তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_26

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_26

বর্ষাকে জোর করে বেড়াতে নিয়ে এসেছে ওর ফ্রেন্ডরা। সবাই হাতিরঝিল এসেছে বেড়াতে। আগেও অনেকবার এসেছে এখানে। সব সময় এসে সবাই আড্ডা মাস্তি করছে। বর্ষা তো সব চেয়ে বেশি ও বেড়াতে খুব পছন্দ করে। ওর যতই মন খারাপ হোক না কেন বেড়াতে গেলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। হৈ-হল্লা করা, কথা বলা, লাফালাফি সবচেয়ে বেশি ওই করে। কিন্তু এবার বেড়াতে এসে বর্ষা চুপচাপ। প্রথমে ওর মনটা কিছুটা আনন্দিত হলেও। বেড়াতে আসার পর থেকে বর্ষা চুপচাপ হাঁটছে আর চারিদিক তাকিয়ে কাউকে খোঁজ ছে ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে।
পলকহীন ভাবে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই আশঙ্কা পর থেকে আর বেড়ানোর মজাটা অনুভব করতে পারলো না।
ওর ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করছে, ‘ কী হয়েছে এমন আতঙ্কিত মুখ করে আছিস কেন?’

ও কিছু বলেনি শুধু বলেছে, ‘ চল এখন থেকে আমার বেড়াতে ভালো লাগছে না!’

সবাই নিরাশ হয়ে গেলো। বর্ষার মন ভালো করতে বেড়াতে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তার কিছুই হলো না। বর্ষাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এলো সবাই। এসেই একটা কেবিনে ফিলাপ করে বসে পরলো। বর্ষার আইসক্রিম পছন্দ তাই ওরা আইসক্রিম অর্ডার দিল।

‘প্রথমে তো তোর মুখটা খুশি লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন তোকে চিন্তিত লাগছে। আর কাউকে যেন খুজছিলি আশেপাশে তুই কি কাউকে দেখেছিস?’

বর্ষা চুপ করে আছে। সত্যি তো ও কাউকে দেখেছ। ওর মনে হলো তূর্য কে দেখেছে এক নজর। এটা কিভাবে সম্ভব লোকটা এখনো ওর পিছু ছাড়ে নি। এখনো ওকে ফলো করে যাচ্ছে। লোকটার উদ্দেশ্য কি? একবার আবসা দেখছিল আর তো দেখেনি।এটা কি ওর মনের ভুল নাকি সত্যি ওকে ফলো করছে তূর্য।
তূর্য নামটা উচ্চারণ করতে ওর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। লোকটার জন্য বাসা থেকে বের হতে পারেনা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই ওকে নিয়ে বাজে কথা বলে। কেমন যেন করে তাকিয়ে থাকে। সবকিছুই লোকটার জন্য হয়েছে। সমাজের চোখে খারাপ হয়ে গেছে। এইখানে তো ওর কোন দোষ নেই। তবুও সবার চোখে ওই অপরাধী হয়ে গেছে।সব শেষ করে এখনো ওর পেছনে পরে আছে আর কি চায় লোকটা। আমাদের কি মেরে ফেলতে চায় নাকি একদম।

চকলেট ফেভারের আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আছে বর্ষা। সবাই খাচ্ছে কথা বলছে ও বিভোর আছে ওর চিন্তা নিয়ে। কারো ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলো।

” কিরে এমন করে বসে আছিস কেন? খাচ্ছিস না কেন? আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলো আর তুই হাত ও লাগালি না! আগে তো এমন হতো না সবার আগে তোর আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতো আর আজ…

‘ আমার ভালো লাগছে না‌। আমি খাবো না।’

বর্ষার কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকালো বর্ষার দিকে।এটা বর্ষা বললো কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।যে মেয়ে আইসক্রিম পাগল সে কিনা বলছে আইসক্রিম খাবে না বলছে। অন্যদিন হলে দুইটা ওর খাওয়া হয়ে যেতো আর আজ কি বলছে?
এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কি করে?
সবার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর জন্য। বর্ষা সব সময় সবার মন ভালো করতো কথা বলায় বাঁচাল ছিলো ও। আর একটু পাগলি টাইপের চঞ্চল মেয়ে সব সময় হেসে খেলো চলতো। আর ওর এই অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারছে না।

‘ এটা তোর ফেবারিট চকলেট আইসক্রিম তুই খাবি না!’

‘ না আমার ভালো লাগছে না।বাসায় যাব আমি।’

বলেই বর্ষা উঠে দাঁড়ালো। গলায় ঝুলিয়ে রাখা নীল ওরনা কাধের একপাশে ফেলে হাঁটা ধরলো।
সবাই দৌড়ে ওর পাশে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। একজন বিল দিতে গেছে।

এদিকে তূর্য গাড়ির বসে বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একজন লোককে রাখা আছে যে সারাক্ষণ বর্ষার উপর নজর রাখে তার থেকে জানতে পেরেছে বর্ষা বাসা থেকে বেরিয়েছে । সেটা
শুনেই সব কাজ ফেলে এখানে চলে এসেছে তূর্য। অনেক দিন পর বর্ষাকে এক নজর দেখার ইচ্ছা দমাতে পারেনি। বর্ষাকে সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তূর্য নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভুতির জন্ম দেয়। না চাইতেও ও বর্ষাকে মিস করা শুরু করে। ওর মস্তিষ্কে সব সময় বর্ষার চিন্তা ঘুরতে থাকে। এই যে চোখ বন্ধ করলেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাসার আনাচে কানাচে বর্ষাকে দেখতে পায় ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সাথে ঘুমের মধ্যে ও দেখে বর্ষা ওকে বলছে ‘ আপনি খুব পাষাণ একটা লোক দয়া মায়া বলতে কিছু না। আপনার কোন দিন ভালো হবে না। আপনি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন।’

মিস করা শুরু করে অসম্ভব ভাবে। খুব মায়া ওই মুখটায় আর সেই মায়া আটকে গেছে তূর্য। বর্ষা ওকে পাগল করে দিয়েছে। এইভাবে ওর স্বপ্ন এসে ওকে কথা শুনানো।
কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা। ঘুমিয়ে জেগে থেকে সবসময় বর্ষাকে মিস করে। শত চেষ্টা করেও বর্ষাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আজ যখন বর্ষাকে দেখার সুযোগ পেলো ছুটে চলে এলো।
আর অদ্ভুতভাবে তূর্য কিনা একটা মেয়েকে ফলো করছে ওর সব কাজ ফেলে রেখে। বর্ষাকে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরোতে দেখে ও সব চিন্তা এক পাশে ফেলে রেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। ওরা চলে যেতে তূর্য অবাক হলো নিজের কাজে। ও যে বর্ষার মায়া জালে ভালো ফেসে গেছে বুঝতে পারছে। নিজের এমন কাজে নিজে লজ্জিত হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসা দিকে রওনা দিলো।এসব শাওন জানতে পারলে ওকে কি ভাববে? ছিঃ শেষে কিনা নিজের শত্রুদের কে নিয়ে আমি মাতামাতি শুরু করছি‌।
.
বিকেলে একটা আননোন নাম্বার থেকে নিবিড় চৌধুরির ফোনে কল আসে। কলটা তূর্য করেছিলো। কল করে নিবিড় চৌধুরীকে খুব সুন্দর ভাবে অপমান করেছে। এতদিনে নিবিড় চৌধুরী এর অহংকার এর চাকরিটা চলে গিয়েছে। এই চাকরির জন্য খুব অহংকার করতেন তিনি। এখন সেই চাকরিটায় আর তার নেই। তার নামের পাশে থেকে ব্যারিস্টার ডিলিট হয়ে গেছে। এইটাই তো করতে চেয়েছিল সবার সামনে নিবিড় চৌধুরীকে অপমানিত, লাঞ্চিত হতে দেখতে চেয়েছিল। সেটা দেখা হয়ে গেছে।

নিবিড় চৌধুরী ক্রোধান্বিত গলায় বলল, ‘ কে তুমি? আমার সাথে এসব কেন করছো? আমার সাথে তোমার কি শত্রুতা?’

‘কে আমি বললে ও আপনি আমাকে চিনবেন না।’

‘চিনব না! তাহলে তুমি আমার পরিচিত না অপরিচিত কেউ। তোমার সাথে তো তাহলে আমার বন্ধুত্ব বা শত্রুতা কোনটাই নাই‌। তাহলে তুমি আমার সাথে এইসব কেন করছো? এসব করে তুমি কি লাভ পাচ্ছো?’

‘এইটা ঠিক আপনার কাছে আমি পরিচিত না অপরিচিত একজন। কিন্তু আপনার সাথে বন্ধুত্ব না থাকলেও শত্রুতা আছে!’

‘অপরিচিত একজন আমার শত্রু কিভাবে হলো?আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি দয়াকরে বলবে! যার জন্য তুমি আমার সাথে এত খারাপ করছো?’

‘অবশ্যই, কেন বলবো না! আপনি আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাইকে জেলে পাঠিয়েছিলেন মনে আছে। ছেলেটার নাম ছিলো আহান। আজ থেকে 2 বছর আগে একটা মেয়ের মিথ্যা কথার উপর ভিত্তি করে আপনি তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। যার জন্য তাকে মেডিকেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় আমার ভাইয়ের জীবন। আমি তখন বাংলাদেশের বাইরে ছিলাম। সবটা শুনে আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম এসব মিথ্যা আমি সব প্রমাণ করব এসে। আমার ভাইকে আমি নির্দোষ প্রমাণ করব। আপনি তাকে ছেড়ে দিন সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে দিন কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আপনি শোনেন নি আমার ওপর চিৎকার চেচামেচি করে ফোন রেখে দেওয়ার আগে বলেছিলেন,
‘তুই একটা লম্পট তোর ভাই ও একটা লম্পট। মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করে। এখানে একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তোর ভাই। আর তুই সেগুলো ধামাচাপা দিতে বলছিস। তোর ভাইকে উচিত শাস্তি দেবোই আমি। একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামির শাস্তি ওকে পেতেই হবে। যেমন ছোট ভাই তেমনি তুই। কোথায় ভাইকে এর জন্য কঠিন কথা বলবি শাস্তি দিবি তা না তুই আমাকে সবকিছু ধামাচাপা দিতে এসেছিস। কোন চরিত্রহীন বাবা মায়ের সন্তান তোরা তোদের তো মনে হয় জাতের ঠিক নেই। রক্তের ঠিক নেই দেখছি।’
বাবা-মাকে চরিত্রহীন লম্পট বলেছিলেন। শুধু আমাদের খারাপ কথা বলে আপনি ছাড়েন নি। আমাদের বাবা-মা কে আপনি ইন্সাট করেছিলেন। আমাকে আজেবাজে কথা বলে আমার ভাইকে ঠিক জেলে পাঠিয়ে ছিলেন। সেদিন আমার ভাই ছিল একা। একা এই সব সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই সুসাইড করে মারা গিয়েছিল। আমি আমার একমাত্র ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে পাইনি।আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর কিন্তু সেই মেয়েটা সব সত্যি বলে দিয়েছিল। তিনি সব মিথ্যা অভিযোগ করেছিলো। আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা বলেছিল।তার সাথে আমার ভাই কোন অসভতামি করেছিলো না। সেদিন যদি আপনি আমার কথা শুনতেন তাহলে আমার ভাইকে মরতে হতো না।
সেই দিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আপনাকে আমি ধ্বংস করে দেবো। এজন্য আমি আপনার একটা ছেলের খোঁজে ছিলাম কিন্তু পেলাম মেয়ে কি করবো তাকেই আমি টার্গেট করলাম। মেয়ে তো আপনার কলিজার টুকরা। তাইতো মেয়েকে ফাস্ট কিডন্যাপ করলাম।’

‘বর্ষাকে তুমি কিডন্যাপ করেছিল?’ রেগে বললো নিবিড় চৌধুরী।

‘হ্যা আমি করেছিলাম। যে অপরাধের দায়ে আপনি আমার ভাইকে শাস্তি দিয়েছিলেন সে অপরাধ আমি আপনার মেয়ের সাথে করার জন্য তাকে কিডন্যাপ করেছিলাম। আপনার তো নিজের ও নিজের পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব গর্ব। তারা খুব চরিত্রবান। আর আমি আমার ভাইয়ের তো চরিত্রের ঠিক নাই। তাই আপনার পরিবারের মেয়ের আমি ক্ষতি করতে এসব….

‘ কি তুমি আমার আমার মেয়ের সাথে এসব করতে কিডন্যাপ করেছিলে?তুমি আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করেছ এইজন্য তো আমার মেয়েটা গুমরিয়ে থাকে। তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এসব করার তোমাকে আমি পুলিশে দেবো।’

তূর্য কথা শেষ করতে না পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বাঁকা হেঁসে বললো,

‘আমাকে পুলিশে দিবেন। আচ্ছা কেস করে আসেন। আচ্ছা কার নামে কেস করবেন? আপনি কি আমার নাম জানেন? আই মিন আমাকে কখনো দেখেছেন? কি বলে কেস লিখবেন?’

নিবিড় চৌধুরী ঘাবড়ে গেলো আসলেই তো এই ছেলেটাকে তো উনি চেনেন না নাম ও জানেন না।

‘আচ্ছা এসব কিছু ভাবতে থাকেন।এখন তো আপনাকে এমনিতেই কেউ দেখতে পারেনা পাড়া- প্রতিবেশীর কেউই। আরেকটা কথা দুদিনের মাথায় আপনাকে বাসা থেকে হয়তো তাড়িয়ে দেওয়া হবে।কারণ আপনার ব্যাংকে থেকে অনেক লোন নেওয়া আছে। যেটা পরিশোধ করার টাকাপয়সা আপনার হাতে কিছুই নেই। সে সবের জন্য আপনাকে বাড়িটা ছেড়ে দিতেই হবে। আপনার জন্য আরেকটা সুন্দর ড্রামা কালকে দেখতে পাবেন। রাখি আল্লাহ হাফেজ।’

ফোনটা কেটে গেলো। নিবিড় চৌধুরী চিৎকার করে উঠলো বর্ষা বলে। ওনার বুকে ব্যাথা করছে। বর্ষা দৌড়ে এসে দেখে বাবা সোফায় বসে আছে বুকে হাত দিয়ে। ও বলল,

‘ বাপি কি হয়েছে তোমার?’

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here