প্রণয়ের_দহন
পর্ব_৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
আরিয়ান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করছে। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে আমার গলা থেকে উড়না খুলে নেন। আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে আমার গাড়ে কামড় বসিয়ে দেন। বুকের ওপর বেশ কয়েকটা আঁচড় কাটেন নখ দিয়ে।
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। যা হলো সব আমার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। বললাম কী আর করলেন কী? উনি আমাকে ছেড়ে একটা দুরে সরে দাঁড়ান। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।
রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে আমার। উনি আমাকে কী পেয়েছেন? সব সময় নিজের মতো করে চলে। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কী কোনো দাম নেই? উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আচমকা আমি উনার কলার চেপে ধরি। উনার কলার চেপে ধরায় হয়তো রেগে গেছেন। বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলেন,
আরশি কলার ছাড়।
না ছাড়ব না। যতক্ষণ না আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাচ্ছি ততক্ষণ আমি আপনার কলার ছাড়ব না। আপনি আমার কী পাইছেন? পুতুল? যা বলবেন তাই মেনে নিব। যেবে চলতে বলবেন সেভাবেই চলব। নাকি সিরিয়ালের নায়িকা পাইছেন? আপনার শত অপমান সহ্য করে এখানে পড়ে থাকব। না এটা কোনো সিরিয়াল নাটক আর না আমি কোনো সিরিয়ালের নায়িকা। আমি….
আরশি লাস্ট বারের মতো বলছি কলারটা ছাড়। নাহলে আমি কী করবো আমি নিজেও জানি না?
না আমি ছাড়ব না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
উনি ঝাড়া মেরে আমার হাত থেকে উনার কলারটা ছাড়িয়ে নিলেন। চোখ বন্ধ লম্বা লম্বা দুইটা শ্বাস নিলেন।
আজকে কলারে ধরেছিস ধরেছিস। নেক্সট টাইম যেনো এটা রিপিট না হয়। তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে আমি ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম।
কেনো আপনি আমার সাথে এমন করছেন? কী দোষ করেছি আমি? কেনো আমার সাথে ভিলেনদের মতো বিহেভ করছেন?
আমি ভিলেন তাই ভিলেনদের মতো বিহেভ করছি। তুই যদি ভাবিস তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে কোনো হিরো আসবে। তাহলে তোর ভাবনা ভুল। তোর তোর লাইফের হিরোও আমি ভিলেনও আমি।
বাংলিশ বুজতে পারছিস না। আচ্ছা খাঁটি বাংলায় বলি, তোর জীবনের নায়ক আমি খলনায়ক আমি। আমি ছাড়া তোর কোনো গতি নেই।
আপনি না আমাকে ভালোবাসেন? তাহলে এমন কেনো করেছেন?
ভালোবাসা!
উনি বাঁকা হেসে আমাকে পাশ কাটিয়ে কাবার্ডের কাছে গিয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যান। আমি এখন একই জায়গায় নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি। উনি কী চান? উনার বিহেভিয়ার কিছুই বুঝতে পারছি না। উনাকে অনেক রহস্যময় লাগে। বাইরে থেকে উনাকে দেখে যতটা সহজ সরল মনে হয়। উনার ভিতরটা ততোটাই জটিল। আল্লাহ আমার জীবন এ কেমন পরিণতি নিয়ে এলে।
আরশি,, আরশি।
আম্মু ডাকছে। চোখের পানি মুছে যখনি বের হতে যাবো। তখনি মনে পড়ে আরিয়ানের দেওয়া আঁচড় আর কামড়ের কথা। আয়নার সামনে গিয়ে উড়না দিয়ে ভালো করে শরীর ডেকে নিলাম।
উনার দেওয়া এই চিহ্নগুলো না প্রকাশ করছে ভালোবাসা আর না রাগ, ক্ষোভ। এই স্পর্শগুলো আমার কাছে রহস্য। উনার সাথে আমার জীবনটা জুড়ে গিয়ে আমার জীবনটাও রহস্যময় হয়ে গেছে।
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রুম থেকে চলে এলাম। আম্মু ড্রয়িংরুমে বসে কী যেনো সেলাই করছেন?
আম্মু ডেকেছিলে?
হুম। আরিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে যা আর সাথে তোরটাও। দুপুরে এতো করে বললাম খাওয়ার জন্য খেলি না তো। এখন আরিয়ানের সাথে খেয়ে নে। না খেলে মাইর দিব। আরিয়ান বিকালে বাসায় আসলে খাবারটা রুমে খায়।
আম্মু উনার খাবারটা নিয়ে যাচ্ছি। আমি এখন খাব না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
যা ইচ্ছে তা কর। আমার কথা তো কেউ শুনে না। সবাই সবার নিজের মর্জি মতো চলে। খেলে খাবি না খেলে নাই।
আম্মু প্লিজ রাগ করো না। দুপুরবেলা তো আইসক্রিম খেয়েছি তাই পেট ভরা। প্লিজ আম্মু রাগ করো না। প্লিজ প্লিজ।
এমন করে বললে রাগ করে থাকা যায় আরিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে যা।
থ্যাংক ইউ।
তারপর আরিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে গেলাম। কিন্তু আরিয়ান রুম নেই। বেলকনি থেকে কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। খাবারটা সেন্টার টেবিলে রেখে এগিয়ে গেলাম বেলকনির দিকে। উনি কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন তাই আর সেদিকে পানে পা বাড়ালাম না। ফিরে এসে বিছানার ওপর বসে পড়লাম। অনেকদিন ধরে ফেসবুকে ঢোকা হয় না।
তাই আজকে ঢুকালাম। ফেসবুকে ঢুকে আমি অবাক। আমার আর নিহানের কোনো ছবি আমার আইডিতে নেই। ইনফ্যাক্ট নিহান রিলেটেড কোনো কিছুই আমার আইডিতে নেই। আরো বেশি অবাক হলাম আরিয়ানের সাথে আমার ম্যারিড স্ট্যাটাস দেখে।
এগুলো কে করলো? আরিয়ান? কিন্তু আরিয়ানকে আমার ফোন ধরতে কখনো দেখি নাই। যদি আরিয়ান আমার ফোন ধরেও থাকে। আমার ফোন তো লক করা। আরিয়ান পাসওয়ার্ড পাবে কই? আমার ফোনের পাসওয়ার্ড আমি ছাড়া অন্য কেউ তো জানে না। ইনফ্যাক্ট নিহানও জানতো না। তাহলে? উফ এতো রহস্য আরো ভালো লাগছে না।
আরিয়ান কথা শেষ করে। ফোন স্ক্রল স্ক্রল করতে করতে রুমে আসছেন। আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফোনটা দেখিয়ে বললাম,
এসব কিছু আপনি করেছেন।
উনি আমার ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে উত্তর দিলেন,
তোর কী আমাকে টটো কোম্পানির মালিক মনে হয়? সারাদিন কোনো কাজ করি না। তোর পিছনেই সারাদিন হাত ধুয়ে পড়ে থাকবো।
আপনি সোজা কথার উত্তর সোজা ভাবে দিতে পারেন নাহ।
না পারি না। সারাদিন শুধু তোর প্রশ্ন আর প্রশ্ন। সারাদিন অনেক কাজ করে আসছি। এখন আর মাথা কাজ করছে না। কাজের জন্য দুপুরের লাঞ্চটাও করতে পারিনি। প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগছে। ম্যাডাম আপনার যদি প্রশ্নের বাহার শেষ হয়ে থাকে। তাহলে দয়া করে এই ক্ষুধার্ত মানবের আহারের ব্যবস্থা করুন।
উনার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। উনার চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজকে সারাদিন উনার ওপর দিয়ে অনেক প্রেসার গেছে। দুপুরে না খাওয়ার জন্য মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। হাসি থামিয়ে বললাম,
আমি খাবার নিয়েই আসছি। আসুন খেয়ে নিবেন।
চলুন ম্যাডাম।
উনি সোফায় বসলেন। আমি উনার সামনে খাবারগুলো এনে রাখলাম। হঠাৎ করে উনি আমার হাত ধরে টেনে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন। আকস্মিক এমন হওয়ায় আমি হকচকিয়ে গেলাম। অবাক হয়ে বললাম,
কী করছেন আপনি?
উনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন নাহ। বরাবরের মতোই এড়িয়ে গেলেন। আমার মুখের সামনে এক লোকমা খাবার ধরলেন। আমি অবাক হয়ে বললাম,
কী করছেন আপনি? আমার মুখের সামনে খাবার ধরলেন কেনো? এইগুলো তো আপনার খাবার।
আহ এতো কথা বলছিস কেনো? চুপচাপ খা। আমি জানি তুই দুপুরে কিছু খাসনি।
আমি দুপুরে খেয়েছি তো।
আমার সামনে একদম মিথ্যা বলবি না। আর তুই একদমি মিথ্যা বলতে পারিস না। তুই মিথ্যা বললে যে কেউ বলে দিতে পারবে তুই মিথ্যা বলছিস। আর তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। তোর নিশ্বাসের শব্দ শুনে বলে দিতে পারি তুই কী চাস? নে এবার হা কর।
উফ আপনি থামুন নাহ। আর আমাকে ছাড়ুন। দরজা খোলা। যে কেউ যে কোনো সময় চলে আসতে পারে। এখনি যদি আম্মু চলে আসে আর আমাদের এভাবে দেখে। কেমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে ভাবতে পারছেন?
ভাবার দরকার নেই। আমাদের বাসার লোকজন তোর মতো গাধা না। তাদের কমনসেন্স আছে। এভাবে হুট হাট করে কারো রুমে ঢুকে পড়ে না। আমাদের রুমে তো ঢুকবেই না। আমরা চুরি করছি না আর না আমাদের সম্পর্কটা অবৈধ যে ধরা পড়ার ভয় থাকবে। আমার লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ নিজেদের রুমে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই থাকতে পারি।
উফ আমিও কাকে কী বলছি? উনি তো জন্মগত ঘাড় ত্যারা। জীবনে কারো কথা শুনে না। আর অলটাইম লোকে যা বলে তার উল্টোটা বুঝা উনার স্বভাব। আমি বললাম কী আর উনি বুঝলেন কী?
অনেক কথা বলে ফেলছি। এখন যদি তুই না খাস। তাহলে থাপড়ায়া তোর গাল লাল করে দিব বেয়াদব।
চলবে…..