তোর_জন্য পর্ব ১১

0
3481

#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ১১

.
.
.
হঠাৎই আদ্রিয়ানের কথায় সবাই চমকে উঠলো,,,,,
আদ্রিয়ান যে এমনকিছু বলতে পারে তা হয়তো কেউই ভাবেনি। কিন্তু সম্মুখে প্রকাশ না করতে পারলেও মাসুদ সাহেব বেশ খুশি হলেন।

আদ্রিয়ান ঃ আচ্ছা রাহিমা আন্টি, আপনি স্বামী-সংসার ছেড়ে আমাদের বাড়িতে পড়ে আছেন কেন!!
অন্যের সংসারের দিকে খেয়াল না দিয়ে নিজের সংসারেও তো মনযোগ দিতে পারেন। তাছাড়া ছেলে-মেয়ে বড় হইছে,,, একটা ব্যাপার আছে না!!

মাসুদ সাহেব আদ্রিয়ানের কথাটা ভালোভাবেই হজম করলেন। মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান যেন তার মনের মধ্যে জমানো কথাটাই বলে দিছে। তিনি বেশ আগ্রহ-সম্পন্ন দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান যেন আজকেই তাদেরকে বের করে দিবে,,,এমন আগ্রহে।

আদ্রিয়ান রাহিমা বেগমকে কথাগুলো বলেই মাসুদ সাহেবের দিকে আড়চোখে তাকালো। কিন্তু আদ্রিয়ান তাকানো মাত্রই ও নিজেই চমকে গেল। মাসুদ সাহেবের চোখগুলো বলে দিচ্ছে আদ্রিয়ানের কথার সাথে তিনি সম্মতি প্রকাশ করছেন।
আদ্রিয়ান বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে আবারও রাহিমা বেগমকে কথা শুনালেন,,,,,।

রাহিমা বেগমঃ দেখ দেখ রোহানা তোর ছেলে কিসব বলছে(ন্যাকা কান্না করে)।
যে ছেলেকে কিনা আমি কোলেপিঠে মানুষ করছি,, এই তার প্রতিদান দিচ্ছে!!

রোহানা বেগমঃ ও ভুল কিছু বলেনিতো। যা বলছে ঠিকই বলছে,,,,।
এতদিনতো আমার সংসারে ছিলি,,,এখন নিজেরটা সামলে নে।
তাছাড়া ছেলে-মেয়ে বড় হইছে ওদের বিয়ে-শাদিও তো দিতে হবে। বোনের শশুড় বাড়িতে থেকে যদি ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়,,,তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম দেখায়না!!!

আদ্রিয়ান ঃ আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি ছোট থেকেই আপনার কাছে কম যাওয়া-আসা করতাম। ছোট আম্মুর কাছেই আমি বড় হইছি(মনির আম্মু)। তাই শুধু শুধু নিজেকে মহান সাজানোর কোনো দরকার নাই।

রাহিমাঃ রোহানা তুই এখনও কিছু বলবিনা তোর ছেলেকে‌!!!

রোহানাঃ আগেও বলছি এখনও বলছি,,, ও কিছু ভুল বলেনি। আদ্রিয়ানকে লালন-পালন তো সাহিদা ই করেছে। যখনই জানতে পারলো আমার ভিতরে আরও একটি অস্তিত্ব আছে। তখন থেকেই সাহিদার(মনির আম্মু) এক কথা ছিলো,, আমার ছেলে/মেয়ে কে ও বড় করবে। এবং ওর ছেলে/মেয়ে কে আমি বড় করবো।
নিজেদের মনের মত করে নিজেরাই গড়ে তুলবো,,,তারপর অনেক ধুমধামে বিয়ে দিবো।
কিন্তু তা আর হলো কই(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)।
কারো কুনজরে সব-স্বপ্নই নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।
আমি চাইলে ওর স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পারতাম, কিন্তু তোর আশকারায় আমি সবকিছু ভুলে গেছি।
সৎ কখনো আপন হয়না,,,তা কোনো না কোনোদিন ঠিকই ধরা পরে। শুধু সময়ের অপেক্ষা,,,তার জন্য যতই নিজের কলিজাটা ছিড়ে দিক না কেন!(নিলয়ের কথাগুলো মনে পড়লো। সাথে মাসুদ সাহেব ও রাহিমার প্রতি ঘৃনা দ্বিগুন বেড়ে গেল)।
!
তারজন্য আমি আমার রক্তের বোন না থাকা স্বত্তেও সেই বোনের ইচ্ছা পুরন করিনি। যে নিজের কথা না ভেবে আমার জন্য প্রানও দিয়ে দিতে পারতো। সেই স্কুল/কলেজের কাটানো স্মৃতিগুলো আজকে রোহানা বেগমের কড়া নাড়ছে।

আফসানা(মনির মা) ও রোহানা স্কুল থেকেই দুইজন ভালো বান্ধবী ছিলেন।
আশরাফ সাহেবের সাথে আফসানার বিয়ের সূত্রতা নিয়েই মাসুদ সাহেবের সাথে রোহানার বিয়ে হয়।
আফসানার ইচ্ছা ছিলো তারা দুই বান্ধবী একসাথে থাকবে। একঘরে না যেতে পারলেও আফসানার বরের বন্ধুর (মাসুদ সাহেবের) জন্যই রোহানা কে আনলো।
কতসুন্দর মুহুর্ত ছিলো তাদের, কত স্মৃতি, মান-অভিমান সবকিছুই আজকে রোহানাকে কড়া নাড়ছে।
পুরোনো স্মৃতিগুলো বড্ড মনে পড়ছে আজকে।
কিন্তু তিনি আফসানার জন্য কিছুই করতে পারলো না। এমনকি তার মেয়েকেও দিনের পর দিন অবহেলা করে গেছে।
সবকিছুর কারন যে একজন, তা রোহানা বেগম ভালোই বুঝতে পারছেন। এমনকি নিলয়ের কথাগুলো মনে পড়াতে,,,তিনি আরও রেগে আছেন।
তার বোন রাহিমাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। রিয়া যদিও বারবার বাহানা খুঁজছে, রাহিমা বেগম তো রাগে ফুঁসছেন।

রোহানা বেগম যখন রাহিমাকে কড়াভাবে কথাগুলো শুনাচ্ছিলো তখন মাসুদ সাহেবের দিকেও বারবার আড়চোখে রাকিয়েছেন। কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন নেই, তার চোখ-মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে মাসুদ সাহেবও অনেক খুশি।

কিন্তু আদ্রিয়ান ও রোহানা বেগম একটু চিন্তিত হলেন। যেখানে মাসুদ সাহেবের খুশি হওয়ার কোনো কথা নেই, সেখানে তিনিই হাসি-মুখ নিয়ে বসে আছেন!! রাহিমা বেগমের যাওয়াতে।

রোহানা বেগম বেশি মাথা ঘামালেন না। আজকে আদ্রিয়ানের জন্মদিন।তিনি আফসানার ইচ্ছাটা একটু হলেও পূরণ করতে চাইছেন সাথে আদ্রিয়ানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানও ধুমধাম করে করতে চাইছেন।
আদ্রিয়ানের জন্মদিনে তিনি আদ্রিয়ান ও মনির বিয়ের জন্য আলাদা কিছু করার প্লানিং করছেন।
তিনি কথাগুলো ভেবে মুচকি হেসে মনির পাশে বসলেন এবং ওর মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে চুল বিলি কাটছেন।
আদ্রিয়ান মুগ্ধনয়নে দেখছে এই ভালোবাসা।
মাসুদ সাহেব রোহানা বেগমের পরিবর্তন দেখে খানিকটা চমকে গেলেন। কিন্তু প্রকাশ করলেন না। এমনিতেই আজকে সকাল থেকে বাড়িতে আসছে পরে তার লেডি কিলারের বেশ পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো তাকে এড়িয়ে চলা।
ঝামেলায় ঝামেলায় বাড়িতে আজকে এতবড় অনুষ্ঠান হবে অথচ রোহানা বেগম কিছু করেননি!!তিনি তড়িঘড়ি করে উঠলেন তখনই মাসুদ সাহেব বললেন,,
মাসুদ সাহেব ঃ৷ এত তারাহুরো করতে হবেনা। সবকিছু আমি গুছিয়ে রাখছি।

রোহানা বেগম প্রতিউত্তরে কিছু বললেন না।
.
.
.

আমিঃ আজকে তার জন্মদিন!! এতদিনের দূরত্বে আমি সবকিছু ভুলে গেছি। মন খারাপ করে বেডের একপাশে বসে আছি।তাকে বার্থডে-উইশ করতে পারলাম না।
আদ্রিয়ান হুট করে এসে আমার কোলে মাথা দিলো।

আদ্রিয়ান ঃ আমার মহারানীর মন খারাপ!! এভাবে গোমড়ামুখ করে বসে আছে যে।

আমিঃ উহু

আদ্রিয়ান ঃ কি! চাঁদমুখে মেঘের ছায়া একদম ভালোলাগেনা।
ভয় থাকে কখন বৃষ্টি ঝরে যায়।
!
আচ্ছা মন খারাপের কারনটা কি আমি!! তাহলে বলে দিও আমি বিরক্ত করবোনা।

~মুখ গোমড়া করে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। আমি হাতটা ধরলাম। তার জন্য আমক বিরক্তি হই!!
তার হাতটা শক্ত করে ধরলাম, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা~~
তিনি আবারও আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এবং আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে তার হাত রেখে খেলা করছেন।

আবারও এনা আপু আসলো,,,,,
এনাঃ এই এই(চোখে হাত দিয়ে) দড়জা লাগিয়ে রাখতে পারিস তো।

আমি তারাতারি তাকে সরিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তিনি করুন চোখে একবার আমার দিকে একবার এনা আপুর দিকে তাকাচ্ছেন।
এই এনা আপুও না! শুধু কথায় কথায় লজ্জা দেন।

আদ্রিয়ান ভুরু কুঁচকে এনার দিকে তাকালো,,,,
~ওই তুই আসার আর সময় পাওনা!!

এনাঃ আমি কিভাবে জানবো! সারাক্ষন তোরা,,,
আচ্ছা যাই হোক,,,,আন্টি তৈরি করতে বলছে মনিকে। তাই আমি আসছি,,,এখন তুই যেতে পারো।

আদ্রিয়ান ঃ মামা বাড়ির আবদার!! আমার বউ আমি থাকবো, তুই যা।

এনাঃ আন্টিকে ডাকবো!!

আদ্রিয়ান ঃ আরেহ না না আমিতো মজা করছি।
তিনি মুখ গোমড়া করে চলে গেলেন।
এনা আপু তার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসছেন। যেন আজকে অনেক বড় যুদ্ধ জয় করছেন।
.
.
.
বাড়িতে লোক সমাগম শুরু হয়ে গেছে। এনা আপু আমকে তৈরি করে আমাকে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে গেলেন।
আদ্রিয়ানের সাথে আমাকেও কালার ম্যাচিং করে শাড়ি পড়ানো হয়েছে। তার দিকে চোখ যাওয়া মাত্রই থমকে গেলাম। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে, আমি তার দিকে তাকানো মাত্রই তিনি চোখ মারলেন। হুহহ!! এই বজ্জাত এখানেও আমায় লজ্জায় ফালাতে চায়!!
আমি তারাতারি অন্যদিকে তাকালাম, নয়তো এই বজ্জাত আবারও কোনো কান্ড ঘটাবে।

আদ্রিয়ান বন্ধু/বান্ধবীদের জোরাজোরিতে গান গাইতে বাধ্য হলেন,,,,
আমি মুগ্ধভাবে শুনছি। তার চাওয়া -পাওয়া, ভালোবাসা, মান-অভিমান মিশ্রিত গান,,,,,,,,,,,,,
!
!
!
তোর কাছে যেতে চায় হৃদয় মানেনা বারন,🎻🎻বৃষ্টির শহরে মেঘলা আমার এই মন,,,,,।

তোর কাছে যেতে চায় হৃদয় মানেনা বারন🎻🎻 বৃষ্টির শহরে মেঘলা আমার এই মন,,,,,।

তুই কি আমার মত ভাবিস আমায়,,,,,ভালোবাসা খুঁজে নিস জলের ছোয়ায়,,,,
তোকে ছাড়া হয়নাতো কোনো উৎসব!!

তুইই ই ই ই ইইইইইইইই ই, ,,,, তুই তো আমার সব,
তুইই ই ই ইইইইইই ই তুই তো আমার সব,
তুই তো আমার সব।

অভিমানী ভুলগুলো যেন ফুল হয়,একা একা কাটেনা যে বিরহী সময়,,,,,,,,🎻🎻।
অভিমানী ভুলগুলো যেন ফুল হয়,একাএকা কাটেনা যে বিরহী সময়,,,,
তুই কি আমার মতো স্বপ্ন দেখিস, চোখের আকাশ জুড়ে আমায় আঁকিস।
তোকে ছাড়া হয়নাতো কোনো উৎসব। তুই ই ই ইইইইইইই তুই তো আমার সব।
তুই ই ই ইইইইই তুই তো আমার সব, তুই তো আমার সব।

~~~🎻🎻🎻~~~~
ভেঁজা চোখে ঝরে পড়ে শিশিরের সুর, তোর কথা মনে পরে রাত্রি-দুপুর,,,,🎻
ভেঁজা চোখে ঝরে পড়ে শিশিরের সুর, তোর কথা মনে পরে রাত্রি-দুপুর,,,
তুই কি আমার মতো উদাস কবি! লিখে যাস হৃদয়ে কাব্য ছবি,,,,,
তোকে ছাড়া হয়নাতো কোনো উৎসব।
তুই ই ই ইইইই তুই তো আমার সব,
তুই ই ই ইইইই তুই তো আমার সব, তুই তো আমার সব।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here