#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন
_____________________________
এভাবেই এক অজানা আগুন্তকের ভয়ে সিরাতের সারারাত ঘুম হলো না। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে জানা নেই তার।
পরদিন সকালে,
ছোট ভাই ইফতিকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পর সিরাত কোচিং-এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো। কোচিং সেন্টার সামান্য দূরে। রিকশা করে না গেলেই নয়। কিন্তু টাকা জমানোর লোভে সে রাস্তাটা হেঁটে হেঁটেই পার করছে সে। কোচিং সেন্টারের কাছাকাছি পৌঁছোতেই সিরাতের মুখ খানিকটা চিন্তিত দেখা গেলো। বুকটা ক্রমান্বয়ে হাতুড়িপেটা করছে। বারকয়েক দ্রুত চোখের পলক ফেলে পেছন ফিরে তাকালো সে। কই! কেউ তো নেই। মনে হলো যেন কেউ তার পেছন পেছন আসছে!
সিরাত ঢোক গিলে সামনে ফিরে আবার হাঁটতে শুরু করলো। কিছু দূর যেতেই সিরাত খুব তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকালো যাতে, পেছনের লোকটা লুকানোর সুযোগ না পায়।
সিরাত পেছনে ফিরতেই দ্রুত কিছু একটা যেন পেছনের গলিটাতে ঢুকে পড়লো। সিরাত চোখ বড় বড় গলির প্রবেশপথের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ। কারো দৌঁড়ানোর আওয়াজ তার কানে এসেছে। এতো সকালে এমনিতেই রাস্তায় মানুষজন নেই। তারউপর এমন একটা ঘটনা, সিরাত পারলে গলে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। একটা বড়সড় চিৎকারে চারপাশটা মুখরিত হলো।
—— আল্লাহ গো……
সিরাত প্রাণপনে দৌড়াতে লাগলো। এখনো তার মনে হচ্ছে, পেছন থেকে তার সাথেসাথে কেউ দৌড়াচ্ছে। তার চিৎকারের পরিমাণ আরো বাড়তে লাগলো,
—- চলে যাও…. তুমি চলে যাও।
সিরাত আর পেছনে ফিরে তাকালো না। একেবারে কোচিং সিন্টারের ভেতরে গিয়ে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলো। খুব বেশি ভয় পেয়েছে সে। অনেকক্ষণ দৌড়ের ফলে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ বেঞ্চে বসে কয়েক ঢোক পানি শেষ করতে করতে সে হাস ফাঁস করতে লাগলো। এ কোন বিপদে পড়লো সে?
সিরাতের এহেন অবস্থা দেখে কোচিংয়ের হাতেগুণা যে ক’জন ছেলে-মেয়ে এসেছিলো, তারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিরাতের দিকে। সিরাত বরাবরই শান্তশিষ্ট মেয়ে। কিন্তু আজ দেখে মনে হচ্ছে, সে এইমাত্র ঘূর্ণিঝড় আইলা’র সাথে যুদ্ধ করে এসেছে।
সিরাত আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো। সে কলেজে পড়লেও অন্যান্য মেয়েদের মতো ম্যাচিউরড নয়। বাবার চাকরিসূত্রে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে বেশিদিন হয়নি। নিজের পরিবার ছাড়া আশেপাশের পৃথিবীর কোনোকিছুরই সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। কিন্তু কাল থেকে এমন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে যে, সে কান্না ছাড়া কোনো উপায় পেলোনা।
ক্লাসের কয়েকজন মেয়ে স্যারকে ডেকে আনলে, তিনিও বেশ অবাক হলেন৷ অতঃপর একটা রিকশাতে করে সিরাত সুন্দর করে সুবোধ বালিকার মতো বাড়িতে চলে গেলো।
এদিকে সিরাত মা স্যারের কাছ থেকে এই ঘটনা জানার পর মরাকান্না জুড়ে দিলেন।
—– হায়! হায় আল্লাহ্, আমার মাইডারে জ্বিনে ধরছে। সিরাতরে এখন তোরে বিয়া দিমু কেমনে? তোরে কোন পোলা বিয়া করবো? তোরে আমি বলছিলাম মাথায় সবসময় ওড়না দিবি, দোয়া-সূরা পড়বি… আমার কথা শুনোস নাই। জ্বিন তোরে বশ কইরা বট গাছে নিয়া সংসার করবো রে..
সিরাত মুখ পানশে করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মা এমন একটা সিচুয়েশনে তার বিয়ের কথা চিন্তা করছে! মায়ের কাছে তার কোনো দামই নেই? হুহ!
সিরাত কান্নামুখ করে নিজের রুমে চলে গেলো। সেদিন সে আর কলেজে গেলো না। সারাদিন বাড়িতেই সময় কাটালো। রাত এগারোটার পর আবার আননোন নাম্বার থেকে কল আসা শুরু করলো তার মোবাইলে। সিরাতের ইচ্ছে হলো এই মোবাইলটাকে প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে দশবার ডুব মেরে আনতে। আজব তো! গতকাল থেকে এসব কি হচ্ছে তার সাথে? ঐ লোকটা কে? ঐ লোকটা একটা সর্বনাশা, তুই একটা মহাপাগল, তুই পাবনা মানসিক হাসপাতালের অলিখিত রোগী। তুই কাকের ডিম। সিরাত দ্বিধাবোধ নিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলো। আননোন নসম্বার মানেই তার কাছে ভয়। কে না কে কল করেছে!
কয়েকদিন কেটে গেলো। সিরাত কলেজে যায়, আসে। আগের মতো প্রতিদিনের রুটিনের মতোই চলছে তার জীবন। সেদিনের পর থেকে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়ার পথে সে।
আজও সে কলেজ শেষে গেইটের বাইরে একটা গাছের আড়ালে, খানিকটা ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে। পাশে আছে শিলা। সিরাত চোখ ছোট ছোট করে সূর্যের প্রখরতা মাপার চেষ্টা করছে। হাতে একটা ফাইল। গরমে নাজেহাল অবস্থা একেবারে। শিলা মাথা নিচু করে একমনে ফোনে স্ক্রল করেই চলেছে। বাসটা আসছে না কেন!
এমন সময় ঘটলো আকস্মিক এক ঘটনা। সিরাতকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে আছে আলতে করে। ধাক্কাটা সামলাতে সিরাতের একটু বেগ পেতে হলো। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে ফ্রিজড হলো যেন।
—- ডার্লিং! সেদিন হাগ না করে চলে গেলে কেন? আমি তোমাকে মিস করি জানো?
সিরাতের মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে। ভয়ে সে বিড়বিড় করে ভূত তাড়ানোর মন্ত্রটা আওড়াতে লাগলো। নিশ্চিত গাছের উপর থেকে ভূত নেমে এসেছে।
—– শো মন্তর শোহ! ভূত তুই চলে যা, থোহ্ থোহ্ থোহ্!
একি ভূতটা যাচ্ছে না কেন? সিরাত আরো কয়েকবার মন্ত্রটা পড়লো৷ একই ফলাফল। মুখে হাত দিয়ে লোকটার পাশ থেকে সরে এসে সিরাত একনজর তাকালো।
ঐ দিনের আধা পাগল লোকটাই! সিরাতের মুখের রং পাল্টে গেলো। নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেলো যেন। লোকটা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
—– ইন্নানিল্লাহ্! আল্লাহ গো….. আমাকে বাঁচাও!
সিরাত হাতের ফাইলপত্র দূরে ছুঁড়ে মেরে কোনো দিকে না তাকিয়ে আবার দৌড় দিলো।
#চলবে
#Sadiya_Chowdhury_Noon
(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)