#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৪
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন
পরদিন যথাসময়ে সাবিরের মা সিরাতকে নিতে এলেন। সিরাত আগেই তৈরি হয়ে বসে ছিল। সাবিরের মা এসেছে শোনে ভাবতে লাগলো, সাবির কি আসে নি? ড্রয়িংরুমে শুধু সাবিরের মাকে দেখা গেলো। সিরাতও আগ বাড়িয়ে সাবিরের কথা জিজ্ঞেস করলো না। ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে সিরাত নিচে নেমে এলো। যাওয়ার আগে তানিশা ফিসফিস করলো, সাবিরের সাথে সব ঠিক করে নিতে। আর কয়দিন বাদে বিয়ে। এমন দূরত্ব আর মানা যায় না।
নিচে নেমে সিরাত ঝটকা খেলো। সাবির এসেছে! উপরে গেলে কি হতো? মনে মনে অবাক হলেও মুখে প্রকাশ করলো না সিরাত। গাড়ির সামনে আসতেই সাবির তাদের জন্য ডোর খুলে দিলো। সাবিরের মা আইভি গাড়িতে বসলেন। সিরাত গাড়িতে উঠে বসতেই, সাবির ডোর লক করে দিলো। সিরাতের চোখ আপনাআপনি সেদিকে চলে গেলো। সাবির কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাজারো অভিমান নিয়ে একনজরে তাকিয়ে আছে সিরাতের দিকে। সিরাত দৃষ্টি সরিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে, হাত মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। সাবির সামনে গিয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলো। গাড়িতেও সিরাত চুপচাপ বসে রইলো। সাবিরও মৌনতা পালন করে চলেছে। গুমোট পরিস্থিতি বিরাজমান। সিরাত আনমনে সামনে সাবিরের দিকে তাকালো। লোকটার আচরণ আজ বেশ অদ্ভুত লাগছে। অন্য সময় হলে আগ বাড়িয়ে কথা বলতো, সবসময় হাসি লেগে থাকতো মুখে কিন্তু আজ একবারও কথা বলেননি। সাবিরের চোখ-মুখ অনেক শুকনো লাগছে, ভালো করে তাকালে বুঝা যাবে চোখ দুটোও লাল হয়ে আছে। রাতে ঘুমান না না-কি? কেনো জেনো সিরাতের খুব কাঁদতে ইচ্ছে হলো। সাবির এমন কেনো করছে? একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, “রাত! কেমন আছো? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”
এসময় সাবিরের মা তাদের দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বললেন,
—- “তোমাদের মধ্যে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে? মা তুই বল, আমার ছেলের কি অবস্থা কেন? ”
সিরাত শুকনো কাশলো। কিছু বললো না। সামনে থেকে সাবির বললো,
— আম্মু কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।
সিরাত অপমানবোধ করলেও কি বলবে খুঁজে পেলো না৷ এর মাঝেই তারা শপিংমলে চলে এলো। তাদের কথাও আর এগুলো না। সাবির কাকে যেনো কল করতে করতে তার মা আর সিরাতকে নিয়ে মলের ভেতরে চলে গেলো। নিচ তলায় অনেক মানুষের ভীড়। সিরাতের পেছনে সাবির নানা মানুষের হাত বাঁচিয়ে সামনে হাঁটছে। সাবিরের চওড়া বুকের সাথে সিরাতের মাথার সংঘর্ষ হচ্ছে বারবার। সিরাত অস্বস্তিতে মাটিতে মিশে যেতে চাইলেও সাবির নির্বিকার। উপরের তলায় আসতেই ভীড় কমলো। নানা দোকান ঘুরেঘুরে জিনিস কিনছে সাবিরের মা৷ একটা লোক এসে যোগ দিলো তাদের সাথে। লোকটাকে সিরাত চেনে না। সে ফরমাল ড্রেসে শপিংয়ের প্যাকেটগুলো নিয়ে তাদের সাথে হাঁটছে। গয়নার দোকানে ঢুকতেই, সাবির মা বললেন সিরাতের নিজের পছন্দমতো ডিজাইন চুজ করতে। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে সিরাত বললো, যা ইচ্ছে কিনতে। তার পছন্দ ভালো না। এসময় সাবির তার পাশে এসে দাঁড়ালো,
—- তুমি কি আমার জন্য আনইজি ফিল করছো? চলে যাবো?
সিরাত অসহায় চোখে তাকালো। সাবিরের আজকের ব্যবহারের সাথে সম্পূর্ণ অপরিচিত সে। সাবির আবার বললো,
—- শুনেছি কেনাকাটার ব্যাপারে মেয়েরা খুব সচেতন। একটা জিনিস কেনার জন্য দশ দোকান ঘুরবে। তুমি তো এমন কিছুই করলে না। অন্তত গয়না কি কি পছন্দ তা তো বলো!
সিরাত হুট করে বললো,
—- আপনারা অনেক বড়লোক তাইনা?
সিরাতের কথা শুনে সাবির জোরে জোরে হাসতে লাগলো। এই মেয়েটা এমন কেন? রাগ করেও থাকা যায় না। হাসি থামিয়ে বললো,
—- না তো৷ সাবির খুব গরিব মানুষ কিন্তু সিরাতের বরের অনেক টাকা।
সিরাত আগামাথা কিছুই বুঝলো না। অবশেষে সাবির আর সাবিরের মা দুজন মিলে সিরাতের গয়না পছন্দ করলো। সিরাত শুধু তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ, আর না তে না মিলিয়েছে।
সমস্ত কেনাকাটা শেষে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া সারলো তারা। সাবির ঐ লোকটার সাথে প্যাকেটগুলো গাড়িতে রাখার জন্য নিচে গেলো। এখন টেবিলে আছে শুধু সাবিরের মা আর সিরাত। সিরাত সেই কখন থেকে টেবিলের নখ খুঁটছে। কোথাও মনোযোগ নেই তার। সাবিরের মা তা অনেকক্ষণ আগে থেকেই খেয়াল করে আসছেন৷ তিনি তীক্ষ্ণ চোখে বললেন,
—- তোদের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে তো?
সিরাত বিষম খেয়ে অপ্রস্তুত হাসলো।
— শোনে মেয়ে কিছু কথা বলি। মনোযোগ দিয়ে শুনো। একটা ছেলে তোমার কথা ভেবে দিন-রাত পার করে। যার ঘরের দেয়ালে দেয়ালে শুধু তোমার ছবি। তোমার একটু কষ্ট যার সহ্য হয় না আর একটু হাসিতে যার মুখে হাসি ফুটে, তোমাকে সন্তপর্ণে আগলে রাখায় যার সুখ সে অন্তত আর কিছু পারুক না পারুক তোমাকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতে জানে। সময় থাকতে মানুষটাকে হাতে করে নাও। এমন না হয় যে, পরে পস্তাতে হয়। পরিপূর্ণভাবে ভালোবাসার জন্য এই জীবনটা খুব ছোট। কয়েকদিন ধরে আমার ছেলেটা ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে না, খাবার খায় না, আমার সাথে ভালোমতো কথাও বলে না। আমি মা, আমি বুঝি। আমার ছেলেটা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে মা। সাবির আমার ছেলে বলে বলছি না। যেদিন প্রথম তোমাদের বাড়ি এলাম তার আগে কি হয়েছে শুনবে? সাবির আমার পা জড়িয়ে বললো, ‘আম্মু আমি সিরাতকে চাই। প্লিজ ওকে এনে দাও।’ আমহ তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি। সময় নাও তবে বেশি দেরি করো না। তাকে একবার সুযোগ দাও, নিজেকে প্রমাণ করতে। ”
সিরাত কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। সাবিরের মা আবার বললেন,
—- আমি কিছু একটার বাহানায় চলে যাচ্ছি। আমার ছেলে আসছে। তোরা কথা বল নিজেদের মাঝে। বোকা মেয়ে কাঁদতে হয় না। আচ্ছা আমি যাই হ্যাঁ?
#চলবে