তোর_জন্য ৫+৬

0
4672

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০৫+০৬

হঠাৎই মাসুদ সাহেবের হাত থেকে টিভির রিমোট পড়ে গেলো।
রিমোট পড়ার শব্দে সবার মনযোগ মাসুদ সাহেবের দিকে গেল। অতঃপর টিভির দিকে চোখ দিতেই মুহুর্তের মধ্যেই নিরবতার ছায়া নেমে আসছে,,,,,,,,,,,,,।
!
!
!
আট বছর আগের কাহিনি আবার শুরু হইছে!!
(মনির মা-বাবা) আশরাফ সাহেব ও তার সহধর্মিণীর খুনের তদন্ত শুরু হচ্ছে নতুনভাবে। ঠিক আট বছর পরে।
কিন্তু আশরাফ সাহেবের এমন ভয় পাওয়ার কি আছে!
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সবাই তারদিকে।
আশরাফ সাহেব সবাইকে ঠিক রাখার জন্য মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন,,,,,
অবশেষে খুনের রহস্য উদ্ধার হবে।কিন্তু আট বছর পরেই বা আবার নতুন করে তদন্ত শুরু হলো কেন!কারাই বা করলো,,,,

আদ্রিয়ান ঃ পাপ বাপকেও ছাড়েনা।
তাই হয়তো,,,,,,।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ওর বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কথাটা আদ্রিয়ান কাউকে উদ্দেশ্য করে বলেনিতো!!
তিনি সাথে সাথে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো, দেখলেন আদ্রিয়ান মিটমিট করে হাসছে।

মাসুদ সাহেব বুঝতে পারলেন কিছুটা,,, তার ছেলের হাত কিছুটা হলেও আছে এই তদন্তের মধ্যে। তাই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।
রোহানা আন্টি মাসুদ সাহেবের দিকে তাকালেন একবার। তার মুখটাও চিন্তায় শুকিয়ে গেছে হয়তো।
আশিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো,,,দেখছে
আদ্রিয়ানের মুখে এখনো হাসির রেখে ফুটে আছে।
রোহানার বোন রোহানার দিকে তাকিয়ে আবার মেয়ের(রিয়ার) মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আদ্রিয়ানের ফুফু চা নিয়ে আসলো,,,সবাইকে চুপচাপ দেখে তিনি রান্নাঘরের দিকে পা দিলেন,তখনি,,,,,

আদ্রিয়ান ঃ ফুফু!!
আদ্রিয়ানের ডাকে পিছনে ফিরলেন।

ফুফুঃ হুম।

আদ্রিয়ান ঃ নিলয়কে দেখছিনা যে। আমি আসছি সকালে কিন্তু ও এয়ারপোর্টেও গেলোনা। বাড়িতেও আসলোনা একবারের জন্যও।
আমি আসছি দেশে,,,নিলয় কি জানেনা(মন খারাপ করে)

ফুফুঃ আদ্রিয়ানের কথা শুনে মন খারাপ হহে গেলো।
আসলে নিলয় বাড়িতে আছে।কোথাও বের হয়না বাসা থেকে। আমার অনেক রান্না পড়ে আছে। আমি যাচ্ছি( কথা এড়িয়ে চলে যেতে চাইলেন)।

আদ্রিয়ান ঃ এড়িয়ে যাচ্ছো আমায়?
কি হয়েছে বলো! আমি আসছি জেনেও নিলয় বাড়িতে থাকবে এমন কোনো কথা নাই।
সত্যি বলবা নাকি,, আমি কিছু করবো(রেগে)

ফুফুঃ একটু ভয় পেলো,,,সবাই জানেন আদ্রিয়ানের রাগ হলে কি করতে পারে। এতদিনের সাধনা নিমিষেই শেষ করতে পারেননা।
যাদের সন্দেহ করছেন, কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার জন্য তিনি কিছুই করতে পারেননি।
এখন আদ্রিয়ান আসছে,তাহলে হাত ছাড়া কিভাবে করা যায়। এসব ভেবেই তিনি আদ্রিয়ানকে সত্য কথা বলে দিলেন।
~~আসলে নিলয়ের পা নেই(মাথা নিচু করে,, আমতা আমতা করে বললেন)

আদ্রিয়ান ঃ এ কথাটা হয়তো শুনতে চাইছিলোনা।
~মানেএ!!কিভাবে কি হইছে!!
ওর পা নেই(আফসোস নিয়ে)

ফুফুঃ চোখের পানি চলে আসলো।কিন্তু ভয়ে কিছু বললোন। তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে ছুটে গেলেন।

আদ্রিয়ানের বিষ্ময় কাটছেনা এখনও। এটা কি শুনলো! নিলয়ের পা নেই!
মানুষ এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারে!! নিলয়কেও শেষ পর্যন্ত ছাড়লোনা!
আদ্রিয়ান রাগে ঘৃনায় তাকালো,কারো দিকে। কিন্তু কিছু বললোনা।
শুধু আফসোস জানালো ইশারায়।
অতঃপর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে উঠে গেল। নিলয়কে দেখার উদ্দেশ্য। সাথে ওর দুইটা বন্ধু গেল আশিক, নিবিড়।

মাসুদ সাহেব কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ানের জন্মদিনের আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। যা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। পরে হয়তো অনেক সময় চলে যাবে কাজের কিছুই হবেনা।

~~~
রুমে বসে বসে আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথাগুলো ভাবছি। হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। ঠিক গিরগিটির মতো।
আমার ভাবনায় আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে -পুড়িয়ে ছাই করে দিলো মিস. হাফ প্যান্ট রিয়া।
দেখলেই গা জ্বালা করে। ইচ্ছা করে ঘোড়ার লেজের মতো চুলগুলোকে কেটে দিতে পারি। তাহলে আর আমার আদ্রিয়ান ভাইয়ার কাছে ঘেষে থাকবেনা।
আমার আদ্রিয়ান ভাইয়া!!কথাটা মনে পড়তেই নিজে নিজেই লজ্জা পেলাম। সে আমার কিভাবে হয়। সে তো এই মিস. ঘোড়ার লেজেরই।
ঘোড়ার লেজ!!নামটা বড়ই অদ্ভুত,,, মানুষের নাম এটা হয়!!
ভেবেই নিজে নিজে হেসে দিলাম।
রিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাগে কটমট করছে। মনে হচ্ছে গিলে ফেলবে আমায়।
গিলে ফেলতেও পারে,,,আস্ত একটা রাক্ষসী। আদ্রিয়ান ভাইয়াকেই নিয়ে গেল। হুহ,,।
তাতে আমার কি,,,,!

~~~~~~~~~~~~~

আদ্রিয়ান যে এমন একটা কান্ড করতে পারে। তা বুঝতেই পারছিল মাসুদ সাহেব।
আদ্রিয়ানের ফুফু ভয়ে ঢোক গিললেন। কোনো বিপদ আসবেনা তো আবার!!

আদ্রিয়ান ও ওর বন্ধুরা নিলয়ের বিছানার পাশে বসে আছে। নিলয়ের মাথার কাছে আদ্রিয়ান।
নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নিলয় ঘুম থেকে জেগে উঠে আদ্রিয়ানকে দেখে খুশিতে দিশেহারা হয়ে পড়লো।
আদ্রিয়ানের সাথে ওর ফিরে যাওয়া অনেক কথা বললো। আদ্রিয়ান বিদেশে যাবার পর থেকে নিলয় আদ্রিয়ানকে কতোটা মিস করছে সেই কথাগুলো।
!
!
!
!
!
কথার শেষে আদ্রিয়ান নিলয়কে প্রশ্ন করলো। ওর পা ভেঙে গেলো কিভাবে।
আদ্রিয়ানের এমন প্রশ্নের জন্য নিলয় তৈরি ছিলনা। কিন্তু আদ্রিয়ানের রাগ ও জেদের কাছে হার মেনে নিলয়কে সত্যি কথাটাই বলতে হলো।

নিলয়ের বলা কথাগুলো শুনে আদ্রিয়ানের ঘোর কাটছেনা। হাত-পা কাঁপা শুরু করলো,,,,,।

#চলবে

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ০৬

নিলয়ের বলা কথাগুলো শুনে আদ্রিয়ানের ঘোর কাটছেনা। হাত-পা কাঁপা শুরু করলো,,,,,।

শেষ পর্যন্ত ওর বাবা এতটা নিচে নেমে গেলো!! কিভাবে পারলো এটা করতে! তাছাড়া নিলয়তো তার একটামাত্রই ভাগ্নে,,। নিলয়হীন ফুফুর রক্ত চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। তাহলে জেনেশুনে বাবা কিভাবে এটা করতে পারলো!!
তাছাড়াও বাবা কিভাবে পারলো আমাদের সবাইকে ঠকাতে!! কিভাবে পারলো আম্মুকে ঠকাতে!!!
ভেবেই আদ্রিয়ানের রাগে-কষ্টে চোখ দিয়ে নোনা জল বের হবার অবস্থা।
তবুও নিজেকে সামলে নিলয়কে কোলে নিয়ে ওর গন্তব্যে বের হলো।
আদ্রিয়ানের বন্ধুরা ভুত দেখার মতো আছে। ভয়ে কিছু বলছেনা,,,কি হতে পারে সামনে ভেবেই সবার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

_______________________

রিয়াঃ খুব খুশি লাগছে তাইনা!!(রেগে)।

আমিঃ কিছুই বুঝতে পারলাম না। খুশি লাগবে কেন হঠাৎ!!
এই ডাইনির মনে হয় নিশ্চয় মাথা খারাপ হইছে।

রিয়াঃ কি কথা বলছিস না কেন!(রেগে)
শোন! আশ্রিতা আছো আশ্রিতার মতো থাকিস। একদম বাড়ির মালিকের দিকে চোখ দিবিনা।
তাছাড়াও এভাবে অন্যের বাড়িতে পরে থাকার কোনো মানেই হয়না।
কত টাকা লাগবে তোর! আমি দিচ্ছি,, কিন্তু দয়া করে এ বাড়ি থেকে চলে যা।
আর আমার আদ্রিয়ানের পিছুপিছু ঘুরবিনা।
যদি আমার কথা না শুনছো,, তাহলে আমার থেকে খারাপও কেউ হবেনা (রেগে)
ডাইনিটা কথাগুলো বলেই চলে গেলো।

~~আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। টাকার জন্য আমি এ বাড়িতে পরে আছি!!
সত্যিই তো আদ্রিয়ান ভাইয়ার জন্যই তো ছিলাম।
কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়াকে ছেড়ে আমি চলে যাবো!!
আমার তো অনেক কষ্ট হবে।কিন্তু ভাইয়ার!! তার তো রিয়াই আছে।(ভাবনার মাঝে আবারও ডাইনির আগমন)

রিয়াঃ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
আমি তোকে এতক্ষন যে কথাগুলো বললাম,,,কেউ যদি একটুও জানতে পারছে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা বলে দিলাম।
তোর রুমে যে আমি আসছি,,তাও জেনো কেউ বুঝতে বা জানতে না পারে।

~আগে না হয় কোনো একটা কারনের জন্য এত অবহেলা পেয়েও ছিলাম।কিন্তু এখন আর এ বাড়িতে থাকার ইচ্ছা বা আশারা কোনোটিই নাই।

মাসুদ সাহেব একরকম দৌড়ে দৌড়ে নিলয়দের বাড়িতে গেলেন। কিন্তু তিনি যে ভয়টা পেয়েছিলেন ঠিক সেটাই হলো।আদ্রিয়ান সবকিছু জেনে গেছে!! নিলয়কেই বা কোথায় নিয়ে যাবে!!
ভয়ে মাসুদ সাহেবের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

নিলয়য়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো আদ্রিয়ান। এখন বাকি কাজ গুলো ঠিকঠাক সমাধান করতে পারলেই শান্তি।

বাড়িতে আসার পরে মাসুদ সাহেবেকে না দেখে আদ্রিয়ানের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। রাগে কটমট করতে করতে ফুফুর উদ্দেশ্য গেল।
আদ্রিয়ানের ফুফু চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। চোখেমুখে ভয় বিস্ময় নিয়ে আছেন।কিন্তু আদ্রিয়ানের কথায় তিনিও স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। তার নিলয় ঠিক আছে!!ভেবেই আদ্রিয়ানকে জরিয়ে কান্না শুরু করলো।
আদ্রিয়ান কোনোরকম শান্ত করে চলে আসলো।

আদ্রিয়ান ঃ আম্মু ( রোহানা কে উদ্দেশ্য করে) তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।

রোহানাঃ এখন কোনো কথা শুনতে পারবোনা।। অনেক কাজ পরে আছে তোর জন্মদিনের জন্য।

আদ্রিয়ান ঃ আম্মু কথাটা শুনো আগে। কাজ পরেও করা যাবে,,কিন্তু কথাটি না শুনলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

রোহানাঃ বললামতো কোনো কথাই শুনছিনা।
এরই মধ্যে মাসুদ সাহেব চলে আসলেন।

মাসুদ সাহেবঃ এখন কোনো কথা হবেনা। কি বলো রোহানা??

রোহানাঃ হুম( মুখে হাসি লেগেই আছে)

আদ্রিয়ান বিস্মিত হয়ে আছে। এত আয়োজন কিসের!! জন্মদিনের অনুষ্ঠানের জন্য মানুষ এতটা ব্যস্ত থাকে!!
পরমুহূর্তেই আদ্রিয়ানের ভয় লাগলো,,,, ও যা ভাবছে তাইই করছেনা তো!!!
যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাকেও।

রুমে এসে আদ্রিয়ান পায়চারি করছে। কিভাবে কি করা যায়। আদ্রিয়ানের বন্ধুরা দুগালে হাত দিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখছে।
অনেক্ষন ভাবনার পরে আদ্রিয়ান ও ওর বন্ধুরা পরিকল্পনা করে।

________________

রোহানা আন্টি অনেক্ষন আগে খাবার দিয়ে গেছেন।
এক কর্নারে রেখে বসে বসে ভাবছি কি করা যায়।কিভাবে যাওয়া যায় এই নরক থেকে।

রোহানা আন্টি কি বলে গেলেন!আদ্রিয়ান ভাইয়ার বিয়ে দিচ্ছে!
তার বিয়ে হবে,, আর আমি দেখবো!! তার থেকে আগেই চলে যাবো এ বাড়ি থেকে।
হাটুঁতে মাথা গুজে কান্না করছি। আদ্রিয়ান ভাইয়ার বিয়ে দেখার আগে চলে যাওয়াই ভালো। অজানা গন্তব্যে অথবা বাবা-মায়ের কাছে।

রাত ২টা প্রায়

বাড়ির সবাই প্রায় ঘুমিয়ে গেছে।
আমার ঘুম আসছেনা আসবেই বা কিভাবে ঘুমাইনি। অনেক চেষ্টা করছি এই বাড়ি থেকে পালাবার। কিন্তু সফল হচ্ছিনা।
এখন!!বাড়ির মেইন দড়জায়ই তালা লাগানো।
তাই আফসোস ও কষ্ট নিয়ে আবার স্টোর রুমে আসছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি।
কোনো শক্তি পাচ্ছিনা, শরীর দুর্বল লাগছে। তাই বিছানায় এলিয়ে দেয়া মাত্রই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে তাকানোর পরে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম।
আমি কি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছি!! নাকি রুপকথার রাজ্যে আসছি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here