Ragging To Loving 2পর্ব-৪০

0
2365

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪০
#রিধিরা_নূর

আহিল হাটু গেড়ে বসে আছে আমরিনের সামনে। সবাই প্রশ্ন করছে কিন্তু আমরিন কারো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সিমা চরম বিরক্ত হয়ে বলল,

সিমা — বলবি নাকি কাঁদতেই থাকবি? ঠিক আছে তুই একা একা কাঁদতে থাক। আমরা গেলাম। চল সবাই। কিছু বলবে না শুধু কাঁদবে।

আমরিন — গতকাল সন্ধ্যায় বাসায় মেহমান এসেছিল। (কান্নারত স্বরে)

আহিল — তো এখানে কাঁদার কি আছে? কেউ কি কিছু বলেছে?

আমরিন — আমাকে দেখতে এসেছিল। কিন্তু আমি জানতাম না। সকালে ভার্সিটি আসার সময় বাবা-মার কথা শুনে জানতে পারি। তারা সব পাকা করে নিয়েছে। আগামী শুক্রবার বাগদান করতে চাই।

সবাই হতভাগ। আহিল বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিজের কানে বিশ্বাস করতে না পেরে আবারও জিজ্ঞেস করল। আমরিন একই উত্তর দিল। আহিলের হৃৎপিন্ড মোচড় দিয়ে উঠল। কেউ যেন তার বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে কলিজাটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। আহিল কাঁপা গলায় বলল,

আহিল — বললেই হলো! এমনে কীভাবে পারে তারা। তুমি কিছু বল নি?

আমরিন — আমাকে এখনও কিছু জানায়নি। কিন্তু শুনে বুঝতে পারলাম বাবা-মা এই সম্বন্ধে রাজি।

আহিল — তুমি না করে দাও। তুমি তো আমাকে ভালবাস আর আমি তোমাকে। আমাকে কিছু দিন সময় দাও আমি সব ঠিক করে নিব। তুমি এই বিয়েতে না করে দাও।

আমরিন — আজ পর্যন্ত আমি বাবা মার অবাধ্য হয়নি। তাদের কথার বিরুদ্ধে যায়নি। তাদের মুখের উপর কথা বলিনি। আমার ভয় করছে।

আহিল — তাহলে কেন আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছ। যদি বাবা-মার এতোই বাধ্য হও তাহলে আমাকে ভালবেসেছ কেন? আর এখন বলছ তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে।

কথাগুলো বলতে আহিলের ভীষণ কষ্ট হলো। আর আমরিনের শুনতে। কান্নায় জর্জরিত গলায় বলল,

আমরিন — আমি তো বলিনি আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব। আমি শুধু ভয় পাচ্ছি বাবা মাকে বলতে।

আহিল — ভালবাসতে ভয় পাও নি। তাহলে বলতে কেন ভয়? তুমি কি আদৌও আমাকে ভালবাস? প্রায় দেড় বছরের হলো আজও তোমার মুখ থেকে ভালবাসি শুনলাম না।

সবাই বিস্মিত নয়নে তাকাল আহিলের দিকে। কারণ সবাই জানে আহিল আমরিনকে কত ভালবাসে। আর এই-ও জানে আমরিনও তাকে ভালবাসে। স্বয়ং আহিলও জানে এই কথা। তাহলে আজ এই প্রশ্ন তুলল কেন? আরিফ কিছু বলতে নিলে আলিফা থামিয়ে দেয়। কারণ এই মূহুর্তে কারো কিছু বলা বেমানান। আমরিনের বুক ভারি হয়ে এলো। খুব কান্না পাচ্ছে। আহিলের এমন কড়া কথা সে মানতে পারছে না।

আমরিন — তোমার কি মনে হয়? আমি তোমাকে ভালবাসি না? সবকিছু বলতে হয় না। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। আর তুমি বোধহয় আমাকে আজ পর্যন্ত বুঝতে পারনি।

আমরিন ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। এই মূহুর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আর এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে হেটে বেরিয়ে গেল। আহিল শুধু বিস্ফোরিত নয়নে আমরিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। সে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল কেউ বুঝতে পারলো না।

ইয়াশ — আহিল। তুই নিজেই দেখেছিস আসার পর থেকে আমরিন কতটা চিন্তিত। এমনকি সবার সামনে কেঁদেছে। তুই তাকে স্বান্তনা না দিয়ে তাকে এসব বলেছিস। সে এসেছে তোর কাছে নিজের চিন্তা ভাগ করতে আর তুই তাকে উল্টো কথা শুনিয়ে তার চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিলি।

আহিল — তোরা সবাই আমরিনের চিন্তা দেখছিস। এদিকে আমার ভেতরে কি চলছে বুঝতে পারছিস তোরা? বুকের ভেতর যেই তুফান চলছে তার মোকাবেলা আমি একাই করছি। আমরিনের কেঁদে নিজের মন হালকা করে নিল। কিন্তু আমি? আমি কি করব? ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। তাহলে ছেলেরা কি করে তাদের মন হালকা করবে?

কথাবার্তা ছাড়া ওয়াসিম হুট করে আহিলকে জড়িয়ে ধরল

ওয়াসিম — বন্ধুকে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মন হালকা করবে।

আহিল এমনই কিছুর অপেক্ষায় ছিল নিজেকে শান্ত করার জন্য। সবাই অবাক হয়ে ওয়াসিমের কীর্তি দেখছে। ওয়াসিম হাবাগোবা ধরনের। বুজে শুনে কিছু করে না। যা মনে আসে তাই করে এবং বলে। কিন্তু মাঝে মাঝে তার কীর্তিকলাপ সবাইকে বেশ অবাক করে। অবুঝতার মাঝেও এমন বুঝদার কাজ করে সবাই অবাক হয়।

পুষ্প — আহিল ভাইয়া, আপনি এতদিন আমরিনকে দেখেছেন। তার সম্পর্কে জেনেছেন। এবং এটাও জানেন সে আপনাকে ভীষণ ভালবাসে। তাই না?

আহিল — হুম জানি। তখন এসব শুনে মাথা ঠিক ছিল না। তাই উল্টাপাল্টা বকেছি।

পুষ্প — তাহলে আপনি নিজেই ভাবুন। আমরিন আপনাকে এত ভালবাসে কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারেনি। কারণ সে ভীষণ লাজুক। এমনকি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেও তার অনেক সময় লেগেছিল। সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। আর যদি একবার কারো সাথে মিশে তাকে আপন করে নেয়। এসব বলছি কারণ সে ছোট থেকেই এমন। একমাত্র মেয়ে। বাবা-মার সঙ্গে খুব একটা কথা বলে না। প্রয়োজন ছাড়া। একাকিত্বে তার ছোট বেলা কেটেছে। এখন আপনাকেই কিছু একটা করতে হবে।

আরিফ — আহিল কি করবে?

সিমা — কি করবে মানে! আংকেল-আন্টিকে নিয়ে আমরিনের বাসায় যাবে। বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে।

ইয়াশ — কিন্তু আহিল এখনো স্টুডেন্ট। আমরিনের বাবা মা কি মানবে?

মেহের — সময় চাইবে। এখন যদি তাদের এনগেজমেন্ট করে তাহলে পরবর্তীতে নিজেকে স্থাপন করে বিয়ে করবে।

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের অপেক্ষায়। আহিল চিন্তিত হয়ে সবার দিকে তাকাল।
.
.
নূর — থ্রি, টু, ওয়ান। স্টার্ট।

কয়েকজন ছোট বাচ্চা মেয়ে। গানের তালে তালে নাচার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই তাল মেলাতে পারছে না। একজনের ধাক্কায় আরেকজন পড়ে যাচ্ছে। নূর বিরক্ত হয়ে কপালে হাত দিল।

নূর — ওই পিচ্চি। ডানদিকে নয় বামদিকে যাবে। হাত এভাবে রাখবে। এতদিন কি শিখালাম তোমাদের? এখন শেষ পর্যায়ে এসে সব ভুলে গেলে? একেকটাকে ধরে এমন মার দিব না।

১ম জন — আমরা তো পেটকিস করছি। এখন না হলে কি করব? (নিষ্পাপ ভঙ্গিমায়)

নূর — পেটকিস না। প্রাকটিস। আর দেখ তো কত নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে আছে। সব বুঝি আমি। স্কুলে না যাওয়ার ধান্দা সব। যদি স্কুলে না যাও তাহলে কি করবে শুনি?

২য় জন — সারাদিন খেলব, খাব আর তোমার সাথে নাচবো। হিহিহি।

নূর — যদি এমন হয় তাহলে আমি আর কাল থেকে আসব না। পায়ে ব্যাথা নিয়ে এখানে এসেছি যাতে করে তোমরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পার। সভাপতির দৃষ্টি যাতে আমাদের অনাথ আশ্রম এই শান্তি নিকেতনের উপর পড়ে। যাতে তিনি তোমাদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে পারে। তোমাদের জন্য আমি এতো কষ্ট করছি তোমরা বুঝতে পারছ না? পড়াশোনা ছাড়া, বিদ্যা অর্জন ছাড়া তোমরা জীবনে এগিয়ে যেতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। রাস্তায় রাস্তায় পরিশ্রম করতে হবে। অন্যের কাছে হাত পাততে হবে। যদি পড়াশোনা কর নিজ যোগ্যতায় সব অর্জন করতে পারবে। শিক্ষা ছাড়া জীবনে কোন মূল্য নেই।

বাচ্চারা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর নিরাশার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে বেরুনোর জন্য। বাচ্চা দৌড়ে এসে নূরকে ঘিরে ধরল। কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে ক্ষমা চাইলো এবং আশ্বাস দিল তারা পড়াশোনা করবে। নূর আনন্দের হাসি হাসলো।

নূর — তাহলে শুরু হয়ে যাও।

ছোট ছেলে এসে নূরের ওড়না টানতে লাগলো।

ছেলেটি — নূরাপু, মেয়েরা তো নাচবে। আমরা ছেলেরা কি করব?

নূর — তোমরা তাদের উৎসাহ দিবে। এবার শুরু কর তাড়াতাড়ি। সময় কম। দুদিন পর অনুষ্ঠান। যদি মন দিয়ে না শিখ
.
.
ঘরের দুয়ারে এসে থেমে গেল আমরিন। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভেবেছিল আহিল তাকে অন্তত স্বান্তনা দিবে। কিন্তু তা আর হলো কই? বরঞ্চ আহিল তাকে অপবাদ দিচ্ছে। মন-মানসিকতার সংঘর্ষের বেড়াজালে আটকে গিয়েছে। মনে সাহস জুগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে প্রবেশ করতেই থমকে গেল। বিস্ময়ের ঘোরে কি করবে বুঝতে পারছে না। গতকালের মেহমানরা এবং বড় মামা-মামী ড্রয়িংরুমে উপস্থিত। বাবা মাও তাদের আপ্যায়ন করছে। তাহলে কি বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করে নিয়েছে? আমাকে না জানিয়ে, আমার মতামত জিজ্ঞেস না করেই? এসব ভেবে রাগ, দুঃখ, অভিমানে ভীষণ কান্না আসছে। আমরিনকে দেখে তার মা তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে কুশলাদি করল।
.
.
একটি ছোট কক্ষে আফরান একজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করছে।

ভদ্রলোক — আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আফরান — ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি আমাকে এই কাজের সুযোগ দিয়েছেন। আচ্ছা এখন চলি।

ভদ্রলোক — অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি আশা করছি।

আফরান — নিশ্চয়। আসি তাহলে।

আফরান বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল। পাশ দিয়ে হেটে যেতেই পরিচিত ঝাঁজালো কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। উঁকি মেরে দরজার আড়াল থেকে দেখছে।

নূর — ওই লাল পরী পিচ্চি। দাঁড়িয়ে আছ কোন দুঃখে? নাচবে না?

পিচ্চি অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আরেকজন পিচ্চি ছেলে আফরানকে দেখতে পেল। চুপিচুপি অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে আফরানের পেছনে দাঁড়াল। মুখে হাত দিয়ে দুষ্টু হাসি দিল। পেছন থেকে ভাউ করে চিৎকার করে আফরানকে ভয় লাগালো। আচমকা আফরান কেঁপে উঠতেই পিচ্চিটা খিলখিল করে হেসে উঠল। আফরানের ভীত চেহারা দেখে বাকিরাও হেসে উঠল। আফরানকে দেখে নূর ভ্রু কুচকে তাকাল।

আফরান — কি পিচ্চি আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে?

ছেলেটি — ভাইয়া ভয় পায়ছে। এতো বড় হয়ে ভয় পাও? হাহাহা।

নূর — আপনি এখানে কি করছেন?

নূরের কথায় আফরান ফিরে তাকাল। ভ্রু কুচকে বলল,

আফরান — তুমি এখানে কি করছ?

ছেলেটি — নূরাপু ওদের নাচ শিখাচ্ছে।

আফরান — নাচ? সিরিয়াসলি! নিশ্চয় ব্যাঙের মতো লাফানো শিখাচ্ছে। সবসময় তো তাই করে। (বাঁকা হাসি দিয়ে)

নূর — এক্সকিউজ মি! কোন মুখে আপনি এই কথা বলছেন?

আফরান — এই হ্যান্ডসাম মুখে। (ভাব নিয়ে)

নূর — হ্যান্ডসাম? নাইচ জোক। দেশি মুলার মতো সাদা চামড়া, খাচ্চোর বিলাতি বক। সে নাকি হ্যান্ডসাম। হাহাহাহা। (তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

নূরের হাসিতে বাচ্চারাও হাসতে লাগলো। আফরান রাগী দৃষ্টিতে তাকাল।

আফরান — তুমি কি? হ্যাঁ? সারাক্ষণ ব্যাঙের মতো লাফাও, ভেড়ার মতো ভ্যা ভ্যা কর, বানরের মতো এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি কর। সেই তুমি আবার নাচ শেখাবে? জোক অফ দ্যা ইয়ার। হুহ্!

নূর রেগে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। আফরান বাঁকা হাসি দিয়ে দরজা অবধি এলো। মিউজিক শুনে হঠাৎ থেমে গেল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here