জীবনটা_অনেক_কষ্টের পর্বঃ৫

0
1316

গল্পঃ #জীবনটা_অনেক_কষ্টের

পর্বঃ ৬

লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

–আমি সবসময় কেন যেন বেশ অনুভব করি তুমি
প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা-বেদনার আর্তনাদে কাতরাও?এতো
কেনো ব্যাথা জমা তোমার মনে?আচ্ছা আমি শুনেছি
তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে,কুয়েতে নাকী তোমার
১৫ বছরের জেল হয়ে ছিল?………..

রাইয়ের এরুপ কথার উত্তরে, আমি বেশ কিছুটা
হচকচিয়ে বললাম,

হ্যা ঠিকি শুনেছো?

–কিন্তু কেনো?কি এমন অপরাধ করে ছিলে,যার ভিত্তি
তে তোমার ১৫ বছরের জেল হয়ে ছিল?দেখো’তুমি
চাইলে এই আমায় বলতে পাবরো?আমার বিশ্বাস তুমি
যাই করনা কেন?অন্তত কোনো জঘন্য কাজ তুমি
করতে পারো না?এখন আমায় বলো,কি এমন ঘটে
ছিল সেদিন,কোন অপরাধের ভিত্তিতে বছরের পর
বছর তোমাকে ওই অন্ধকার মরন গুহাতে একজন
অপরাধী হিসেবে জীবন-যাপন করতে হয়ে ছিল?

সঠিক সময়ের অপেক্ষা করও নিশ্চয়ই তুমি এই
বিষয় সম্বন্ধে নিজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে?

–নাহ আমি আজ এখন জানতে চাই?

”না রাই প্লিজ আজ না”আজ আমার দ্বারা কিছুতেই
সক্ষম হবে না”,সেই অভিশপ্ত দিন গুলোর প্রতিটা মুহূর্ত
তোমার সামনে তুলে ধরা?আর এটা আমি নিশ্চিত,
এখন যতই তুমি মুখ নামের ওই যন্ত্রণাংশ দিয়ে আমার
প্রতি তোমার বিশ্বাসের কথা তুলে ধরো না কেন কিন্তু
পরিশেষে তো এটাই দেখা দিবে,যে তুমিও বুঝবে ভুল
ক্ষণে,ক্ষণে প্রতিটি মুহূর্তে আঘাত প্রাপ্ত এই আমাকে?

আমার কথার জবাবে অতঃপর রাই আর কিছুই বলল
না।দু’জনই এই মুহূর্তে চুপচাপ হয়ে রয়েছি,কারও মুখে
কোন সুর নেই হঠাৎ আমার এক হাত রাই তার মাথায়
স্পর্শ করিয়ে শক্ত করে,চেপে ধরে বলল”,

–আজ যে করেই হোক,যে ভাবেই হোক সত্যিটা আমি
জানতে চাই,শাহরিয়ার?

”প্লিজ রাই এসব কি করছো?বললাম তো সময় এলে
নিজে থেকেই তুমি সব জানতে পারবে”?

— তুমি আজ এখন এই মুহূর্ত থেকে যদি আমার মাথা
স্পর্শ করে সত্যটা না বলো” তাহলে তোমার প্রতি
আমার বিশ্বাসটা চির-নিদ্রায় শায়িত হয়ে মাটির সাথে
মিশে নিঃস্বতে রুপান্তর হয়ে যাবে?

জানিনা এই মুহূর্তে আমার ঠিক কি করণীয়?চোখ বন্ধ
করে ভাবছি অনাবরত কিন্তু সেই শূন্য মাথায় ঘুরে
ফিরে আবার ফলাফল সরূপ শূন্য এসেই উপস্থিত
হচ্ছে।কিছুতেই সলেশন পাচ্ছি না খুঁজে ঠিক করা যায়
কি এখন?অতঃপর রাইয়ের জোরাজোরির সম্মুখে
নিজের পরাজয় বাঁধ্যতা-মূলক শ্বিকার করে নিয়ে
আমি বললাম,

”তুমি কতটুকুই বা বিশ্বাস বলে কিছু করতে পারবে
জানিনা ঠিক!তবে আজ আবার না বলেও পারছি না?
শুনো তাহলে এই ক্ষুদ্র মানবের জীবনে ঘটে যাওয়া
সেই অভিশপ্ত তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা………

”ভালোবেসে বিয়ে করার,মাত্র এক বছরের মাথায়
অভাবের তাড়নায় আমাকে পারি জমাতে হয় প্রবাসে
অর্থাৎ কুয়েতে।সেখানে একটা বাড়িতে সকাল থেকে
দুপুর অবধি কাজ করতাম আমি,যার ভিত্তিতে কিছু
পারিশ্রমিক পেতাম।যারা মূলত বাংলাদেশি ছিল।
তাদের ছেলে রাকিব সেখান-কার এক নাম করা
ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।সময়টা ভালোই কাট
ছিল।তবে তার কিছু দিন পর ভালো পড়াশোনার, তাগিদে দেশ থেকে রাকিবের মামাতো বোন এসে ছিল
এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক
গড়ে উঠে!প্রহর যতই বাড়ছিল তাদের সম্পর্ক ততই
গভীর হয়ে উঠছিল। তাদের আড়ালে-অবডালে করা
একের পর এক অবৈধ নোংরামী গুলো সবার চোখের
দৃষ্টি কোণ এড়িয়ে গেলেও,আমার চোখ কে খুব একটা
ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়নি।বেশ কয়েকবার হাতে-নাতে
স্বয়ং আমি তাদের ধরেও ফেলেছিলাম কিন্তু পরিশেষে
তাদের আমি কিছুই করতে বা কাউকে বলতে পারিনি।
আমি নিরুপায় ছিলাম কারণ তারা আমাকে এরুপ
ব্যাপারে সবার সম্মুখে মু্খ থেকে কোন কন্ঠ-শ্বর
প্রকাশ করতে স্পষ্ট নিষেধ করেছেন।অন্যথায় আমায়
কাজ থেকে বিতারিত করার তীব্র হুমকি দিয়েছে আর
ওই মুহূর্তে আমার কাজের খুবই প্রয়োজন ছিল নাহলে
বেশ একটা কষ্ট-স্বাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠতো আমার
জন্য।তারা উভয়ই বারে যেতো, ড্রিংক করতো,রোজ
তাদের নোংরামী গুলো নিজের চোখে দেখেও, না
দেখার অভিনয় হিসেবে, নিজেকে তাদের সম্মুখে
প্রতিনিয়ত সাব্যস্ত করতে হতো।একদিন বাড়িতে
রাকিব-ছাড়া কেউ ছিল না।আমি বাহিরের বাগানে
কাজ করছিলাম তখন রাকিবের মামাতো বোন রুপার
এক বান্ধবী বাড়ির দরজার সম্মুখে এসে কলিংবেল
বাজানোর বেশ খানিক সময় পর রাকিব এসে দরজা
খুলে দেয়।মেয়েটি রুপার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস
করলে,রাকিব নিজেকে খানিকটা ভাবাতে বিভোর
হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করে অতঃপর মুচকি হাসি
দিয়ে,রুপা না থাকা সত্যেও মিথ্যা,ছলোনার আশ্রয়
গ্রহন করে রাকিব মেয়েটিকে ভেতরে আসতে বলে।
অতএব মেয়েটি ভেতরে প্রবেশ করলে এদিক-ওদিক
বেশ,কয়েক বার তাকিয়ে পৈশাচিক এক হাসি দিয়ে
ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় রাকিব।ব্যাপারটা
প্রথমত আমার কাছে কিছুটা ঘটকা হিসেবে
প্রমানিত হলেও পরবর্তীতে তেমন একটা গুরুত্বটা
হিসেবে এই ব্যাপারে নিজের মাথাকে ভাবতে বিভোর
করিনি।মনযোগ দিয়ে তীব্র রৌদ্রে ঘামে জড়জড়িত
হয়ে কাজ করছিলাম আনুমানিক ২৫ মিনিট পর সেই
মেয়েটির বিকট চিৎকারে আমি বেশ খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়ি।অতঃপর মেয়েটি কান্না করতে
করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেট অবধি আসতেই
রুপার সাথে তার তীব্র সংঘর্ষ হয়।অতঃপর মেয়েটি
রুপাকে দেখা মাত্রই,কান্নার মাত্রটা আরও তীব্র করে
চিৎকার করে বলল,

–Your Cousin Rape Me………..

কথাটা বলার পরপরই কুয়েতি সেই নারী কান্না করতে
করতে,রুপাকে কোন কথা বলার সুযোগ করে না দিয়ে
বাড়ির গেটের বাহিরে পা রাখা মাত্রই,সম্ভবত মেয়েটি
তার বাবাকে,ফোন করে অশ্রু-সিক্ত নয়নে কিছু বলতে
গিয়েও ভাগ্যক্রমে পারেনি বলতে কারণ তার আগেই
মৃত্যু তাকে নিজের সম্পূর্ণ দখলে করে নিয়ে চলে যায়।
বড় আকারের গাড়ীর তীব্র আঘাত মেয়েটিকে
নিমিষেই রাস্তার সাথে পিষে ফেলে চলে যায়।স্তব্ধ
আমি,এমনটা কি করেই বা করতে পারলো সে?অবশ্য
ওর,মতো ছেলের কাছ থেকে আর কি বা আশা করা
যায়?রুপা মেয়েটা যেন আজ বাকরুদ্ধ!মাথায় হাত
দিয়ে অবাকের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে সে।
অতঃপর দ্রুত সব কাজ ফেলে রেখে বাড়ির ভিতরে
প্রবেশ করা মাত্রই দেখিলাম আমি,রাকিব তার নিজ
কাপড়-চাপর ঠিক করাতে ব্যাস্ত।অতঃপর নিজেকে
আর কোন ক্রমেই সামলে নিতে পারছিলাম না,ছিহ
কিছু মানুষ কতই না জঘন্য হয়ে থাকে?অতএব প্রচন্ড
রাগান্বিত হয়ে রাকিব কে যখন ইচ্ছে মতো কোন এক
ভারী জিনিস দিয়ে একের পর এক আঘাত করছিলাম
তখন পেছন থেকে কারও তীব্র প্রহার আমাকে মুহূর্তেই
জ্ঞান শূন্য করতে বাধ্য করে।অতঃপর পরবর্তীতে যখন
আমি নিজের জ্ঞান ফিরে পাই তখন নিজেকে রক্তাক্ত
অবস্থায় জেল খানার ভেতরে পরে থাকতে দেখে,খুবই
হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম।চারদিকটা যেন বেশ ঝাপসা
লাগছিল আমার।কিছুই পারছিলাম বুঝতে আমি।পরিশেষে জানতে সক্ষম হই,আমিই নাকী Rozi অর্থাৎ
রুপার সেই বান্ধবীকে ধর্ষণ করেছি।কারও মুখের কন্ঠ
স্বর থেকে এরুপ কথা সত্যিই সেই সময় আমাকে
বোবা এক পাথরে রুপান্তরিত করতে বাধ্য করে।
অতঃপর হলো না কোন ক্রমেই শেষ রক্ষা আমার।
কঠিন এক ষড়যন্ত্রের মুখ্য শ্বিকার হিসেবে নির্দোষ
হয়েও দাঁড়াতে হয় আদালতের সেই কাঠ গড়ায়,
যেখানে মূলত অপরাধীরা দাঁড়িয়ে থাকে।অতএব
মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হয় আমার বিরুদ্ধে!রুপা
যখন লোকজন ভর্তি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দোষী হিসেবে আমায় সাব্যস্ত করে তখন
আমি নিজের উপর এরুপ মিথ্যা জঘন্য পাপের বোজা
আর না নিতে পেরে সমস্ত বাঁধাকে উপেক্ষা করে,রুপা
কে সেদিন সজোরে থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে বলেছিলাম,

–তোর পেটের অবৈধ সন্তানের জন্য আজ তুই ওই
কুলাঙ্গারকে বাঁচানোর জন্য আমায় এভাবে কঠোর
ষড়যন্ত্রের শিকার হিসেবে চিহ্নিত করলি তাই না?

সেদিন নিজেকে নির্দোষী প্রমান করার বৃথাই অনেক
চেষ্টা করেছিলাম।ভাগ্য কিছুটা সহায় ছিল বলেই
সেদিন মৃত্যু অর্থাৎ ফাঁসির কষ্ট দ্বায়ক হাত থেকে
রেহাই পেলেও ১৫ বছরের সাজার কালো হাত থেকে
বাঁচতে সক্ষম হয়নি।টেনে হিঁচরে আমায় নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিল মরণ গুহা নামক সেই অন্ধকার কক্ষে,
যেখানে বছরের পর বছর নিজ পরিবারের সঙ্গে কোন
প্রকার যোগাযোগহীন থাকতে হয় এই আমাকে…….

এতটুকু বলেই থেমে যাই আমি,অতঃপর কিছুক্ষণ
নিশ্চুপ থেকে,দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে আবার রাইয়ের
উদ্দেশ্য আমি বললাম,

সব কিছুর শেষে এখন আমি যেই শব্দ গুলো
তোমার নিকট প্রয়োগ করবো যেগুলো গ্রহন করে
নিতে হয়তো তোমার অনেক কষ্ট হবে?নিশ্চিত হয়তো
বা করবে না গ্রহন,সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিবে ফিরাইয়া
আমায়,কারণ সেই রুপা নামক ঘৃণিত নারীই ছিল
স্বয়ং তোমার বড় বোন রুপা………..

শেষে আমার এরুপ কথা শুনে রাই যেন সম্পূর্ণ শিউরে
উঠে,হয়তো পারছে না বিশ্বাস করতে নিজের আপন
বোনের সম্পর্কে এরুপ কোন কথা শুনতে।নিশ্চুপ,
নিস্তব্ধটা বিরাজ মান রাইয়ের মুখ-খানিতে।বলছে না
কোন কথা,চোখ মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম আমি,
রাই এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন।হস্ত-ক্ষেপ করলাম না
আমি।অপেক্ষায় রয়েছি রাইয়ের উত্তরের।অতএব
অপেক্ষার প্রসান ঘটিয়ে রাই তার পাঁচটা আঙুল
একত্রিত করে,কোষে,সজোরে দু’টো থাপ্পর লাগিয়ে
দিল এই আমায় যাকে কিনা রাই ঠাই দিয়ে ছিল
নিজের মনের গহীন ঘরে।বোকা মন আমার হয়তো
এটা উপলব্ধি করতে হয়নি সক্ষম রাইও পরিশেষে
করবে না বিশ্বাস এই আমাকে, পরিশেষে রাই যা
বলল তা শুনে আমি,………………..

………………………..চলবে………………………..
কিছু সমেস্যার মধ্যে ছিলাম তাই কদিন দিতে পারিনি গল্প।তাই দুঃখীত আমি।

(গল্প অন্তীম পর্বের নিকটে…….কি হতে পারে পরবর্তী
পর্বে?)

ভুল ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

গঠন মূলক মন্তব্য করুন ধন্যবাদ 😊🔰

বানান ভুল গুলো একটু ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here