#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৫
★ এর ভেতর আরো তিনদিন কেটে গেছে। এই তিনদিনে আদিত্যের মাত্রাতিরিক্ত কেয়ারে, নূরের বেহাল অবস্থা। আদিত্যর খাবার খাওয়ানোর টর্চারে নূরের মনে হচ্ছে ওর পেটের ব্যাথাও এর থেকে ভালো ছিল। কমছে কম কয়দিন পরই চলে যেতো। কিন্তু আদিত্যের এই টর্চার মনে হচ্ছে আজীবনেও যাবে না।
আয়নার সামনে বসে বসে এসব ভাবছিল নূর। হঠাৎ পেছন থেকে আদিত্যের আওয়াজে নূরের ভাবনায় ছেদ পরলো।
আদিত্য নূরের পেছনে এসে বললো।
….তুমি রেডি হয়েছ?
নূর উঠে দাঁড়িয়ে আদিত্যের দিকে ঘুরে মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ আমিতো রেডি, কিন্তু কে আসবে তাইতো বলছ না।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দুই গাল টেনে দিয়ে বললো।
….তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আর সারপ্রাইজ কি কেউ বলে দেয়। এখন চলো নিচে যাই।
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যের সাথে নিচে গেল।
নিচে আসতেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। আদিত্য যেয়ে দরজা খুলে দিল। নূর তাকিয়ে আছে দেখার জন্য কে এলো। আদিত্য দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই নূর দেখলো দরজায় আদিত্যের বাবা আর সানা দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্যের বাবাকে দেখে নূর একটু চমকে গেল। প্রচুর নার্ভাস ফিল করতে লাগলো।
আদিত্য মুচকি হেসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….কেমন আছো বাবা?
আদিত্যর বাবাও জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো।
….আলহামদুলিল্লাহ। ভালোই আছি। তোমরা কেমন আছো?
….আমরাও ভালো আছি। এসো বাবা ভেতরে এসো।
কথাটা বলে আদিত্য ওর বাবাকে ভেতরে নিয়ে আসতে লাগলো। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখলো, সানা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে,তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আসবি না?
সানা অভিমানী সুরে বললো।
….কেন আসবো? আমকেতো কেউ চেয়েও দেখলো না। মনে হচ্ছে আমার কোনো কদরই নেই হুহ্।
আদিত্য হেসে দিয়ে সানার কাছে যেয়ে সানাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….নেন হয়েছে এখন প্রিন্সেস সাহেবা? এখন ভেতরে এসে আমাদের ধন্য করেন।
সানা এটিটিউড নিয়ে বললো।
….ঠিক আছে, ঠিক আছে। এতো করে যখন বলছো তখন কি আর মানা করতে পারি?
কথাটা বলেই সানা আর আদিত্য দুজনেই হেসে দিল।
সবাই ভেতরে আসতেই নূর আদিত্যের বাবার দিকে তাকিয়ে নার্ভাস গলায় বললো।
…আ আসসালামু আলাইকুম। কে কেমন আছেন আঙ্কেল?
আদিত্যের বাবা একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….হুম ভালো।
আদিত্যের বাবার এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে নূরের ভয় হতে লাগলো। মনে মনে ভাবছে, উনি কি আমাকে অপছন্দ করেন? নাকি আমার এখানে এভাবে থাকার বিষয়টি উনার কাছে খারাপ লাগছে। উনি যদি এই বিয়েত রাজি না হন, তাহলে কি করবো আমি? আদিত্যকে ছাড়া কিভাবে বাঁচব আমি? ওকে ছাড়াতো আমি মরেই যাবো। এসব ভেবে নূরের ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।
নূরের ভাবনার মাঝেই সানা দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরে খুশী হয়ে বললো।
….ভাবীইই, কেমন আছো আমার সুইট সুইট কিউট ভাবি?
সানার মুখে ভাবি ডাক শুনে নূরের মনের ভেতর এক অন্য রকম খুশি অনুভব করলো।নূরও মুচকি হেসে বললো।
….আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
সানা নূরকে ছেড়ে দিয়ে হাসি মুখে বললো।
…আমিও অনেক ভালো আছি। তোমাকে অনেক মিস করছিলাম, তাই বাবার সাথে চলে এলাম।
আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…হয়েছে? তোদের ভারত মিলাব শেষ হলে এখন একটু বস।
তারপর আদিত্য ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..বাবা তুমিও বসনা।
আদিত্যের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
…..আমি নূরের সাথে একটু কথা বলতে চাই। আমি উপরের রুমে যাচ্ছি, নূরকে উপরে দেও।
আদিত্যের বাবার কথা শুনে নূরের হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। ভয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে ওর।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে বাবা।
আদিত্যের বাবা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।
আদিত্য নূরের কাছে এসে নূরের হাত নিজের হাতের ভেতর নিয়ে নরম স্বরে বললো।
….যাও বাবা ডাকছে তোমাকে। কথা বলে এসো।
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো সুরে বললো।
….আ আমার অনেক ভয় করছে। উনি যদি আমাকে পছন্দ না করেন? আর তাছাড়া আমার মত পরিবার ছাড়া কোনো মেয়েকে উনি কেন, কেউই পছন্দ করবেন না।
আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বললো।
…..হুঁশশ। একদম ফালতু কথা বলবে না। আমার নূরপাখিটা কারোর চেয়ে কোনো অংশে কম না। বরং সে সবচেয়ে বেস্ট, সবচেয়ে স্পেশাল। তাই তোমাকে কেও অপছন্দ করতেই পারবে না। আর তাছাড়া বাবা ওইসব পুরাণ চিন্তাধারার লোক না।বাবা অনেক খোলা মনের মানুষ। তাই এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে হাসি মুখে বাবার কাছে যাও কেমন?
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
সানা সেটা দেখে দুষ্টুমি করে এক হাত মুঠ করে মুখের সামনে নিয়ে মিথ্যে কাশি দেওয়ার ভান ধরে বললো।
….উহুম,উহুম। বায়দা মেঠোপথ, আমি কিন্তু এখানেই আছি। না মানে, তোমারা আবার ভুলে টুলে গেলে নাকি? তাই মনে করিয়ে দিলাম আর কি।
সানার কথায় নূর লজ্জা পেয়ে গেল। আদিত্য সানার দিকে দুষ্টুমি করে বললো।
…. তো আছিস কেন এখানে? দেখছিস ভাই ভাবি রোমাঞ্চ করছে। তাহলে তোর কর্তব্য হয় আমাদেরকে স্পেস দিয়ে এখান থেকে চলে যাওয়া। তানা করে তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের রোমাঞ্চ দেখছিস। ছিঃ ছিঃ ছিঃ
সানা যেন বোকা বনে গেল। আদিত্যকে লজ্জায় ফেলতে গিয়ে নিজেই লজ্জায় পরে গেলো।
নূর আদিত্যের বাবার রুমের দরজার কাছে এসে দরজায় নক করলো। আদিত্যের বাবা ভেতর থেকে বললো।
…..ভেতরে আসো।
নূর দরজা খুলে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলো। আদিত্যের বাবা সোফায় বসে আছে। নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. বস এখানে।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সোফায় গিয়ে মাথা নিচু করে বসলো।
আদিত্যের বাবা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তুমি কি আদিত্যকে ভালোবাসো?
নূর নিচের দিকে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করলো।
আদিত্যর বাবা আবার বলে উঠলো।
….তুমি কি জানো? আমি যদি এই বিয়েতে রাজি না হই, তাহলে আদিত্য কখনো তোমাকে বিয়ে করবে না।
নূরের ভয়ে হাত পা কাপছে। তবুও মনে সাহস নিয়ে ঢোক গিলে বলে উঠলো।
….জ জজ্বি জানি? আদিত্য আমাকে বলেছে, আপনার মতামত এই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। আর আমিও আদিত্যর সাথে একমত। আপনি যদি এই বিয়েতে রাজি না হন।তাহলে আমি নিজেই আদিত্যর জীবন থেকে চলে যাবো। কারণ আমি চাইনা, আমার জন্য আপনাদের বাবা ছেলের সম্পর্কে ফাটল ধরুক। এমনিতেই আদিত্য ওর মাকে হারিয়েছে, তারপর আপনিও যদি ওর থেকে দূরত্ব তৈরি করে নেন। তাহলে আদিত্যর জীবন থেকে সব খুশিই চলে যাবে। আর আমি সেটা কখনোই সহ্য করতে পারবো না। আমি ভালো করেই জানি, বাবা থেকেও না থাকার কষ্টটা কতো গভীর। তাই আপনি যদি আমাকে পছন্দ না করেন, সেটা শুধু আমাকেই বলুন। আমি চুপচাপ ওর জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। কিন্তু আদিত্যকে সেটা বলবেন না প্লিজ। কারণ আমি চাই না এই বিষয় নিয়ে আদিত্য আপনার সাথে কোনো রকমের মন মালিন্যতা করুক।
নূরের কথাগুলো শুনে আদিত্যর বাবার মনটা ভরে উঠলো। মনে মনে ভাবলো, আদি সত্যিকারের একটা হিরা খুঁজে বের করেছে। আমি নিজেও হয়তো কখনো এতো ভালো মেয়ে খুঁজে বের করতে পারতাম কিনা সন্দেহ। এসব ভেবে আদিত্যের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
……ঠিক আছে। আমি তোমাকে আমার বৌমা হিসেবে মানবো না।
কথাটা শুনে নূরের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। কানে শুধু ওই কথাটাই বাজতে লাগলো। মাথার ভেতর যেন পুরো পৃথিবীটাই ঘুরছে। পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। এখান থেকে উঠে যাওয়ারও শক্তি পাচ্ছে না। কোনরকমে ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
…..ঠি ঠি ঠিক আছে।
কথাটা বলেই নূর কোনমতে সোফার হাতলে ভর দিয়ে কাঁপা কাঁপা শরীরে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে অগ্রসর হতেই, আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
….কোথায় যাচ্ছো? আমি কি বলেছি যেতে? বস, আমার কথা এখনো শেষ হয় নি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে আবার বসে পরলো।
আদিত্যের বাবা একটু হেসে উঠে বললো।
…..আরে বোকা মেয়ে আমি তোমাকে বৌমা হিসেবে মানবো না কারণ, আমি তোমাকে আমার মেয়ে হিসেবে মানতে চাই। তুমি বৌমা হিসেবে না তুমি আমার মেয়ে হয়ে আসবে আমাদের বাড়িতে।
আদিত্যের বাবার কথায় নূর চমকে তাকালো আদিত্যের বাবার দিকে। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। উনি সত্যিই আমাকে মেনে নিয়েছে? আমি সত্যিই আদিত্যর বউ হবো?
আদিত্যের বাবা নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…..কিরে মা হবি আমার মেয়ে? আমার সানার মতো আরেকটা মেয়ে?
নূর ছলছল চোখে আদিত্যের বাবার দিকে তাকালো। বাবার ভালোবাসার তৃষ্ণার্থ নূর , হঠাৎ করে বাবার ভালোবাসা আর স্নেহ পেয়ে আবেগে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো নূর।
আদিত্যের বাবা স্নেহ ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..কিরে পাগলি? কাদছিস কেন? হবিনা এই বুড়ো বাবার মেয়ে?
নূর আদিত্যের বাবার দিকে অশ্রু ভরা টলটলে চোখে তাকিয়ে ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
আদিত্যর বাবা অভিমানী সুরে বললো।
….কিন্তু আমি তোমার উপর রেগে আছি।
নূর কান্নাটা একটু থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কে কেন? কি করেছি আমি আঙ্কেল ?
এইযে আবারও আমাকে আঙ্কেল বললে। এটা আবার কেমন কথা। বাবাকে কি কেউ আঙ্কেল বলে? তাই আমি রাগ করেছি।
কথাটা বলে আদিত্যের বাবা মিছেমিছি অভিমান দেখিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।
নূর মুচকি হেসে কান ধরে ঠোঁট উল্টে অপরাধীর সুরে বললো।
…..সরিইইই বা বাবা। আর কখনো এমন ভুল হবে না। এবারের মতো মাফ করে দিন বাবা।
আদিত্যের বাবা একবার আরচোখে নূরের দিকে তাকালো। তারপর হেসে দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে। মনে থাকে যেন?
নূর হেসে বললো।
….হুম একদম মনে থাকবে।
আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে বললো।
….এখন থেকে আমরা দুজন এক টিমে বুজেছ। আদি যদি তোমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে, তাহলে আমাকে বলবে। আমরা দুজন মিলে ওর ক্লাস নিবো ঠিক আছে।
নূর হেসে দিয়ে বললো।
……ঠিক আছে বাবা।
সানা হঠাৎ ওদের মাঝে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো।
….বারে, আমাকে ভুলে গেলে বুঝি? আমিওতো তোমাদের টিমে তাইনা?
আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে বললো।
….তোকে কিভাবে ভুলতে পারি? তুই তো আমাদের টিম লিডার।
সানা হেসে দিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….হুম একদম ঠিক বলেছ।ভাবি আসায় আমাদের টিমটা আরও মজবুত হয়ে গেছে। ভাবির সামনে তো ভাইয়াও হার মেনে নিবে। হি হি
আদিত্যের বাবা একহাতে সানাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আরেক হাতটা হাতটা এবার নূরের দিকে বাড়িয়ে দিল।
নূর চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে আদিত্যের বাবার কাছে এগিয়ে গেল। আদিত্যের বাবা আরেক হাতে আলগা করে নূরকে জড়িয়ে ধরলো।
নূরের যেন আজ খুশীর ঠিকানা নেই। নিজেকে আজ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে জীবনে আর কোনো কিছুর অভাব নেই।
নূর আদিত্যের বাবার রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আদিত্যকে খুঁজছে। নিচে দেখতে পায়নি তাই আদিত্যের রুমের দিকে যাচ্ছে। আদিত্যের রুমের দরজায় এসে দেখলো। আদিত্য রুমের ভেতর উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।
নূর কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ে যেয়ে পেছন থেকে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। দুই হাতে পেছন থেকে আদিত্যের পেট শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আচমকা এমন হওয়ায় আদিত্য টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে এক পা এগিয়ে গেল। নূরের এভাবে জড়িয়ে ধরায় আদিত্য অনেকটা অবাক হলো। নূরের কান্নার শব্দ শুনে আদিত্য ঘাবড়ে গেল। নিজের পেটের ওপর থেকে নূরের হাত খুলে হাত ধরে নূরকে নিজের সামনে আনলো। সামনে আনতেই নূর আবারও সামনে থেকে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো।
আদিত্য নূরের পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে চিন্তিত স্বরে বললো।
…..হেইই প্রাণপাখীটা, কি হয়েছে? কাঁদছ কেন? বল আমাকে।
নূর আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুধু কেদেই যাচ্ছে। কেঁদে কেঁদে আদিত্যের সার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে।
আদিত্য এবার দুই হাত দিয়ে নূরের মুখটা ধরে উপরে তুলে, চোখের পানি মুছে দিয়ে, মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
…..কি হয়েছে প্রাণপাখীটা? বলনা প্লিজ? কাঁদছ কেন? বাবা কিছু বলেছে তোমাকে?
নূর টলটলে চোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি বলেছে বাবা?
নূর কাঁদো কাঁদো সুরে ফুপাতে ফুপাতে বললো।
…. বা বা বাবা আ আমাকে বলেছে, আজ থেকে আমি তার মে মেয়ে।
নূরের কথা শুনে আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মুচকি হেসে বললো।
……তো এটাতো খুশীর কথা পাগলী। এতে কাঁদার কি হলো?
নূর আবারও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
….স সব তোমার জন্যই হয়েছে। তুমি ধীরে ধীর আমার জীবনের সব শূন্যতা পূরণ করে দিচ্ছো। তুমি আমার জীবনে না আসলে আমি এসব কিছুই পেতাম না। তুমি আমার জীবনের সত্যিকারের রাজকুমার। ভালোবাসি তোমাকে রাজকুমার। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা। তোমাকে ছাড়া আমি বাচবোনা। কিছুতেই না।
আদিত্য একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে নূরকে শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
…..কোথায় যাবো তোমাকে ছেড়ে? তুমি বিহীন যে আমিও নিঃস্ব।। আর হ্যাঁ আমার জন্য কিছুই হয় নি। তুমি এসব খুশি ডিজার্ভ করো । তাই পেয়েছ। বরং তুমিই আমার জীবনে এসে, আমার জীবনটা তোমার আলোয় আলোকিত করেছ। আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছ। খুশীতে ভরিয়ে দিয়েছ আমার জীবনটা। তুমি আমার জীবনের সত্যিকারের নূর।
আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে ওপরে তুলে, চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো।
….এখন কান্নাটা বন্ধ করো প্লিজ। তোমাকে নিয়ে হয়ে গেছে এক যন্ত্রণা। দুঃখ পেলেও কাঁদো, আবার খুশী হলেও কাঁদো। একটুখানি হাসতেও তো পারো তাইনা। জানো আমার প্রাণপাখী টাকে হাসলে কতো সুন্দর লাগে?
আদিত্যের কথা শুনে নূর একটু লাজুক হাসলো।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….দ্যাটস লাইক মাই গুড গার্ল।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে আবার জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর আদিত্য বললো।
….আচ্ছা আমাদের বিয়েটা কেমন ভাবে চাও তুমি? বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো ইচ্ছা থাকলে বলো আমাকে।
নূর বললো।
….না তেমন করে কিছু ভাবিনি। তোমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই করো। তবে আমার এই জায়গাটা খুব পছন্দ। তোমার কোনো সমস্যা না হলে, আমরা আমাদের বিয়ের আয়োজনটা কি এখানে করতে পারি?
আদিত্য নূরের মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললো।
….কেন না? অবশ্যই পারি। আমার প্রাণপাখীটা যা বলবে তাই হবে। আমাদের বিয়েটা এখানেই হবে। খুশি?
নূর আদিত্যকে আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো।
….হুম অনেক খুশি।
আদিত্য বললো।
….আচ্ছা চলো এখন নিচে যাই। লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে।
নূর আদিত্যর বুক থেকে মাথা তুলে বললো।
…বাবা তোমাকে ডেকেছে। তোমার সাথে নাকি কথা আছে।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে চলো।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেই। নূর আদিত্যের হাত টেনে ধরে আদিত্যকে আটকালো। তারপর নিজের হাত উঁচু করে আঙুল দিয়ে অন্য দিকে ইশারা করে বললো।
….আদিত্য ওখানে ওটা কি?
নূরের কথামতো আদিত্য নূরের হাত অনুসরন করে নূর যেদিকে ইশারা করেছে, সেইদিকে তাকালো।
আদিত্য ওইদিকে তাকাতেই নূর ঝট করে আদিত্যের গালে একটা চুমু দিয়েই ভো দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
নূরের কাজে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো আদিত্য।
আদিত্য ওর বাবার রুমের দরজায় নক করে বললো।
….বাবা আসবো?
……হ্যাঁ আদি আসো।
আদিত্য ভেতরে ঢুকে ওর বাবার পাশে বেডের ওপর বসে বললো।
…..তুমি ডেকেছিলে বাবা?কিছু বলবে?
…..হ্যাঁ, আসলে তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কোথায় কিভাবে করতে চাও? তোমাদের কোনো প্ল্যান আছে নাকি? সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তেমন স্পেশাল কোনো প্ল্যান নেই। তবে নূরের এই জায়গাটা খুব পছন্দ। তাই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা এখানেই করতে চাচ্ছিলাম। আর হ্যাঁ বিয়েতে তেমন লোকজনের ভীড় করতে চাচ্ছি না। শুধু ক্লোজ ফ্রেন্ড আর পরিবারের লোকজন থাকবে। তোমাকে তো নূরের ফ্যামিলির কথা সবই বলেছি। আমি চাই না, বিয়েতে লোকজন নূরের ফ্যামিলি নিয়ে কোনো কথা বলুক। এতে নূর অনেক কষ্ট পাবে। তাই বিয়েতে শুধু পরিবারের লোকজন ছাড়া অন্যকাউকে বলার দরকার নেই। দরকার হলে ঢাকায় গিয়ে বড়ো করে একটা রিসিপশন পার্টি দিলেই হবে। তখন আর তেমন সমস্যা হবে না
আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে বললো।
….ভালো চিন্তা করেছো। ঠিক আছে তুমি যেভাবে চাও, সেভাবেই হবে।
একটু পরে সবাই ডাইনিং টেবিলে এলো লাঞ্চ করতে। আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
…..সামনের শুক্রবারে বিয়ের দিন ধার্য করতে চাচ্ছি। কি বলো সবাই।
নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। মনে মনে যেন খুশীর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তুমি যেটা ভালো বোঝ বাবা।
সানা খুশি হয়ে দুই হাত উঁচু করে বললো।।
…..ইয়েএএএএএ,,,কি মজা।আর মাত্র ছয়দিন পরেই বিয়ে। ইশশ আমার যে কি খুশি লাগছে।
তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাইয়া কাল থেকেই কিন্তু শপিং শুরু করতে হবে বুজেছ?
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে মেরি মা। কালই আমরা শপিং এ যাবো।
লাঞ্চ শেষ করে একটু পরে আদিত্যের বাবা আর সানা চলে গেলো।
চলবে…….