তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ১১

0
602

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১১

অন্ধকার একটা রুমের মাঝে হাত পা বাধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে আরিশা। সেই যে কিডন্যাপ করে আনার সময় অজ্ঞান করা হয়েছিল, এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর।

সামনের চেয়ারেই পা এর উপর পা তুলে বসে আছে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি। মুখে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরিশার মুখ পানে। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল ঘৃণায়। রাগে তার সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কিভাবে করতে পারলো এমন আরিশা তার সাথে। আরিশাকে তো খুব ভালো ভেবেছিল সে। আর এদিকে আরিশা,… । ভাবলেই রাগে ফেটে পড়ছে সে। রাগ সামলাতে না পেরে পাশে থাকা কাচের গ্লাস ছুড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। এভাবে যতগুলো কাচের গ্লাস ছিল সবগুলো টান দিয়ে ফেলে দিল।

হঠাৎ পরপর কাচের ঝনঝন আওয়াজে চোখ পিটপিট করে মেলল আরিশা। মাথাটা ভীষণ ধরেছে ওর। ভাড় হয়ে আছে মাথাটা। উঠে বসার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না, তারপরও বসার বৃথা চেষ্টা করল। চোখ মেলতে কষ্ট হলেও অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকাল সে। চোখ খুলেই সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে অন্তরাত্মা কেপে উঠল আরিশার। ভয়ে পিছনে পেছাতে লাগল যতটা সম্ভব পারা যায়।

সামনে থাকা ব্যক্তিটা আরিশার এমন ভয়ার্ত চাহনি দেখে আর এমন অবস্থা দেখে পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠল। মুখে তার ফুটে উঠল পৈশাচিক হাসি। এমন বিশ্রী ভাবে লোকটিকে হাসতে দেখে আরও একদফা ভয় পেয়ে গেল আরিশা। আগের তুলনায় আরও বেশি ভয় পেতে লাগল সে। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে ঘামে ভিজে গেল সে। আরিশা এক পা দু পা করে পেছাচ্ছে আর লোকটা ধীরে ধীরে আরিশার দিকে এগোতে থাকল। আরিশা ভয়ে চিৎকার করতে যাবে তখনই লোকটা এসে শক্ত চেপে ধরল ওর মুখ। এতে জোরে মুখ চেপে ধরায় কেটে গেল। ফলে উক্ত স্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। কিন্তু তাও সামনে থাকা ব্যক্তিটার মাঝে বিন্দু মাত্রও মায়াও হলো না। এটা দেখে অবাক না হয়ে পারল না আরিশা। লোকটা খারাপ কিন্তু তাই বলে এতো খারাপ ভাবতেও ঘেন্না লাগছে।

হাতে গরম তরল কিছু অনুভব করে দ্রুত ছেড়ে দিল আরিশার কেটে যায় গাল লোকটি। মুখটা ছেড়ে দিয়েই লোকটি আরিশার উদ্দেশ্যে বলল

– তোর সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না।

– কি করেছি আমি? যে আপনি আমার সাথে এমন করছেন? কথাটা কাঁদতে কাঁদতেই বলল আরিশা।

– কি করিস নি তুই তাই বল আগে। তোর এতো সাহস আসলো কোথ থেকে?

– কি এমন করেছি আমি? আমি তো শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি মাত্র।

– অনেক বাড় বেড়েছিস তুই। দাঁড়া পাখা আমি ছাটছি তোর। তুই আমাকে চিনিস না। আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা তোর কল্পনারও বাহিরে। এবার শুধু দেখবি আমি কি জিনিস। বলেই লোকটির মুখে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি।

আরও কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে ফোন বেজে উঠল লোকটির। বিরক্তির ছাপ দেখা গেল লোকটির চোখে মুখে। এই নিয়ে ৩-৪ বার ফোন এসেছে একবারও রিসিভ করেনি। যে ফোন দিচ্ছে তার কি বিন্দুমাত্র কোনো কমনসেন্স নেই নাকি এতো বার ফোন কেটে দেওয়ার পরও ফোন দেয় কোন আক্কেলে। এসব ভাবতে ভাবতে কেটে গেল ফোনটা। অনেক বিরক্তি নিয়ে কাউকে একজন ডেকে পাঠাল আরিশার সাথে থাকার জন্য যাতে আরিশা পালিয়ে না যেতে পারে। আর সে তার ফোনটা হাতে নিয়ে কোনো এক অজানা জায়গার উদ্দেশ্যে চলে গেল।

লোকটি চলে যাওয়ার পরপরই আরিশা অনেক চেষ্টা করল হাত পায়ের বাঁধন খোলার জন্য। কিন্তু বরাবরের মতোই সে ব্যর্থ। না পেরে সে হাত পা ছুটাছুটি করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো। রশ্মি দিয়ে এতো শক্ত করে বাধা যে কোনোভাবেই তা খোলা আরিশার পক্ষে সম্ভব নয়। একপ্রকার আশা ছেড়ে দিয়ে নিরাশ হয়ে পড়ল সে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। চোখ দিয়ে অঝোরে অজস্র জল গরিয়ে পরে তার আর ভাবছে, তবে কি এভাবেই এই হিংস্র লোকটার হাতে বেঘোরে প্রাণ যাবে তার? না না তা হতেই পারে না।

এবার বাঁচার শেষ উপায় হিসেবে চিৎকার করে সাহায্য চাওয়ার পথ বেছে নিল সে। যে ভাবা সেই কাজ। চিৎকার করতে লাগল কিন্তু কারও কোনো সাড়া নেই। হঠাৎই পাশ কয়েকটা লোক এলো। তবে এরা যে ঐ হিংস্র লোকটারই সারভেন্ট তা আর বুঝতে বাকি রইল না তার। আরিশাকে এতো চিৎকার করতে দেখে সারভেন্টদের মধ্যে একজন তাদের বসকে ফোন দিল

– হ্যালো বস, এদিকে তো একটা সমস্যা হয়েছে?

– কি হয়েছে ? ও দিকে কোনো প্রবলেম হয়েছে?

– স্যার ঐ মেয়েটা তো চিল্লিয়ে মনে হয় লোকজন জড় করে ফেলবে। আর যেভাবে হাত পা ছুটাছুটি করছে, বাঁধন না খুলে যায়। তাহলে তো পালিয়ে যেতে সুবিধা হবে। দেখা গেল যে কোনো সময় পালিয়ে গেল…….

সারভেন্টটা আর কিছু বলার আগেই ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল সেই লোকটি।

– জাস্ট সাট আপ। আর বেশি কিছু বললেই জানে মেরে দিবো তোমায়। চুপচাপ আমি যা বলবো সেইটা শুনবা এবং সেই মতো কাজ করবা।

ইতোমধ্যেই পাশ থেকেই শুনতে পেল আরিশার করুণ আর্তনাদ

– ছেড়ে দিন, আমায়, প্লিজ ছেড়ে দিন। এমন করছেন কেন আপনারা আমার সাথে? বলেই অঝোরে কাঁদতে লাগল আরিশা।

আরিশার এমন কান্না মিশ্রিত আর্তনাদে একটুও মায়া হলো না লোকটির। বরং উচ্চ স্বরে হাসিতে ফেটে পড়ল সে। এবার হাসি থামিয়ে গম্ভীর স্বরে কিছু একটা বলল যা শুনে অপর পাশের লোকগুলোর মুখে ফুটে উঠল হাসির রেখা। তারা তাদের বসের কথা মতো কাজ করল। কেউ একজন হাতে করে সিরিঞ্জ নিয়ে এলো। এটা দেখে ভয়ে আরিশা আরও জোড়ে চিৎকার করে উঠল।নির্দয় ভাবে আরিশাকে সিরিঞ্জ পুশ করা হলো। মুহূর্তের মাঝে চারপাশ ঝাপসা হয়ে এলো আরিশার। আস্তে আস্তে ফ্লোরে ঢলে পড়ল সে।

আর এসবই মোবাইল হাতে ক্যামেরায় বসে বসে দেখছিল অজ্ঞাত পরিচয়ের সেই ব্যক্তিটি। দেখেই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। আর বিড়বিড় করে বলল

– এখনও তো কিছুই করলাম না। এতেই এতো কাহিল। এখনও তো মেইন টুইস্ট টাই তো হয়নি। এ তো সবেমাত্র টেইলার। এখনও পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি বাকি। তুমি কার লেজে পাড়া দিয়েছো এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে তুমি। দেখ এবার আমি কি জিনিস। বলেই লোকটির মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় এক হাসি।

——————–

এদিকে আরহা সেই কখন থেকে আভানের নম্বরে ফোন দিয়েই যাচ্ছে সেই তখন থেকে কিন্তু ফোন ধরার নাম নেই ওর। এতে যেন আরহার চিন্তার কোনো শেষ নেই। এমনিও আরিশাকে নিয়ে চিন্তায় আছে তারউপর আভান কেন ফোন ধরছে না, এ নিয়ে চিন্তায় ফেটে পড়ছে। তবে কি আরিশাকে বাঁচতে গিয়ে আভানের কোনো ক্ষতি হলো। না না এ হতে পারে না কিছুতেই না।

এবার বিছানার উপর ঠাস করে ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিল। এতো টেনশন সে নিতে পারছে না। নিজেও ক্লান্তিভরা শরীরটা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে চোখটা লেগে এলো ওর। কখন যে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে তা তার নিজেরও জানা নেই।

বেশ কিছুক্ষণ পর….

ফোনের রিংটনে ঘুম ভাঙল আরহার। সবেমাত্র চোখটা একটু লেগে এসেছিল তার তখনই ফোনটা বাজতে হলো। কোনো মতো আড়মোড়া ভেঙে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল আননোন নম্বর। প্রথমে ভেবেছিল ফোন ধরবে না কিন্তু এতোবার করে ফোন বেজে যাচ্ছে বলে বেশ বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে। রিসিভ করে অপরপাশ থেকে যা শুনতে পেল তা শোনার জন্য আরহা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল আরহা।

তার মানে আভানের কথা মতো আরিশাকে সত্যি সত্যিই কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর এসবের পিছনে বিশেষ করে আরিশা কিডন্যাপ হওয়ার পেছনে একজনেরই হাত আছে সে আর কেউ না, সে হলো আ…..

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here