মাস্টারমশাই
পর্ব ২৫
____________
মাথার উপরে এক ঝাঁক পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। বাড়ির সামনে একটা কাগজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাবেরী। কাগজটি অনেক পুরনো। খুব স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, মাস্টারমশাই অনেক ভালো মানুষ। তিনি খুব ভালো। সাতটা শব্দের মধ্যে প্রায় গুলো বানান ভুল। তবে পড়তে অসুবিধা হয়নি। হাতের অক্ষরটা খুব চেনা। এত বছর পরেও অক্ষর গুলো কেমন একটা বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে। শুভজিৎ কে অক্ষর শিখিয়েছিল কবেরী। এটা তারই হাতের অক্ষর। কখন হয়তো লিখেছিল। ছোটখাটো প্রায় সব জিনিসই সে সব সময় লুকিয়ে রাখত। কখনো বিছানার তলায়, কখনো বালিশের মধ্যে,আবার কখনো নিজের পুঁটলির মধ্যে। এই কাগজও তার ব্যতিক্রম যায়নি। লেখাটি পড়ে কাবেরী মৃদু হেসে ওঠে। এই ছোট বাচ্চাটি সেদিন বুঝে যায় মাস্টারমশাই ভালো মানুষ। যে মানুষটার সঙ্গে সে কখনো কথা বলেনি। শুধুমাত্র চোখে দেখে ছিল আর কয়েকটা কথা শোনে ছিল। যদিও একবার পরিচয় হয়েছিল, আর তাতেই সে বুঝে গেল, তিনি ভালো মানুষ। তিনি একজন সৎ সাধারণ মানুষ।অন্যায় দুই চোখে দেখতে পারেন না,যেখানে অন্যায় হয় সেখানে তিনি গর্জে ওঠেন। তাতে যদি উনার বড় একটা সর্বনাশ হয়ে যায়,তবুও তিনি আপত্তি করেন না।আর তারা দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে থেকেও বুঝতে পারল না, মাস্টারমশাই কেমন মানুষ? কাবেরী চোখ ঘোরালো। একটু চোখ এদিক ওদিক করতে সে দেখতে পেল একটি পুরনো রং পেন্সিলের বাক্স। কাবেরী মাটিতে বসে পড়ে বাক্সটি তুলল। শুভজিৎ মারা যাওয়ার পর মাস্টারমশাইয়ের দেওয়া সেই রং পেন্সিল বাক্স,আজও অক্ষত আছে। এতদিন বাড়ির মধ্যে পড়েছিল।আজ বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে, পুরনো জিনিস পত্রগুলো বেরিয়ে এসেছে।এগুলো তো শহরের নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাইরে ফেলে দিয়েছে। কাবেরী রংপেন্সিল আর কাগজ ভালো করে পরিষ্কার করল। তারপর সেগুলো রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে নিজের ব্যাগের মধ্যে রাখল। কিছুক্ষণ আগে লরি তাদের বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে শহরে উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কাবেরী সন্ধ্যায় শহরে ফিরল না। সে কাল সকালে শহরের ফিরবে। এই গ্রামে তার পাঁচ দিনের মতো থাকার ইচ্ছা ছিল। এখন সেই ইচ্ছে আর নেই। কেমন একটা ভয় ভয় করছে। তার দুচোখ আবার ভিজে ওঠে। মাস্টারমশাইয়ের বই এখনো তার কাছে রয়েছে। মাস্টারমশাইকে তাঁর বই ফেরত দিতে হবে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে সন্ধ্যা নেমে আসে। চারিদিকে ব্যস্ত বহুল মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। কাবেরীর বাড়িতে একা থাকতে ভালো লাগছে না। টিভি নেই। কোনো কাজও নেই। তার পক্ষে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব নয়। সে মাষ্টারমশাইয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। উনাকে উনার বই ফেরত দিতে হবে। বাড়িতে তালা লাগিয়ে তানভীর স্যারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাওয়ার সময় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সে একটি কথাও বলবে না। সমস্ত ঘটনা তাকে ধৈর্য হারা করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন সে কখনো হয়েছে কিনা জানে না। পুরনো স্মৃতি মনে করতে করতে নিজেকে এলোমেলো করে ফেলেছে। এভাবে জীবন চলতে পারে না। কাল সকালে শহরে ফিরে গেলে, সবকিছুই অতীত হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে ভাবনা অযথা কাকতালীয়।
সন্ধ্যা বেলায় দ্বিতীয়বার কাবেরীকে নিজের বাড়িতে দেখে অবাক হলেন মাস্টারমশাই। রঘুকে জোরে একটা হাঁক ছাড়লেন। কাবেরীর জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসতে বললেন। রঘু চেয়ার নিয়ে আসলো। কাবেরী আমতা আমতা করে বলল,’আমি বসবো না। আমার তাড়া আছে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। এক কাপ চা খেয়ে যা….।’
কাবেরীর শত বারণ মাস্টারমশায়ের একটা অনুরোধের কাছে হেরে গেলো। একজন বয়স্ক মানুষ অনুরোধ করছেন, সেই অনুরোধ কাবেরী ফেলে দিতে পারে না। সে নির্বোধ নয়। কাবেরী একটা জিনিস খেয়াল করে, তার এক মুহুর্ত একা থাকতে কোণঠাসা লাগছিল। অথচ মাস্টারমশাই দিনের পর দিন একা রয়েছেন। সত্যি কি কাবেরীর মাস্টারমশাইয়ের কষ্ট বোঝার অনুভূতিটুকু হয়েছে? সম্ভবত নয়। আটচল্লিশ ঘন্টাও হয়নি, সে গ্রামের বাড়িতে এসেছে। আর এর মধ্যে সুমন কতবার ফোন করেছে তার হিসাব নেই। বারবার স্ত্রীর খোঁজ নিয়েছে। স্ত্রী ছাড়া নিজেকে একা বোধ করেছে। কোনো কাজে মন বসছে না। তাকে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছে। তাহলে মাস্টারমশাই এতগুলো বছর কি করে একা রয়েছেন? উনার কি কষ্ট হয় না? তিনি কষ্টগুলো কাউকে বুঝতে দেয়ননি। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের পক্ষে একা থাকা সম্ভব নয়। তবে জীবনে কিছু কিছু মুহূর্ত আসে যেখানে একা থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। মানুষ কখনো একা থাকতে পছন্দ করে না। তাকে বাধ্য করা হয় একা থাকার জন্য। প্রতিটা মানুষের জীবনে একজন করে মনের মানুষ থাকে। যার হাত ধরে সারাটা জীবন পার করতে চায়। মন খুলে সমস্ত কথা বলতে পারে। যাকে নিজের সবকিছু দিয়ে ভালবাসে। মাস্টারমশাইয়ের সে টুকুও নেই। তিনি হারিয়ে ফেলেছেন সবকিছু।
কাবেরী মাস্টারমশাইয়ের হাতে বই তুলে দিল। মাস্টারমশাই কাবেরী চোখ দুটোর দিকে লক্ষ করলেন। কাবেরীর চোখ ভয়ে মিটমিট করছে। এই বুঝি, মাস্টারমশাই কিছু বললেন। সে এখনো মাস্টারমশাইকে ভয় পাচ্ছে। উনার রাগান্বিত মুহূর্ত ভুলতে পারেনি কাবেরী। মাস্টারমশাই মৃদু হাসলেন। বললেন,’বই না পড়ে ফেরত দিচ্ছিস। জানিস এর শাস্তি কি হতে পারে?’
কাবেরীর হৃদস্পন্দন দ্বিগুণ হয়। চোখ মুখ লাল হয়ে ওঠে। মাস্টারমশাই কি তানভীর স্যার হয়ে উঠলেন? তিনি এতটা রেগে আছেন কেন?কাবেরীকে ভয় পেতে দেখে মাস্টারমশাই শান্ত হলেন। মাস্টারমশাই মনে মনে অনেক খুশিও হলেন। এই বয়সে অন্তত একজন মানুষ তাঁকে ভয় পাচ্ছে। এটাই উনার কাছে অনেক বড়ো প্রাপ্তির সমান। কাবেরী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,’আমি বইয়ের প্রতিটি অংশ পড়েছি। আপনার সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়। কিন্তু দেশের এমন কোনো আইন নেই যে এই অন্যায়ের শাস্তি দেওয়া যাবে। আমি কিশলয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে তার যুক্তি দিয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। তার কাছে মাস্টারমশাই চরিত্রটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।’
মাস্টারমশাই হাসতে লাগলেন। তিনি এমনভাবে হাসছেন, কাবেরী যেনে কোনো হাসির জোকস বলেছে। কাবেরী রেগে গেল। তবে রাগ পুষে রাখলো। মাস্টারমশাই সত্যিই অদ্ভুত! তিনি কখন হাসেন, কখন কান্না করেন, কখন স্বাভাবিক থাকেন, তা বোঝার ক্ষমতা কারোর নেই। হাসতে হাসতে মাস্টারমশাই বললেন,’তুই বইটা কখনো সম্পূর্ণরূপে পড়িসনি। যদি বইটা সম্পূর্ণ পড়তিস, তাহলে কখনো এখানে আসতিস না। দ্বিতীয়বার তোর মুখটা মাস্টারমশাইকে দেখানোর সাহস হতো না।’
মাস্টারমশাইয়ের কথা শুনে কাবেরী ঘাবড়ে গেল। সে সারারাত ধরে বইয়ের প্রতিটি বাক্য বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়েছে। এখন মাস্টারমশাই বলছে সে বই সম্পূর্ণভাবে পড়েনি। বুড়ো বয়সে মানুষ তার শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর চারটা মানুষের মতো তাঁরা স্বাভাবিক থাকে না। তাদের ভাবনা চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। মাস্টারমশাইয়ের তাই হয়েছে।
দুজন চুপ করে থাকলেন। রঘু দু’কাপ চা নিয়ে এসে দুইজনকে দিল। কাবেরী চায়ে এক চুমুক দিয়ে বলল,’আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল। আপনি সঠিক উত্তর দেবেন? আমি কিছু মনে করব না।’ মাস্টারমশাই মাথা নাড়ালেন। কাবেরীকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে বলেন। কাবেরী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে কাচুমাচু খাচ্ছে। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা কি সঠিক হবে? তবুও না করে পারছে না। উত্তর জানা ভীষন জরুরী। সে বলল,’আপনি সত্যিই কি সেদিন কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলেন? আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন প্যান্ডেলে?’
খুব দ্রুত চায়ের কাপ নীচে রাখলেন মাস্টারমশাই। কোনো কথা বললেন না। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। আর চার জন মানুষের চোখের জল যতটা সহজভাবে নেওয়া যায়,একজন বৃদ্ধার চোখের জল ততটা সহজ ভাবে নেওয়া যায় না। ওই জলের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের স্মৃতি, আর প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা জিনিস হারিয়ে ফেলার আকাঙ্ক্ষা। কাবেরীর মধ্যে একটা আশঙ্কা জেগে উঠলো। মাস্টারমশাইয়ের চোখের জল বলে দিচ্ছে, তিনি সেদিন কোনো কাগজ পোড়াননি। তাঁকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি চিৎকার করে বলতে চাইছেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি কোনো কাগজ পোড়াইনি। তাহলে কেন আমাকে শাস্তি দেওয়া হল? এই অপবাদ নিয়ে আমি মরতেও পারছি না। কিন্তু সমস্ত ঘটনা তাঁর কোনো স্টুডেন্ট বিশ্বাস করেনি। তারা ভাবে, মাস্টারমশাই সত্যি সত্যি কাগজ পুড়িয়েছেন। এর চাইতে কষ্টের জিনিস আর কি হতে পারে? অন্যায় না করেও অপমান সহ্য করেছেন। শাস্তি পেয়েছেন। আর এই অপমান বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে কিশলয়। তানভীর স্যার একদিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্র কিশলয়। সেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেছে, মাস্টারমশাই এমন জঘন্য অন্যায় করতে পারেন। মাস্টারমশাই তো কোনো দেবতা নয়। তিনি মানুষ। তাই তিনিও অন্যায় করতে পারেন। মাস্টারমশাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,’তুইও বিশ্বাস করলি, আমি এমন অন্যায় করতে পারি?’
‘আমি তো আমার বাবাকে বিশ্বাস করেছিলাম। বাবাকে বিশ্বাস করে শহরে গেছিলাম।বাবা তো তার বিশ্বাসের যোগ্য রাখেনি। তিনি শুভজিৎ এর খুনের তদারকি করাননি। তিনি যদি ওই খুনের তদারকি করাতেন,তাহলে হয়তো একটা নিষ্পাপ শিশুর আত্মা শান্তি পেত। আদৌ কি এই পৃথিবীতে কাউকে বিশ্বাস করা যায়?সেই ছেলেটি আজও যেন বলে, আমি আত্মহত্যা করিনি। আমাকে খুন করা হয়েছে। আর খুনিরা এখনো স্বাভাবিক ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কি কোন শাস্তি হবে না? একটা ছোট্ট শিশুকে মেরে রেহাই পেয়ে যাবে।যুগ যুগ ধরে তারা ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকবে? এটা কেমন পৃথিবীর নিয়ম? কারোর কি জন্ম হবে না তাদের বিনাশ করার জন্য?’
কাবেরীর চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। সেও কাঁদছে। এতগুলো বছর সে অনেক সুখে ছিল। আজ কেন এমনটা হচ্ছে? সে আর কিছু সহ্য করতে পারছে না। কিছু ভালো লাগছে না। সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি পেতে চায় । গ্রামে এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না। সে দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলে। হাসিমুখে বলল,’আচ্ছা মাস্টারমশাই, আমাদের গ্রামে এখনো বারোয়ারি মেলা হয়?’
‘হ্যাঁ, মেলা হয়তো। কিন্তু আগের মতো মেলার ওই সৌন্দর্য নেই। ময়ূরগঞ্জের মেলার সৌন্দর্য হারিয়ে দিয়েছে বর্তমানের জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা। আগে মেলা বসলে কতগুলো যাত্রা হতো। গ্রামের বাচ্চা ছেলে মেয়েরা নাচতো, গান গাইতো, ছদ্মবেশ ধারণ করতো আরও কত কিছু….। সমাজে অবহেলিত শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিকে এখানে ফুঁটিয়ে তুলতে পারতো। কিন্তু এখন সে সব হারিয়ে গেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে সারাদিন মেলায় ঘুরে বেড়াতো। যতদিন মেলা হতো ততদিন তারা স্কুলে যেত না। এখন আর তেমনটা হয় না। এখনতো বক্সের পর বক্স সাজিয়ে গান-বাজনা করে।মেলার মূল উদ্দেশ্য যেন মদ খাওয়া আর নাচানাচি করা। কোনো সেলিব্রেটিকে নিয়ে এসে স্টেজে প্রোগ্রাম করানো। এটাই হচ্ছে বর্তমানের মেলা। সম্ভবত কবিদের ভাষায় এগুলোকে মেলা বলা যায় না। তাদের ভাষায় মেলা সম্পূর্ণ আলাদা।’
আরও বেশ খানিকক্ষণ মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলে কাবেরী। তারপর সে দ্রুত মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়। বিদায় নেওয়ার সময় মাস্টারমশাই তাকে সেই বইটা আবার দেয়, তাকে ভালো করে বইটি পড়তে বলে। বইয়ের একটা অক্ষর যেন বাদ না পড়ে। কাবেরী বই নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়। বাড়ি ফেরার সময়ে তিনি আবার একটা কথা বললেন, ‘জীবনে কাউকে সম্মান করতে না পারিস, কিন্তু তা বলে তার সর্বনাশ করিস না। তোদের কাছে যেটা স্বাভাবিক লাগে,সেটা হয়তো তার কাছে অনেক কিছু। ওই মানুষটা যদি তার হারিয়ে ফেলে তাহলে তার কাছে তার বাঁচার অর্থটা হারিয়ে যায়।’
কাবেরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর রঘুর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে। রঘুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাবেরী আরও অনেক কিছু জানতে পারে। যেটা সে কল্পনাও করতে পারিনি। আর সমস্ত ঘটনা নাকি মাস্টারমশাইও জানে। কাবেরী শোনেছিল, কিরণ একজন বড় ইউটিউবার। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের রোস্ট ভিডিও বানায়। বিভিন্ন সেলিব্রেটি মানুষদের নিয়ে সে রোস্টেড ভিডিও তৈরি করে। এমন কি সে মাস্টারমশাইকে নিয়েও ভিডিও বানিয়েছে। কাবেরীর কৌতুহল বাড়তে থাকে। ভিডিও দেখার ইচ্ছা জাগে মনের কোঠায়।সে সেখানে দাঁড়িয়েই কিরনের তৈরি করা পাঁচ মিনিটের ভিডিও দেখল। কিরন পুরো ভিডিও জুড়ে মাস্টারমশাইয়ের বলা বিভিন্ন কথাকে রোস্ট করেছে।সেই কথাগুলোকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বিচার করেছে।যে কথাগুলোকে কখনোই অন্য দিক দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। কারণ, মাস্টারমশাই সমস্ত কিছু ভেবে কথাগুলো বলেন নি। তিনি শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে ওইসব কথাগুলো বলতেন।এমনকি অনেক সময় মিথ্যা যুক্তি দিয়েছেন তিনি,যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝতে অসুবিধা না হয়।কিন্তু তিনি কখনও জানতেন না, সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে তার ছাত্র রোস্ট করবে। যদিও ভিডিও কোথাও তানভীর স্যার নাম উল্লেখ করেনি। শুধু বলেছে তার ছোটবেলার মাস্টারমশাই। ভিডিওর মধ্যে মাস্টারমশাইয়ের ভালো-খারাপ কোনো দিকই তোলা নেই।শুধু মাস্টারমশাইয়ের কঠোরতা, মাস্টারমশাই রাগান্বিত,মাস্টারমশাই কঠোর কঠোর সিদ্ধান্ত, তিনি কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন এইগুলো নিয়ে……।
হয়তো কেউ এই ভিডিওটি খারাপভাবে নেবে না। সবাই মজা হিসেবে নেবে। ইউটিউবে এমন ভিডিও অনেক রয়েছে। কিন্তু মাস্টারমশাইকে নিয়ে কেন এই ভিডিও? তিনি কি কোনো সেলিব্রেটি? রোস্ট ভিডিও সেলিব্রেটিদের নিয়ে বানানো হয়, কোনো স্কুল টিচারকে নিয়ে নয়। রঘুর মুখে এটাও জানতে পারে, ফেসবুকে মাস্টারমশাইয়ের নামে ফ্যান ক্লাব রয়েছে। মাস্টারমশাই তাদের স্কুলজীবনে যে সমস্ত কথা বলতেন,তারা এখন সেই সমস্ত কথা গুলোকে বাণী হিসেবে প্রচার করছে। কাবেরী সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক ঘেঁটে সেই গ্রুপ বার করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, ওই গ্রুপের এডমিন কিশলয় আর কিরন। আরও বেশ কয়েকজন রয়েছে তবে কাবেরী তাদেরকে চেনে না। গ্রুপে প্রায় দশ হাজার সদস্য রয়েছে। গ্রুপে কোথাও মাস্টারমশাইকে অসম্মান করা হয়নি। বরং মাস্টারমশাইকে তাদের গুরু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তার আদর্শ সমাজের প্রতিটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। হয়তো, মানুষটার মধ্যে অনেক খারাপ চিন্তা ধারা ছিল।,কিন্তু মানুষটার মধ্যে অনেক ভালো জিনিসও ছিল। ভালো জিনিস গুলো সবার মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এমনকি গ্রুপে তানভীর স্যারে তৈরি করা কয়েকটা ইংরেজি ছোট ছোট ফর্মুলাও রয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণ স্যারের তৈরি।সেগুলোর মাধ্যমে বাচ্চারা অনেক সহজেই ইংরেজি শিখতে পারবে। বিষয়টি খুবই ভালো। কিন্তু কোথাও একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। আসলে, এই গ্রুপের মাধ্যমে কি মাস্টারমশাইকে সম্মান দেওয়া হলো? না চরম অপমান করা হলো? তা জানে না কাবেরী। তবে সে এটুকু বুঝতে পারছে, ফেসবুক গ্রুপ স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ ফেসবুকে অনেক নামকরা বিজ্ঞানী এবং সাহিত্যিকদের নামে গ্রুপ রয়েছে।সেই গ্রুপের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন বাণী বিভিন্ন ফর্মুলা প্রচার করা হয়।সেখানে যদি মাস্টারমশাইয়ের নামে এমন গ্রুপ থাকে,তাহলে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু মাস্টারমশাই যে ধরনের মানুষ, তিনি কখনো এই বিষয়টিকে স্বাভাবিক নেবেন না। তিনি কষ্ট পাবেন। তিনি এগুলো পছন্দ করেন না।
বাড়ি ফিরে আর রান্নাবান্না করলো না কাবেরী। খাওয়ার ইচ্ছে তার মধ্যে নেই। বারংবার মাস্টারমশাইয়ের কথা ভাবছে। এতকিছু অপমান সহ্য করেও তিনি বেঁচে আছেন। তিনি নিজের চোখে অনেক কিছু দেখলেন। তিনি হয়তো বুঝতে পারছেন, জীবনের আসল মানে কি? জীবন এতো সহজ নয়। জীবনকে বোঝার ক্ষমতা সবার থাকে না। তিনি কেবল বুঝতে পেরেছেন জীবনের মুহূর্তগুলো কতটা দামি। সব জায়গায় কেন তিনি এত প্রতারণা হলেন? শুধুমাত্র তিনি ভালো মানুষ বলে? তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন বলে? সমাজকে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন বলে? যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। যারা নতুনের পথ দেখায় তারা সব সময় অবহেলার শিকার হয়। বঞ্চিত হয়। যোগ্য সম্মানের পরিবর্তে অসম্মানিত হন। শিকার হয় প্রতারণার। যদি সব সময় এমনটা চলতে থাকে, তাহলে, হয়তো,এই পৃথিবীর বুকে আর কখনো ভালো মানুষ জন্মাবে না। জন্মালেও তারা সব সময় আড়ালে থাকবে। কাবেরী এমন আজগুবি কথা ভাবছে। হঠাৎ তার কানে বেশ কয়েকজন ছেলের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।বাড়ির সামনে বেশ কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক টর্চলাইট ঘোরাচ্ছে। একা বাড়ির বাইরে বের হতে সাহস হল না কাবেরীর। জানালার পর্দা সরিয়ে ছেলেগুলোকে দেখার চেষ্টা করল। তাদেরকে ছেলে বলা ভুল,তারা প্রায় সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক। রুমের মধ্যে থেকে তাদেরকে দেখল। কিছুক্ষণ পর কাবেরী নাম ধরে কেউ একজন ডাকলো। গলাটা খুব চেনা চেনা। চেনা গলা শোনে কাবেরীর একটু সাহস বাড়লো। দরজা খুলে বাড়ির বাইরে আসলো। গ্রামে বেশ কয়েকজন ছেলে এসেছে। কাবেরীকে পুজোর চাঁদা দিতে হবে। তারা ক্লাবের সদস্য। কাল সকালে কাবেরী চলে যাবে এই খবরটা তারা কারোর কাছ থেকে শোনেছে। তার কাছে কিছু সাহায্য নিতে তারা এসেছে। যদিও পুজো এখন নয়, কিন্তু কাবেরী কাল চলে যাবে। তারপর তার আর দেখা পাওয়া যাবে না।কাবেরী তাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।এতগুলো ছেলের মধ্যে সে একজনকে চিনতে পারে। উপস্থিত ছেলেদের মধ্যে কিরণ রয়েছে। ছেলেদের প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে, সে কিছুক্ষণ কিরনের সঙ্গে একা কথা বলতে চাইল। ব্যাপারটিকে স্বাভাবিক নিয়ে সবাই চলে গেল। কিরণ কাবেরীর বাড়িতে এসে বসলো। কিরণ বিবাহিত পুরুষ। তার কোলে একটা মেয়েও আছে। কাবেরী কোনো রকম ভাবে কথা ঘোরালো না। সে সোজাসুজি কিরণকে প্রশ্ন করল, ‘মাস্টারমশাইয়ের নামে এমন ভিডিও বানানো কি জরুরি ছিল?’ কাবেরীর কথা শোনে কিরনের খটকা লাগে। তাহলে কাবেরী ভিডিও দেখেছে। নরম গলায় বলল,’তুই আমাকে এই জন্য থাকতে বললি!এত বছর পর দেখা হল,কোথায় জিজ্ঞেস করবি কেমন আছিস, কি করছিস, তা না করে কি সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিস??
‘আমি যা প্রশ্ন করছি তার সঠিক সঠিক উত্তর দে।’ গম্ভীর কণ্ঠে কাবেরী কিরনকে বলল।
‘আসলে অনলাইন প্লাটফর্মটাই এমন। মানুষের জীবনে সব সময় দুঃখ কষ্ট লেগে থাকে। সেখানে যদি আমি কোনো মানুষকে ভিডিও কিংবা মিম বানিয়ে হাসাতে পারি সেটাই আমার প্রাপ্তি।আমি তাই করেছি। এতে অন্যায়ের কি আছে? আর তুই একটা জিনিস ভালো করে লক্ষ্য করবি, স্কুল জীবন নিয়ে কোনো ভিডিও বানালে সেটার ভিউজ খুব দ্রুত বাড়ে। আমি প্রাথমে স্কুল জীবন নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়ে ছিলাম দারুন ভিউজ পিয়েছি। তারপর ভাবলাম তানভীর স্যারেরকে নিয়ে একটা ভিডিও বানাই। মানুষটা বড্ড ইন্টারেস্টিং। ভিডিও বানালাম আর দারুন ভিউজও পেলাম। কিন্তু আমি স্যারকে কোথাও অপমান করিনি। স্যারের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি। সেই ভিডিওর মাধ্যমে আমি অনেক নতুন সাবস্ক্রাইবার পেয়েছি, আর কিছু পরিমাণ টাকাও রোজগার হয়েছে।’
‘বারে বা! তুই তো স্যারের গর্ব। তুই টাকার কাছে স্যারের মান-সম্মান বিক্রি করে দিলি। একবারও ভাবলি না স্যার কতটা কষ্ট পেতে পারে। কিশলয় ও এমন করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করতে,সে বলল তার কাছে মাস্টারমশাই চরিত্রটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আর তুই বললি, স্যারে নাম ব্যবহার করিসনি। এখানেই তোদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল। তোর ভিডিও আর কিশলয়ের বইতে স্যার অমর হয়ে থাকবেন,কিন্তু অসম্মানিত ভাবে। আমি যখন স্যারের বাড়ি থেকে ফিরে আসছিলাম, তখন স্যার বললেন, কাউকে সম্মান করতে না পারিস,কিন্তু তা বলে তার কখনো সর্বনাশ করিস না। স্যারের কথাটা হুবহু মিলে গেল। তোরা স্যারের অনেক বড় একটা সর্বনাশ করে দিয়েছিস। মাস্টারমশাইকে যোগ্য সম্মানতো দিলি না উল্টে….।’
কিরণ এবার নড়েচড়ে বসলো। সে দ্রুত বলল,’এতে অসম্মানের কি আছে? এটা মজার বিষয় মজা নেওয়া উচিত।’
‘আমরা এ যুগের ছেলেমেয়ে। আমাদের কাছে এগুলো মজার বিষয়, কিন্তু মাস্টারমশায়ের কাছে এই গুলো মজার বিষয় নয়। তিনি এগুলো দেখে শোনে কষ্ট পেয়েছেন। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। শেষ বয়সে এসে নিজের ছেলেমেয়েদেরকে কাছে পাননি।আর তাঁর ছাত্র ছাত্রীরা…. আমার ভাবতেও অবাক লাগছে, স্যারের সম্মানহানির পেছনে কেবল আমাদের ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীরাই শুধু দায়ী। অন্য কোনো ছাত্র ছাত্রীরা এমন করেনি। হয়তো সবাই এগুলো স্বাভাবিক নিয়ে নেবে। কিন্তু মাস্টারমশাই! তিনি কি কখনো এই বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক নেবেন! কখনো নেবেন না।’
কিরণ তড়িঘড়ি করে বলল, সে ভিডিও ডিলিট করে দেবে। কাউকে অসম্মান করার উদ্দেশ্যে সে কখনো ভিডিও বানায়নি। সে মাস্টারমশাইকে যথেষ্ট সম্মান করে। তার জন্য কারোর সম্মান হানি হোক তা চায় না। কিন্তু,ভিডিও ডিলিট করে দিলে কি সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? পৃথিবীর বুকে কিছু কিছু জিনিস সৃষ্টি করলে যতটা না ভাইরাল হয়, সেই জিনিসটাকে ধ্বংস করে দিলে তার চেয়ে বেশি ভাইরাল হয়। একজন মানুষ সকালে উঠে কাজ করতে যায়। সকালে কাজের দিকে তার বেশ মনোযোগী থাকে। তারপর বেলা বাড়তে থাকে আর তার ক্লান্ত চলে আসে। তার আর কিছু ভালো লাগে না। বিশ্রাম খোঁজে। কাজের শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে আসে। সারারাত শান্তিতে ঘুমোতে চায়। কিন্তু সেই মানুষটাকে যদি সারারাত শান্তিতে ঘুমোতে না দেওয়া হয়? তাহলে তার অবস্থাটা কেমন হবে? সে ছটপট করতে থাকবে। নিজের মৃত্যু নিজে কামনা করবে। একটা মানুষের জীবন একটা দিনের মতো। একটা মানুষ যখন ছোট থাকে তখন সে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। সবকিছুই তার ভালো লাগে। কিন্তু যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তার মধ্যে ক্লান্ত চলে আসে। সে সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাকে এগিয়ে যেতে হয়।আর বার্ধক্যটা রাতের মতো। বার্ধক্য অবস্থায় শান্তিতে জীবন যাপন করতে চায়। ঘুমোতে চায়। সমস্ত কিছুর বিনিময়ে শান্তি খোঁজে। কিন্তু মাস্টারমশাই ঘুমোতে পারেনি। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মাস্টারমশাইয়ের মুখে শোনা গেছে, বাচ্চা ছেলে মেয়েরা নাকি তাকে দেখে হাসাহাসি করে। একজন শিশুকে সাধারণত আমরা শেখাই, যার উপরে আমরা হাঁটছি সেটা মাটি। আর উপরে যেটা দেখা যাচ্ছে বিশাল শূন্য জায়গা সেটা হচ্ছে আকাশ। তারা সেটাই শেখে।তাদের যদি আমরা উল্টাটা শেখাতাম তাহলে তারা সেটাই শিখতো। বাচ্চা ছেলে মেয়েরা মাস্টারমশাইকে বুড়ো বলে ডাকে। একজন বৃদ্ধর কাছে এই শব্দটা কতটা অপমানজনক সেটা কেবল একজন বৃদ্ধ বুঝতে পারবে। যখন কোনো বাচ্চা শিশু কান্না করে,কিংবা খাবার খায় না,বা ঘুমোতে চায় না তখন আমরা সাধারণভাবে সমাজ একটি অবহেলিত মানুষের দিকে হাত তুলে বলি এই দেখ বানোর, হনুমান, পাগল, না খেলে তোকে ধরে নিয়ে যাবে সে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। এই দেখ বুড়ো, এই দেখ পাগল…..। কিন্তু আমরা কখনো কি বিপরীত মানুষটার কথা ভাবি। আমরা যখন কোনো শুভ কাজে বের হই,তখন সমাজের বিশেষ কিছু মানুষের মুখ দেখলে মনে করি আজকের দিনটা ভালো যাবে না। তার মুখ দেখেছি মানে সারাটা দিন খারাপ যাবে। অনেক সময় আমরা শুভ কাজটাও শুরু করি না। কিন্তু কখনো কি ওই মানুষটার কথা ভাবি। ওই মানুষটার কতটা কষ্ট হতে পারে। সে হয়তো সামনে থেকে একগাল হাসি দিয়ে বিদায় নেয়। আবার কখনও ইচ্ছে করে বাচ্চা ছেলেটাকে ভয় দেখিয়ে দেয়। কিন্তু মনের মধ্যে সে কি কখনো বানর কিংবা অন্য কোন শব্দ শুনতে পছন্দ করে? করে না। শুধু মেনে নেয়। সমস্ত খারাপ কাজ আমরা বড়রাই করি। আর মিছামিছি তার দোষগুলো শিশুদের উপর চাপায়ই। মাস্টারমশাইকে দেখে হাসতে থাকা শিশুরা দায়ী নয়,দায়ীতো তার পরিবারের সদস্যরা।
পর্ব ২৬ আসছে
একটু তাড়াহুড়ো করে লিখেছি। ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।