একটু_একটু_ভালোবাসি পর্ব ৩

0
2673

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন

—– শো মন্তর শোহ! ভূত তুই চলে যা, থোহ্ থোহ্ থোহ্!

একি ভূতটা যাচ্ছে না কেন? সিরাত আরো কয়েকবার মন্ত্রটা পড়লো৷ একই ফলাফল। মুখে হাত দিয়ে লোকটার পাশ থেকে সরে এসে সিরাত একনজর তাকালো।
ঐ দিনের আধা পাগল লোকটাই! সিরাতের মুখের রং পাল্টে গেলো। নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেলো যেন। লোকটা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

—– ইন্নানিল্লাহ্! আল্লাহ গো….. আমাকে বাঁচাও!
সিরাত হাতের ফাইলপত্র দূরে ছুঁড়ে মেরে কোনো দিকে না তাকিয়ে আবার দৌড় দিলো।

এই লোকটা কে? বারবার এমন অদ্ভুত ভাবে সামনে আসে কেনো? আর আসলেও এমন এমন কান্ড করে যা সত্যি অকল্পনীয়।
সিরাত এখন রিকশায় বসে দাঁতে নখ খুঁটছে। বেশ কয়েকবার পেছন ফিরে দেখলো, কেউ আসছে কি-না। নাহ্!কেউই আসছে না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে।
—- কি দরকার ছিলো সেদিন ঐ রেস্টুরেন্টে যাওয়ার? এখন কেমন লাগছে তোর? কি হবে বল? ঐ পাগলটা তোর কলেজ অব্দি চলে গেছে।
সিরাত আপনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো। তারপর অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে রইলো। এসব কি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? এমনিতেই নিজের সমস্যা কুলোয় না, তারউপর জুটলো ঐ অর্ধপাগল লোকটা। এরপর যদি বাড়িতে চলে আসে? সিরাত এবার শব্দ করে নাক টানতে লাগলো। রিকশাওয়ালা বার কয়েক পেছন ফিরে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। কাক ডাকছে। মধ্যাহ্নের সূয্যিমামাও যেন চলমান রিকশাটার সাথে এগিয়ে চলেছে সামনে।

সিরাত বাড়ির সামনে দরজাতে খেয়াল করলো অনেকগুলো অপরিচিত মানুষের জুতো। ভেতর থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। তারমানে মা আবার পাত্রপক্ষ এনেছে। সিরাত ভয়েভয়ে কলিংবেলের সুইচবোর্ডে চাপ দিলো। এইবার না তার বিয়েটা হয়ে যায়! ধূর এভাবে কি বাঁচা যায় নাকি? মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

দরজা খুললো সিরাতের মা। হাসিমুখে দরজা খুললেও সিরাতের ভীতু চাহনি দেখে তিনি ধমক দিলেন,
—- বানরের মতো চেহারা করে রেখেছিস কেন? ওরা তো তোর চেহারা দেখেই মানা করে দেবে। বলবে, তোকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছি। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলবি। আয় ভেতরে আয়….

তিনি সিরাতের হাত ধরে টেনে ভেতরে ঢুকালেন। তারপর রুমে নিয়ে গিয়ে সুন্দর গোলাপি একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলেন সিরাতকে। হাতে একটা নাস্তার ট্রে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
—- এইবার যদি তোর বিয়ে না হইছে, আমিও সওদাগরের মাইয়া না…..

———————-
রাতে সিরাত শুনলো, তার বাবা’ই ওদের মানা করে দিয়েছে। তিনি এনজিও চাকরি করা ছেলেকে মেয়ে দেবেন না। সিরাত কথাটা শুনে পারলে নেচে দেয়। বেশ হয়েছে! বেশ হয়েছে একদম। ছেলের মা বলে কিনা, বিয়ের পর পড়তে দেবে না। কেন? বিয়ে করলে কি স্বামীকে গলায় মালার মতো ঝুলিয়ে রাখতে হবে নাকি? পড়লে কি সমস্যা? হুহ! যাক অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও বিয়ের কথা উঠবে না বাড়িতে। সিরাত খুশিমনে পড়তে বসলো। জানালা দিয়ে হুরমুর বাতাসে টেবিলের সব বই যেন পারলে উড়ে যায়। সিরাত বিরক্তি নিয়ে জানালার বাইরে চোখ রাখলো। নিমেষেই রাগ যেন, বইয়ের পৃষ্ঠার মতোই উড়ে গেলো। অকৃত্রিম চাঁদের আলোটা বড়ই মুগ্ধকর। সত্যিই মুগ্ধকর।

সেদিন ছিলো সোমবার। সিরাত যথারীতি কলেজ শেষ করে বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে। তার মতোই দাঁড়িয়ে আছে আরো অজস্র শিক্ষার্থী। সবার উদ্দেশ্যই বাড়ি ফেরা। আকাশের অবস্থা ভালো নয়।যেকোনো সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে পারে। ছাতাও নেই সাথে। আজকাল আবহাওয়াও যেন মানুষের সাথে মশকরা শুরু করেছে। এই রোদ, এই বৃষ্টি! কোনো নিয়মনীতি মানে না। আরে এটা বাংলাদেশ। ঋতু অনুযায়ী চলবে জানি, তা না করে সব মিলেমিশে একাকার করে ফেলেছে!
মৃদু বাতাস বইছে। সিরাতের বাসটা মিস হয়ে গেছে৷ বাস এসেছিলো ঠিকই কিন্তু মানুষের হুড়োহুড়িতে সে উঠতে পারেনি। এখনো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি সে, এই শহরের সাথে। পরের বাসটা কখন আসবে জানা নেই তার। তবুও দাঁড়িয়ে আছে সে। একটু পরপর চোরা চোখেও তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক। ঐ পাগল লোকটা না আবার উদয় হয়!
সিরাতের ভয়টাই সত্যি হলো। অবাকের সাগরে ডুব দিয়ে সে খানিকের জন্য ধ্যান হারিয়ে ফেললো। লোকটা এবার তাকে পালানোর কোনো সুযোগ দিলো না। লোকটা তাকে কোথাও টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সিরাত শুধু বোকার মতো শূন্য দৃষ্টিতে অনুসরন করে গেলো। চোখ মুখ শুকিয়ে পাণ্ডুর বর্ণ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে দেখে মনে হবে, সে রক্তশূন্যতার রোগী।
লোকটা তাকে কলেজের একটু দূরের কার পার্ক করার জায়গাটাতে এনে দাঁড়ানো শতশত গাড়ির একটিতে বসিয়ে, নিজেও বসলো। সিরাত চোখ পিটপিট করে লোকটার দিকে তাকিয়ে, আচমকা ঠোঁট উল্টে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। বিনীত কন্ঠে বললো,
—- প্লিজ! প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি করবেন না। আমি কিছু করিনি। সত্যি বলছি।

লোকটা যেন সিরাতের কথায় বেশ মজা পেলো। ঠোঁটের কোণে উঁকি দিলো ছোট্ট হাসি। গলা খানিকটা খাদে নামিয়ে বললো,
—- আমি কি কিছু করেছি রাত?

সিরাত বোকা বনে কান্না থামিয়ে তাকিয়ে রইলো আবার। চোখের ভাসা ভাসা চিকন রগগুলো লাল হয়ে গেছে। সদ্য কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জনের পরও, চোখ টলমল করছে। লোকটা সিরাতের গালে আলতো করে হাত রাখলো। দুজনের মাঝে বেশ দুরত্ব। সিরাত এবার এক অদ্ভুত কথা বললো,
—- আপনি আমাকে সবসময় ইয়ের মতো করেন কেনো?

—ইয়ে মানে কি রাত?

— ইয়ে মানে বউ!

লোকটা হাসি নিয়ে বললো,
—- কি করেছি আমি?

সিরাত এবার নাক টেনে টেনে বলতে শুরু করলো,
—- আপনি আমার কপালে চুমু দিয়েছেন, জড়িয়ে ধরেছেন এখন আবার আমার গালে হাত রেখেছেন। এগুলো আপনার বউয়ের সাথে করতে পারেন না? আমার সাথে কেন এমন করছেন? আমার মা-বাবা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। আর পড়তে দেবে না।

লোকটা এবার শব্দ করে হেসে দিলো। হাসির ঝংকারটা সিরাত বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো। লোকটাকে এখন আর বিপজ্জনক মনে হচ্ছে না।
—- আচ্ছা, আপনি কি পাগল?

— ঠিক ধরেছো। আমি বেশ কয়েকমাস পাগলাগারদেই ছিলাম।

সিরাতের মাথা এবার ভনভন করতে শুরু করলো। ইচ্ছে হলো, লোকটাকে সে নিজেই নিজ খরচে পাবনা পাঠিয়ে দেয়। উনার আরো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন।

#চলবে

(আমি সত্যি দুঃখিত। আপনারা গল্পটা পড়ছেন, কিন্তু আপনাদের কোনো কমেন্টের রিপ্লাই দিতে পারিনি। এটা আমি হরহামেশাই করি থাকি। আমি কিন্তু সবার কমেন্টই পড়ি কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে পারছি না। আমার পুরনো পাঠকরা আবার এটা মনে করবেন না যে, আমি উপরে উঠে গেছি। আপনারা যারা এই গল্পটি পড়েন অনুরোধ রইলো, গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করবেন। আসসালামু আলাইকুম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here