মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ২২

0
466

“মেঘভেলায় প্রেমচিঠি ”

২২.

‘হেলো,সূর্য মাহতাব স্পিকিং। ‘

স্পষ্ট কন্ঠস্বরের কাছে একটু ঠুনকো মনে হলো নিজের গলাকে। রোদসী আমতা আমতা করে বলল,

‘ইয়া..মানে’

‘জ্বি? ‘

‘আসলে আমি রোদি। ‘

‘সরি, কোন রোদি?’

রোদসী বুঝতে পারলো, সে বোকামি করে ফেলেছে।
স্যার কীভাবে তার এই নাম জানবে! উফ, নিজের উপর বিরক্ত হলো কিছুটা। গলা পরিষ্কার করে বলল,

‘স্যার, আমি ক্লাস টেনের রোদসী বলছি। আমি, আপনার কোচিং এ পড়তে চাই। ‘

‘ওহ আচ্ছা। তাহলে, আজ সন্ধ্যায় একবার এসে ভর্তি হয়ে যাও। কাল থেকে ক্লাস করবে। ‘

‘জ্বি জ্বি, ধন্যবাদ স্যার। আমি আজই আসছি। ‘

রোদসী কল কেটে হাফ ছাড়লো। তারপর বাসায় এসে কোচিং এর কথা মা’কে জানালো। তিনি আপত্তি করলেন না ৷ যদি এবার একটু ভালো রেসাল্ট করতে পারে!

সন্ধ্যায় সোহাকে আর রিম্মিকে ফোন করে বলে দিলো কোচিং এর কথা। নিজেও সাজগোছ করে বের হলো। রোদসী বরাবরই একটু সাজতে পছন্দ করে। হাতের কবজিতে সবসময়ই দুই মুঠো জামার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি পড়ে। মাথায় একটু ডিজাইন করে দুটো লম্বা বেণী করে রাখে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ছিমছাম পাতলা শরীর। যদিও চিকন হওয়ায় মাঝে মধ্যেই বন্ধু মহলে ঠাট্টা করা হয়। তবে, ওসব গায়ে থোরাই না মাখে রোদসী! সেসবে কান দেয়না সে। সারাদিন সেজেগুজে এদিকে ওদিকে ঘুরে দুষ্টুমি করাই প্রধান কাজ তাঁর। অবশ্য এর পেছনে একটা কারণ আছে। প্রথমত নানাবাড়িতে যেমন সে আদরিনী। তেমন, এখনের বাড়িটাতেও আহ্লাদী। বয়স সাত কিংবা আট হবে, তখন থেকে মনিরুল হোসেনের এই কেনা ফ্ল্যাটটাতে এসে থাকছে। পুরো বাড়িতে প্রতি ঘরে শুধু ছেলে। নয় তলা বাড়ির এই বিল্ডিংটায় একমাত্র মেয়ে রোদসী। আর বাড়ির বেশিরভাগ সদস্যরাই খুব আন্তরিক। তাই, বলতে গেলে সারাদিন ও বাসা এ বাসা করে লাফিয়ে বেরায়। চঞ্চলে ধাঁচের মানুষ হওয়ায় সবার সাথেই দ্রুত মিশে যায়। তবে, এই আহ্লাদের কারণে, অনেকেই ফার্মের মুরগী বলে ডাকে তাঁকে। কারণ, একটুতেই সে অসুস্থ হয়ে যায়। আবার হুটহাট, এদিকে ওদিকে আছাড় খেয়ে পড়ে ঠুসঠাস । এই যেমন কয়েক দিন স্বভাববশত গান শুনতে শুনতে ঘর মুছছিলো শখ করে। বলা যায়, কেয়া হোসেনের বকাঝকায়। রোদসী প্রমাণ করতে গেছিলো, সেও খুব কাজের। মোটেও অকর্মা নয়। আর যা হওয়ার তাই!
কীভাবে যেন পা পিছলে ঠাস করে পড়ে গেলো। মাথায় আঘাত পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান। পুরো বাড়ির মানুষ হাসপাতালে ছুটলো। আর কোনোদিন ভয়ে কেয়া ওকে কাজ করতে পাঠান না। ওহ! শুধু মাঝে একদিন চুলায় রান্না বসিয়ে একটু ছাদের কাপড় আনতে গেছিলেন, সেদিন ওকে বলেছিলেন যাতে ডালটা একটু নেড়ে দিয়ে বাটিতে ডাল ঢেলে রাখতে। রোদসী তারপর ডাল পাতিল থেকে নামিয়ে বাটিতে রেখে, বোকার মতো খালি পাতিলটা চুলায় রেখে দিলো। চুলার দিকে খেয়ালও করলো না। অনেকক্ষণ পর কেয়া এসে দেখেন অল্পের জন্য পাতিলে আগুন ধরেনি। রোদসী শিশুসুলভ ভাবে বলল,

‘আমার কী দোষ! তুমিই তো বললে, ডালটা বাটিতে রাখতে। তাই আমি ডাল রেখে পাতিল চুলোয় রেখেছি। ‘

কেয়া হা হুতাশ করতে লাগলেন। এর কীভাবে বকবক কমিয়ে একটু বুদ্ধিমান বানাবেন সেই চিন্তায় রইলেন। রোদসী নিজের দোষ আগেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু দোষটা নিজের মাথায় নিতে হবে , আরও বকা খেতে হবে ভেবে চুপচাপ সটকে পড়ে।

রিকশা ভাড়া দিয়ে সামনে তাকালো রোদসী। ঠিক সামনেই সাইনবোর্ড টানানো আছে। সেখানে লেখা,
সূর্যপ্রতীক একাডেমিক কোচিং সেন্টার। রোদসী ভেতরে ঢুকে গেলো। তেমন কেউ এখনো আসেনি।
ধীরে ধীরে গিয়ে দেখলো, একটা স্টুডেন্টকে বড় রুমে বেঞ্চ বসানো জায়গায় উল্টো পিঠে বসে কিছু বোঝাচ্ছে। রোদসী পেছনে থেকে ডাক দিতেই তিনি ফিরে তাকালেন। উঠে দাঁড়িয়ে কাছে আসলেন। রোদসী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সূর্য স্মিত হেঁসে বললেন,

‘রোদসী? ‘

রোদসী কোনো রকম হেঁসে বলল,

‘জ্বি স্যার। ‘

‘বুঝেছি, এসো। ‘

বলে সূর্য তাঁকে অফিস রুমে নিয়ে গেলো। ফর্ম পূরণ করে দিলো রোদসী। সূর্য স্যারকে যদিও আগে দুইবার দেখেছে কিন্তু তেমন কোনো কথা বলেনি। ছয় সাত যাবৎ স্কুলে জয়েন করেছে। ওদের ক্লাস নেয় মাঝে মধ্যে। ফর্সা দেখতে, খুব বেশি লম্বা নয়। স্বাস্থ্যবান বলা চলে। খারাপ লাগলো না ওর। পরদিন থেকে তিনজন কোচিং এ গেলো। ধীরে ধীরে রোদসীর সরল মনে লাগলো, সূর্য মানুষ হিসেবে খুব ভালো। মন খারাপ করার কোনো সুযোগ নেই। মনে মনে অত্যন্ত শ্রদ্ধাবোধ হলো। সঙ্গে তীব্র বিশ্বাস। এমনকি স্কুলের ক্লাসেও খুব হাসিঠাট্টা করে লোকটা। কোচিং এ আসার প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। একদিন কোচিং-এ পড়ার মধ্যেই হঠাৎ একটা সুন্দরী একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো। রোদসী চিনতে পারেনি। তাই সোহাকে বলল,

‘এটা কে?’

সোহা বললো সেও চিনেনা। কিছুক্ষণ পর একটা স্টুডেন্ট বলল,এটা তাঁর বউ। সবাই অনেক অবাক হলো। আজ পর্যন্ত এমন কোনো কথা হয়নি, বা স্যার বলেনি সে বিবাহিত। প্রায় সবাই তাঁকে অবিবাহিত বলেই চেনে। রোদসী স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাহ! স্যার বিবাহিত!’

সূর্য একটু জোর করে হেঁসে বলল,

‘ওই আরকি। ‘

সূর্যের বউ নদী তখন পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল,

‘ওমা! তোমরা জানতে না? ‘

রোদসী সহ সবাই মাথা নাড়িয়ে না বললো। কথায় কথায় নদী বলল, সেও এক সময় এখানে স্টুডেন্ট ছিলেন। তারপর তাদের প্রেম, বিয়ে। নদী মেয়েটাকে দেখে বোঝা গেলো, সে সূর্যকে খুব ভালোবাসে। সবকিছুর মধ্যে একটা জিনিস একটু খটকা লাগলো রোদসীর। সূর্য নিজের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে এতো ইতস্তত কেনো?

চলবে-

(গতকাল সবাই অনেক মন্তব্য করেছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা। তাই আজ ছোট হলেও দেয়ার চেষ্টা করলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here