Ragging To Loving 2পর্ব-৪

0
2825

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৪
#রিধিরা_নূর

রিহান,আফরান,আরিফ,ইয়াশ মিউজিক হলে বসে আছে ওয়াসিম,আহিলের অপেক্ষায়। আফরান গিটার হাতে সুর তোলার চেষ্টা করছে। ঝাঁজালো সুর প্রতিধ্বনি হচ্ছে তাই গিটারের তার সেট করছে। হুট করে কেউ একজন এসে পিছন থেকে আফরানের গলায় জড়িয়ে ধরল। আফরান স্বাভাবিক হয়ে মৃদু হাসলো। কারণ সে জানে কে হতে পারে। কিন্তু বাকিদের চেহারায় বিরক্তিকর ভাব। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করছে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না।

পান্না — হাই বেবি। আই মিসড ইউ সো মাচ।

আফরান — (আলতো করে হাত ছাড়িয়ে নিল) কেমন আছ?

পান্না — সিরিয়াসলি আফরান! হাউ কুড ইউ বি সো আনরোমেন্টিক। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কেউ শুরুতেই কেমন আছে জিজ্ঞেস করে? এতদিন পর দেখা হলো কোথায় একটু বলবে আই মিসড ইউ টু। একটু রোমেন্টিক কিছু বলবে। তা না কেমন আছ জিজ্ঞেস করছ। (অভিমান করে)

আফরান — আচ্ছা বল তোমার ফটোশুট কেমন ছিল?

পান্না — ইট ওয়াজ অসাম। খুব শীঘ্রই ম্যাগাজিনে আমার ছবি আসবে। বাংলাদেশের টপ মডেলের মধ্যে আমার নাম হবে। ইন ফেক্ট কিছু দিন পর ইন্ডিয়া যেতে হবে। সেখানে যদি আমার সিলেকশন হয়ে যায় তাহলে শুধু বাংলাদেশে নয় ইন্টারন্যাশনাল মডেলের মধ্যে আমার নাম হবে। আই উইল বি সেলিব্রিটি। ও এম জি।

রিহান — আফরানকে বলে আনরোমেন্টিক বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু দেখ তার আলোচনার মূল বিষয় তাকে নিজেকে ঘিরে। কোথায় কি করছে, কে কি বলেছে, তার মডেলিং এসব নিয়ে। কিন্তু দেখ একটি বারও আফরানের কোন খোঁজ নিল না। (আরিফ-ইয়াশকে ফিসফিস করে বলল)

আরিফ — এই আর নতুন কি। গত দুই বছর ধরেই দেখছি। এসবের মাঝে ফেসে গেল বেচারা আফরান।

পান্না — হাই গাইজ। কি নিয়ে কথা হচ্ছে?

ইয়াশ — তোমাকে নিয়ে। (মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।) না মানে তুমি আফরানের সাথে কথা বলছ এদিকে যে আমরাও আছি সেই খেয়ালই নেই।

পান্না — কারণ আমার বয়ফ্রেন্ড আফরান তোমরা না। তাই আগে আফরানের কাছেই তো যাব। ওকে বাই গাইজ। বেবি লেটস গো। (আফরানের হাত ধরে টেনে)

আফরান — কোথায়?

পান্না — আফরান। আমি না সত্যি পারছি না। ভুলে গেলে আজকের ডেইট৷ দুই বছর পূর্বে আজকের দিনেই আমাদের ফার্স্ট মিটিং হয়েছিল। ভার্সিটির প্রথম দিন। তোমার মনে নেই? (ভ্রু কুচকে)

আফরান — ওহ হ্যাঁ।

পান্না — বাকি বয়ফ্রেন্ডদের মতো সারপ্রাইজ দেওয়া তো দূরে থাক ডেইট পর্যন্ত মনে রাখতে পার না। আচ্ছা বল আমাদের রিলেশন কবে শুরু হয়েছিল?

আফরান — ও… ওই…

পান্না — আমার বার্থডে কবে?

আফরান — ১২ জুলাই।

পান্না — ১৭ মে।

ইয়াশ — একটু পান্নাকে জিজ্ঞেস কর তো আফরানের বার্থডে কবে? (ফিসফিস করে) সে নিজে আজ পর্যন্ত আফরানের কোন ব্যাপার মনে রাখেনি। আবার আফরানের কাছ থেকে আশা করে।

রিহান — আফরানও কম না। কি দরকার পান্নার এতো পকপক শোনার। পান্না যা বলে চুপচাপ শুনতে থাকে। পাল্টা কোন প্রশ্ন করে না।

আরিফ — কারণ আবারও একই কান্ড ঘটবে।

তিনজনই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।

পান্না — আচ্ছা বাদ দাও। আমি মুড খারাপ করতে চাই না। চল কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে আজকের দিনটা সেলিব্রেট করি। (আফরানকে কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিয়ে গেল।)

পান্না চলে যাওয়ার পর তখনই প্রবেশ করল ওয়াসিম ও আহিল। আহিলের সারা শরীরে ধূলো। ওয়াসিম তাকে ধরে নিয়ে আসছে। আহিলও বেখেয়ালি হয়ে হাটছে এবং অকারণে হাসছে। ওয়াসিম আহিলকে বসিয়ে দিল।

আরিফ — ওয়াসিম। আহিলের এই অবস্থা কেন?

ওয়াসিম — এক্সিডেন্ট হয়েছে।

সবাই একসাথে চেচিয়ে বলল “এক্সিডেন্ট?”। ওয়াসিম সকালের ঘটনা বলল। সবাই চিন্তিত হয়ে আহিলকে দেখছে। কিন্তু সেদিকে আহিলের কোন ধ্যান নেই। সে বেখেয়ালি হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে।

রিহান — আহিল তুই ঠিক আছিস? কোথাও ব্যাথা লেগেছে?

আহিল — হ্যাঁ। বুকের ভেতর কেমন জানি করছে। ধুকপুক ধুকপুক করছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।

আরিফ — বুকে ব্যাথা করছে?

ওয়াসিম — আরে করবে না? মেয়েটা যে ধড়াম করে পড়ল ওর বুকের উপর ব্যাথা তো করবেই। মনে হয় মাথায়ও ব্যাথা পেয়েছে। আসার পথে বারবার এক কথা আওড়াচ্ছে। এই কেমন অনুভূতি? (চিন্তিত হয়ে)

ইয়াশ — তাহলে এখানে আনলি কেন হসপিটালে নিয়ে চল। আহিল চল। (আহিলের হাত ধরে উঠাতে নিলে আহিল ভ্রু কুচকে হাত ছাড়িয়ে নিল।)

আহিল — কি রে ওয়াসিমের সাথে সাথে কি তোরাও পাগল হয়ে গিয়েছিস?

রিহান — তোরা একটু সাইডে আয় তো। (আহিলকে বসিয়ে বাকিরা কোণায় গিয়ে দাঁড়াল।) আমার মনে হয় ব্রেইনে এফেক্ট করেছে। দেখ না ইয়ার কেমন হয়ে গিয়েছে। যে আহিল আসা মাত্রই হৈ-হুল্লোড় শুরু করে সে কেমন যেন চুপচাপ বসে আছে। এক ধ্যানে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। ওকে এভাবে না কৌশলে জিজ্ঞেস করতে হবে কি হয়েছে।

আরিফ — আমারও তাই মনে হয়।

সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহিলের দিকে। রিহানের ইশারায় সবাই গিয়ে আহিলের পাশে বসল।

আরিফ — আহিল? কি হয়েছে তোর? দেখ আমরা তো তোর বেস্টফ্রেন্ডস তাই না। আমাদের না বললে কাকে বলবি। বল আমাদের।

আহিল — (হেলান দিয়ে বসল) ইয়ার আমি মনে হয় ওই ওড়না ওয়ালির প্রেমে পড়েছি। উফফ ওকে দেখার পর থেকে চোখের সামনে শুধু সেই চেহারাটা ভাসছে। কি যেন নাম বলেছিস ওর সাথে মেয়েটা? ওয়াসিম কি নাম ছিল?

ওয়াসিম — মিস পিংকি?

আহিল — আরে ধুর সে না। লাল, সবুজ, কমলা মিক্সড ওড়না ওয়ালির নাম। আ দিয়ে কি যেন বলেছিল নাম।

ইয়াশ — আমেনা?

আরিফ — আয়েশা?

রিহান — আ দিয়ে আ? আকলিমা?

আহিল — হ্যাঁ… (রিহান কলার টেনে ভাব নিল।) আমরিন। (মূহুর্তে ভাব নেওয়া ফুস হয়ে গেল।) কত্তো কিউট নাম। একেবারে ওর মতো। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গেলাম। দোস্ত তোদের জন্য ভাবি পাইছি।

ইয়াশ — ধুর। এদিকে আমরা শুধু শুধু টেনশন নিচ্ছিলাম। এই দেখি অন্য লেভেলে চলে গিয়েছে।

আরিফ — তুই আর প্রেম? রিয়েলি? রোজ পাঁচ-দশটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করিস আর তুই পড়বি প্রেমে। নাইস জোক।

আহিল — ওই আমি ফ্লার্ট করি ঠিক। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো প্রেমে পড়িনি। অনেক রূপবতীর সাথে ফ্লার্ট করেছি। কিন্তু আমরিনের রূপে আমি মোহিত হয়েছি। প্রথম দেখায় অন্যরকম ঘোরে চলে গিয়েছি। ওয়াসিম এবং ওই পিংকি মেয়েটির মাঝে কথা হচ্ছিল। কিন্তু আমার সেদিকে কোন খেয়াল ছিল। আমরিনের মোহ যেন আমাকে তার দিকে টানছিল।

ওয়াসিম — কারেকশন। প্রথমত মেয়েটি এবং আমার মধ্যে কথা নয় ঝগড়া হচ্ছিল। দ্বিতীয়ত কেমন অকৃতজ্ঞ মেয়ে। একটা থ্যাংক ইউও বলল না বরং সব দোষ আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছিল। এক নাম্বারের ঝগড়াটে।

রিহান — আহিল এসব বাদ দে। চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। আজ নিউ ইয়ারের অরিয়েন্টেশন ক্লাস হবে।

আহিল — না রে পারছি না বাদ দিতে। সেই কবে থেকে শুধু ওর চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

রিহান — মেয়েটার শুধু নাম জানিস। আর কিছুই তো জানিস না। তাহলে তাকে খুঁজবি কোথায়?

আহিলের হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। সত্যিই তো কোথায় খুঁজবে তাকে। আহিল পেঁচার মতো চেহারা বানিয়ে রেখেছে। তা দেখে ইয়াশ তার মাথায় টোকা দিল। আহিল সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই ইয়াশ এমন ভাব ধরল যেন কিছু জানে না।

ওয়াসিম — আফরান কোথায়?

আরিফ — পান্না এসেছিল। আফরানকে সাথে করে নিয়ে গেল।
.
.
.
নূর — সচরাচর আমাকেই লেট লতিফ ডাকিস। কিন্তু আজ তোদের দেরি হলো কি করে?

সিমা তেল মরিচ দিয়ে রোমাঞ্চকর করে সব ঘটনা বলল।

সিমা — আবার বলে নাকি এক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে এসেছে। বরং তাদের জন্যই এক্সিডেন্ট হয়েছে। দেখ আমি বলছি তারা কোন সাহায্য করতে আসেনি বরং….

আমরিন — আচ্ছা হয়ছে। আসার পথে তাদের কম কথা শোনাও নি। যে এখন আবার শুরু।

মেহের — তুই ঠিক আছিস তো? কোথাও লাগেনি তো?

আমরিন — আমি ঠিক আছি। এসব বাদ দিয়ে চল ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখি।

প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের আলাদা দালান। বিশাল বড় এবং পরিপাটি।

নূর — এই শোন। ভার্সিটি দেখে না আমার মধ্যে একটা টাটকা ছন্দ উৎপাদন হচ্ছে।

পুষ্প — গাইজ ছোট খাট স্ট্রোক করার জন্য রেডি হয়ে যা।

বাকিরা অসহায় দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর আড়চোখে পুষ্পর দিকে তাকাল।

নূর — এসব বাদ আমার নূর ভিডুর ছন্দ শোন। উহুম উহুম। (গলা ঝেড়ে নিল) ভার্সিটি দেখে মনে এলো এই আভাস…. ওয়াহ ওয়াহ বল ফকিন্নিরা।

সবাই করুণ স্বরে বলল “ওয়াহ ওয়াহ”।

নূর — “ভার্সিটি দেখে মনে এলো এই আভাস, স্কুল কলেজের প্যারা শেষ শুরু হবে ভার্সিটির বাঁশ।” দুই হাত রেখে খালি, জোরে জোরে মার তালি।

আলিফা — এটা কি ছন্দ বললি নাকি আমাদের ভয় লাগাইলি।

নূর — সত্যি বললাম। জীবনটা বাঁশময়। দেখলি না ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে কত্তোগুলো লেকচার দিল তাও প্রথম দিন। দেখেই মনে হচ্ছে স্যাররা অনেক প্যারা দিবে। আজকের জন্য প্যারা ওভারলোড। চল বাসায় ফিরে যায়। এই ওয়েট ভার্সিটির প্রথম দিন একটা সেলফি তো প্রাপ্য তাই না।

নূর ফুচুক ফুচুক করে ইচ্ছামত সেলফি তুলল।

নূর — হয়েছে এবার চওওওললল…..

ইটের সাথে পা মচকে পড়ে যায়। কিন্তু মাটিতে পড়ল না বরং কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। কিন্তু যার সাথে ধাক্কা লেগেছে সে পড়ে চিৎপটাং হয়ে আছে। নূর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।

পান্না — আফরান আর ইউ ওকে?

আফরান রাগে ফোপাঁতে লাগলো। ভার্সিটির সবার সামনে এভাবে পড়ে যাওয়ায় সে অপমানিত হলো। তার রাগের পরিমাণ আরও বেড়ে গেল যখন আশেপাশের লোকজন তাকে দেখে হাসাহাসি করছে। তড়িঘড়ি সে উঠে দাঁড়ালো।

নূর — আই এম সরি। আমি…

পান্না — হেই ইউ। আর ইউ ব্লাইন্ড? চশমা লাগিয়েও চোখে দেখতে পাও না।

আফরান নূরকে কিছু বলতে যাবে তখনই ভাবনায় পড়ে গেল। নূরেরও একই অবস্থা। পরক্ষণে আফরান পাশে তাকিয়ে দেখে পুষ্প। পুষ্পকে দেখে সে বিচলিত হলো। কারণ পান্না এবং আফরানের সম্পর্কের ব্যাপারে শুধু তার বন্ধুরাই জানে। এক পাশে পুষ্প, অন্যপাশে পান্না। আফরান হকচকিয়ে গেল।

পান্না — অসভ্য। আফরান চল। (আফরানকে নিয়ে গেল)

আমরিন — কি রে দুই পেত্নী আবার কোন ভাবনায় পড়লি? (নূর,পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে)

পুষ্প — কিছু না। চল যাওয়া যাক।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here