কিশোরী_মাফিয়া পর্ব_৩

#কিশোরী_মাফিয়া
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৩

–কিরে এখন কথা বলছিস না কেন?
কিসের এতো পাওয়ার তোর?তুই চিনিস আমি কে?
.
তখনি পিছন থেকে কেউ একজন এসে শার্টের কলার চেপে ধরার মতন করে পিছন থেকে আকাশের শার্ট চেপে ধরে!আকাশ ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখে ঈদনি তার শার্ট পিছন চেপে ধরে তার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!

–ঈদনি তুমি হটাৎ এখানে কি করছো?

–আমি আমার বাবার সাথে কেনাকাটা করার জন্য এখানে এসেছি।কিন্তু তুই বল,যে তুই খোলা বাজারের মধ্যে গুন্ডামী -মাস্তানি কেন করছিস?এতোটা জঘন্য কেন তুই?

–ঈদনি আমার শার্ট ছাড়ো তুমি।

–না,আমি তোর শার্ট ছাড়বো না।তুই বাজারে গুন্ডামী কেন করবি?

–ঈদনি দেখো তুমি কিন্তু এসবের পিছনের আসল কাহিনী জানো না।

–আমি জানি আর না জানি সেটা বড় বিষয় না।কথা হচ্ছে তুই খোলা বাজারের মধ্যে গুন্ডামী করছিস,যেটা আমি করতে দিব না।এই ভাইয়া আপনারা চলে যান।আমি দেখছি এই ছেলেকে।
.
ঈদনির কথা শুনে প্রিন্সিপালের সাথে ঝামেলা করতে আসা ছেলেপেলে গুলা সেখান থেকে চলে যায়।

–ঈদনি এখন কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম!তুমি ভালোয় ভালোয় আমার শার্ট ছাড়ো।

–এই বেটা একদম দাদা গিরি দেখাতে আসবি না বলে দিলাম।মনে রাখবি সব সময়,যে ঈদনি কারোর ধার ধারে না।

–ঈদনির কথা শুনে চরম রাগ উঠে গেলো!কোষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম ঈদনির গালের মধ্যে!যার ফলে সাথে সাথে সে আমার শার্ট ছেড়ে দিয়ে কয়েক হাত দূরে সরে যায়।আর দূরে সরে গিয়ে গালে হাত দিয়ে কান্না জড়িত ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে থাকে!কারন সে হয়তো ভাবতেও পারেনি,যে আমি তাঁকে এমন ভাবে বাজারের লোকজনের সামনে থাপ্পড় বসিয়ে দিব!তখনি তার বাবা আমার সামনে আসে।আর ঈদনিকে বলে…

–ঈদনি মা তুই গিয়ে আমাদের গ্রামের সিরিয়াল করা যেই গাড়ি গুলো আছে,সেটাতে গিয়ে উঠে বস।আমি উনার সাথে একটু কথা বলবো….

–ঈদনি তার বাবার কথা মতন লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা গাড়িতে গিয়ে বসলো।যেটা তাঁদের গ্রামেই যাবে।

–সাহেব,আমার মেয়েটা না বুঝে আপনার কাজে এসে বাঁধা দিয়ে ফেলেছে।প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না।

–দেখুন যা মনে করার তা একটু আগেই করে ফেলেছি।কারন সব জায়গায় মাথা ঘামালে হয় না।আপনারা হয়তো দেখছেন যে আমি পিস্তল হাতে নিয়ে সেই ছেলেগুলোকে শাসাচ্ছিলাম।কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি গুন্ডা-মাস্তান।সেই ছেলেগুলো ঐ যে দেখছেন দাঁড়িয়ে আছে ভদ্র লোক,যে কিনা আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল,তিনাকে শাসাচ্ছিলো,তাই তাঁদেরকে সায়েস্তা করার জন্য এখানে এসেছি।কিন্তু ঈদনি তার মাঝে এসে হাঙ্গামা শুরু করে দিলো।

–সাহেব,ঈদনির তরফ থেকে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।প্লিজ আপনি আমার মেয়েকে মাফ করে দিন।আসলে আমার মেয়েটা অতশত বুঝে না।তাই সে না বুঝে এমন করে ফেলেছে।কিন্তু আশা করি সে আপনার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।আর দেখবেন যখন সে আপনার সাথে পুরোপুরি মিশে যাবে,তখন সে আপনার কথা ছাড়া এক চুল পরিমাণ ও নড়বে না।

–মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?

–সাহেব,মানে টা আমার চাইতেও কিন্তু আপনার ভালো করে জানা।

–ঈদনির বাবার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম!কারন তিনি সত্যিই বলেছেন।মানেটা তিনার চাইতেও আমার আরো ভালো করে জানা।

–সাহেব আমার নাম্বারটা রাখেন আপনি।প্রয়োজনে হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

–ঠিক আছে।
তিনি নাম্বার বললো,আর আমি নাম্বারটা ফোনের ডায়ালে তুলে সেভ করে নিলাম।

–সাহেব এখন আসি।

–হুম…
লোকটা চলে গেলো।আর আমি এখনো ভেবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি!তখনি প্রিন্সিপাল স্যার এসে আমার কাঁধে হাত রাখে।আর বলে…

–আকাশ মেয়েটা কে ছিলো?

–স্যারের প্রশ্নের উত্তরে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না!তাই চুপচাপ দাঁড়িয়েই থাকলাম।

–আকাশ সমস্যা নেই উত্তর দিতে হবে না।আমি যা বুঝার তা শুরুতেই বুঝে নিয়েছি।কারন এমন কোনো বাপের বেটা নাই,যে তোমার গায়ে এসে হাত দিবে।কিন্তু সেই মেয়ে এসে যখন তোমার শার্ট চেপে ধরেছে,তার মানে সে তোমার আপন কেউ লাগে।আর কোন কাতারের আপন,তা তোমার নিরবতা দেখে বুঝে নিয়েছি আমি।

–স্যারের কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে মতন অবস্থা!শরমে মাথা নুইয়ে রেখেছি।

–আরেহ আকাশ লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আমি এখন কলেজের বাহিরে আছি।তুমি এখন আমাকে প্রিন্সিপাল না ভাবলেও পারো।তবে হ্যাঁ একটা কথা বলি,মেয়েটা খুব মায়াবী।যদি সম্ভব হয় অতিদ্রুত তাঁকে বিয়ে করে নাও।কারন আজকালকার মেয়েরা একটু বড় হলেই নিজের ভার্জিনিটি হারিয়ে বসে,না হয় নিজ ইচ্ছায় বিলিয়ে দেয়।সো যতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে ততোই মুসিবত কম।আর তাছাড়া আমার মতে তুমি এখন পরিপূর্ণ রূপে স্টাবলিশ।কারন তোমার পড়ালেখার পাশাপাশি বিজনেস আছে।আর নাম ডাক তো আছেই মাশাল্লাহ।সো পড়ালেখা না করলেও চলে তোমার।পড়ালেখার চিন্তা করে এমন মেয়েকে হাত ছাড়া করা বোকামি হবে তোমার।তাই ভালোভাবে একটু ভেবে দেখো।

–হুম….

–আচ্ছা আমি এখন চলে যেতে পারবো।আর তোমাকে একটা গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছি,তুমি বাসায় চলে যাও।

–না,না স্যার তার কোনো প্রয়োজন নেই।

–আরেহ প্রয়োজন তোমার না থাকলেও আমার আছে।কারন তুমি আমার প্রয়োজনে এসেছো।সো আমি গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছি।

–স্যার একটা সিএনজি ঠিক করে দিলো।তিনি সিএনজি ওয়ালাকে ভাড়াও দিয়ে দিয়েছে।সিএনজি করে বাসায় চলে আসলাম।অন্যদিকে আমার ড্রাইভার গিয়ে গাড়ি নিয়ে এসেছে কলেজ থেকে।কারন কলেজ থেকে বের হয়েই তাঁকে ম্যাসেজ করে বলেছি,যে কলেজের সামনে থেকে আমার গাড়ি বাসায় নিয়ে যেতে।তাই সে কথা মতন গাড়ি নিয়ে বহু আগেই বাসায় চলে এসেছে।তারপর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি।একটু পর দিয়া এসে ডেকে গেলো খাবারের জন্য।তাই নিচে চলে গেলাম খাবার খেতে।না নিজ হাতেই খাবার খাইয়ে দিয়েছে।তারপর খেয়ে দেখে উপরে চলে এসেছি।কারন একটু রেস্ট করা দরকার।বিছানায় শুয়ে আছি।তখনি ঈদনির কথা মনে পড়লো,যে মেয়েটাকে আজকে আমি ভরা বাজারের মানুষজনের সামনে থাপ্পড় মেরেছি!এটা মনে পড়তেই কেমন যেনো মনটা খারাপ হয়ে গেলো!নাহ মেয়েটাকে সরি বলা উচিৎ।কিন্তু কি ভাবে সরি বলবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না!তখনি মনে পড়লো যে ঈদনির বাবার নাম্বার আমার কাছে আছে।সাথে সাথে ঈদনির বাবার নাম্বারে ফোন দিলাম।তিনি ফোন রিসিভ করতেই সালাম দিলাম তিনাকে।তিনি আমার সালামের উত্তর দিয়েই বললো…

–জ্বি সাহেব বলেন…

–লোকটার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম!কারন তিনি আমার সালাম শুনেই অনুমান করে নিয়েছে যে আমি কে!বাহ বেশ তুখোড় সেন্স তো লোকটার!আসলে আমি একটু ঈদনির সাথে কথা বলতে চাই।

–ঠিক আছে আমি ঈদনিকে ফোনটা দিচ্ছি।

–তিনি গিয়ে ঈদনিকে ফোন দিয়ে বললো আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।ঈদনি ফোনটা হাতে নিয়েই বললো..

–এই গুন্ডা তুই কি করতে ফোন করেছিস?

–ঈদনি আসলে আমি সরি।আসলে আমার চরম রাগ উঠেছিলো তখন তোমার আচরণে।তাই রাগ সামলাতে না পেরে তোমায় এতো গুলা মানুষের সামনে থাপ্পড় মেরেছি।

–এই গুন্ডা রাখ তোর সরি।তুই কে রে ভাই?
কে হোস তুই আমার?তুই তো আমার কিছুই না।না তুই আমার কিছু হোস,না আমার পরিবারের।তো সরি বলার ফর্মালিটিস পালন করার কি আছে?

–আসলে ঈদনি আমার অনেক খারাপ লাগছে তোমাকে থাপ্পড় মেরে।

–আরে ভাই তোর খারাপ লাগা তোর কাছেই রেখে দে।কারন ফর্মালিটিস এই কোনো কাজ নেই এখানে।কারন তোর সাথে আমার কাকতালীয় ভাবে দুই-তিনবার দেখা হয়েছে।কিন্তু তার মানে এই না যে আবারো দেখা হবে।সো সরি বলার ফর্মালিটিস পালন করতে হবে না।

–আরেহ ঈদনি তুমি আমার উপরে রেগে গিয়ে হয়তো এতোসব কথা বলছো।সত্যিই আমি সরি।

–আরে ভাই আমি কোনো রেগে নেই তোর উপরে।রেগে তো ছিলি তুই।কারন আমি তোকে চাকু দিয়ে আঘাত করেছি।তাই তুই আমার উপরে প্রতিশোধ নিয়েছিস।সো যাই করেছিস ভালোই করেছিস।আর কখনো তো আমাদের দেখা হচ্ছে না।তাই সরিটা তোর কাছেই রেখে দে।আর আমিও আজকের বিষয়টা ভুলে যাবো।এখন রাখলাম ফোন…

–ঈদনি আমার মুখের উপরে ফোনটা রেখে দিলো!ঈদনির কথাবার্তা আর এমন আচরণে আমার মনটা আরো বিশাল খারাপ হয়ে গেলো!কি করবো কিছুই যেনো মাথায় কাজ করছে না!তৎক্ষনাৎ একটা বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম,যে ঈদনিকে আমি বিয়ে করে নিব।আর সেই বিষয়ে আজকেই আম্মুর সাথে কথা বলবো।সোজা নিচে চলে গেলাম আম্মুর রুমে।

–কিরে হটাৎ তুই আমার রুমে?কিছু কি বলবি?

–হুম।

–বল কি হয়েছে?

–মা,আমার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।তাঁকে আমি বিয়ে করতে চাই।

–বাহ এ-তো বেশ ভালো কথা।

–কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটা আমার চাইতে কিছুটা ছোট।আর সে গ্রামের মেয়ে।

–আরেহ তা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই।কিন্তু কথা হলো সেই মেয়েটা তোর সাথে ভালো ভাবে সংসার করতে পারবে কিনা সেটাই ভাবার বিষয়।

–মা,আশা করি সে পারবে।

–তাহলে তো ভালোই।আচ্ছা তাহলে মেয়ের ঠিকানা দে।আমি গিয়ে মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলবো।

–মা,মেয়ের বাবার নাম্বার আমার কাছে আছে।তুমি তার সাথে কথা বলো।আর তার পরিবার বলতে তার মা নেই।সো তার বাবাকে আসতে বললে তিনি এখানে চলে আসবে।তোমার কষ্ট করে সেখানে যাওয়ার দরকার নেই।কারন তুমি সেখানে গেলে মেয়ে রাজি নাও হতে পারে।
.
আকাশের মা আকাশের শেষ কথাটা শুনে কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকায়!কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে তিনি নিজেই বলে…

–আচ্ছা ঠিক আছে তার বাবার নাম্বার দে।

–ঈদনির বাবার নাম্বার মা’কে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে আসতেই দেখি বালিশের পাশে থাকা ফোনটা বাজছে।ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে ফরিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে….

ফরিদ আকাশের টিমের এই ছেলে।

–ভাই শহরে অনেক ভয়ানক একটা গ্যাং এর উৎপত্তি হয়েছে।আর তারা ধরে ধরে আমাদের ছেলেপেলেকে মেরে ফেলছে।প্লিজ আপনি কিছুু একটা করুন।

–কিহহহহ!কি বলিস তুই এসব?

–হ্যাঁ ভাই,তারা আজকে আমাদের তিনটা ছেলেকে মেরে ফেলেছে।

–তুই তাঁদের কাউকে চিনিস বা দেখেছিস?

–না,ভাই তাঁদের বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না।তবে এটুকু শুনতে পেরেছি,যে তাঁদের লিডার একটা মেয়ে।
আর সেই মেয়ে মানুষকে আস্তো খেয়ে ফেলতে পারে।
এক প্রকারের নরপিশাচ বলতে পারেন।কামড়েই নাকি মানুষকে মেরে ফেলে।শুধু সে একা নয়।তাঁদের টিমের অনেকর এই নাকি কামড়ে মানুষ মেরে ফেলার ক্ষমতা আছে।আমাদের তিনটা ছেলেকেও তারা কামড়ে মেরেছে।আমাদের ছেলেপেলের লাশ পাওয়ার পর তাঁদের গলার নিচে কারোর দাঁতের চিহ্ন পেয়েছি।যেই চিহ্ন টা একদম গলার চামড়া থেকে নিয়ে শুরু করে গলার রগ পর্যন্ত গিয়েছে।যেসব দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,যে কেউ তাঁদের গলায় ধারালো দাঁত দিয়ে কামড়েছে!

–ঠিক আছে আমি দেখছি।তোরা একটু সাবধানে থাক।
তারপর ফোন রেখে দিলাম বিছানার পাশে।মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে পুরো এই খবর শোনার পর!তখনি ফোনটা আবার বেজে উঠে!বালিশের পাশ থেকে ফোনটা আবার হাতে উঠাতেই দেখি ঈদনির বাবার নাম্বার থেকে ফোন এসেছে!আমি তাড়াতাড়ি কিছু না ভেবেই ফোনটা রিসিভ করলাম।তখনি অপরপাশ থেকে ঈদনি বলে উঠে….

–সরি….

চলবে?

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here