পাতাঝরার শেষে……পর্ব ৮

0
1520

পাতাঝরার শেষে……
©মৌপর্ণা

পর্ব ৮) চাকরিটা আমি পেয়ে গিয়েছি বাবা শুনছো!

***মাস তিনেক পরের কথা ***

অন্বেষার ফাইনাল সেমিস্টার বেশ ভালোই হয়েছে! যতটা আশা করেছিল তার চেয়ে বেশ অনেকটাই ভালো….
সব ভালো ভাবে মিটে গেলেও চাকরির কোনো আশা নেই চোখের সামনে……

সরকারি একটা ফর্ম ভরেছিলো, সেটার পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে গত মাসে, কবে রেজাল্ট বেড়োবে কোনো ঠিক – ঠিকানা নেই!
SBI PO টা বেশ ভালো চাকরি ছিল, তবে Prelims এই বাদ পড়লো অন্বেষা…..
এমনিও কেমিস্ট্রি নিয়ে পরে Banking সেক্টরে সেরকম ইচ্ছে ছিলোনা…..
গত সপ্তাহের নেট এক্সামটা একদমই মনের মতন হয়নি….
দিনে দিনে যেন
জীবনের লড়াই আরও শক্ত হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ…..

বাড়ির সবাই চায় অন্বেষা ফিরে যাক দুর্গাপুর…..

যৌথ পরিবার, ষ্টেশনারী গুডস এর দোকান….
বাড়িতে যা রোজগার হয় তাতে বেশ ভালো মতোই চলে যায় ওদের, তার ওপর জমি জমা আছে, ফসল হয় প্রতি বছর, সব মিলিয়ে সচ্ছল অবস্থা থাকলেও,
অন্বেষা কে প্রতি মাসে পাঠানো
পাঁচ হাজারটা পরিবারের বাড়তি খরচা….
পড়াশোনাটা থাকলে একটা অন্যরকম ব্যাপার হতো….
পড়াশোনা শেষ! এতদিন পড়াশোনা পড়াশোনা করে ব্যাপারটা কে আটকে রেখেছিলো অন্বেষা….
ওর বয়েসী সব মেয়েদেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে ওর গ্রামে…..

ইদানিং থেকে থেকে মনে হয় একদিন সত্যি সত্যি ফিরে যাবে দুর্গাপুর……
সব স্বপ্ন আশা ফেলে রেখে ফিরে যাক চেনা শহরে নিজের মানুষ গুলোর কাছে…..

মিস্টার রায়ের সাথে দেখা হয়নি মাস তিনেক হলো, এমনকি ফোনে কোথাও হয়নি শেষদিনের ঝামেলাটার পর!
প্রতিমাসের চেকটা রিতিকা নিজেই দিয়েছে অন্বেষা কে!

তবে আজ অবধি একটা Sorry বলে উঠতে পারলোনা অন্বেষা..

প্রথমে ভেবেছিলো পরীক্ষা হয়ে গেলে বলবে….
আজকের দিনটায় দাঁড়িয়ে মনে হয় তিনমাসের আগের ব্যাপারটা অনেকটা পুরোনো হয়ে গিয়েছে, সেই কবে কার ব্যাপারটা নিয়ে কি ভাবে ক্ষমা চাইবে সে!
তাও যদি মানুষটার সাথে মুখোমুখি দেখা হয়, তবুও বলা যায়, এভাবে ফোন করে কি বলবে সে…

মাঝেমাঝে চোখ বন্ধ করলে এখনো ভেসে ওঠে মায়া ভরা দুটো চোখ!
সব প্রেমের বোধহয় পরিণতি হয়না!

*****************************************************

“আজ যেতেই হবে অন্বেষা! বাইরের weather
টা দেখেছিস? রিতিকা কে ফোন করে বলে দে আজ যেতে পারবিনা.. ”

“তা হয়না গো রিয়া দি! তা হয়না…..
মেয়েটা এখন ক্লাস টেনে পরে ….
নেক্সট ইয়ার বোর্ডস…..
গত সপ্তাহে ক্লাস মিস গিয়েছে……
তাড়াতাড়ি পুরো সিলেবাসটা শেষ হয়ে এলো তাও আমি দুর্গাপুর ফিরে যেতে পারবো!”

“মানে? পাগল তুই?”

“পাগলের কি আছে রিয়া দি! আর কতদিন এভাবে চলবে! আমি আসি গো! তাড়াতাড়ি ফিরবো…..”

******************************************************

ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা বেজে দু মিনিট যখন অন্বেষা ঢুকলো রয় ম্যানশনে…..

এই পুরো বাড়ির সত্যটা চিরকাল অজানাই রয়ে গেলো….
কে আসল মিস্টার রায়?
কে রয় এন্ড রয় গ্রূপের ওনার…?
অরুণজিৎ রয়ের বাবা কোথায়?
কেনো রিতিকার দাদাভাই ছাড়া কেউ নেই ওর জীবনে….
ইদানিং এইসব ব্যাপারে আর কথা হয়না রিতিকার সাথে!

এই পড়াতে এসে পারিবারিক কথা শোনাটা ঠিক নয়!
কথায় কথায় এমনিই অনেক কথা জেনে ফেলেছে সে, যেগুলো হয়তো তার জানার কথা নয়…..
আবার তার ওপর আগের দিন একটা বেফাঁস কথা বলে মেয়েটাকে কাঁদিয়ে ছিল সে…
কাঁদা টাই স্বাভাবিক! ক্লাস থ্রিতে পড়তে পড়তেই মা এর মতন একটা অমূল্য সম্পদ হারিয়ে ফেলেছে সে!

সত্যি এই বড়লোকদের ব্যাপারটাও অদ্ভুত!
এই মা মরা মেয়েটাকে সময় দেওয়ার কেউ নেই….
শুধু চেনা মিস্টার রায় ছাড়া……
চেনা মিস্টার রায় –
যে মানুষটা কে একটু জানতে চেয়েছিলো মন কখনো, আজ সেও হারিয়ে গিয়েছে……

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে অবচেতন মন তাকে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছে রিতিকার সামনে লক্ষই করেনি সে….

“মিস! তোমার এক্সাম কেমন হলো?”

“কোন এক্সাম রিতিকা? সেমিস্টার তো অনেকদিন আগেই…”

“না! না! লাস্ট উইক এলে না, বললে PhD
করার জন্যে…..একটা এক্সাম!”

“ওঃ! নেট ছিল হ্যাঁ!”

“কেমন হলো মিস”

“ঠিকঠাক দেখা যাক…”

“ওঃ! মিস দাদাভাই তোমাকে এই কাগজটা দিতে বলেছে আর বলেছে এটা অবশ্যই পড়তে…..”
বলেই রিতিকা একটা Envelop এগিয়ে দিলো অন্বেষার দিকে…..”

“ওকে!”
মুখে ওকে বললেও মনটা ছটপট করতে থাকলো Envelop টা খুলে ফেলার জন্যে!

“আজ বৃষ্টি বাদলার দিন” এই অজুহাত দেখিয়ে আজ অনেকটাই আগে ক্লাস শেষ হলো রিতিকার….
অন্বেষা রয় ম্যানশন থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ালো, কোনোমতে ভেজা ছাতাটা ব্যাগে ঢুকিয়েই বের করে নিলো এনভেলপ টা….
মুহূর্তেই ছিঁড়ে ফেললো এনভেলপ…..
না বাড়ি গিয়ে তার রিয়া দির সামনে এ চিঠি পড়তে পারবেনা সে!

অনেকক্ষণ একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো মনের মধ্যে এনভেলপ টা খুলবে বলে……

কাঁপা কাঁপা হাতে স্ট্রিট লাইটে খুলে ফেললো এনভেলাপ এর মধ্যে রাখা কাগজ…..

“রয় এন্ড রয় অফলাইন Application ফর্ম ফর কেমিকাল Analyst”

ওপরের হেডিংটা চোখে পড়তেই মুহূর্তেই কাগজটা ফোল্ড করে এনভেলপ এর ভেতর ঢুকিয়ে দিলো সে…..
তারপর মুহূর্তেই ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিক বের করে ঢুকিয়ে দিলো envelop টা…..

মুখে ফুটে উঠলো হাসি! আরও একটা সুযোগ! নিজেকে প্রমান করার…..
না সব স্বপ্ন এখনো ঝরে পড়েনি বৃষ্টি হয়ে……

*******************************************************

দিন পনেরো পরের কথা….
আজ ইন্টারভিউ রয় এন্ড রয় গ্রুপে…..

দিনটা শনিবার,
প্যান্টালুনস থেকে নতুন ফর্মাল কচিকলা পাতার কুর্তিটা পরে নিলো অন্বেষা, সাথে নতুন লেগিন্স, চোখের কোণে হালকা কাজল, ঠোঁটে লিপবাম, সব মিলিয়ে বেশ অফিস লুকে সেজে নিলো অন্বেষা, চুল গুলো খোলাই থাকলো…..
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলোনা চুল গুলো কি ভাবে বাঁধবে? তার রিয়া দি থাকলে আজ এতটা সমস্যা হতোনা….

বাড়িতে এখনো কিছু জানায়নি সে! একেবারে চাকরিটা হলে না হয় ফোন করা যাবে…..

“আজ চাকরিটার খুব প্রয়োজন ভগবান….
আজ এমন কিছু একটা করো যাতে চাকরিটা আমি পেয়ে যাই, কোনোদিন নিজের জন্যে কোনো কিচ্ছু চাইনি…..আজ চাইছি….
প্রয়োজনে তুমি স্বর্গলোক থেকে নীচে এসে আমায় সাহায্য করো আজকে জয়ী হতে….
আমি আর হেরে যেতে পারবোনা ভগবান….”

হাতজোড় করে প্রার্থনা পুরো করার আগেই বেজে উঠলো ফোন…..

স্ক্রিনের ওপর মিস্টার রায়ের নামটা দেখেই জ্বলজ্বল করে উঠলো দুটো চোখ…..

অথচ দিন পনেরো আগে অফলাইন Application টা হাতে পেয়ে যেদিন অন্বেষা ফোন করেছিল রাতে, সেদিন ঠিক করে কথা বলেনি লোকটা…
এক নিঃশ্বাসে ঝড়ের বেগে বলে গিয়েছিলো –

“মিস্টার মিত্র থ্যাংক ইউ বলার দরকার নেই! আমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না! সামনে বড়ো একটা পরীক্ষা! কম্পানি নলেজ ডিটেলস এর প্রিন্টআউট পৌঁছে যাবে আপনার কাছে! রিতিকা ভুলে গেলে নিজে মনে করে চেয়ে নেবেন! সব কটা ডকুমেন্টস পড়বেন! ওর মধ্যে HR রাউন্ডের প্রশ্ন থাকবে, কিচ্ছু ছাড়বেন না! টেকনিক্যাল আমি বুঝিনা, আমি কেমিস্ট্রির স্টুডেন্ট নয়, তবে আপনি হয়তো ম্যানেজ করে নেবেন, কোনো স্পেসিফিক টেকনিক্যাল এরিয়া ফোকাস করতে হলে ডকুমেন্টের সাথেই দিয়ে দেব, অল দা বেস্ট! গুড নাইট…..”

তারপর মুহূর্তেই কেটে গিয়েছিলো ফোনটা….তবে আজ নিজে থেকেই ফোন করছে যে…..

অন্বেষা কোনো রকমে এক ঢোক চিপে মনটা একটু শান্ত করে ফোনটা ধরলো
“হ্যালো মিস্টার রায়….”

“খাতা পেন বের করুন….”

“হ্যাঁ?”

“খাতা পেন নিয়ে বসুন….”

“ওকে……হ্যাঁ…..বসেছি……বলুন…..
এক সেকেন্ড……এই পেন টাতে কালী নেই…..
এক মিনিট…..হ্যাঁ বলুন….”

“লিখুন…..
মার্কশিটস অফ অল এক্সামস,
এপ্লিকেশন ফর্ম,
আধার ওর ভোটার আইডি….
এড্রেস ইলেকট্রিসিটি বিল,
পাসপোর্ট সাইজ ফটো মিনিমাম চারটে,
নেট এক্সামের এডমিট কার্ড থাকলে সঙ্গে নেবে….
পেন…..”

“হমম এড্রেস ইলেকট্রিসিটি পিজির তো?”

“হমম! বাই…..সময়ে পৌঁছে যাবেন….”

মুহূর্তেই কেটে গেলো লাইনটা…..

ভাগ্গ্যিশ ফোনটা করেছিল মিস্টার রায়, পাসপোর্ট সাইজ ফটোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো অন্বেষা……

*****************************************************

ক্যাবটা যখন রয় এন্ড রয় গ্রূপের সামনে দাঁড়ালো চোখ ধাঁদিয়ে গেলো অন্বেষার, বিশাল কমপ্লেক্স, কমপ্লেক্সের ভেতর রাস্তা, গাছপালা, জায়গায় জায়গায় ফোয়ারা….

গেটের সামনে সিকিউরিটি দাঁড় করালো….
অন্বেষা মুহূর্তেই ব্যাগ থেকে বের করে দিলো এপ্লিকেশন ফর্ম…

এই খাতা তে সই করুন….
এখানে ইন টাইম, পারপাস, আর এখানে সিগনেচার…..

এন্ট্রি বুকে সাইন করে অন্বেষা আসতে আসতে এগিয়ে চললো B1 ব্লকের দিকে, তারপর ব্যাগ স্ক্যান করে লিফ্ট দিয়ে উঠে গিয়ে দাঁড়ালো আটতলায়…..

আটতলায় পৌঁছতেই দেখলো প্রায় কুড়ি জন মতন ক্যান্ডিডেট ওয়েট করছে করিডোরে….

কাউকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করলোনা অন্বেষা, দাঁড়িয়ে রইলো করিডোরের এক কোণায়….

মিনিট দশেক পর একজন বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে করিডোরে, আবার সবার হাতে একটা করে ফর্ম দিয়ে ভরতে বললো তাড়াতাড়ি….
“Quickly! Please! So, all of you are for interview right? For Chemical Analyst? Anyone here who has not applied for chemical analyst…..
I repeat anyone who has not applied for chemical analyst…Fine…..Thank you!”

অন্বেষা ফর্মটা শেষ করা হলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো
“আমরা তো সবাই শুধুই অফলাইন ফর্মটা ভরেছি রাইট? তাহলে আগে থেকে Apply তো করা হয়নি…..”

“হোয়াট? নো….
Application টা অফলাইন হলেও যখন ডাউনলোড করেছিলেন তখন তো সিস্টেমে Chemical Analyst সিলেক্ট করেছিলেন….”

অন্বেষার মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো! এসব তো কিচ্ছু জানেনা….
মুহূর্তেই ডায়াল করলো মিস্টার রায়ের নম্বর…..
রিং হয়ে গেলো, কেউ ফোনটা তুললো না!

অন্বেষার চোখের সামনেটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে এলো….
সাথে সাথেই ফোনটা বেজে উঠলো এবার

“হ্যালো মিস্টার রায়…সিস্টেমে Chemical Analyst সিলেক্ট করা হয়েছিল তো?”
কম্পিত গলায় জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা…..

“ফর্মের ওপরে কি লেখা আছে? Chemical Analyst লেখা আছে তো?”

“হ্যাঁ! কিন্তু…..”

“Calm down! সব ঠিক আছে…..পৌঁছে গিয়েছো তো?”

“হ্যাঁ!”

“ফাইন…এখানে আসার পরে দেওয়া ফর্ম ফিলাপ করেছো?”

“হ্যাঁ…”

“Good…পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো ….এক্ষুণি ঢোকাবে….”

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ওদের নিয়ে যাওয়া হলো বিশাল একটা অডিটোরিয়ামে …….

ভিড়টা আরও বেড়েছে, এখন মোটমাট প্রায় তিরিশ জন বসে অডিটোরিয়ামে…
কটা পোস্ট! কটা ভ্যাকেন্সি কিছুই জানেনা অন্বেষা…..
পেছনের চেয়ারে বসা মেয়ে গুলো বেশ স্মার্ট! পরণে ফর্মাল শার্ট প্যান্ট! ওদের মধ্য বড্ডো বেমানান লাগলো অন্বেষার নিজেকে……

হঠাৎই অন্বেষা দেখলো অডিটোরিয়ামের গেট খুলে ঢুকে এলো মোটমাট তিন জন লোক……..
তারমধ্যে একজন মিস্টার রায়, মিস্টার অরুণজিৎ রায়, পরণে অফ হোয়াইট ফুল স্লিভ শার্ট, ফর্মাল প্যান্ট, রিমলেস চশমা, ভীষণই আলাদা লাগছে তাকে আজ…
চেনা লোককে অন্বেষা দেখলো অচেনার গাম্বীর্যে…

একই মানুষ সে…..
যাকে অন্বেষা রাঙিয়ে দিয়েছিলো নন্দন চত্বরের ক্যাম্পাসে, আবার তার বাড়ির করিডোরে দাঁড়িয়ে তাকে কত খারাপ কথা বলেছে সে মাস তিনেক আগে……
আবার যে অপেক্ষা করেছিল সারাটা রাত গাড়ির সিটে শুধু থিসিস ফাইলটা দেবে বলে….

“Hello All, Good Morning…….So the interview will start in some time, candidates will be called by their application number……
I mean you will be able to hear an application number announced,
Once your number is announced please come to the rightmost room of the corridor, room number 8-E,
by the way I’m Arunjit Roy, the MD of Roy and Roy, and he is ……….”

অন্বেষা মুগদ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো চেনা মিস্টার রায়ের দিকে!

আজ মনে হচ্ছিলো সেদিন রাতে গাড়িতে বলা কথাগুলো মিথ্যে!
রিতিকার মুখে শোনা কথাগুলো মিথ্যে, এতো অন্য মিস্টার রায়, কনফিডেন্ট, রেস্পন্সিবল এন্ড হোয়াট নট?
অ্যাকসেন্ট, ফ্লুয়েন্সি, pronunciation Just Wow!!
MD অফ রয় এন্ড রয়…………

মুহূর্তেই ওরা তিনজন গুড লাক বলে বেরিয়ে গেলো অডিটোরিয়াম থেকে…..
হঠাৎই ব্যাগে থাকা ফোন টা ভাইব্রেট করে উঠলো একবার…..

তড়িঘড়ি করে অন্বেষা ফোনটা বেরকরে নিলো হাত থেকে…
একটা টেক্সট মেসেজ দেখতে পেলো সাথেই সাথেই মিস্টার রায়ের নম্বর থেকে…..
“Knot your hair! Khola chul is not at all professional…..
And mobile hate rakhbe vibrate mode – e…..
But interview room e dhokar age shokale bola documents chara hate kicchu thakbena …..
No purse, no phone…..”

মিস্টার রায় দেখেছেন এতো দূর থেকেও, কিছু না ভাবে মুহূর্তেই একটা হাত খোঁপা করে নিলো অন্বেষা…….

ঘন্টা খানেকের মধ্যে প্রায় কুড়ি জনের ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে, ফিরতি ক্যান্ডিডেট দেড় মধ্যে কাউকে তখনি কনফার্ম করা হচ্ছে আবার কাউকে বলা হচ্ছে মেলে জানানো হবে, আবার কাউকে মুখের ওপরেই না বলা হচ্ছে……

আরও মিনিট পাঁচেক পর অন্বেষার ফোনটা আবার ভাইব্রেট করে উঠলো….
“Er porei tomar number, be ready, all the best! I repeat shokaler bola shob document chara hate jeno aar kichu na thake….”

***********************************************************

“Hello good morning! good Morning sir, good morning madam….”

“Please have your seat Miss mitra….Well it is not good morning, it’s good afternoon….”

“Right sir! Good Afternoon sir ”

অন্বেষা দেখলো একদম শেষের দিকের চেয়ারে বসে মিস্টার রায়! যদিও তার চোখ ফাইলের পাতায়…..

এরপর শুরু হলো ইন্টারভিউ, প্রথম দুটো প্রশ্ন ঠিক গেলেও,
তিন নম্বর প্রশ্নটা অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও মেলাতে পারলোনা অন্বেষা….
চার নম্বরের প্রশ্নটা খুব সোজা তবু কিছুতেই আজ কেন মিলছেনা…..
এই ধরণের কত প্রশ্নই তো সল্ভ করেছে অন্বেষা এর আগে..
অন্বেষা ওয়ান মিনিট ওয়ান মিনিট বলে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তখন স্ট্রাগেল করে চলেছে,
এরকম কম্পিটিশান মার্কেটে একটা প্রশ্ন ছেড়ে গেলেই হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে চাকরি…..
তবে হাত সমানে কাঁপছে, গলার কাছটা কেমন দলা পাকিয়ে আসছে চাপা কান্নায়…..
ইন্টারভিউ প্যানেলে সবার সামনেই চোখের সামনেটা কেমন জলে ঝাপসা হয়ে আসছে….
“জাস্ট ওয়ান মিনিট স্যার ……” বলেই পুরো ডেরিভেশন টা কেটে দিয়ে নতুন করে শুরু করলো অন্বেষা….

“ওয়ান মিনিট মিস মিত্র…..”
এবারে অন্বেষা চেয়ে দেখলো মিস্টার রায় কে….”

“Yes…Sir! just give me one chance……”

” Have some water……yeah! Take that glass, yeah that one …..have some water now, then relax for 2 minutes, don’t start the derivation now, Mr. Srivastava Can I ask her some basic question by then! You know I’m not a technical person but may be some basic, just to boost up her confidence……”

“Sure Mr Ray, please go ahead!”

তারপর অদ্ভুত ভাবে একটা সাদা পাতায় এলো চারটে বেসিক কেমিকাল Equation……সেই একই প্রশ্ন প্রথম দিনের যেদিন অন্বেষা ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো রিরি কে পড়ানোর জন্যে…..

মুহূর্তেই পাতা এগিয়ে দিলো অন্বেষা প্যানেলে…..

“Very interesting question Mr Ray, not that basic and Miss Mitra, Good, you’ve solved all the equations in less than 1 minute….”

“Thank you Mr. Srivastava, Anwesha you can start your derivation now….relax and give a try…You can do it! ….”

মুহূর্তেই অন্বেষা শুরু করলো চতুর্থ প্রশ্ন, মুহূর্তেই মিলে গেলো সেটা এবারে, তারপর দীর্ঘ কুড়ি মিনিট চললো ইন্টারভিউ, প্রথমে পনেরো মিনিট টেকনিকাল, তারপরের পাঁচ মিনিট HR
…….HR রাউন্ড ফেস করতেও সমস্যা হলোনা অন্বেষার, মিস্টার রায়ের দেওয়া
কম্পানি ডিটেলস আর স্যাম্পেল HR
Questions
গুলো যথেষ্ট ছিল এই রাউন্ডটা ক্লিয়ার করার জন্যে….”

“Okay Fine Miss Anwesha! Thanks for all your time and so before we discuss your performance, do you have anything to say? Or any concern about the company? Anything that you want to tell us, share with us…”

“Yes sir! Can I try question number 3 again! Please! ”

“Sure Please!”

মুহূর্তেই আবার মিলে গেলো question number 3…..
সাথে সাথেই অন্বেষা খাতাটা এগিয়ে দিলেন প্যানেলের দিকে…….

“ওকে, নাউ রেজাল্ট টাইম…..”

“রাইট স্যার!”

“Well Miss Mitra Congratulations! You were selected without question number 3 too!
“So from when can you join! Engaged in any other work? Any notice period? ”

“No….sir, no notice period, I can join from today only! ”

“No worries! Please relax today, you’ve just been selected! Okay join from tomorrow! ”

“Thank you sir”

******************************************************

“হ্যালো বাবা, বাবা আমি চাকরিটা পেয়ে গিয়েছি! বাবা……আমি চাকরিটা পেয়ে গিয়েছি…..”

“সত্যি……কোন চাকরি রে মা!”

“রাতে বলছি সব! অনেক বড়ো অফিস বাবা! আমি বাড়িতে জানাই সব্বাই কে!”

*****************************************************

আজ জীবনের সবচেয়ে বেশি খুশির দিন ছিল অন্বেষার কাছে,
পিসিমনি, বড়মাসী, ছোটোমাসি, মামার বাড়ি, মা, বাবা, জেঠুমনি, জেঠিমা, কাকু, কাকিমা, বাড়ির সব ভাই বোনদের সাথে কথা বলার পর্ব শেষ করতে করতেই অন্বেষা দেখলো ঘড়িতে এগারোটা……

“অন্বেষা! আমার মা কথা বলবে তোর সাথে…..”

“কেন রিয়া দি…?”

“কেন মানে! বিকজ ইটস ইওর ডে….পাগলী….মায়ের সাথে কথা বলার আগে তোকে একটা কথা বলি…….
অন্বেষা পুরোনো প্রেম জাগিয়ে তুলিসনা…..
তার চেয়েও বড়ো কথা, উনি কোনো দয়া করেননি, তোর মতন ডেডিকেটেড রিসোর্সে ওই কম্পানির জন্যে অ্যাসেট! আর তাছাড়া ভুলে যাসনা উনিই ছিলেন যে তোকে লাস্ট টাইম ইন্টারভিউ টা ফেস করতে এলাও করেনি…..
সো আবার একিই জায়গা চলে যাসনা……
ভালো করে ভাবিস আমার কথাটা পরে…”

রাতে সব কাজ কর্ম সেরে দেখলো ঘড়িতে এগারোটা চল্লিশ….
একটাবার আজ থ্যাংক ইউ না বললে ঘুম আসবে না….এটা ভেবেই অন্বেষা ফোনটা তুলে নিলে হাতে, ডায়াল করলো মিস্টার রায়ের নম্বর….

“হ্যালো মিস্টার রায়…..”

“মিস মিত্র! থ্যাংক ইউ বলে আমার ও আপনার সময় নষ্ট করবেন না! আর রিগার্ডিং ইওর জব, আমি আপনাকে প্যানেলেই Congratulate
করে দিয়েছি, সো, এর বাইরে কিছু শোনার বা বলার থাকলে বলুন নয়তো গুড নাইট…..”

“নো প্রব্লেম, গুড নাইট! কাল দেখা হচ্ছে তাহলে! ”

“না! কাল দেখা হছেনা আমাদের, ইন ফ্যাক্ট কোনোদিনই হবেনা হয়তো, কারণ আমি আপনার ডিপার্টমেন্টের সাথে রিলেটেড নয়, আমি MD
, আমি পুরোপুরি মানাজেমেন্টের লোক! ফিন্যান্সে MBA করেছি…..ফিন্যান্স বুঝি, আমি আপনার সুপারভাইসর নই, আমি HR ও নই!
রিক্রুটমেন্টে থাকি মাঝে মাঝে! একটু দেখে এমপ্লয়ী না নিলে পরে প্রব্লেম হতে পারে, নিজেদের কম্পানি আফটার অল!”

অন্বেষার গলাটা ভেঙে এলো মিস্টার রায়ের রুড উত্তরটা শোনার পর……
অন্বেষা কিছু বলার আগেই…..”গুড নাইট” বলে কেটে গেলো লাইনটা…..

আজকের মতন একটা দিনেও দুফোটা জল চোখ বেয়ে পড়লো অন্বেষার বিছানায়…..
অমাবশ্যার শূন্য কালো রাতের দিকে চেয়ে রইলো অন্বেষা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে….

(চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here