একটু_একটু_ভালোবাসি পর্ব ৪

0
2493

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৪
লেখিকাঃ শাদিয়া চৌধুরী নোন

—- আচ্ছা, আপনি কি পাগল?

— ঠিক ধরেছো। আমি বেশ কয়েকমাস পাগলাগারদেই ছিলাম।

সিরাতের মাথা এবার ভনভন করতে শুরু করলো। ইচ্ছে হলো, লোকটাকে সে নিজেই নিজ খরচে পাবনা পাঠিয়ে দেয়। উনার আরো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন।

—– তারমানে আপনি সত্যিই পাগল?

—– আমি অনেক আগেই রিকভার করেছি রাত। নাও আ’ম টোটালি ফাইন।

সিরাত মনে মনে বললো, না! আপনি এখনো পাগল। যেমন তেমন পাগল না, একটা বদ্ধ পাগল!

সিরাত এবার একটু নিজেকে গুটিয়ে নিলো। এই লোকটা তো আসলেই পাগল! গলা শক্ত করে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু সমস্যা হলো, গলা শক্ত করতে গিয়ে, তার কণ্ঠ আরো নরম শোনায়।
— আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো?

লোকটা এবার নিজের মাথার ঝাগড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে এলোমেলো করে, মাথা নিচু করে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করলো। ঠোঁট বা দিকে প্রসারিত করে বললো,
— তোমাকে লজ্জা পেতে দেখলে, ভড়কাতে দেখলে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

—– আপনি আমার পিছু কেনো নিয়েছেন? আপনি আর আমার সাথে কোনো অশোভন আচরণ করবেন না। বুঝেছেন?

সিরাত মুখে রক্তিম আভা নিয়ে দেখলো, লোকটা তার কথা শোনে আবারও হাসছে। আজব তো! সে কি হাসার মতো কোনো কথা বলেছে? তার কণ্ঠস্বর কি কঠিন শোনায়নি? সিরাত গলা খাকারি দিয়ে ঢোক গিললো একটা। তার লজ্জা লাগছে। লোকটা এমন কেন?

—– মিস আনজুমান সিরাত, তুমি কি জানো? আমি গত একবছর ধরে তোমাকে পাগলের মতো খুঁজছি। আমি একজন এনএসআই অফিসার। সময় সুযোগের অভাবে তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন। কিন্তু এটলাস্ট তোমার খুঁজ পাই গত দু’মাস আগে। সেই থেকে শুরু….

লোকটা বিরতহীনভাবে আরও বলতে লাগলো,
—– হুটহাট লজ্জা পাওয়া মেয়েটাকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেলো একদিন। সে নিজেতেই সীমাবদ্ধ জানি, কিন্তু আমার একদিন ইচ্ছে জাগলো ইশ! যদি তার পৃথিবীতে আমিও থাকতে পারতাম! আমি ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলাম, তুমি আমার কাছে অনেক স্পেশাল একজন৷ খুবই স্পেশাল….. আমার জীবনে তোমার উপস্থিতি খুবই জরুরি। আমি তোমাকেই চাই। তুমি আমার আশেপাশে থাকলে, আমার কি যে যায় রাত! আমি জাস্ট বুঝাতে পারবো না।

সিরাত একটু ছোটখাটো চিৎকার দিলো,
—- নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! ছিহ্ ছিহ্ আপনার লজ্জা করছে না, আপনি একটা মেয়েকে এসব বলছেন? এসব কথা শুনে আমার নিজেরই তো কেমন কেমন লাগছে। আপনি আমার সামনে আর আসবেন না। কখনোই আসবেন না।

সিরাত ডোর খুলে বেরিয়ে এলো। কি অসভ্য লোকরে রে বাবা! অসভ্যের মতোন তার সাথে বেরিয়ে এসেছে। লোকটা আবার পেছন পেছন আসছে কি-না দেখার জন্য, সিরাত পেছন ফিরে তাকালো। লোকটা মুখে হাসি নিয়েই তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি ঘাড় ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই পেছন থেকে একটা আওয়াজ আসলো,
—- তুমি হাজারবার বললেও তোমাকে ছাড়ছি না রাত! তুমি যেখানে, আমিও সেখানে। আমার নামটা মনে রেখো, সাবির! সাবির মোস্তফা….

সিরাত বিড়বিড় করলো,
—- সাবির না কাবির! হুহ্! অসভ্য পাগল অফিসার!

সিরাত বাড়ি আসতেই মাকে ব্যাগ গোছাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—- মা কোথায় যাচ্ছো? আমরা কি আজ কোথাও যাচ্ছি?

সিরাতের কথায় কথায় তার মা বেশ রেগে গেলো।
—– কোথায় যাচ্ছি মানে? তোর ছোট খালা তানিশার আকদ্ তুই জানিস না? আমার হয়েছে যত জ্বালা! কি পড়ালেখা করিস রে তুই? সামান্য এই কথাটাও মনে রাখতে পারলি না?

সিরাত ভাবুক কণ্ঠে বললো,
— আমাদের তো কাল যাওয়ার কথা!

—- হ্যাঁ! কিন্তু তোকে তো সকালেই বললাম আজই যাবো আমরা। কাল থেকে হরতাল চলবে। গাড়ি, ট্রেইন সব বন্ধ। তখন গিয়ে লাভ আছে?

সিরাত বিরস মুখে নিজের রুমে ব্যাগ গোছাতে চলে গেলো। হাজার বার ভেবেও কূল করতে পারলো না যে, তার মা আসলেই সকালে যাওয়ার কথা বলেছিলো কি-না। আবার মনে মনে খুশিও হলো। গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে। ঐ পাগল লোকের কথা কয়েকদিনের জন্য অন্তত ভুলা যাবে। তানিশা আন্টির সাথেও বেশ মজা করা যাবে। খুশিতে সিরাতের বাকবাকুম অবস্থা……

————-
প্রথমে ট্রেন, বাস তারপর ফেরিতে করে নদী পার করে অবশেষে সিরাত আর তার পরিবার পৌঁছুল তাদের মামাবাড়ি। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সবার নাজেহাল অবস্থা। গভীর রাত। সবাই প্রায় ঘুমিয়ে গেছে। শুধুমাত্র বড় মামি আর মেঝমামি সিরাতরা আসবে বলে জেগে ছিলো। ফ্রেশ হয়ে কোনোরকম কম কথায়,খেয়েদেয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। এর মাঝে হুট কটে সিরাতের বাটন ফোনে কল আসাই তার মা আর বাবা দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সিরাতের বাবা গম্ভীর গলায় বললেন,
—- এতো রাতে তোমাকে কে কল করেছে?

সিরাত ভয়ে এতুটুকু হয়ে গেলো। এই আননোন নাম্বারের চক্করে তার বাবা পর্যন্ত তাকে সন্দেহ করছে। আমতা আমতা করে বললো,
— শি-শিলা বাবা! আমি পৌছেছি কি-না তাই জিজ্ঞেস করতে কল দিয়েছে হয়তো।

— ও কীভাবে জানলো যে, তুমি আজ এখানে আসবে?

সিরাতের গলা বেয়ে টুপটাপ ঘাম ধরছে। মিথ্যা কথা বলার সময় তার গলা কাঁপে।
—- আমি শিলাকে আজ কলেজে বলেছিলাম বাবা। ও আমার খুব ভালো বান্ধবী। অনেক খেয়াল রাখে।

#চলবে……
#Sadiya_Chowdhury_Noon
( আসসালামু আলাইকুম। আসলে ব্যস্তার কারণে আমি বড় করে লিখতে পারছি না। পাশে থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here