মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ২৪

0
469

”মেঘভেলায় প্রেমচিঠি ”

২৪.

ভয়ে চুপসে গেলো রোদসী। পেছনে ফিরে দেখলো সূর্য স্যারের মুখে রহস্যময় হাসি। চোখে ভয় আর অবিশ্বাস নিয়ে রোদসী বলল,

‘আ.আমার হাত ছাড়ুন। ‘

সূর্য যেনো কথাটা শুনে খুব আমোদ পাচ্ছে। সে রোদসীকে টান দিয়ে বলল,

‘ছাড়ার জন্য তো হাতটা ধরিনি রোদ। ‘

‘মানে! ‘

‘মানে হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘

রোদসী ঘৃণার চোখে তাকালো। ক্রমশ বুক ভারি হয়ে এলো। নিয়তির কী নিষ্ঠুর লেখন! এতো বিশ্বাস করেছিলো এই শিক্ষক নামের মানুষটাকে। অথচ শিক্ষক কিনা ভক্ষক বের হলো। রোদসী রেগে সূর্যকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,

‘ছিঃ, লজ্জা করেনা আপনার! ঘরে এতো সুন্দর বউ রেখে অন্য নারীর দিকে নজর দিচ্ছেন!’

‘এখানে লজ্জার কী আছে রোদ! শোনো আমার কথাটা, আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি৷ সেই প্রথম দিন তোমাকে দেখেই আমার কিছু একটা অনুভব হয়েছে। নদীকে আমি ভালোবাসিনা তা বুঝতে পারছি। ‘

রোদসী ক্রোধে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘আপনার এই নোংরামি বন্ধ করুন। আমি এক্ষুনি চলে যাবো এখন থেকে, জীবনেও মুখ দেখতে চাইনা আপনার। ‘

রোদসী দ্রুত পদে বের হতে নিলো কিন্তু সূর্য পেছনে থেকে মুখ চেপে ধরলো। তুমুল ধস্তাধস্তিতে ঘেমে উঠেছে রোদসী। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচানোর। সূর্য একটা রুমাল পকেট থেকে বের করে রোদসীর নাকে চেপে ধরতেই ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। সূর্য হাফ ছাড়লো ৷ ফোন করে একজনকে গাড়ি নিয়ে আসতে বললো। এসব হয়তো তার পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো৷ গাড়ি আসতেই কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। পুরনো একটি বাড়িতে এসে পৌঁছালো। সূর্য সাবধানে লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলো।

পায়ের পাতায় সুচালো কিছু অনুভব হলো৷ মাথায় চিনচিনে ব্যথায় চোখ মেলে তাকালো রোদসী। কী আশ্চর্য! হাত পা কিছুই নাড়াতে পারছেনা। খুব কষ্ট সোজা হয়ে পুরোপুরি চোখ মেলে দেখলো একটা চেয়ারের সঙ্গে হাত পা মুখ সহ বাঁধা তার। বুক ধক করে উঠলো। নিজের জামা কাপড় ঠিকঠাক দেখতেই স্বস্তি পেলো। কিন্তু চারদিকে এতো বেশি অন্ধকার যে কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা। খুলবে না জানা স্বত্বেও আরও একবার খোলার চেষ্টা করলো। তবে, পেরে উঠলো না যখন তখন হাসফাস করে কেঁদে উঠলো। ঘন্টা দুই বাদে কেউ ঘরে ঢুকলো। রোদসী বুঝতে পারছে, কেউ ওর দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। বুঝতে বাকি নেই,এটা সূর্য বৈকি কেউ নয়। সূর্য হাসতে হাসতে বলল,

‘কী? সব তেজ শেষ? তাহলে, একটা অপশন দেই তোমাকে। আমার কথা মতো, আমাকে বিয়ে করো আর মুক্তি পাও। ‘

রোদসীর চোখদুটো ছলছল করছে। এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি সে। রোদসী করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মুখটাও বাঁধা। কন্ঠ রোধ হয়ে আছে। ওর এই অবস্থা দেখে হো হো করে বিজয়ী হাসে সূর্য। তাচ্ছিল্য ফুটে ওঠে সেই হাসিতে। বুক ফেটে চৌচির হয় রোদসীর। রোদসীর মুখটা সূর্য খুলে দিতেই রোদসী বলে,

‘দেখুন, আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি! প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। আমি কাউকে কিছু বলবো না। ‘

সূর্য বাঁকা হেসে রোদসীর গালে হাত ছুঁইয়ে বলে,

‘তুমি এখন এমনিতেও কিছু বলতে পারবেনা জান। এটা আমার রাজত্ব। তোমার কাছে এখন একটাই অপশন, আমাকে বিয়া করা! ‘

রোদসী ঘৃণার চোখে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,

‘কখনোই না! মরে গেলেও তোর মতো শয়তানকে বিয়ে করবো না আমি। ‘

সূর্য রেগে থাপ্পড় দেয় রোদসীর গালে। রোদসী খিঁচে থাকে। সূর্য ফোসফাস করে বলে,

‘তাহলে এখানেই পঁচে গলে মর! ‘

সূর্য দরজা লক করে বের হয়ে গেলো। চিৎকার যেনো না করতে পারে সেজন্য মুখে পট্টি বেঁধে দিয়েই বের হয়। নিরুপায় হয়ে মাথা এলিয়ে থাকে রোদসী। জানে না এর শেষ কোথায়। আকাশে হয়তো রাত নেমেছে। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। মনে মনে আল্লাহর কাছে রহমত প্রার্থনা করে। ঘুমিয়ে পড়ে একসময়। দীর্ঘ সময় পর চোখ মেলে দেখে একই অবস্থায় পড়ে আছে। ক্ষুধায় পেট মোচড় দিয়ে উঠছে। মুখ দিয়ে আওয়াজ করে কাউকে ডাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু জনশূন্য স্থানের সঙ্গে সেই ফিকে আওয়াজটুকু মিলিয়ে যাচ্ছে।
শুষ্ক চোখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। খাবারের জন্য রূহ আর্তনাদ করছে। এভাবেই দুইটা দিন কেটে যায়। খাবার পানির অভাবে মরার দশা হয়েছে। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়েছে যেনো৷ গভীর রাত, যখন রোদসীর চোখ নিভু নিভু। আত্মা যেনো শরীর থেকে বের হয়ে যেতে চায়। দরজা ভেদ করে আবারও প্রবেশ করে সূর্য। ভেবে নেয়, এবার হয়তোবা মেয়েটার তেজ ভেঙেছে। মুখের উপর থেকে পট্টি সরিয়ে বলে,

‘এবার আর কোনো আপত্তি নেই তো! ‘

হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। দুর্বল শরীরে নুইয়ে পড়ে রোদসী। সূর্য বিজয়ী হাসি হেসে রোদসীকে তুলে নেয়। রোদসী অনুভব করে, নোংরা দুটো হাত ওর দিকে দ্রুত বেগে ধেয়ে আসছে। কিংবা জীবনের প্রথম ধ্বংসের শুরু এখানেই।

চলবে-
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here