Ragging To Loving 2পর্ব-৫

0
3034

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৫
#রিধিরা_নূর

বাসায় ফিরে নূর ভাবনায় মগ্ন। তার ভাবনা জুড়ে আফরান। তাকে খুব চেনা চেনা লাগছে৷ কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। পরিশেষে বিরক্ত হয়ে চিন্তা ভাবনা ছেড়ে দিল। অপরদিকে আফরানেরও একই অবস্থা। ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে। ভাবছে নূরকে নিয়ে। খুব পরিচিত মনে হচ্ছে তার চেহারা। এদিকে পান্না অনবরত আফরানকে ডেকে যাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। পান্না তুড়ি বাজাতেই আফরানের ধ্যান ভাঙে।

পান্না — কোথায় হারিয়ে গিয়েছ? কবে থেকে ডাকছি।

আফরান — না। কোথাও না। (আবারও ভাবনায় হারিয়ে গেল।)

সন্ধ্যায় নূর পা টিপে টিপে গেল রান্না ঘরে। বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে ভেতরে মা আছে কিনা। না নেই। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখল কেউ আসছে কিনা। এবারও কেউ নেই। আস্তে আস্তে ফ্রিজের দিকে পা বাড়ালো। ফ্রিজ খুলতে দুটো বড় বড় আইসক্রিমের বক্স দেখতে পেল। তার ফেভারিট বাটারস্কোচ ফ্লেভারের আইসক্রিম। জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। ঢাকনা সরিয়ে নিশ্বাস নিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো। অদ্ভুত ঘ্রাণ। পরক্ষণে ভাবলো ফ্রিজে রাখার কারণে বোধহয় এমন ঘ্রাণ লাগছে। জিবে জল এসে গেল। বড় একটা চামচ নিয়ে মুখে দিল। উহুম…।

নূর — আহহহ। এমন ঝাল কেন? স্বাদটাও কেমন যেন। ওয়াক। ছিঃ!

শাহারা হায়দার — তুই এখানে কি করছিস?

নূর — আম্মু আইসক্রিমের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেল নাকি? পুরো কেমন যেন টেস্ট। ওয়াক।

শাহারা হায়দার — চুরি করে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেতে এলে এমনই হবে। (নূরের হাত থেকে বক্স নিয়ে নিল।) আর হ্যাঁ। এটা আইসক্রিম না আদা বাটা।

নূর — এ্যাহ্! (হতভম্ব হয়ে) আইসক্রিমের বক্সে এসব কে রাখে। ভালা মানুষ পাইয়া মনটা ভাইঙা দিছ। (ফ্রিজ খুলে সেভেন আপের বোতল নিয়ে পান করতে লাগলো। ফুৎ করে কুলি করে দিল।) এখানেও প্রতারণা? দুনিয়াটা প্রতারণায় ভরে গিয়েছে। কোল্ড ড্রিংকসের বোতলে সাদা পানি? তোমাকে পিওর বাঙালি পুরষ্কার দিয়ে ভূষিত করার জন্য আহ্বান জানাবো।

নূরের কথা শুনে তার মা হেসে উঠল। নূর বিষন্ন হয়ে চলে গেল। রুমে গিয়ে দেখে তন্বী পড়ছে। কারণ আগামীকাল তার ক্লাস টেস্ট। বোরিং এর ঠেলায় নূরের পেটে সুড়সুড়ি হচ্ছে। একটু আগে বান্ধবীদের সাথে ফোনে আলাপ করল। কিন্তু এখন কি করবে? এদিকে তন্বীও পড়তে বসেছে। একা একা বসে আছে। নিরাশ হয়ে নানান ভঙ্গিমা করছে।

নূর — ত…ন্বী… (লম্বা সুর টেনে তন্বীকে ডাকল। তন্বী তাকাতেই ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিল। তন্বী বুঝতে পারল নূরের মাথায় কোন খুরাফাতি চিন্তা ভাবনা চলছে।)

তন্বী — আফুনি নো। কাল আমার এক্সাম। তাই আমাকে পড়তে দাও। কোন ডিস্টার্ব করবে না। (বলে আবারও পড়ায় মনোযোগ দিল।)

নূর — ঢং। হুহ্।

পরক্ষণে মনে পড়ল ঘরে যে আরেকটা উল্লুক আছে। তাকে জ্বালানো যাক। তিড়িং বিড়িং করে কোমর দুলিয়ে গেল রিহানের রুমে। রিহান টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে।

নূর — হেই রিহান ব্রো,,, ইউ লুক জাস্ট লাইক এ ক্রো। (রিহান ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল নূরের দিকে।) হেলো।

রিহান — হাই। (বলে টিভির দিকে ধ্যান দিল)

নূর — হেলো।

রিহান — হাই বললাম তো। (রেগে)

নূর — (ধাক্কা দিয়ে রিহানকে সরিয়ে দিল।) আমি হাই ওয়ালা হ্যালো বলিনি। হেলো মানে সরতে বললাম।

রিহান — উফফ৷ (বিরক্ত হয়ে সরে বসলো) এখানে কি?

নূর — কার্টুন দেখব। রিমোট দে।

রিহান — মা বাবার রুমে যা। নাহলে ল্যাপটপে দেখ। আমি এখন ম্যাচ দেখছি।

নূর — তুই যা। এই রুমের টিভি বড়। তাই আমি এখানেই দেখব।

রিহান — যা সর।

নূর — আচ্ছা আমিও তোর সাথে ম্যাচ দেখব। (রিহান আড়চোখে তাকিয়ে আবারও টিভির দিকে ধ্যান দিল।) আচ্ছা কয় বলের পর গোল হয়? (নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে। রিহান গেল ভড়কে।)

রিহান — ক্রিকেট খেলায় গোল হয়? ফুটবল খেলায় গোল হয়?

নূর — কিন্তু বলটাও আগের থেকেই গোল আছে সেটা আবার গোল করার কি প্রয়োজন। হাহ্ ফালতু গেইম। তিনকোণা, চারকোণা করলে একটা কথা ছিল। গোল বলকে নাকি আবার গোল করবে। একেকটা আবুইল্লা।

রিহান — নূর…।(চিল্লিয়ে। নূর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেল। খেলায় সিক্স মারায় রিহান উত্তেজিত হয়ে লাফিয়ে উঠল।)

নূর — এ্যাহহ যাহ বাবা। বল কত্তো দূরে ফিক্কা মারল। খাচ্চোর বেটা এখন যা বল নিয়ে আয়। (ব্যাটসম্যানকে ইচ্ছেমতো কতগুলো কথা শোনালো। রিহান বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।)

রিহান — (রিমোট নূরের হাতে গুজে দিল) নে দেখ কার্টুন। তোর চেহারাও কার্টুনের চেয়ে কম না। আয়নায় একবার নিজের চেহারা দেখ তাহলে কার্টুন দেখার শখ মিটে যাবে।

নূর — আয়নায় দেখতে হবে না। তোকে দেখেই শখ মিটে গেল। (রিহান রেগে হনহনিয়ে চলে গেল। নূর হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। উঠে টিভি অফ করে দিল।) আহহ এখন শান্তি লাগছে। এতক্ষণ পেটের ভিতর কেমন ঘুড়ঘুড় করছিল।
.
.
.
আহিল আধশোয়া হয়ে বিছানায় বসে আছে। চোখ বন্ধ করতে শূন্যে ভেসে উঠল নিভু নিভু চোখজোড়া, ছোট চিকন ঠোঁট, গোলাপি আভা গাল, কোঁকড়া চুলে বিনুনি। চেহারাটা আমরিনের। আচমকা চোখ খুলে আশেপাশে তাকে খুঁজছে আহিল। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। সুদর্শন একজন যুবক আহিল৷ অনেক মেয়েই তার জন্য পাগল। কিন্তু তাকেই পাগল করে দিয়েছে অচেনা এক তরুণী “আমরিন”। নামটা মুখে উচ্চারণ করতেই যেন এক ফুরফুরে শীতল হাওয়া আহিলের মন ছুঁয়ে গেল। পরক্ষণে চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। অল্প মূহুর্তের সাক্ষাৎ তাকে মোহে ফেলেছে। শুধু নামটায় জানা আর কিছু জানা নেই। আহিল তড়িঘড়ি উঠে ফোন খুঁজতে লাগলো। ফোন হাতে নিয়ে প্রবেশ করল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। কাউকে খুঁজে বের করা ততটা মুসকিল নয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে আমরিন লিখে সার্চ করে। তাতে অসংখ্য আইডি আসে। আহিল বুঝতে পারছে না এর মাঝে আমরিনের আইডি কোনটা।
.
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নায় নিজের হাত দেখছে আমরিন। সকালের দূর্ঘটনায় হাতের কুনুই অনেকটা আঘাত লেগেছে। ঔষধ লাগাতে লাগাতে ভাবছে এখন থেকে সাবধানে রিকশায় বসতে হবে। সত্যি যদি কোনো দূর্ঘটনা হতো তাহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতো। রিকশায় ওড়না পেচিয়ে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
.
.
পুষ্প কোমরে হাত দিয়ে সিড়ির দ্বারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবগম্ভীর মনোভাব নিয়ে। চেহারায় কোন ভঙ্গিমা নেই। নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আফরান। আফরান শুকনো ঢোক গিলতেই পুষ্প সরু দৃষ্টিতে তাকাল।

পুষ্প — কয় দিন ধরে চলছে এসব?

আফরান — কি..কি চলছে? হ্যাঁ?

পুষ্প — ওই মেয়েটার সাথে প্রেম। দেখ আমি কোন ছোট বাচ্চা না তাই আমাকে ভুলভাল বোঝাতে এসো না।

আফরান — দু..দুই বছর।

পুষ্প — হওও। দুইইই বছররর। বাহ ভাই বাহ। এই আমি তোমার বোন। রিলেশন কর দুই বছর হয়ে গেল। অথচ আমাকে জানাও নি। হুহ্।

আফরান কিছু না বলেই চলে গেল। পুষ্প গাল ফুলিয়ে আছে।
_______________________________

আলিফা মেহের কথা বলতে বলতে ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করে। আশেপাশে খেয়াল না করায় সামনের জনের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে কেউ একজন তাকে ধরে ফেলে। ব্লাক এন্ড হোয়াইট চেক শার্ট পরা, চুল জেল দিয়ে সেট করা। আলিফা সেই লেভেলের বাঁশ থুক্কু ক্রাশ খেল। চোখ পিটপিট করে দেখছে। ছেলেটা আর কেউ নয় বরঞ্চ আরিফ। তার সাথে রয়েছে ইয়াশ।আরিফ তাকে দাঁড় করালো। আলিফা হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মনে মনে বলছে “হায় মে মারজাবা ক্রাশ খাকে”।
ইয়াশেরর সাথে ধাক্কা লেগেছে। ফলে তার হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে ভেঙে যায়। তড়িঘড়ি ক্যামেরা উঠিয়ে দেখে কয়েক টুকরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্যামেরার টুকরো হাতে মুষ্টি বদ্ধ করল। উঠে দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আলিফা ও মেহেরের দিকে। আলিফা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আরিফকে দেখছে। মেহের তা খেয়াল করে।

মেহের — সরি। আসলে বেখেয়ালি হয়ে….

ইয়াশ — সরি মাই ফুট। জাস্ট শাট আপ। চোখ দুটো কি শো অফ করতে দেওয়া হয়েছে? তাহলে দেখে চলতে পার না? (রেগে)

মেহের — দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আমি না হয় না দেখে চলছিলাম। আপনি কি করছিলেন শুনি। আপনি তো পাশ দিয়ে যেতে পারতেন।

ইয়াশ — ওহ রিয়েলি! নিউ স্টুডেন্ট?

মেহের — জি।

ইয়াশ — গ্রেট। ভার্সিটিতে নতুন এসে পাখা গজিয়েছে তাই না। সিনিয়রদের সাথে কীভাবে কথা বলতে জানো না। নো প্রবলেম আস্তে আস্তে শিখিয়ে দিব। ফার্স্ট অফ অল কান ধরে সরি বল।

মেহের — জি! (চমকে)

ইয়াশ — জি।

মেহের — কখনো না। প্রথমে সরি বলেছিলাম। এখন আর তাও বলব না আপনার এটিটিউড দেখে।

ইয়াশ — প্রথমে বলেছিলাম কান ধরে সরি বলতে৷ এখন কান ধরে ওঠবস কর। তাও একশবার। আর সিনিয়রের কথা না শুনলে কি হয় তা তো জানই। ভার্সিটিতে টিচার্সদের নয় সিনিয়রদের রাজত্ব চলে। নাও স্টার্ট।

মেহের আলিফা চোখ বড় বড় করে তাকাল।তাদের ঝগড়া দেখে আরিফের বিহ্বল অবস্থা। ইয়াশের রাগ সম্পর্কে আরিফের ধারণা আছে।

আলিফা — দে..দেখুন। এখানে মেহেরের কোন দোষ নেই। আমি ….

ইয়াশ — তাহলে তোমার জন্য আমার ক্যামেরা ভেঙেছে। দুজনেই কান ধরে ওঠবস কর। নাহলে কিন্তু দুইদিনও ভার্সিটিতে টিকতে পারবে না। দুইদিনের মধ্যে এখান থেকে ছাটাই করব।

মেহের ছলছল দৃষ্টিতে তাকাল। কারণ বহু কষ্টে তার পড়াশোনা চলছে। একে তো বাবার অসুস্থতা, সংসারের টানাপোড়েনে পড়াশোনা এগুনে কষ্টসাধ্য। যদি কোনো কারণে ঝামেলা হয় তাহলে তার পড়াশোনা একেবারে থেমে যাবে।

ইয়াশ — ওহ প্লিজ এসব ন্যাকামি কর না। যা বলছি তাই কর।

এবার আলিফার রাগ উঠল। সাহস কি করে হয় আমার বোনকে এসব বলার। আলিফা কিছু বলতে যাবে তখনই দেখে মেহের কান ধরছে। আলিফা মেহেরের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

আরিফ — ইয়াশ বাদ দে না। চল।

ইয়াশ — না আরিফ। তুই জানিস এটা আমার জন্য কি। একে তো…

ইয়াশকে আর কিছু বলতে দিল না আরিফ। টেনে নিয়ে গেল। রাগে ইয়াশ ঘাড় ফিরিয়ে মেহেরের দিকে তাকাল। মেহের কান্না চাপার অযথা চেষ্টা করছে। আলিফা মেহেরের থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উপরে তুলতেই টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

নূর — হাই ফকিন্নিস। (আলিফার মাথায় টোকা দিল। সামনে আসতেই থমকে গেল মেহের চোখে জল দেখে।) মেহু কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? আংকেলের কি কিছু…..

আলিফা — না। চাচুর কিছু হয়নি। কিন্তু…. (আলিফা সব বলল।)

নূর — এতো বড় সাহস। অসভ্য, অভদ্র, নির্লজ্জ, বেহায়া, খাটাশ, খাচ্চর, উগান্ডার গরিলা, আফ্রিকান বাঁদর। কোথায় সে? ওর যদি বারো টা না বাজায় না আমার নামও নূর না। র‍্যাগিং করবে তাই না। র‍্যাগিং যদি তার…. (রাগে ফোপাঁতে লাগলো)

সিমা, আমরিন, পুষ্প একসাথে এলো।
সিমা — হোয়াটস আপ ফকিন্নি গার্লস। (নূরকে রাগে ফোপাঁতে দেখে সিমা বিচলিত হলো।) কি হয়েছে?

আলিফা তাদেরও সব বলল। সবার রাগ এখন মাথায় ছড়ে বসল। তারা একে অপরের জান। হোস্টেলেও একজনের জ্বর হলে বাকিরাও রাত জাগত। বন্ধুত্বের খাতিরে পরিবার থেকে দূর ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে। আলিফার বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় ট্রান্সফার হয়। যার কারণে আলিফার সাথে মেহেরও ঢাকায় যায়। বলে না কান টানলে মাথা আসে। এখানে একজন বান্ধবীকে টানলে বাকিরা ছুটে আসে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here