#শেষটাও_সুন্দর_হয়
#নতুন_করে_সূচনা
#আমিনা_আফরোজ
#পর্ব:-০৫
গতকাল নিদ্র ভাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙল অহনার ডাকে। এতক্ষনে সূর্য্যি মামা তার সোনালী আভা ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর কোনায় কোনায়। বিছানায় ওঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবে ৯ টা বেজে কুড়ি মিনিট। কটমট দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকাতেই অহনা বলে ওঠল,
–” দেখ রাক্ষসী রানী কটকটির মতো করে আমার দিকে তাকাবি না। আমি তো আর কিরনমালা নই যে তোকে আটকাবো। আমি হলাম সাধারন এক মেয়ে। ”
–” ফালতু বকা বন্ধ করে বল এতো সকালে ডেকে ওঠালি কেন? এই তোকে না বলেছি যে কয়েকদিন আছে তুই আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবি না।”
–” আমি কি আর সাধে তোকে ডেকেছি নাকি। ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখ তোর মি. ট্রেনওয়ালা ক্যাবলাকান্ত এসেছেন।”
নিদ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমার ঘুম ততক্ষণে উধাও হয়ে গেছে। চোখ বড় বড় করে বললাম,
–” বলিস কি রে? এত সকালে আমাদের বাড়িতে কেন এসেছে?”
–” আমি কি জানি। ”
–” হয়তো বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে।”
–” হতে পারে । তবে তোর মি.ট্রেনওয়ালা ক্যাবলাকান্তের সাথে ওর বাবা-মাও এসেছে। তুই যেন তাদের কি বলে ডাকতিস?”
–” সোনা মা ,সোনা বাবাই এসেছে।”
–” হ্যা হ্যা মনে পড়েছে তোর…..আরে এভাবে উল্লুকের মতো দৌড়িয়ে যাচ্ছিস কোথায়? শোন তো । ফ্রেশ তো হয়ে যা।”
কে শোনে কার কথা। সোনা মা আর সোনা বাবাই এর আসার কথা শুনেই আমি দৌড় দিয়েছি ঘর থেকে। অহনার বাকি কথাগুলো আর কানে আসে নি আমার। আসে নি বললে ভুল হবে, আসল কথা কানে তুলি নি আমি। আমি যখন ড্রয়িং রুমে গিয়ে পৌঁছায় তখন সোনা মা আর সোনা বাবাই সোফায় বসে সবার সাথে হেসে হেসে গল্প করছিলেন। নিদ্র ভাই ওনাদের পাশে ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ বসে ছিলেন। সোনা মা ই আমাকে প্রথম দেখতে পেল। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলে ওঠলেন,
–” আরে অদ্রি মা ঐখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এদিকে আয়। ভালো করে দেখি তোকে। ইস কত বড় হয়ে গেছিস তুই?”
আমি হাঁটি হাঁটি পায়ে সোনা মায়ের পাশে বসে অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠলাম,
–” এতদিন পর বুঝি আমার কথা মনে পড়ল তোমার সোনা মা। সোনা বাবাই আমি তোমার আর সোনা মা দুইজনের ওপরেই রাগ করেছি। সেই যে কবে একবার কথা বলেছিলে তারপর আর যোগাযোগ করলে না। কেন গো? আমার কথা বুঝি মনে পড়ে নি তোমাদের?”
আমার কথা শুনে সোনা মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
–” আর বলিস না তখন এক বিপদে পড়েছিলাম। বিপদটা বেরোতে বেরোতে এতটা সময় নিল যে তোদেরকে হারিয়ে ফেললাম আর খুঁজেই পেলাম না।”
–” আহা ভাবী এসব কথা থাক এখন। বিপদ কেটে গেছে এইটাই অনেক। তো আমাদের নিদ্র এখন কি করে?”
–” আংঙ্কেল আমি এবার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করছি। সেই সাথে মাঝে মাঝে লেখালেখি করি আর কি।”
–” বাহ বাহ বাহ। বেশ ভালো। তবে আমি কিন্তু ভাবতেই পারি নি যে আমাদের নিদ্র কোন দিন লেখক হবে।”
বাবার কথায় সোনা বাবাই হেসে বলে ওঠলেন,
–” তা ঠিক বলেছেন । এই রেনু বলছি অদ্রি তো এসেই গেছে ,বাকি কাজটা সেরে ফেলো তো দেখি। আমার যে আর তর সইছে না।”
–” কি কাজ সোনা বাবাই?”
আমার কথা শুনে সোনা মা হেসে বললেন,
–” তোকে চির দিনের মতো আমাদের কাছে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছি রে পাগলি?”
–” মানে?”
সোনা মা আমার কথায় হেসে ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলেন। অতঃপর বক্স খুলে তার ভেতর থেকে একটা আংটি হাতে নিয়ে আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,
–” তোকে আমার ঘরের লক্ষী করে নিতে চাই। কি রে আমার পাগল ছেলেটাকে আপন করে নিবি তো?”
আমি সোনা মায়ের কথা শুনে লজ্জায় নিচে তাকালাম। আমাকে লজ্জা পেতে দেখে সোনা মা বললেন,
–” আরে আরে মেয়ে দেখো লজ্জা পাচ্ছে। থাক এখনি এতো লজ্জা পেতে হবে না। আপনাদের বিয়ের এখনো অনেক দেরি আছে। আগে আপনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো একটা কলেজে চান্স পান তারপর বিয়ে । ভাইজান আপনারা কি বলেন?”
–” আমরা আর কি বলবো। আপনারা যা ভালো বুঝেন।”
–” তাহলে ঐ কথায় রইল । আমাদের অদ্রি মার পরিক্ষা শেষ হলেই আমরা আমাদের বউমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো।”
–” ঠিক আছে। সে হবে ক্ষন। আপাতত ওদের দুজনকে একা কথা বলতে দেই। কতদিন পরে দুজন দুজনার সাথে দেখা হয়েছে বলুন তো।”
–” একদম ঠিক বলেছেন । আমি তো ভুলেই গেছিলাম । অদ্রি মা নিদ্রকে তোর ঘরটা ঘুরিয়ে আনতো।”
আমি সোনা মায়ের কথায় মি.ট্রেনওয়ালা নিয়ে অহনার ঘরে আসলাম। অহনা অবশ্য তখনো ড্রয়িং রুমেই দাঁড়ানো ছিল। গাধীকে কয়েকবার ইশারা করেই কিছুতেই আনতে পারি নি। আমার মনে হয় গাধীটা ইচ্ছে করেই আসে নি। আমাকে একা বাঘের গুহায় পাঠানোর শাস্তিটা পরে বুঝাবো ওকে, আপাতত মি.ট্রেনওয়ালাকে সামলাতে হবে।
অহনার ঘরটা একটু ভিতরের দিকে। এদিকটা অনেকটাই নিরিবিলি। ছোট্ট ঘরটির পাশে রয়েছে ছোট্ট একটা বেলকুনী। আমি আর নিদ্র ভাই বেলকুনীর একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। বেলকুনীতে এসেছি মিনিট দশেক হবে অথচ কেউ কোন কথা বলছি না। আসলে আমি কোন কথাই খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহূর্তে। এমন সময় নিদ্র ভাই তার পুরুষালি কন্ঠে বলে ওঠল,
–” মিসেস আরশান মাহমুদ নিদ্র কেমন আছেন আপনি? ছোট বেলার সব ঘটনাই কি ভুলে গেছেন?”
–” এক মিনিট এখনো মিসেস আরশান মাহমুদ নিদ্র হই নি আমি তাই আমাকে অদ্রি বলেই ডাকবেন। তাছাড়া এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে হবেও না কারনটা তো আপনি জানেনই?”
–” কি কারন বলুন তো? আমার তো এমন কোন কারন মনে পড়ছে না।”
–” নিদ্র ভাই আপনার সত্যিই কিছু মনে পড়ছে না?”
–” কিছু মনে রাখার কথা আদৌও ছিল কি?”
–” সবই যখন ভুলে বসে আছেন তখন এসেছেন কেন এখানে? এই ধরুন আপনার আংটি। চাই না আমার এইটা। যার কথা আপনার মনে থাকবে এই আংটিটা বরং আপনি তাকেই দিয়েন।”
আমার কথাগুলো শুনে নিদ্র ভাই মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আচমকা আমাকে তার দিকে টেনে নিয়ে আমার বাম গালে কামড় বসিয়ে দিল। আমি তখন অবাকের চরম পর্যায়ে। আমার সাথে কি হচ্ছিলো আমি যেন নিজেই বুঝতে পারছি না। অতঃপর আমার কানে কানে বললেন,
–” আরশান মাহমুদ নিদ্র কখনোই তার কোন ওয়াদা ভুলে না। বুঝেছেন মিসেস মাহমুদ। আর শুনুন আজকেই শেষ এই আংটি খুলেছেন । এমন কাজ আর কখনোই করবেন না। আপনাকে আমারই হতে হবে। আমিই হবো আপনার অন্তিম পাতার তুমি। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাতেও আনবেন না।”
–” যদি আনি?”
–” তবে সে ভুলের মাসুল আপনাকেই দিতে হবে। আর আপনি তো জানেন আমার শাস্তিগুলো কতটা ভয়ানক হয়।”
–” না তো আমার তো সেসব কিছু মনে নেই।”
–” থাক আপাতত সেসব কিছুই মনে করতে হবে না। এখন শুধু আমাকে মনে রাখলেই হবে। এই এলোকেশী চলুন না চলুন না নতুন করে আবারো সব কিছুর সূচনা করি। যে ডায়েরির পাতায় শুধু আপনি আর আমি থাকবো। এলোকেশী , আবারো নতুন করে একটা গল্প শুরু হোক। যে গল্প শুধু আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ। ”
আমি আর কথা না বলে ওনার বুকে মাথা রেখে বলে ওঠলাম,
–” তবে শুরু হোক নতুন এক গল্প। আমার আর আপনার গল্প, আমাদের গল্প। ”
নিদ্র ভাই আমাকে আরো নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরে তাকিয়ে রইলেন দূর আকাশের দিকে। যেখানে উড়ে বেড়াচ্ছে একজোড়া জোড়া শালিক।
চলবে
( গল্পটা খুব একটা বড় করবো না। কেমন লাগছে গল্পটা? নিদ্রকেই বা কার কার ভালো লাগছে? আর হ্যা গল্পটা পড়ে আপনাদের গঠন মূলক মন্তব্য জানাবেন। ভালো থাকবেন সবাই। হ্যাপি রিডিং 🤗🤗)