাথা নত করে নিলো। রুদ্র তাকে বারংবার মানা করেছিলো বাড়ি থেকে বের হতে। কিন্তু উমা কথা শুনে নি। অসুস্থ শরীরে এখানে এসে বসে রয়েছে। রুদ্র তাকে আলতো হাতের বেষ্টনীতে নিলো। মাটিতে থেকে তুলে শান্ত নজরে তাকালো তার ফুলে উঠা হাতের দিকে। চামড়া চিরে গেছে লাঠির সজোরে আঘাতে। হাতের চারপাশটা কালো হয়ে গিয়েছে। ফুলে উঠেছে কনুই এর অংশটি। রুদ্রের মুখোভাব বদলালো না। সে এখনো শান্ত নজরেই তাকিয়ে আছে। মকবুল কাঁপা স্বরে নিজের সাফাই গাইতে উদ্ধত হলো,
“রুদ্র দা, আমি ইচ্ছে করে করি নি। দোষ খানা উমার ছিলো। ওই আমার বউ বাচ্চারে আটকায়ে রাখছে। আমি তো অফিস ভাঙ্গবার চাইছি। কে বলছে ওকে সামনে আসতে।”
মকবুলের কথায় মুখ খিঁচে এলো রুদ্রের তড়িৎ গতিতে মকবুলের কাছে গিয়ে তার গলা টিপে দেয়ালে ঠেসে ধরলো সে। হাতের শিরা ফুলে উঠেছে তার। রোষাগ্নির আচে ঝলসে যাবে হয়তো মকবুল। রুদ্রের এমন কাজে সবাই থেমে গেলো। রুদ্রের লোকেরা ঘেরাও দিলো সংগঠন। পুলিশে খবর ও দিলো করিম। মকবুলের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে রুদ্র বললো,
“অতিরিক্ত কথা বলা মানুষকে আমার অপছন্দ। চোরের মার বড় গলা—-কথাটা শুনেছিস? একেই তো তুই আমার অফিস ভাঙ্গতে এসেছিস, শুধু তাতে থেমে থাকিস না৷ আমার বউকে আহত করেছিস। আমি যদি তোকে মেরে কবর দিয়ে দেই, এখানে কেউ আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। আর যে পুরুষ বউ পেটায় সে হয় কাপুরুষ। কাপুরুষের শাস্তি মৃত্যু শুধু মৃত্যু।”
রুদ্রের বল বাড়লো। ক্ষোভে তার চোখ লাল হয়ে আছে, মাথা ঝিমঝিম করছে, শরীর ঈষৎ কাঁপছে। মকবুলের মুখ নীলচে হয়ে এলো, চোখ উল্টিয়ে ফেললো। এদিকে কেউ রুদ্রকে কিছু বলতেও পারছে না। তার সাথে অন্তত বিশজন এসেছে। পুলিশ ও এসে পড়বে এখনি। উমা পরিস্থিতির অধপতনে ঘাবড়ে যায়। সত্যি যদি মকবুলের কিছু হয়ে যায়। লোকটির অবস্থা সূচনীয়। উমা ছুটে এসে রুদ্রকে থামাতে চায়। ব্যাগ্র কন্ঠে বলে,
“উনাকে ছেড়ে দেন, মানুষটা মারা যাবে ছেড়ে দেন। কথাটা শুনুন আমার। ছাড়ুন উনাকে।”
রুদ্র অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো উমার পানে। উমা ঈষৎ কেঁপে উঠলো রুদ্রের রৌদ্রবতারে। কিন্তু পিছিয়ে পড়লো না। নিজের স্বামীর হাতে কোনো অন্যায় হতে দিবে না সে। কাতর চোখে বললো,
“ছেড়ে দিন, মরে যাবে৷ চুছো মেরে হাত নষ্ট কেনো করছেন?”
রুদ্র এবার খানিকটা দমলো। ছেড়ে দিলো মকবুলের গলা। মকবুল জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকলো। গলা ধরে কাশতে থাকলো। নিজেকে স্বাভাবিক করতে সময় লাগলো তার৷ গলায় রুদ্রের হাতের ছাপ পড়ে গেছে। রুদ্র কড়া কন্ঠে বললো,
“এবার জানে মারলাম না৷ নিজের দলবল নিয়ে চলে যা। যদি মানুষের মতো মানুষ হতে পারিস তবেই শিল্পীর দিকে হাত বাড়াবি। যা”
লোকেরা মকবুলকে বহু কষ্টে দাঁড় করালো। নিয়ে গেলো ধরাধরি করে। মকবুল চলে গেলে, উমার দিকে তাকায় রুদ্র। শীতল কন্ঠে বলে,
“বাড়ি কি যাবে? নাকি এখানে থাকবে”
উমা মাথা নাড়ালো, সে বাড়ি যাবে। রুদ্র তাকে জিপে উঠতে বললো৷ উমা বাধ্য মেয়ের মতো জিপে উঠে। রুদ্র শাবীব এবং রক্তিমকে ডেকে বলে,
“মকবুল যেনো কাল ভোরের আলো না দেখতে পারে”
রুদ্রের শীতল বক্তব্যে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় তারা। তারা ভেবেছিল রুদ্র মকবুলকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু এখন বলে হচ্ছে সেটা হয় নি। রুদ্র যেতে ধরলে একটু থামে, হিনহিনে স্বরে বলে,
“যমের দোয়ারে পাঠাবি না, তাহলেই হবে।”
বলেই হনহন করে জিপের দিকে চলে যায় রুদ্র। শাবীব এবং রক্তিম মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। রুদ্র যেনো এই চারবছরে আরোও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে। কাউকে ক্ষমাও করা যায় এটা যেনো তার মস্তিষ্ক জানেই না।
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে রাত আটটা বেজে যায়। সারাটা রাস্তা একটি কথাও বলে নি রুদ্র। উমা মনে মনে ভগবানকে ডাকতে লাগলো। যেনো কোনো ভাবে রুদ্রের রোষানল থেকে মুক্তি পায় সে৷ এই লোকটা যত দিন যাচ্ছে তত যেনো রাগী হয়ে উঠছে। আর এখন রাগটি অন্যভাবে দেখায় সে। কোনো ভাঙ্গচুর নেই, কোনো শোরগোল নেই৷ শুধু গম্ভীর মুখে, শিরা ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত করে বসে থাকবে। একটি বাক্য উচ্চারণ করবে না। এতে উমার চিন্তা দ্বিগুন হয়। জিপ থামতেই উমাকে ব্যাতীত নেমে যায় রুদ্র। হনহন করে চলে যায় বাড়ির ভেতরে। ভেতরে যেয়ে তীব্র স্বরে হাক দেয়,
“মিনু? মিনু? ঔষধের বাক্স খানা আনো দেখি”
উমার হাজারো সাহস যেনো নিমিষেই উড়ে যায়। রুদ্রের সামনে তার সাহসের পাখিটা উড়াল দেয় আকাশপানে। রুদ্র শীতল স্বরে বলে,
“সোফায় বসো”
“আসলে, শিউলি আপা ফোন করেছিলো। শিল্পী আপার অবস্থা শুনে বসে থাকার জো ছিলো না”
“আমি কি সাফাই চেয়েছি?”
রুদ্রের শীতল কন্ঠে দমে যায় উমা। ততক্ষনে বাক্স নিয়ে আসে মিনু। রুদ্র উমার পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে হাতটায় মলম লাগিয়ে দেয়। সে বাসায় ফোন করেছিলো উমার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে। মিনু ফোন টি ধরে। সেই তাকে বলে উমার অফিসে যাবার কথাটা। রুদ্রের মেজাজ তখন থেকেই বিগড়েছে। মেয়েটা তার কথা শুনতে চায় না। শুধু ছুট ছুট স্বভাব। এতো অবাধ্য হয়েছে মেয়েটি বলার মতো না। রুদ্র মনোযোগ দিয়ে উমার হাতে মলম লাগিয়ে দেয়। উমা কিছু বলার আগেই সে উঠে নিজের কাজের ঘরে চলে যায়। রুদ্রের এমন আচারণ এই প্রথম নয়। রুদ্র উমার উপর রাগ দেখাতে পারে না। তাই সে চুপ হয়ে থাকে। এখন কাজের ঘরে একের পর এক সিগারেট টানবে সে। এটাই তার স্বভাব হয়ে গিয়েছে। উমার মন খানিকটা খারাপ হয়ে যায় রুদ্রের উঠে চলে যাওয়াতে।
হাতের ফাঁকে সিগারেট জ্বালালো রুদ্র। সুখটান দিতে যাবে তখন ই ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের নাম্বারটা অচেনা। অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হয় তার। ফোনটি রিসিভ করতেই মুখোভাব বদলে যায় রুদ্রের। হিনহিনে স্বরে বলে,
………….
চলবে
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাতে পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ]
মুশফিকা রহমান মৈথি
৩৫তম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/437274381327673/