Ragging To Loving 2পর্ব-৪৭

0
2424

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪৭
#রিধিরা_নূর

আফরান নূরের পিছে গেল। রুমে গিয়ে দেখে ফাঁকা। আশেপাশে খুঁজে দেখল কিন্তু পেল না। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় উধাও হলো এই মেয়েটা। পরক্ষণে উপরে তাকাল। ছাদে যায়নি তো? তড়িঘড়ি ছাদে গিয়ে দেখে তার অনুমান ঠিক ছিল। সিড়ি ঘরের বাতির আলোয় নূরের আবছা ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে।

নূর ছাদের রেলিং ধরে শূন্যে তাকিয়ে আছে। আচমকা এমন একটি ধাক্কা কোন ভাবে নিতে পারছে না। সবাই জানতো আজ আমার আর আফরানের বাগদান। তাহলে কেউ উল্লেখ করেনি কেন? কেন আমাকে জানায়নি? আমিই বা কি ভেবে এটা করেছিলাম যে আজ পুষ্প,রিহানের বাগদান। সেদিন পার্লি বলেছিল আফরানের বাবা-মা বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করতে এসেছে। অর্থাৎ তারা আমার আর আফরানের বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করতে এসেছে। আর আমি মাথামোটা,বলদা না বুঝে না শুনে ভেবে নিলাম তারা পুষ্প,রিহানের বিয়ের কথা বলছে। আফরান নিজেও এই নিয়ে অনেকবার কথা বলেছে কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। যতবার কিছু বলতো ততবার ঝগড়া করে চলে আসতাম। তার সম্পূর্ণ কথা শুনতামই না।

নূর ভাবনার সাগরে এতটাই ডুবে আছে যে, আফরান অনেক্ষণ যাবত তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার খেয়াল পর্যন্ত নেই। আফরানের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো।

আফরান — কি ভাবছ এতো?

নূর চমকে উঠল। নূরের ভয়ার্ত চাহনি দেখে আফরান নীরবে হাসলো। হঠাৎই নূরের চোখ দুটো টলমল করছে। আফরান দেখার পুর্বেই চোখ ফিরিয়ে নিল ঠোঁট দুটো চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। মাথা নিচু করে কাঁপাস্বরে বলল,

নূর — আ..আজ আ..আমাদের বাগদান…..

কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই আচমকা আফরান পিছন থেকে নূরকে নিজের বুকের মাঝে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে নিল। নূর চমকে উঠে স্থির হয়ে গেল। মূহুর্তে যেন হৃৎপিন্ডটাও স্থির হয়ে গেল। থমথমে নীরবতা বিরাজ করছে। নীরবতা ভেঙে মৃদুস্বরে আফরান বলতে লাগলো,

আফরান — হ্যাঁ! আজ আমাদের বাগদান। জানি তোমার নার্ভাস লাগছে। আমারও একই হাল। সবকিছু কেমন যেন রূপকথার গল্পের মতো লাগছে। স্বপ্নের মতো সাজানো, সুন্দর। জানো! আমারও ভেতরে ভেতরে ভীষণ নার্ভাস লাগছে। কিন্তু নার্ভাসের চেয়ে আনন্দ লাগছে বেশি। আমি সত্যি ভাবিনি হঠাৎ করেই অপার আনন্দ বয়ে আসবে আমার জীবনে। আর আমার এই আনন্দের কারণ তুমি। শুধু তুমি আনন্দিতা। জানো এই নামটা তোমাকে ভীষণ মানায়। ভালবাসি তোমায়। ভীষণ ভালবাসি। অনেক চেষ্টা করেছি তোমায় মনের গহীনে লুকানো অব্যক্ত অনুভূতি ব্যক্ত করতে। কিন্তু তুমি তো তুমি। মিস খিটখিট। সবসময় যুদ্ধের তলোয়ার নিয়ে হাজির থাক আর অপেক্ষা কর। কখন আমি উপস্থিত হব আর তুমি কথার তলোয়ার দিয়ে আমার উপর আক্রমণ করবে।

নূর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তার সমস্ত শরীর যেন অচল হয়ে পড়েছে। সচল আছে তো শুধু হৃৎপিন্ডটা। যা অনবরত স্পন্দিত হচ্ছে৷
নূরকে নীরব থাকতে দেখে আফরান মুচকি হাসলো। এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিল সে। কবে নিজের অব্যক্ত কথাগুলো নূরকে জানাবে। আবারও বলতে লাগলো,

আফরান — অনেক আগেই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন যেন সুযোগ এসেও আসেনি। সময় থেকেও ফুরিয়ে যেতো। এরপর মিউজিক, ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি এসবেই সময় চলে গেল। তিন বছর পলক ফেলতেই কেটে গেল। সবকিছু পেয়েও যেন পেলাম না। কারণ তখন তোমাকে পায়নি। কিন্তু আজ সবকিছু পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
(বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো)
জানো সবচেয়ে বড় বিস্ময়কর ব্যাপার কি? বাবা।

“””
আফরান বিকেলে বাসায় ফিরতেই তার বাবা গম্ভীর মনোভাব নিয়ে তার কাছে এলেন। সচরাচর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া তিনি আফরানের সঙ্গে আলাপ করেন না। তাই আফরান বুঝতে পেরেছে বিষয় গম্ভীর। আফরান ও তার বাবা মুখোমুখি হয়ে সোফায় বসলো। আফরানের মা তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন।

শরীফ আহমেদ — সংগীত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছ। আজ সফলতার এই শিখরে পৌঁছেছ নিজের ধৈর্য্য, পরিশ্রমের বদৌলতে। হ্যাঁ! আমি নিজেই তোমাকে বলেছিলাম মিউজিক বাদ দিয়ে ব্যবসায় ধ্যান দিতে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি চাইনি তুমি সফলতা অর্জন কর। চেয়েছি আমি এবং মন থেকে দোয়া করেছি যাতে তোমার মন না ভাঙে। তোমার মতো এমনই এক স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি দিয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে। মন ভেঙে ছিল। ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। তাই চাইনি ওই একই কষ্ট আমার ছেলে ভোগ করুক। দিন-রাত পরিশ্রম করে আজ এই আহমেদ ইন্ডাস্ট্রি খাড়া করেছি। যাতে ভবিষ্যতে আমার ছেলেকে কোন রকম কষ্ট ভোগ করতে না হয়। (হাসলেন) কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম তুমি আমারই ছেলে। আমার রক্ত তোমার শরীরে বইছে। যেই প্যাশন নিয়ে আমি শহরে এসেছিলাম সেই প্যাশন আমি তোমার মধ্যে দেখেছি। আমি পারিনি আমার আমার স্বপ্ন পূরণ করতে। কিন্তু তোমার প্যাশন, শ্রম, ধৈর্য্য তোমাকে সফলতা দিয়েছে। আই এম প্রাউড অব ইউ।

মূহুর্তে আফরানের চোখ দুটো ভরে এলো। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। “আই এম প্রাউড অব ইউ” বারবার শুধু বাক্যটি কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। কত যুগ ধরে মনটা ব্যাকুল হয়েছিল বাবার কাছ থেকে এই বাক্যটি শোনার জন্য। ছোটবেলায় পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করলে বাবা দুই হাত ছড়িয়ে এই বাক্য বলতেন। আর আফরান ছুটে যেতো বাবার কাছে। জড়িয়ে ধরে নিজের আনন্দ প্রকাশ করতো। আজও তার খুব ইচ্ছে করছে বাবাকে জড়িয়ে ধরে নিজের আনন্দ প্রকাশ করতে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য দেয়াল তাকে বাঁধা দিচ্ছে। মনের সংশয় বাঁধা দিচ্ছে। তাই বিনিময়ে হাসি উপহার দেওয়া ছাড়া আর কিছু নেই।

শরীফ আহমেদ — পড়াশোনা শেষ করেছ। ক্যারিয়ারও গঠন করেছ। এখন বাদবাকি বিয়ের। তোমার জন্য পাত্রী দেখেছি। এবং আগামীকাল তাদের বাসায় যাব বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করতে। তোমাকে আরও আগে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজের ব্যস্ততা বলা হয়নি এবং তুমিও তোমার অফিশিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলে। এখন যেতে সব ঠিক আছে বিয়েটা পাকা করে নিই।

আফরান হুট করে উঠে দাঁড়াল। তার চোখ দুটো টলমল করছে। এবার এই অশ্রু আনন্দের নয়, বেদনার। হয়তো আবারও বাবার স্নেহ হারিয়ে ফেলবে। কারণ সে নূরকে ভালবাসে। নূর ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তাও সে মাথায় আনতে চাই না। মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বলল,

আফরান — ক্ষমা কর বাবা। আমি পারব না তোমার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে। আবারও তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। আমি….

আফরানের কথা কেটে গম্ভীর স্বরে বললেন,

শরীফ আহমেদ — নূর হায়দার। পাত্রীর নাম। বাবা জুনায়েদ হায়দার। পূর্বে আমার প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আমার বিজনেস পার্টনার। ভেবে চিন্তে দেখ। মেয়ে ভীষণ ভালো।

আফরান অবাক হয়ে তাকাল। সে কি সত্যিই নূরের নাম শুনেছে? নাকি নূরের কথা চিন্তা করতে করতে তার নাম কানে বাজছে। আফরানকে ভুল প্রমাণ করে শরীফ আহমেদ একটি ছবি এগিয়ে দিলেন। ছবিটি নূরের।

শরীফ আহমেদ — কাল সকাল পর্যন্ত ভেবে চিন্তে দেখ। যদি জবাব হ্যাঁ হয় তাহলে কালই তাদের সঙ্গে সব কথা পাকা করে আসব। আর যদি না হয় তাহলে…..

বাক্য সম্পূর্ণ না করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। আফরান ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে তাকিয়ে দেখে তার মা হাসছেন।

মরিয়ম বেগম — তোর বাবা তোকে ভীষণ ভালবাসে৷ তুই কোন কিছু চাওয়ার পূর্বেই তোর চাহিদা পূরণ করে। তাহলে কি করে ভাবলি তোর জীবনের এতো বড় খুশি তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে। গত তিন বছর ধরে আমরা এই অপেক্ষায় ছিলাম কখন তোরা বাচ্চারা তোদের সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবি তারপর তোদের বিয়ে দিব। কিছু দিন ধরে খেয়াল করেছি তুই বিষন্ন ছিলি। সেদিন তোর রুমে যাচ্ছিলাম তখন তুই ফোনে কাউকে বলছিলি তুই নূরকে ভালবাসিস কিন্তু তোর মনের কথা এখনও তাকে বলতে পারিস নি। তোর বাবাকে জানানোর পর উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তোরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাই আর প্রেমে না জড়িয়ে ধরে বেঁধে তোদের বিয়ে দিবে। (বলে হাসলেন)

আফরান শুধু অবাকের উপর চরম অবাক হচ্ছে।

আফরান — তিন বছর ধরে? তখন তো আমি নিজেও বুঝতে পারিনি আমি নূরকে ভালবাসি। তাহলে বাবা কি করে?

মরিয়ম বেগম — বাবা বাবা-ই হয়। ছোট বেলা থেকে তোর না বলা আবদার গুলো বুঝে যেত। তুই বলার পূর্বেই তোর সামনে এনে হাজির করে দিত। বড় হয়েছিস কিন্তু স্নেহ, মমতা কমে যায়নি।
(এইটুকু বলে তিনিও চলে গেলেন।)

“”””
আফরান — ভীষণ চিন্তিত ছিলাম। কীভাবে বাবা-মাকে তোমার সম্পর্কে জানাবো। তাদের রাজি করাবো কি করে? সর্বোপরি তোমাকে বলব কি করে। কতটা ভালবাসি তোমায়। অনেক দ্বিধা, অনেক চিন্তা ছিল। হঠাৎ এক ম্যাজিক হলো। আপনা আপনি সব হয়ে গেল। আমার ধূসর জীবনে বসন্ত এলো খুশি নিয়ে। আমি ভাবতেই পারিনি সবকিছু এতো সহজ হবে। আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল তুমি। (নূরের গাল টেনে দিল) ভয়ে ছিলাম বিয়ের কথা শুনে তুমি আবার খিটখিট করবে না তো। কিন্তু তুমি…. (আর বলতে পারলো না। মৃদু হাসি দিল) আমি জানতাম না বিয়ের জন্য তুমি এতো উত্তেজিত ছিলে যে তুমি বাগদানের তারিখ এগিয়ে আনবে।

বলে হাসতে লাগলো। নূর রীতিমতো কাঁপছে। আফরানের হাসির শব্দ নূরের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলছে। নূর কাঁপা স্বরে কিছু বলতে চেয়েও গলায় আটকে যাচ্ছে শব্দ গুলো। বহু কষ্টে বলল,

নূর — আসলে কিছু কনফিউশান হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম সেদিন আংকেল আন্টি পুষ্প আর রিহানের বিয়ের সম্বন্ধে কথা বলতে এসেছে। আমি জানতাম না উনারা আপনার আর আমার….

আচমকা নিজেকে মুক্ত অনুভব করে নূর থেমে গেল। আফরানের বুকের মাঝে আবদ্ধ করা হাত দুটো আলগা হতে দেখে নূর চমকে উঠল। আফরান নিস্তব্ধ হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর পিছন ফিরে আফরানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। আফরানের চোখে চোখ মেলানোর সাহস জোগাতে পারছে না। মাথা নিচু করে আছে। আফরানের হাত কাঁপতে দেখে নূর মাথা তুলে তাকাল আফরানের চোখ বরাবর। বিষাদে ভরা নয়ন দুটো যা নূরের বুক চিরে ভেদ করে গেল।

আফরান বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। নূরের মুখে এমন কথা শুনবে ভাবতে পারি নি সে?নূর কি তাকে ভালোবাসে না? প্রশ্নটা নিজেকে করতেই বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। সে যে ভালোবাসে এই শ্যামলীকে। তাকে ছাড়া থাকা যে সম্ভব না। কিন্তু জোর করে তো কোন কিছু পাওয়া যায় না।সেখানে ভালোবাসা পাওয়া তো কখনই না। যদি নূর ওকে ভাল না বাসে। তবে সে নূরকে জোর করবে না। কিন্তু তাকে ছেড়েও যাবে না। আপ্রাণ চেষ্টা করবে তার মন জয় করার। নতুন করে ভালবাসতে শেখাবে। কিন্তু এই মূহুর্তে নূরকে এই অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করতে হবে।
আফরান মুচকি হাসলো। কিন্তু এই হাসি যে স্বাভাবিক নয় নূর বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। এই মলিন হাসির আড়ালে নিজের কষ্ট লুকানোর অযথা প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু এই অবাধ্য চোখ দুটো তার ভেতরের গ্লানি প্রকাশ করছে। অশ্রুসিক্ত নয়ন জানান দিচ্ছে তার বুকের ভেতর আর্তনাদের৷
নূরের গাল দুটো টেনে দিল। হেসে বলল,

আফরান — ওহে অবুঝ বালিকা, মনে হয় আজ থেকেই তোমার ক্লাস নিতে হবে। মানে বুঝদান করার ক্লাস।

বলে হোহো করে হেসে উঠল। কিছু মূহুর্ত পূর্বে নূরের মনে আফরানের জন্য সহানুভূতি হলেও এখন রাগ হচ্ছে, ভীষণ রাগ, অত্যাধিক রাগ। আরে! কষ্ট পেলে তা প্রকাশ করবে। ঝগড়া করে রাগ ঝাড়বে। তা না। মশাই কৃত্রিম হাসি দিয়ে তা আড়াল করার চেষ্টা করছে। নূর হাসছে না দেখে আফরান চুপ হয়ে গেল।

আফরান — তুমি চিন্তা কর না। আমি সব সামলে নিব।

নূর — কি সামলাবেন?

আফরান — যে খিচুড়ি পাকিয়েছ তা। ডোন্ট ওয়ারি তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আমি এমন কিছু করব যাতে কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। তারপর ব্যস্ততার বাহানা দেখিয়ে পিছাতেই থাকব পিছাতেই থাকব। আর এক সময় সবার ধ্যান নড়ে যাবে।

নূর নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কত সহজে স্বাভাবিকভাবে বলল কথাগুলো। কিন্তু ভেতরে যে তার সবকিছু ছারখার হয়ে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে।

আফরান — চল।

আফরান এগিয়ে গেলে নূর তার পাঞ্জাবির হাতা টেনে ধরে। আফরানের দম আটকে আসছে। আর পারছে না নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু নূরের সামনে দুর্বল হলে চলবে না। তাকে শক্ত হতে হবে। আবারও কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে নূরের দিকে তাকাল। নূরের চোখ দুটো টলমল করছে। আবছা আলোর প্রতিফলনে তা চিকচিক করছে। দৃশ্যটি দেখে আফরানের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।

“তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।”

নূর আবদারের সুরে গাইলো। আফরান থমকে দাঁড়াল। নূর কি সত্যি তার কাছে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছে? নাকি নিজের অপরাধবোধ কমাতে সহানুভূতি দেখাচ্ছে। সে তো নূরের সহানুভূতি চাই না। চাই তো শুধু ভালবাসা।

আফরান — নূর। নিজেকে অপরাধী মনে কর না। এতে তোমার কোন দোষ নেই। কনফিউশন যে কারো হতে পারে। তা যে সময়ের পূর্বে জানতে পেরেছি এটাই অনেক। নিজের এই অবুঝ মনের উপর জোর চালিও না। বুঝেছ?

আফরান যেতে নিলে নূর আবারও পাঞ্জাবির হাতা ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে।

“সোনা বন্ধুরে তোমার লাইগা জ্বলে আমার প্রাণ
তুই তো মোরে ভালোবাস নইলে মোরে দাও কুরবান
তোমার লাইগা জ্বলে আমার প্রাণ

তোমারে যে ভালোবাসি আমার মুখে বলব কি
তোমার কথা হৃদয়েতে ফটো করে রেখেছি
তুই তো মোরে ভালোবাস নইলে মোরে দাও কুরবান
তোমার লাইগা জ্বলে আমার প্রাণ”

নূর বিচিত্র ভঙ্গিমা করে নাচলো। আফরান বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু। আফরানের পেটে চিমটি দিয়ে তার ধ্যান ভাঙল।

নূর — বুঝেন না আপনি? ভালবাসি আপনাকে। হ্যাঁ! আমি মানছি শুরুতে কিছু কনফিউশান ছিল। কিন্তু আমি তো বলিনি এই বিয়ে ভাঙতে।

আফরান শুধু নিষ্পলক তাকিয়ে আছে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here